বছরজুড়ে কমেছে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি

প্রকাশিত: ৭:৩৪ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ৩০, ২০২০ | আপডেট: ৭:৩৪:অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ৩০, ২০২০

রহমান আজিজ, ঢাকা:
ধারাবাহিকভাবে কমছে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি। চলতি অর্থবছরের (২০১৯-২০) ডিসেম্বরে এ খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৮৩ শতাংশে। যা নভেম্বর ছিল ৯ দশমিক ৮৭ শতাংশ। অথচ জানুয়ারি মাসে এই বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ১৩ দশমিক ২ শতাংশ। এই হিসাবে ১১ মাসে বিনিয়োগ কমেছে ৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে এই তথ্য জানা গেছে।
ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা বলছেন, লাগামহীনভাবে খেলাপি ঋণ বাড়ার কারণে ব্যাংকগুলোকে বাড়তি নিরাপত্তা সঞ্চিতি রাখতে হচ্ছে। অন্যদিকে আশানুরূপ আমানত পাচ্ছে না। ফলে ব্যাংকে নগদ অর্থের টান পড়েছে। এ কারণে বেসরকারি বিনিয়োগ কমছে।

সোহাগ মাল্টিমিডিয়া এন্ড ট্র্যাভেলস

এ ছাড়া আর্থিক খাতের নানা কেলেঙ্কারি ও সঞ্চয়পত্রে সুদ বেশি হওয়ায় ব্যাংকে আমানত প্রবৃদ্ধি কমে গেছে। অন্যদিকে উচ্চ সুদহারের কারণে ঋণ নিতেও আগ্রহী নয় উদ্যোক্তারা। এসব কারণে বেসরকারি ঋণ কাঙ্ক্ষিত হারে বাড়ছে না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, কয়েক বছর ধরেই ব্যাংকিং খাতের অবস্থা ভাল যাচ্ছে না। নানা অনিয়ম মাধ্যমে ঋণ বিতরণ করা হচ্ছে। নির্দিষ্ট সময় পর ওইসব ঋণ খেলাপি হয়ে পড়ে। এ কারণে ব্যাংকগুলোতে তারল্য সংকট রয়েছে।
তাছাড়া ঋণের সুদ হার বেশি থাকায় উদ্যোক্তারা বিনিয়োগে আগ্রহী হয়ে উঠছে না। এসব কারণে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি কমতে পারে বলে মনে করেন ওই কর্মকর্তা। চলতি অর্থবছরের ঘোষিত মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন কমিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। মুদ্রানীতিতে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ ধরা হয়েছে ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ। এর মধ্যে ডিসেম্বর ২০১৯ পর্যন্ত লক্ষ্য ঠিক করেছিল ১৩ দশমিক ২ শতাংশ, কিন্তু গত অর্থবছরের জুন পর্যন্ত লক্ষ্য ছিল ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ।

অন্যদিকে চলতি অর্থবছর (জুলাই-জুন) পর্যন্ত সরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধির প্রক্ষেপণ করা হয়েছিল ২৪ দশমিক ৩ শতাংশ। কিন্তু অস্বাভাবিকভাবে সরকারি ঋণ বাড়তে থাকায় লক্ষ্যমাত্রা পরিবর্তন করে ৩৭ দশমিক ৭ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছে। আর অভ্যন্তরীণ ঋণ প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছিল ১৫ দশমিক ৯০ শতাংশ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহের প্রক্ষেপণ ছিল সাড়ে ১৬ শতাংশ। এটি গত অর্থবছরের ঘোষিত মুদ্রানীতির লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ৫ শতাংশ কম। এখন বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি আরও কমেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের বেসরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৯ দশমিক ৮৩ শতাংশ। নভেম্বরে যা ছিল ৯ দশমিক ৮৭ শতাংশ। অক্টোবরে ঋণ প্রবৃদ্ধি ছিল ১০ দশমিক ৪ শতাংশ। সেপ্টেম্বরে ঋণ প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১০ দশমিক ৬৬ শতাংশ। আগস্টে ছিল ১০ দশমিক ৬৮ শতাংশ। এর আগের মাস জুলাই শেষে ছিল ১১ দশমিক ২৬ শতাংশ।

ব্যাংকজুনে ঋণ প্রবৃদ্ধি ছিল ১১ দশমিক ২৯ শতাংশ, মে মাসে যা ছিল ১২ দশমিক ১৬ শতাংশ। এর আগের মাস এপ্রিলে ছিল ১২ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ, মার্চে প্রবৃদ্ধি ছিল ১২ দশমিক ৪২ শতাংশ। ফেব্রুয়ারিতে ছিল ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশ এবং জানুয়ারিতে ১৩ দশমিক ২০ শতাংশ।
চলতি অর্থবছরের বাজেট ঘাটতি মেটাতে ব্যাংক খাত থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে ৪৭ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১২ জানুয়ারি ২০২০ পর্যন্ত ব্যাংক খাত থেকে ৫২ হাজার ৭৪১ কোটি টাকা ধার করেছে সরকার। অর্থাৎ পুরো অর্থবছরে (১ জুলাই থেকে ৩০ জুন) ব্যাংক থেকে সরকারের যে টাকা ধার করার কথা ছিল ৬ মাসেই সেই লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে জানা গেছে, মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানিতে নেতিবাচক প্রবণতা রয়েছে। অর্থাৎ বিনিয়োগ কমছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর সময়ে কলকারখানা স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় মূলধনি যন্ত্রপাতি (ক্যাপিটাল মেশিনারি) আমদানি কমেছে ১০ শতাংশ। শিল্পের কাঁচামাল আমদানি কমেছে প্রায় ২০ শতাংশ।

সুন্দরবনটাইমস.কম/নিজস্ব প্রতিবেদক/ঢাকা


আপনার মতামত লিখুন :

নিজস্ব প্রতিবেদক