ব্যবসায়ীদের ২০ হাজার কোটি টাকার কর মওকুফ

প্রকাশিত: ৮:০৩ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২০ | আপডেট: ৮:০৩:অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২০

ব্যবসায়ীদের ২০ হাজার কোটি টাকার কর মওকুফ

সোহাগ মাল্টিমিডিয়া এন্ড ট্র্যাভেলস

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
সুবিধা ছাড়াই ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম ছয়মাসে অর্থাৎ জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে আমদানি ও সম্পূরক শুল্ক এবং মূল্য সংযোজন কর (মূসক) ও বিশেষ প্রণোদনা বাবদ ১৯ হাজার ৮১১ কোটি ৯০ লাখ টাকার কর মওকুফ পেয়েছে ব্যবসায়ীরা।
দেশীয় শিল্প সুরক্ষা এবং দেশের তৈরি পোশাক খাত ও চামড়া খাতসহ রপ্তানিমুখী খাতগুলো যাতে আন্তর্জাতিক বাজারে টিকে থাকে সেই লক্ষ্যে সরকার বিশেষ সুবিধা দিয়েছে বলে জানিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃপক্ষ (এনবিআর)।
এনবিআরের তথ্যমতে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সরকার ৪৫ হাজার ৭৪৩ কোটি ২১ লাখ টাকার কর মওকুফ সুবিধা পেয়েছে ব্যবসায়ীরা। আর নতুন অর্থবছরের প্রথম ছয়মাসে ১৯ হাজার ৮১১ কোটি ৯০ লাখ টাকার কর মওকুফ পেয়েছে তারা।
অর্থাৎ গত দেড় বছরের সাড়ে ৬৫ হাজার কোটি টাকার কর মওকুফ পেয়েছে ব্যবসায়ীরা। এই সুবিধা নিয়েছে দেশীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠান ওয়ালটন, রানার এবং প্রাণ আরএফএল গ্রুপসহ দেশি সব শিল্পপ্রতিষ্ঠান।
এ বিষয়ে এনবিআরের সদস্য খন্দকার মোহাম্মদ আমিনুর রহমান বলেন, কর মওকুফ সুবিধা সরকারি বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলো পাচ্ছে। বেসরকারি কোম্পানিগুলোর মধ্যে যেসব কোম্পানি বাংলাদেশে পণ্য উৎপাদন করে বিদেশে রফতানি করে তারা আমদানি ও রফতানি দুই ধরনের কর মওকুফ সুবিধা নিচ্ছে।
এনবিআর সূত্র জানায়, দেশি কোম্পানিগুলো ছাড়াও তৈরি পোশাক খাত, ওভেন এবং নিটওয়ার কোম্পানিগুলোর আমদানি-রপ্তানি পণ্যে কর মওকুফ সুবিধা পাচ্ছে। এছাড়াও সরকার আন্তর্জাতিক বাজারের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে নগদ অর্থের প্রণোদনা দিচ্ছে। এই তালিকায় রয়েছে তৈরি পোশাক খাতের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ, বিকেএমইএ এবং বিটিএমইএর সদস্যরা।
এদিকে গত ছয়মাসে এনবিআর ১ লাখ হাজার ৫ হাজার ১৬১ কোটি ৩৫ লাখ টাকার রাজস্ব আহরণ করেছে। এর পরিমাণ লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৩১ হাজার ৫০৭ কোটি ৬৩ লাখ টাকা ঘাটতি। আর শতাংশের হিসেবে ২৩ দশমিক ০৫ শতাংশ কম আদায় হয়েছে। অর্থাৎ প্রথম ছয় মাসে এখনো বড় অংকের ঘাটতি রয়েছে।
বিগত জুলাই-ডিসেম্বর সময় অর্থাৎ ৬ মাসে এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক লাখ ৩৬ হাজার ৬৬৮ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। কর, ভ্যাট এবং কাস্টমস এই তিন বিভাগ থেকে এনবিআর এই পরিমাণ রাজস্ব আহরণ করেছে।
এনবিআর বলছে, ছয়মাসে আমদানি-রপ্তানি থেকে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৩১ হাজার ৪২৩ কোটি ৮১ লাখ টাকা, স্থানীয় পর্যায়ে ভ্যাট ৪১ হাজার ৯০ কোটি ২২ লাখ টাকা ও আয়কর-ভ্রমণ করে ৩২ হাজার ৬৪৬ কোটি টাকা। যা মোট লক্ষ্যমাত্রার ৭৬ দশমিক ৯৫ শতাংশ আদায় করতে সক্ষম হয়েছে। অর্থাৎ ২৩ দশমিক ০৫ শতাংশ আদায় করতে পারেনি।
সেই হিসেবে চলতি অর্থবছরের ৬ মাস শেষে রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ দশমিক ৩৯ শতাংশ। কিন্তু রাজস্ব আদায়ের হার ১০-১১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি না হওয়া পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রা পূরণ সম্ভব হবে না। তাই এখন পর্যন্ত রাজস্ব ঘাটতি দাঁড়িয়েছে সাড়ে ৩১ হাজার কোটি টাকা।
তবে গত বছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি কিছুটা বেড়েছে। ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরের একই সময়ে প্রবৃদ্ধি ছিল ৬ দশমিক ৩৯ শতাংশ।
খাতওয়ারি রাজস্ব আদায়ের দিক দিয়ে দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি আয়কর আদায় হয়েছে। এনবিআরের এই বিভাগ টার্গেটের ৮১. দশমিক ৪৬ শতাংশ অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। এরপরই ভ্যাটের অবস্থান। ভ্যাটে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৭৯ দশমিক ০৩ শতাংশ আদায় হয়েছে। সবচেয়ে কম ৭০ দশমিক ৪৬ শতাংশ আদায় হয়েছে শুল্কে।
এ বিষয়ে রাজস্ব আদায় কম হওয়া নিয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘এ বছর রাজস্ব আদায়ে একটু পিছিয়ে আছি। বড় ঘাটতি হলেও ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছি। তবে বিগত পাঁচ বছরে প্রায় ১৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি কম অর্জন নয়।’
তিনি বলেন, আগামী পাঁচ বছরে রাজস্ব আদায় কয়েকগুণ বাড়বে। এতে দেশে উন্নয়ন গতিশীল হবে। সব বন্দরে স্ক্যানিং মেশিন বসানো হবে। ব্যবসা বাড়ানোর জন্য বন্দরে পণ্য জট কমাতে হবে। বন্দর গতিশীলে এনবিআরকে বিশেষ নজর দিতে হবে।
উল্লেখ্য, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের শেষ ছয় মাসে সোয়া এক লাখ কোটি টাকা আদায় হয়। আর গোটা অর্থবছরে মোট রাজস্ব আদায় হয় প্রায় দুই লাখ ২৪ হাজার কোটি টাকা। এতে ঘাটতি ছিল ৫৬ হাজার কোটি টাকা।
এমন ঘাটতির মুখে এনবিআরকে চলতি অর্থবছরে সোয়া তিন লাখ ২৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকার রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য দেয়া হয়। এর মধ্যে ভ্যাট খাতে সর্বোচ্চ এক লাখ ১৭ হাজার ৬৭১ কোটি ৮৫ লাখ টাকা লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয়। আর আয়কর খাতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এক লাখ ১৫ হাজার ৫৮৮ কোটি ১৬ লাখ ও শুল্ক খাতে ৯২ হাজার ৩৪০ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয়।

আবারও পিপলস লিজিংয়ের লেনদেন বন্ধের সময় বেড়েছে

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আর্থিক খাতের কোম্পানি পিপলস লিজিং ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের শেয়ার লেনদেন বন্ধ রাখার সময় আবারও বেড়েছে। কোম্পানিটিকে আজ বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) থেকে ১৪ দফায় আরও ১৫ দিন শেয়ার লেনদেন বন্ধ রাখার আদেশ দিয়েছে ডিএসই।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
জানা যায়, গত ১৪ জুলাই থেকে ১২ আগস্ট পর্যন্ত পিপলস লিজিংয়ের শেয়ার লেনদেন বন্ধের ঘোষণা করে ডিএসই। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ৯৩২তম বোর্ড সভায় সেই স্থগিতাদেশই বর্ধিত করে গত ১৩ আগস্ট থেকে ২৭ আগস্ট করা হয়।
এরপর আবারো দ্বিতীয় দফায় ২৮ আগস্ট থেকে ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এবং গত ১২ সেপ্টেম্বর থেকে ২৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত, চতুর্থ দফায় ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে ১৩ অক্টোবর, পঞ্চম দফায় ১৩ অক্টোবর থেকে ২৮ অক্টোবর, ৬ষ্ঠ দফায় ২৮ অক্টোবর থেকে ১০ নভেম্বর, সপ্তম দফায় ১১ নভেম্বর থেকে ২৫ নভেম্বর অষ্টম দফায় ২৬ নভেম্বর থেকে ১০ ডিসেম্বর, নবম দফায় ১১ ডিসেম্বর থেকে ২৪ ডিসেম্বর, দশম দফায় ২৬ ডিসেম্বর থেকে ৯ জানুয়ারি, ১১ দফায় ১২ জানুয়ারি থেকে ২৬ জানুয়ারি, ১২ দফায় ২৭ জানুয়ারি থেকে ১১ ফেব্রুয়ারি এবং ১৩ দফায় ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৬ ফেব্রুয়ারি পরযন্ত লেনদেন বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয় ডিএসই।

ডাকঘর সঞ্চয় স্কিমের সুদ হার আগের মতো: অর্থমন্ত্রী

দেশের সব ডাকঘর অটোমেশন করার পর আগামী ১৭ মার্চ থেকে ডাকঘর সঞ্চয় স্কিমের সুদ আগে অবস্থায় ফিরিয়ে নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
তিনি বলেন, অটোমেশন প্রক্রিয়ার পর ডাকঘর সঞ্চয় স্কিম ২ লাখের বেশি হলেও তাদের পরিচয় নিশ্চিত করতে টিআইএন নম্বর বাধ্যতামূলক করা হবে। সেদিন থেকে ডাকঘর সঞ্চয় স্কিমের সুদের হার আগের মতো ১১ দশমিক ২৮ এ আবারও ফিরে যাবো। এ সিদ্ধান্ত প্রথম পর্যায়ে বাস্তবায়ন হবে জেলা পর্যায়ে, এরপর উপজেলা পর্যায়ে।
গতকাল সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী এ কথা জানান। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ব্যাংকের মাধ্যমে সঞ্চয়পত্র কেনার ক্ষেত্রে অটোমেশন সম্পন্ন হয়েছে। তাই এখানে সেভিংসের অপব্যবহারের সুযোগ নেই। কিন্তু পোস্ট অফিসে অটোমেশন নেই। সেখানে অপব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। এজন্য সুদের হার বেশি হওয়ায় অনেক ধনী এখানে এসেছে। তাই সাময়িক সময়ের জন্য এ স্কিমে সুদহার কমানো হয়ে।
তিনি বলেন, ‘ডাকঘর স্কিমে সুদের হার ১১ দশমিক ২ শতাংশে ফেরানোর কথা যেহেতু দিয়েছি তখন কথা রাখব।’

সাড়ে ৪ লাখ টন সার আমদানি করছে সরকার

দেশের কৃষিখাতের উৎপাদন অব্যাহত রাখতে সৌদি আরবের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চুক্তির আওতায় দেশটি থেকে চার লাখ ৫০ হাজার টন ডিএপি সার আমদানির পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এতে মোট ব্যয় হবে এক হাজার ৩৭৯ কোটি ৫১ লাখ ৪২ হাজার টাকা।
রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সৌদি আরবের মা’আদেন ও বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি)’র মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তির আওতায় ক্রয় প্রস্তাব সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে।
ফসল উৎপাদনে ডাই-অ্যামোনিয়া ফসফেট (ডিএপি) সার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ। বাংলাদেশে ডিএপি সারের বাৎসরিক চাহিদা প্রায় ৯ লাখ মেট্রিক টন। এরমধ্যে বিএডিসি রাষ্ট্রীয় চুক্তির মাধ্যমে প্রায় ৬ লাখ মেট্রিক টন ডিএপি সার আমদানি করে। চাহিদার অবশিষ্ট ডিএপি সার বেসরকারি পর্যায়ে আমদানি করা হয়। সার আমদানির বিষয়ে অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদন রয়েছে।
বিএডিসি ও মা’আদেন এর মধ্যে ২০১৯ সালে সম্পাদিত চুক্তির কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়ায় বিদ্যমান চুক্তির শর্তসমূহ অভিন্ন রেখে ২০২০ সালের ২২ জানুয়ারি পুনরায় চুক্তি নবায়ন করা হয়। উক্ত চুক্তির আওতায় বিএডিসি মা’আদেন থেকে ২৫ হাজার মেট্রিক টনের ১৮টি লটে মোট ৪ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন ডিএপি সার আমদানি করবে। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সরাসরি ডিএপি সার ক্রয়ের জন্য মা’আদেন ও বিএডিসির মধ্যেকার চুক্তির আলোকেই সারের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
মা’আদেনের সঙ্গে বিএডিসি সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী সারের আন্তর্জাতিক বাজার দর সংক্রান্ত দুটি প্রকাশনা আরগুস ফসফেট ও ফার্টিকন এ প্রকাশিত এফওবি দরের গড় থেকে ৫ মার্কিন ডলার বিয়োগ করে আমদানিতব্য সারের মূল্য নির্ধারণ করা হয়।
বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে দর অনুযায়ী গত ২২ জানুয়ারি তারিখে প্রতি মেট্রিক টনের দাম ৩৪৭ দশমিক ৭৯ ডলার ছিল। সে হিসেবে মোট ব্যয় হবে ১৫ কোটি ৬৫ লাখ ৫ হাজার ৫০০ মার্কিন ডলার। প্রতি ডলার ৮৪ টাকা ৯৫ পয়সা হিসেবে মোট ব্যয় হবে এক হাজার ৩২৯ কোটি ৫১ লাখ ৪২ হাজার টাকা। অর্থ বিভাগের কাউন্টার গ্যারান্টির আওতায় সোনালী ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার মাধ্যমে এ সার আমদানি করা হবে।

শেয়ারবাজারে বড় পতন

বিনিয়োগের জন্য ব্যাংকগুলো ২০০ কোটি টাকার বিশেষ ফান্ড গঠন করতে পারবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এমন সার্কুলার জারির পর উত্থানে ফিরতে শুরু করেছিল শেয়ারবাজার। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সার্কুলার জারির পর কয়েক কার্যদিবস উত্থান হলেও আবার টানা পতনে নিমজ্জিত শেয়ারবাজার। গতকাল বুধবারও পতন হয়েছে শেয়ারবাজারে। এদিন বড় পতনে লেনদেন শেষ হয়েছে উভয় শেয়ারবাজারে। ঢাকা ও চট্টগাম স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই ও সিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
গতকাল প্রধান শেয়ারবাজার ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৭২ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছ ৪ হাজার ৫৪৯ পয়েন্টে। অপর সূচকগুলোর মধ্যে শরিয়াহ সূচক ১০, ডিএসই-৩০ সূচক ৩৩ এবং সিডিএসইটি সূচক ২০ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১০৬০, ১৫১৮ ও ৯০২ পয়েন্টে।
ডিএসইতে গতকাল টাকার পরিমাণে লেনদেন হয়েছে ৬২৭ কোটি ৩৪ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট। যা আগের দিন থেকে ২ কোটি ৩৪ লাখ টাকা কম। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৬২৯ কোটি ৬৮ লাখ টাকার।
ডিএসইতে গতকাল ৩৫৬টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৮৪টির বা ২৪ শতাংশের শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে। দর কমেছে ২২৬টির বা ৬৪ শতাংশের এবং ৪৬টি বা ১২ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দর অপরিবর্তিত রয়েছে।
ডিএসইতে গতকাল টাকার পরিমাণে সবচেয়ে বেশি অর্থাৎ ১৬ কোটি ৬২ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে গ্রামীণফোনের। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৬ কোটি ৪৫ লাখ টাকর ইন্দো-বাংলা ফার্মার এবং তৃতীয় সর্বোচ্চ ১৫ কোটি ৭২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে ভিএফএস থ্রেড ডাইংয়ের।
এছাড়া ডিএসইতে টপটেন লেনদেন থাকা অপর কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে ব্র্যাক ব্যাংক, ন্যাশনাল পলিমার, আরডি ফুড, লাফার্জহোলসিম, ওরিয়ন ইনফিউশন, স্কয়ার ফার্মার এবং গোল্ডেন হার্ভেস্ট এগ্রো।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই এদিন ২০৮ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ৯৪১ পয়েন্টে। এদিন সিএসইতে হাত বদল হওয়া ২৫০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শেয়ার দর বেড়েছে ৮১টির, কমেছে ১৪০টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২৯টির দর। গতকাল সিএসইতে ৩৩ কোটি ৪০ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।

শেয়ারবাজার উন্নয়নের পূর্বশর্ত আর্থিক প্রতিবেদনের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা: বিএসইসি

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান ড. এম খায়রুল হোসেন বলেন, ২০১০-১১ সালে শেয়ারবাজারে পতনের কারন হিসাবে অনেক কিছু সনাক্ত করি। এরমধ্যে অন্যতম কারণ ছিল আর্থিক হিসাবে (ফাইন্যান্সিয়াল স্টেটমেন্টে) কোম্পানিগুলোর প্রকৃত অবস্থা ছিল না। অথচ শেয়ারবাজারের উন্নয়নের পূর্বশর্ত হচ্ছে স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক আর্থিক হিসাব। যা বাস্তবায়নের জন্য এবং সবাইকে জবাবদিহিতার আওতায় আনার জন্য ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং অ্যাক্ট (এফআরএ) তৈরী করা হয়েছে।
গতকাল সকালে আগারগাঁওয়ের বিএসইসি মাল্টিপারপাস হলে ‘ফাইন্যান্সিয়াল স্টেটমেন্ট অ্যানালাইসিস অ্যান্ড ডিটেকশন অব ফ্রড’ বিষয়ক সেমিনারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, আমরা ২০১১ সালে দায়িত্ব নেয়ার পর অন্যতম দুইটি দাবি ছিল। দাবি দুইটির মধ্যে একটি হলো স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল গঠন করা এবং অন্যটি হলো ফাইন্যান্সিয়াল রিপোটিং অ্যাক্ট করা। আমাদের দাবির ফলে সরকার ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং অ্যাক্ট পালার্মেন্টে পাস করে।
খায়রুল হোসেন বলেন, আজ (গতকাল বুধবার) সবাইকে নিয়ে এই সেমিনার করার উদ্দেশ্য হলো সাংবাদিকরা যা বুঝে যাবে, স্টেকহোল্ডাররা যদি অন্যভাবে বুঝে তাহলে সেখানে গন্ডগোল থেকে যাবে। কাজেই আমি চাচ্ছি আমরা সবাই একইসাথে এবং একইরকমভাবে বুঝি। একইসাথে তাদের জ্ঞান ভান্ডারকে সমৃদ্ধ করা, টেকনিকগুলো তাদের আয়ত্ব করা। যাতে করে এই শেয়ারবাজারে সাংবাদিকেরা আইপিও অনুমোদনের আগেই সমস্যাগুলো ধরতে পারে। তাতে করে রেগুলেটররা অর্থাৎ আমরা অনেক শক্তিশালী হবো ও বিনিয়োগকারীরা উপকৃত হবে। এছাড়া শেয়ারবাজার স্থিতিশীলতার দিকে যাবে ও শক্তিশালী হবে। আল্টিমেটলি একটা মার্কেট গড়ে তুলতে আমার অনেকটা সমর্থন হবে। কারণ ইনফর্মেশনে যদি গলদ থাকে কোনো দিন কার্যকর মার্কেট গড়ে উঠবে না।
আমাদের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য হলো প্রটেকশন অব ইন্টারেস্ট অব ইনভেস্টর। যে অসহায় বিনিয়োগকারীরা বিভিন্ন জায়গায় ঘুরত, তাদের প্রতিটা বেদনা, যেভাবে তাদের বিভিন্নভাবে হয়রানি হতে হতো, সেগুলো অ্যাড্রেস করার উপায় তারা কমপ্লেইন্ট মডিউলের মাধ্যমে পেলো। আমরা গতকাল কে পরিসংখ্যানের মাধ্যমে দেখলাম যে, ৯৫ শতাংশ সমস্যা অ্যাড্রেস করা হয়েছে। কাজেই এই মডিউলটা সৃষ্টি করে সকল স্টেকহোল্ডারদের জবাবদিহিতার জায়গা তৈরি হয়েছে।
ফাইন্যান্সিয়াল স্টেটমেন্ট বিশ্লেষণের উপর কেন আমরা গুরুত্ব দিয়েছি উল্লেখ করে খায়রুল হোসেন বলেন, আমরা সাংবাদিকদের প্রাধান্য দিয়ে গতকাল কে এই মিটিংটি আয়োজন করেছি। আমি বারবার বলি যে সমাজে কি ঘটছে, ক্যাপিটাল মার্কেটে কি ঘটছে, অর্থনীতিতে কি ঘটছে এগুলোকে জনগণের সামনে তুলে ধরার সবচেয়ে বড় মাধ্যম হলো সাংবাদিকেরা। তাদের বোঝাপড়া যদি পরিস্কার থাকে, তাহলে অনেক কিছুই পরিস্কার হয়ে যাবে। তাদেরকে শক্তিশালী করার জন্যই গতকাল কের এই সেমিনার।
ফাইন্যান্সিয়াল রিপোটিংয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো ফাইন্যান্সিয়াল স্টেটমেন্ট। ফাইন্যান্সিয়াল স্টেটমেন্ট কাদের জন্য দরকার উল্লেখ করে বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেন, কোম্পানির নিজের জন্য দরকার, যারা বিশ্লেষন করে তাদের জন্য, বিনিয়োগকারীর জন্য, যারা মার্জার ইকুইজেশন করছে তাদের জন্য, যারা ভেঞ্জার, ক্যাপিটাল, ইমপেক্ট ফান্ড ও প্রাইভেট ইকুইটি ইনভেস্ট করছে তাদের জন্য এবং ফাইন্যান্সিয়াল সেক্টরে ক্রেডিট রেটিং করার ক্ষেত্রে বিচার করার জন্য দরকার। অনেক ক্ষেত্রেই দরকার। কিন্তু ফাইন্যান্সিয়াল স্টেটমেন্ট যদি প্রকৃত অবস্থার চিত্র ফুটে না উঠে, তাহলে সে স্টেটমেন্ট কাজে দিবে না।
তিনি বলেন, উন্নত দেশে ফাইন্যান্সিয়াল স্টেটমেন্টে প্রকৃত চিত্র উঠে আসে। এতে ওইসব দেশের কোম্পানির পারফরমেন্স, অতীতের পারফরমেন্স এবং ভবিষতের সম্ভাবনা ধারনা করা যায়। আমাদের দেশে তার উল্টোটা।
খায়রুল হোসেন বলেন, আমরা জানি কম্পিউটার কিছুই না। আর্থিক হিসাবের ইনপুট যদি ভুল থাকে, সেখানে যদি মিথ্যা ও কৃত্রিম তথ্য থাকে, অতিমূল্যায়িত বা অবমূল্যায়িত তথ্য থাকে, তা দ্বারা আপনি যতই বিশ্লেষন করেন, এতে বিনিয়োগকারী ক্ষতিগ্রস্ত হবে, অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কাজেই সেজন্য ফাইন্যান্সিয়াল স্টেটমেন্ট বিশ্লেষনে বিভিন্ন যে দিকগুলো আছে, সেগুলো আপনারা জেনে নিবেন।
বিনিয়োগকারী বিনিয়োগের আগে কি দেখেন উল্লেখ করে খায়রুল হোসেন আরো বলেন, বিনিয়োগকারী দেখে এই কোম্পানিটির ডিভিডেন্ড প্রদান করার সামর্থ্য আছে কিনা। তারা আরেকটা জিনিস দেখবে, তা হলো কোম্পানিটির ইনকাম জেনারেশন এবং ক্যাশ ফ্লো কি হবে। এরপর বিনিয়োগকারীরা দেখবে কোম্পানিটির অতীত কি ছিল, বর্তমান পারফরমেন্স কি এবং ভবিষ্যতটা কি। এছাড়া সংশ্লিষ্ট সেক্টরের মধ্যে কোম্পানিটির অবস্থা কি। এরপরে বিনিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
কোম্পানি নিজে যদি মনে করে আমার ব্যালেন্স সিট ঠিক আছে, আমার অন্যান্য স্টেটমেন্টগুলো ঠিক আছে। তাহলে সে দেখবে রিটার্ন এবং ইকুইটি কোন অপারেশন্স থেকে বেশি আসছে। তাহলে সে অপারেশন্সকে সাপোর্ট দিতে গেলে আমার সম্প্রসারণ কোন দিকে নিতে হবে। সম্প্রসারণ কোথায় বেশি হচ্ছে অর্থাৎ কস্ট মিনিমাইজেশন এবং ইনকাম জেনারেশন মেক্সিমাইজেশন করার যথেস্ট পরিকল্পনাটিও যথাযথভাবে গ্রহণ করতে পারবে কি না। অন্যথায় কোম্পানি নিজে যেমন বঞ্চিত হবে, মার্কেট ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং বিনিয়োগকারীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। মার্কেটে স্থিতিশীলতা থাকবে না।
ফাইন্যান্সিয়াল স্টেটমেন্ট তৈরি করে কোম্পানি। তারা ইনপুট দেওয়া তথ্যে কাজ করে অডিটর। কাজেই তাদের দায়িত্ব কি? গতকাল কে অনেকে বলবে আমাদের একটি অডিট করলে যেই পরিমাণ টাকা দেয়, সে পরিমাণ টাকায় আমরা করতে পারছি না। এজন্য আমরা এপ্রিল মাসে অডিটরদের নিয়ে একটা সেমিনার করবো। তাদের দায়-দায়িত্ব কি, তাদের দূর্বলতা কি? আমরা সেগুলোকে সনাক্ত করে তুলে ধরবো। অডিটররা যদি বলে ঠিক মতো তাদের টাকা-পয়সা দেয়া হয় না। সেগুলো আমরা সনাক্ত করার চেষ্টা করবো, একইসাথে তাদের জবাবদিহিতার মধ্যে আনবো। যারা প্যানেল অডিট আছে, তারা যাতে দায়িত্বটা যথাযথভাবে পালন করে, সে ব্যবস্থা আমরা নিবো।

তিনি বলেন, কিছু কোম্পানির ক্ষেত্রে প্রথম প্রান্তিকে শেয়ারপ্রতি লোকসান ২ পয়সা, দ্বিতীয় প্রান্তিকে ১২ পয়সা ও তৃতীয় প্রান্তিকে ২৪ পয়সা লোকসান। কিন্তু হঠাৎ করেই পরবর্তী প্রান্তিকে শেয়ারপ্রতি মুনাফা ২.৫০ টাকা। আবার ফার্স্ট কোয়াটার, সেকেন্ড কোয়াটারে ইপিএস হলেও ফাইনালি দেখালো ইপিএস ফল্ট করেছে। এমন অসত্য প্রাইস সেনসেটিভ ইনফর্মেশন দিয়ে কিছু বিনিয়োগকারীকে সর্বশান্ত করে কোম্পানিগুলো সুবিধা নিচ্ছে।
বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা একদিকে শক্তিশালী, অন্যদিকে অসহায়। একটা রেগুলেটরে মাত্র ৮৪ জন অফিসার। আর পিয়ন ও দায়োয়ান নিয়ে আমরা ১৬০ জন কাজ করি। আমাদের এরিয়া অব কাভারেজ বাংলাদেশ ব্যাংকের চেয়েও অনেক বড়। তারা শুধু ব্যাংক এবং নন-ব্যাংক ফাইন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউশন নিয়ে কাজ করে। তাদের সেখানে ৭ থেকে ৮ হাজার লোকবল রয়েছে। আমরা ব্যাংক এবং নন-ব্যাংক ফাইন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউশন, মার্চেন্ট ব্যাংক, ব্রোকারেজ হাউজ, স্টক এক্সচেঞ্জ, অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট, ফার্ম ম্যানেজার এবং ক্রেডিট রেটিং কোম্পানি থেকে শুরু করে আনলিস্টেড কোম্পানির সবাইকে আমাদের কাভার করতে হয়। অথচ আমাদের লোকবল মাত্র ৮৪ জন। অর্গনোগ্রাম হচ্ছে হচ্ছে, যা চূড়ান্ত পর্যায়ে। কিন্তু এখনো লোকবল নিয়োগ করার পর্যায়ে আমরা পৌছাইনি।
আমরা অসহায়ত্ববোধ কোথায় করি উল্লেখ করে তিনি বলেন, কোম্পানির মধ্যে অডিট কমিটির প্রধান হবেন একজন স্বাধীন পরিচালক, সিএফও’র দায়িত্ব কি, এমডির দায়িত্ব কি, চেয়ারম্যানের দায়িত্ব কি, অডিটরের দায়িত্ব কি- এসব কিছু নির্ধারন করে দেওয়া হয়েছে। এরপরে ডিসক্লোজার ভিত্তিতে আইপিও দেওয়ার পরেও সমস্ত দোষ পরে কমিশনের উপরে। সেকেন্ডারি মার্কেট পরে গেলেও কমিশনকে দোষারোপ। অথচ আমাদের কোন বিনিয়োগ নাই। আমরা কারসাজি হলে ধরি, ডিমান্ড-সাপ্লাই ঠিক রাখি এবং এখানে যদি কেউ রিউমার ছড়ায়, তাদেরকে আইনের আওতায় আনি। তারপর মার্কেট উঠা-নামা করার জন্য আমাদেরকে সমস্ত দোষ দেওয়া হয়। রেগুলেটের হিসাবে এখানে অসয়াত্ববোধ আমাদের।
অনুষ্ঠানে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও বাংলাদেশ একাডেমি অব সিকিউরিটি মার্কেটিংয়ের (বিএএসএম) ডিজি মো. মাহবুবুল আলম, বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ফরহাদ আহমেদ, বিএসইসির পরিচালক কামরুল আনাম খান, এফআরসির নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন আহমেদ, সিডিবিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও শুভ্র কান্তি চৌধুরী, সিএমজেএফের প্রেসিডেন্ট হাসান ইমাম রুবেল এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিনান্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।

বিএসইসির অনলাইনে অভিযোগ: ৬ মাসে ৯৫ শতাংশ নিষ্পত্তি

পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের সুবিধার্থে এবং তাদের স্বার্থ রক্ষায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) গত সেপ্টেম্বর অনলাইনে অভিযোগ করতে এবং তা দ্রুত নিষ্পত্তিতে ‘ কাস্টমার কম্প্লাইন এড্রেস মডিউল’ চালু করে। অনলাইন মডিউল চালু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত ৯৪ দশমিক ৭০ শতাংশ অভিযোগ নিষ্পত্তি করা হয়েছে। বিএসইসি সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০ পর্যন্ত ২০৬টি অভিযোগ জমা হয়। এর মধ্যে ১৯৫টি অভিযোগ নিশ্পত্তি করা হয়েছে। বর্তমানে ১১টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। গড়ে এর নিষ্পত্তির সময় হচ্ছে সাড়ে ১৪ দিন। এর মধ্যে হলিডে এবং সরকারি ছুটির দিনও রয়েছে।
তথ্য অনুযায়ী সবচেয়ে বেশি অভিযোগ জমা পড়েছে গত বছরের অক্টোবরে। সে মাসে মোট ৮২টি অভিযোগ জমা পড়েছে। এবং ৮২টির সবগুলোই নিষ্পত্তি করা হয়েছে। এর পরের মাসে (নভেম্বর ২০১৯) অভিযোগ জমা পড়ে ৫৬টি ও ডিসেম্বর মাসে জমা পড়ে ২৭টি। দুই মাসের সবকটি অভিযোগ নিষ্পত্তি করা হয়েছে। সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত জমা পড়া কোনো অভিযোগ বাকি নেই। সবগুলো নিষ্পত্তি করা হয়েছে।
অপরদিকে চলতি বছরের জানুয়ারিতে অভিযোগ জমা পড়েছে ১৯টি, নিষ্পত্তি হয়েছে ১৮টি এবং চলমান রয়েছে ১টি। আর ফেব্রুয়ারিতে সর্বশেষ তথ্য মতে (২৬ তারিখ) অভিযোগ জমা পড়েছে ২১টি, নিষ্পত্তি হয়েছে ১১টি এবং চলমান রয়েছে ১০টি। গত দুই মাসে ১১টি অভিযোগ চলমান রয়েছে।
গতকাল বুধবার মুজিব বর্ষকে সামনে রেখে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে এবং জবাবদিহিতার আলোকে অনলাইন মডিউলটির পরিসংখ্যান বিভাগ সবার জন্য উনমুক্ত করা হয়। এখন থেকে কতটি অভিযোগ জমা হয়েছে, কতটি নিষ্পত্তি হয়েছে এবং কতটি চলমান রয়েছে তা সকলেই দেখতে পারবে।
গতকাল বিএসইসি কর্তৃক আয়োজিত ‘ফাইন্যান্সিয়াল স্টেটমেন্ট অ্যানালাইসিস অ্যান্ড ডিটেকশন অব ফ্রড’ বিষয়ক সেমিনারে এটি উনমুক্ত করেন বিএসইসির চেয়ারম্যান ড. এম খাইরুল হোসেন।
এ সময় বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ফরহাদ আহমেদ বলেন, এই মডিউলটি চালু করার সময় আমরা আমাদের স্টেকহোল্ডার ডিএসই, সিএসই ও সিডিবিএল এর সাথে কয়েক দফা আলোচনা করেছি এবং আলোচনা অনেক সময় নিয়ে করেছি। বেশ সময় দিয়েছি, পরিশ্রম করেছি, সবচেয়ে বড় কথা এটা আমরা প্যাশন নিয়ে করেছি। এটা করার সময় বেশ কয়েকটি চ্যালেঞ্জ এর সম্মুখীন হতে হয়েছে।
প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল যে, বিনিয়োগকারীরা কাগজে অভিযোগ করে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। ঠিক তাদেরকে ৩৬০ ডিগ্রি পরিবর্তন করে একটি অনলাইন মডিউলে আনা। বিনিয়োগকারীরা কিভাবে নিবেন সেটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জটি ছিল আমাদের সিকিউরিটিজের সাথে কম-বেশি এক হাজার ইনস্টিটিউট যুক্ত। তাদের সবাইকে একসাথে লাইন অফ করা। এবং তারা যেন অনলাইন মডিউল এর মাধ্যমে অভিযোগ দ্রুত নিষ্পত্তি করেন সেটাও একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
তৃতীয় আরেকটি চ্যালেঞ্জ ছিল অনেকেই বলেছেন অনলাইন মডিউলটি চালু করে আমরা একটি ঝামেলা বাক্স করছি কিনা। অনলাইনে অভিযোগ করবেন, আবার নিষ্পত্তি হবে এতে ঝামেলার সৃষ্টি হবে বলে মনে করেছেন। তবে আমি খুশি মনে বলতে চাই এই সমস্ত চ্যালেঞ্জ অনেক ভালোভাবে সমাধান হয়েছে। এটা ভালোভাবে চলছে।
তিনি আরও বলেন, এই কাজটার মাধ্যমে যদি ভালো কিছু হয়ে থাকে তবে এটার দাবিদার আমার বিভাগ বা কমিশন না। কারণ এটা আমাদের কাজ। আমি ধন্যবাদ জানাবো আমাদের পার্টনার সিডিবিএলকে এবং এই সিস্টেমটি যিনি লিখেছেন সিডিবিএল এর ভ্যালু এডেড সার্ভিসেস এর প্রধান রাকিবুল ইসলাম চৌধুরী।
দ্বিতীয়ত আমি ধন্যবাদ দিবো আমাদের সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)-কে। কারণ এই কাজের ৯০ শতাংশ তাদের উপর ছিল। তারাও এটা নিষ্ঠার সাথে করেছেন। সাথে নতুন যারা বাজারে যুক্ত হচ্ছে তাদেরকেও জানিয়ে দিচ্ছেন।
তৃতীয়ত ধন্যবাদ জানাচ্ছি আমাদের ক্যাপিটাল মার্কেট সাংবাদিকদের। কারণ তারা এই বিষয়টি নিয়ে লিখে বিনিয়োগকারীদের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। তাই আমি বিএসইসির কাছে অনুরোধ রাখবো তাদেরকে যেন এক সময় সম্মানিত করা হয়। যারা অনলাইন মডিউলের মাধ্যমে অভিযোগ দ্রুত নিষ্পত্তি করেছেন তাদেরও যেন সম্মানিত করা হয়।

ব্লকে ১৭ কোটি টাকার লেনদেন

গতকাল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ব্লক মার্কেটে ১৫টি কোম্পানি লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব কোম্পানির ১৭ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, কোম্পানিগুলোর ৪৯ লাখ ৫৭ হাজার ৯৯৬২টি শেয়ার ১৮ বার হাত বদল হয়েছে। এর মাধ্যমে কোম্পানিগুলোর ১৭ কোটি ১৯ লাখ ৪০ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্থাৎ ৫ কোটি ৮৯ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে যমুনা ব্যাংকের। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩ কোটি ৩ লাখ ৬৬ হাজার টাকার বেক্সিমকো ফার্মার এবং তৃতীয় সর্বোচ্চ ২ কোটি ৯৫ লাখ ৭৫ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে ওরিয়ন ইনফিউশনের।
এছাড়া আনোয়ার গ্যালভানাইজিংয়ের ১৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকার, ব্র্যাক ব্যাংকের ৩৫ লাখ ১০ হাজার টাকার, দুলামিয়া কটনের ১৭ লাখ ১০ হাজার টাকার, গোল্ডেন হার্ভেস্ট এগ্রোর ১ কোটি ১০ লাখ ৫৪ হাজার টাকার, কাট্টালি টেক্সটাইলের ৮ লাখ ৪০ হাজার টাকার, মেরিকোর ৮ লাখ ৯৩ হাজার টাকার, অলিম্পিকের ৭৬ লাখ ৭৩ হাজার টাকার, সায়হাম কটনের ১০ লাখ ৬৫ হাজার টাকার, সোনারবাংলা ইন্স্যুরেন্সের ৫ লাখ ২০ হাজার টাকার, স্ট্যান্ডার্ড সিরামিকের ২২ লাখ টাকার এবং ইয়াকিন পলিমারের ১৯ লাখ ৮৪ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।

পরিকল্পনা মন্ত্রীর সাথে বিএমবিএ’র নেতৃবৃন্দের সৌজন্য সাক্ষাত

পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নানের সাথে সৌজন্য সাক্ষাত করেছেন বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) নেতৃবৃন্দ।
গতকাল বিএমবিএ’র সভাপতি ছায়েদুর রহমানের নেতৃত্বে সংগঠনটির নেতারা পরিকল্পনা মন্ত্রীর সাথে এই সৌজন্য সাক্ষাত করেন।
সাক্ষাতে পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার শেয়ারবাজারের প্রতি আন্তরিক। শেয়ারবাজারের উন্নয়নে সরকার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বাজারে যার প্রতিফলন দৃশ্যমান হয়েছে। এছাড়া শেয়ারবাজারের উন্নয়নে সরকার ভবিষ্যতেও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।
এসময় সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক রিয়াদ মতিন, নির্বাহি কমিটির সদস্য খায়রুল বাশার, মাহবুব এইচ মজুমদার ও মোহাম্মদ ওবায়দুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

সুন্দরবনটাইমস.কম/রহমান আজিজ/ঢাকা


আপনার মতামত লিখুন :

নিজস্ব প্রতিবেদক