ডিএসইতে লেনদেন ছাড়ালো ৫’শ কোটি টাকা ও অন্যান্য অর্থনীতি সংবাদ

প্রকাশিত: ১১:০৪ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ৩, ২০২০ | আপডেট: ১১:০৫:অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ৩, ২০২০

ডিএসইতে লেনদেন ছাড়ালো ৫’শ কোটি টাকা

সোহাগ মাল্টিমিডিয়া এন্ড ট্র্যাভেলস

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক, ঢাকা:
রবিবারের মতো সোমবারও উত্থানে শেষ হয়েছে শেয়ারবাজারের লেনদেন। এদিন উভয় শেয়ারবাজারের সব সূচক, টাকার পরিমাণে লেনদেন এবং বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) টাকার পরিমাণে লেনদেন ৫’শ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই ও সিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
গতকাল ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ২৫ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৫০৭ পয়েন্টে। অপর সূচকগুলোর মধ্যে শরিয়াহ সূচক ৮ পয়েন্ট, ডিএসই-৩০ সূচক ১১ পয়েন্ট এবং সিডিএসইটি সূচক ৬ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১০৩৫, ১৫৩৬ এবং ৯১৯ পয়েন্ট।
ডিএসইতে গতকাল টাকার পরিমাণে লেনদেন হয়েছে ৫০৬ কোটি ৩৫ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট। যা আগের দিন থেকে ৪১ কোটি ৬৮ লাখ টাকা বেশি। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৪৬৪ কোটি ৬৭ লাখ টাকার।
ডিএসইতে গতকাল ৩৫৫টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৯৬টির বা ৫৫ শতাংশের শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে। দর কমেছে ১১৭টির বা ৩৩ শতাংশের এবং ৪২টি বা ১২ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দর অপরিবর্তিত রয়েছে।
টাকার অংকে ডিএসইতে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে লাফার্জহোলসিমের শেয়ার। এদিন কোম্পানিটির ৪০ কোটি ৮৪ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। লেনদেনে দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসা খুলনা পাওয়ারের ২৪ কোটি ৮১ লাখ টাকার এবং ২০ কোটি ২৪ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে উঠে আসে সামিট পাওয়ার।
ডিএসইর টপটেন লেনদেনে উঠে আসা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে : বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন, গ্রামীণফোন, রিংশাইন, এডিএন টেলিকম, স্কয়ার ফার্মা, এসএস স্টিল এবং বিবিএস কেবলস।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই এদিন ৬৩ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ৭১৫ পয়েন্টে। এদিন সিএসইতে হাত বদল হওয়া ২৪৭টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শেয়ার দর বেড়েছে ১৩৯টির, কমেছে ৭৬টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৩২টির দর। গতকাল সিএসইতে ২৩ কোটি ৪১ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।

ব্লকে লেনদেন ১৬ কোটি টাকা

সোমবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ব্লক মার্কেটে ১২টি কোম্পানি লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব কোম্পানির ১৬ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, ব্লক মার্কেটে অংশ নেয়া কোম্পানিগুলোর ২৭ লাখ ৬৬ হাজার ৭৯৭টি শোর ২৩ বার হাত বদল হয়েছে। এর মাধ্যমে কোম্পানিগুলোর ১৬ কোটি ৯ লাখ ২৪ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্থাৎ ব্র্যাক ব্যাংকের ৫ কোটি ৯২ লাখ ৬৩ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৫ কোটি ৫৩ লাখ ৭১ হাজার টাকার স্কয়ার ফার্মার এবং তৃতীয় সর্বোচ্চ ১ কোটি ৭৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে উত্তরা ব্যাংকের।
এছাড়া এডিএন টেলিকমের ৫ লাখ ৭৯ হাজার টাকার, ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্সের ১ কোটি ১৪ লাখ টাকার, ফাইন ফুডসের ৯ লাখ ৯৫ হাজার টাকার, গোল্ডেন হার্ভেস্ট এগ্রোর ১৬ লাখ ১ হাজার টাকার, নর্দার্ণ জুটের ৯ লাখ ১২ হাজার টাকার, ওরিয়ন ইনফিউশনের ৫ লাখ ৬০ হাজার টাকার, রহিম টেক্সটাইলের ১০ লাখ ৪৪ হাজার টাকার, স্ট্যান্ডার্ড সিরামিকের ৬০ লাখ টাকার এবং স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্সের ৫৭ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।

লেনদেনের শীর্ষে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত

সোমবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ১৯টি খাতের ৩৫৫টি কোম্পানির ৫০৬ কোটি ৩৫ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। খাতগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্থাৎ ৭৪ কোটি ৮২ লাখ টাকার বা ১৫.২৮ শতাংশ লেনদেন হয়েছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে। এর মাধ্যমে এই খাত লেনদেনের শীর্ষ স্থানে উঠে এসেছে।
গতকাল ৬৮ কোটি ৮৩ লাখ টাকা বা ১৪.০৫ শতাংশ লেনদেনে হলে দ্বিতীয় উঠে আসে প্রকৌশল খাত এবং ৬৬ কোটি ৮৭ লাখ টাকা বা ১৩.৬৫ শতাংশ লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় নেমে যায় বস্ত্র খাত।
এছাড়া সিমেন্ট খাতে ৪৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা বা ৮.৯৩ শতাংশ, ওষুধ ও রসায়ন খাতে ৪৩ কোটি ১১ লাখ টাকা বা ৮.৮০ শতাংশ, বীমা খাতে ৪২ কোটি ৮১ লাখ টাকা বা ৮.৭৪ শতাংশ, বিবিধ খাতে ২৯ কোটি ৩৬ লাখ টাকা বা ৫.৯৯ শতাংশ, খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতে ২২ কোটি ৭২ লাখ টাকা বা ৪.৬৪ শতাংশ, টেলিযোগাযোগ খাতে ২২ কোটি ৭১ লাখ টাকা বা ৪.৬৪ শতাংশ, ব্যাংক খাতে ১৭ কোটি ৩৩ লাখ টাকা বা ৩.৫৪ শতাংশ, তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ১৬ কোটি ৭ লাখ টাকা বা ৩.২৮ শতাংশ, আর্থিক খাতে ১০ কোটি ১২ লাখ টাকা ব ২.০৭ শতাংশ, মিউচ্যুয়াল ফান্ড খাতে ৭ কোটি ৬২ লাখ টাকা বা ১.৫৬ শতাংশ, সিরামিকস খাতে ৬ কোটি ৪৬ লাখ টাকা বা ১.৩২ শতাংশ, সেবা ও আবাসন খাতে ৩ কোটি ৯৯ লাখ টাকা বা ০.৮১ শতাংশ, পাট খাতে ৩ কোটি ৬৬ লাখ টাকা বা ০.৭৫ শতাংশ, পেপার ও প্রিন্টিং খাতে ৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা বা ০.৬৯ শতাংশ, ভ্রমণ ও অবকাশ খাতে ৩ কোটি ৭ লখ টাকা বা ০.৬৩ শতাংশ এবং চামড়া খাতে ৩ কোটি ৬ লাখ টাকা বা ০.৬৩ শতাংশ লেনদেন হয়েছে।

পুঁজিবাজার গতিশীল করতে আইপিও’র সংস্কার জরুরি: সিএমজেএফের সঙ্গে বিএমবিএ’র বৈঠক

অস্থিরতা কাটিয়ে দেশের পুঁজিবাজারকে দীর্ঘমেয়াদে গতিশীল করতে আইপিও (প্রাথমিক শেয়ার) প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা জরুরি। এক্ষেত্রে বিদ্যমান সময় সীমা কমিয়ে আনতে হবে। পাশাপাশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়াতে কোম্পানির অডিট রিপোর্ট (নিরীক্ষা প্রতিবেদন) হতে হবে স্বচ্ছ। বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স এসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) নেতাদের সঙ্গে শেয়ারবাজারের রিপোর্টারদের সংগঠন ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্ট’স ফোরামের (সিএমজেএফ) কার্যনির্বাহী কমিটির মতবিনিময় সভায় গতকাল এসব বিষয়ে উঠে আসে। বিএমবিএ’র কার্যালয়ে এ সভায় বক্তব্য রাখেন সংগঠনটির সভাপতি মো. ছায়েদুর রহমান, সিএমজেএফের সভাপতি হাসান ইমাম রুবেল, বিএমবিএ’র সাধারণ সম্পাদক রিয়াদ মতিন, সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মনিরুজ্জামান, অর্থ সম্পাদক এয়ার কমোডর (অব.) আবু বকর, কার্যনির্বাহী সদস্য মাহবুব হোসেন মজুমদার, সিএমজেএফের সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেন, সহ-সভাপতি এমএম মাসুদ, অর্থ সম্পাদক আবু আলী, কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য সুজয় মহাজন, মাহফুজুল ইসলাম, ইব্রাহিম হোসেন অভি, নিয়াজ মাহমুদ এবং নাজমুল ইসলাম ফারুক।
বক্তারা বলেন, শেয়ারবাজারের উন্নয়নের ক্ষেত্রে দেশে সেকেন্ডারি মার্কেট বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়। কিন্তু ভাল কোম্পানি না এলে বাজারের উন্নয়ন সম্ভব নয়। ফলে আইপিওতে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। ছায়েদুর রহমান বলেন, পুঁজিবাজারে অস্থিরতা চলছে। এজন্য আইপিও প্রক্রিয়া দায়ী। এ কারণে আইপিওতে নজর দিতে হবে। তিনি বলেন, বাজার নিয়ে বিভিন্ন সময়ে অনেক কথা বলা হয়। কিছু ক্ষেত্রে আমাদের অভিজ্ঞতার ঘাটতি ছিল। যেমন ২০১০ সালের পর বাজারে ফোর্সড সেল (বাধ্যতামূলক শেয়ার বিক্রি) বন্ধ করে রাখা হয়েছিল। যে কারণে ১৫ হাজার কোটি টাকার নেতিবাচক ইক্যুইটি তৈরি হয়েছে। তারমতে, কোয়ালিটি সম্পূর্ণ কোম্পানির কথা আসছে। এই ধরনের কোম্পানির একটি সংজ্ঞা নির্ধারন করা দরকার। তিনি আরও বলেন, ২০১০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বাজার এক ধরনের অবস্থার মধ্যদিয়ে চলেছে। তখন এতবেশি অস্থির ছিল না। কিন্তু ২০১৮-২০১৯ সালে এসে বেশি অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। এর অনেকগুলো কারণ রয়েছে। তারমধ্যে অন্যতম হল ২ বছরে অনেকগুলো অব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান (লিজিং কোম্পানি) বাজার থেকে টাকা তুলে নিয়েছে। এছাড়াও গ্রামীণফোনের সঙ্গে জটিলতায় বাজারে প্রভাব পড়েছে। তারমতে, গ্রামীণফোনের শেয়ারের দাম ১ টাকা কমলে সূচক আড়াই থেকে ৩ পয়েন্ট কমে। এছাড়াও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ১ হাজার থেকে ১২শ কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি করেছে। বাজারে এর প্রভাব পড়েছে।
হাসান ইমাম রুবেল বলেন, বাজারে ভাল আইপিও আনার ক্ষেত্রে মার্চেন্ট ব্যাংকের ভুমিকা রয়েছে। তাদেরকে সঠিকভাবে এই দায়িত্ব পালন করা উচিত। তারমতে, দেশের নীতি নির্ধারকদের শেয়ারবাজার মূল্যায়নের ক্ষেত্রে এক ধরনের সমস্যা রয়েছে। কারণ তারা বাজার বলতে সেকেন্ডারি মার্কেট বুঝে। এমনকি অর্থনীতিবিদদের মধ্যেও কেউ কেউ আইপিও বন্ধ করে দিতে বলেছে।
রিয়াদ মতিন বলেন, আগের চেয়ে বর্তমানে কোম্পানিতে স্বচ্ছতা এসেছে। ১৯৯৬ সালের পর কোম্পানি হলেও তালিকাভুক্তি সম্ভব ছিল। ২০০০ সাল পর্যন্ত এ অবস্থা ছিল। এরপর পরিবর্তন আসে। বর্তমানে আইপিওর ক্ষেত্রে আরও কঠোরতা এসেছে। অনেকগুলো দিক পরিপূর্ণ করতে হয়। এরপরও আমরা সব ভাল কোম্পানি আনতে পেরেছি, এমনটা বলা যাবে না। তিনি বলেন, মার্চেন্ট ব্যাংকারদের অনেক দায়িত্ব রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে কর্পোরেট অ্যাডভাইজারিও করতে হয়। এছাড়াও কোম্পানির অডিট রিপোর্টের ক্ষেত্রে ফাইন্যান্সিয়াল রির্পোটিং কাউন্সিলকে শক্তিশালী ভুমিকা রাখার আহ্বান জানান তিনি।
মনিরুজ্জামান বলেন, আইপিও আনার পদ্ধতিতে সংস্কার আনতে হবে। কারণ বর্তমানে কোনো কোনো আইপিওতে দুই থেকে তিন বছর সময় লেগে যায়। সামগ্রিকভাবেই সুশাসনের ঘাটতি রয়েছে। এছাড়াও কোম্পানির বোর্ডে বিভিন্ন গ্রুপের আধিপত্য থাকে। অনেক শেয়ার নিয়েও বাহির থেকে কাউকে বোর্ডে ঢুকতে দেয়া হয় না। মাহবুব মজুমদার বলেন, সুশাসনে আমরা পিছিয়ে রয়েছি। কারণ ভারতে ২২টি স্টক এক্সচেঞ্জ সেখানে কোনো কোম্পানি তিন বছর লভ্যাংশ না দিলে, ওই কোম্পানিকে তালিকাচ্যুৎ করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশ এই নিয়ম নেই।
তিনি আরও বলেন, দেশে আইপিও প্রক্রিয়া অনেক জটিল। প্রতিটি আইপিওর ক্ষেত্রে ২৯৬টি তথ্য দিতে হয়। তারমতে, কিছু গ্রুপ রয়েছে, যাদের অন্যান্য কোম্পানি ভাল, কিন্তু শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটি খারাপ। এটি যৌক্তিক নয়। এ সময়ে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে বাজারের উন্নয়নে মার্চেন্ট ব্যাংকারদের ভুমিকা ও করণীয় বিষয়ে বিভিন্ন সুপারিশ তুলে ধরা হয়।

সুন্দরবনটাইমস.কম/রহমান আজিজ/ঢাকা


আপনার মতামত লিখুন :

নিজস্ব প্রতিবেদক