অপরিকল্পিত চিংড়ি ঘেরের কবলে বাগেরহাটে মরে গেছে অসংখ্য নদী

প্রকাশিত: ৫:৩৯ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ৮, ২০২০ | আপডেট: ৫:৩৯:অপরাহ্ণ, অক্টোবর ৮, ২০২০

সমুদ্র উপকূলীয় জেলা ও দ্বিতীয় সমুদ্র বন্দর সংলগ্ন সুন্দরবন সন্নিহিত জেলা বাগেরহাটে মরে গেছে ২০টির অধিক বড় নদী ও এর সাথে কয়েশ খাল ও শাখা নদী।যার প্রধান কারন হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে লক্ষ লক্ষ হেক্টর বিলান জমিতে পানি আটকে রেখে চিংড়ি চাষ।দিনের দুবেলা জোয়ার ভাটা চলাচল করতে না পারায় এ আত্তঘাতি ঘটনার অবতারনা জেলার ৯ উপজেলার  এসব নদীতে এখন আর লঞ্চ স্টিমার ও কার্গো ভ্যাসেল মালবাহি ট্রলার চলাচল করতে পারছে না। নদীগুলোর অবস্থা এতটাই দুরবস্থায় পতিত যে, ভাটার সময় নদীতে হাঁটু পানিও থাকে না।

সোহাগ মাল্টিমিডিয়া এন্ড ট্র্যাভেলস

 

শুকিয়ে যাওয়া এসব নদী দেখে এ জনপদের মানুষের সুদূর অতীত মনে করা ছাড়া কিছুই যেন করার নেই আর। এসব মরে যাওয়া নদীর বুকে ধান ক্ষেত, চিংড়ি খামারসহ আবাসন গড়ার হিড়িক পড়ে গেছে। সরকারও মরে যাওয়া নদীর বুকে ভূমিহীনদের জন্য আবাসন তৈরি করে দিচ্ছে একের পর এক। বাগেরহাট জেলায় পলি জমে মরে যাওয়া ২২ নদী হচ্ছে  পুটিমারী, বিশনা, দাউদখালী, মংলা, ভোলা, কালীগঞ্জ, খোন্তাকাটা, রায়েন্দা, বলেশ্বর, ভৈরব, তালেশ্বর, ভাষা,  বেমরতা, দোয়ানিয়া, কুচিবগা, ছবেকী, রাওতি, বেতিবুনিয়া, কলমী, দোয়ানিয়া, যুগীখালী, কুমারখালী, কালীগঙ্গা ও চিত্রা। এসব নদী মরে যাওয়ার কারণে অতিরিক্ত পলি জমে মরে গেছে তিন শতাধিক ছোট-বড় শাখা খালও। নদী শুকিয়ে যাওয়ার ফলে একদিকে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম নৌবন্দর মংলার সঙ্গে সারা দেশের সহজে কার্গো ভ্যাসেলসহ নৌ যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। এখন চলছে না ঢাকা-খুলনা স্টিমার ও ঢাকা-বাগেরহাট লঞ্চ সার্ভিস। অন্যদিকে নদী-খাল শুকিয়ে যাওয়ার ফলে কৃষকরা চাষাবাদ করতে শুষ্ক মৌসুমে প্রয়োজনীয় পানি পাচ্ছেন না। আর বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতায়  প্রতি বছরই কৃষকের ফসল পানিতে ডুবে নষ্ট হচ্ছে। এ জেলায় কয়েক লাখ হেক্টর ফসলি জমি ও খালে বেড়ি বাঁধ দিয়ে অপরিকল্পিতভাবে চিংড়ি চাষের ফলে ফসলি জমিতে স্বাভাবিক জোয়ারের পানি উঠতে পারছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (ওয়াপদা) ৫টি পোল্ডারের ১৬৫টি স্লুইস গেটে সরকারিভাবে কোনো লোকবল নিয়োগ না থাকায় ভাটার পানি নামার সময় ফ্লাপগেটগুলো (স্লুইস গেটের নিচের অংশ) সব সময় বন্ধ থাকায় ভরাট হয়েছে নদী।

 

অন্যদিকে  ফারাক্কা বাঁধের কারণে এসব নদীতে উজানের পানি না আসায় দীর্ঘ সময় ধরে জোয়ারের পানি স্থির হয়ে থাকছে। ফলে অতিরিক্ত পলি জমেও ভরাট হয়ে গেছে নদী-খাল। এ কারণে সমুদ্রের লবণাক্ত পানি দ্রুত ভাটায় নেমে গিয়ে ফসলি জমিতে মাত্রাতিরিক্ত লবণাক্ততা ছড়িয়ে পড়ছে। হ্রাস পাচ্ছে ফসলি জমির উর্বরা শক্তি। মরে শুকিয়ে যাচ্ছে বাগেরহাটের সবুজ প্রকৃতি। বাগেরহাটে অতিরিক্ত পলি জমে শুকিয়ে যাওয়া নদী ড্রেজিং ও খননের বিষয়ে জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মংলা বন্দর থেকে ঘষিয়াখালী চ্যানেল হয়ে বন্দরের সঙ্গে সহজ যোগাযোগের এই রুটটি সচল রাখতে রামপাল উপজেলা সদর হয়ে দাউদখালী নদীতে এ বছর ড্রেজিং করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে ভরাট হয়ে যাওয়া অন্য নদীগুলোর ড্রেজিং করার প্রস্তাব করা হয়েছে। বাগেরহাট জেলার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বলেন, নদী খাল ভরাট হওয়ার ফলে লবণাক্ততা বেড়ে কৃষি ও পরিবেশের বিপর্যয়ের পাশাপাশি দেশি প্রজাতির মাছ উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে। সরপুঁটি, পাবদা, শিং, মাগুর, ফোলই, খৈলশা, গজাল, চুচড়া, চান্দা, রয়না-ভেদাসহ প্রায় অর্ধশত প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হয়ে গেছে।

 

অনতি বিলম্বে পরিকল্পিত ভাবে চিংড়ি ঘের না করা হলে অচিরেই মরুভুমিতে পরিনত হতে পারি উক্ত অঞ্চলটি যা আগামীতে চিংড়ি ঘের করার মতও পরিস্থিতি থাকবেনা বলে বিশেষজ্ঞদের মত।তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এখনি নজর দিতে হবে না হয় অচিরেই নীরব মরুভুমিতে পরিনত হবে অত্র অঞ্চলটি।


আপনার মতামত লিখুন :

ম.ম. রবি ডাকুয়া। প্রতিবেদক। বাগেরহাট, খুলনা