পাটকেলঘাটায় প্রভাবশালীদের দখলে চলে গেছে ৭ টি খালের ২শ বিঘা জমি

প্রকাশিত: ৬:৪৭ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০১৯ | আপডেট: ৬:৪৭:অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০১৯

জলাবদ্ধ খালের শ্রেণী পরিবর্তন করে কৃষি জমি দেখিয়ে দেয়া হয়েছে স্থায়ী বন্দোবস্ত

সোহাগ মাল্টিমিডিয়া এন্ড ট্র্যাভেলস

ডেক্স রিপোর্ট:

সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটার খলিষখালী ইউনিয়নে জলাবদ্ধ ৭ টি খালের শ্রেণী পরিবর্তন করে কৃষি ও পরিত্যক্ত চাষযোগ্য জমি দেখিয়ে স্থায়ীভাবে বন্দোবস্ত দেয়া হয়েছে। এর ফলে প্রায় দুই শতাধিক বিঘা জমি সরকারের বেহাত হয়ে গেছে। ভুমিহীন নামধারী ব্যক্তিদের অনুকুলে দেয়া স্থাযী বন্দোবস্তের এ বিপুল পরিমান সম্পত্তির বেশীর ভাগই হাত বদল হয়ে চলে গেছে প্রভাবশালীদের দখলে।
এর ফলে বর্ষামৌসুমে একদিকে পানি নিষ্কাসন ব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। অন্যদিকে জলাবদ্ধ এসব খালগুলিতে বেড়ী বাঁধ দিয়ে মাহস্য চাষ করায় খালের আশে পাশের জমির পানি সরানোর ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে গেছে। এ ঘটনায় খলিষখালী ইউনিয়নের দক্ষিনাঞ্চলের বিল এলাকার চাষীরা বিক্ষুব্দ হয়ে উঠেছে। তারা ইজারা বাতিল করে জলাবদ্ধ খাল গুলি পানি প্রবাহ স্বাভাবিক রাখার দাবী জানিয়েছে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, পাটকেলঘাটার খলিষখালী ইউনিয়নের খলিষখালী মৌজার দুধলিয়া গ্রামের বিলের কয়েক হাজার বিঘা জমির পানি নিষ্কাষনের একমাত্র খাল যা তেয়াশিয়া নদীর সাথে সংযুক্ত, এই খালটি এখন জলাবদ্ধ খাল। কিন্ত কয়েক বছর আগে স্থানীয় ভূমি কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে জলাবদ্ধ খালটির কাগজ কলমে দেখানো হয়েছে চরভরাটি পরিত্যক্ত জমি। জমির শ্রেণী পরিবর্তন করে শতাধিক বিঘা এই খালটি স্থায়ী বন্দোবস্ত দেয়া হয়েছে প্রভাবশালীদের নামে। ফলে খালের আশেপাশের কয়েক হাজার বিঘা জমির পানি নিষ্কাষন ব্যবস্থা বাধাপ্রাপ্ত হয়।
একই সাথে কাশিয়াডাঙ্গা ও খলিষখালী মৌজার কাশিয়াডাঙ্গা বিলের জলাবদ্ধ খালটির এইকভাবে শ্রেণী পরিবর্তন করে প্রভাবশালীদের কাছে স্থায়ী বন্দোবস্ত দেয়া হয়েছে।
গাছা মৌজার খড়িয়াডাঙ্গা খালটি কয়েক‘শ বিঘা আয়তনের। যা শ্রেণী পরিবর্তন করা হয়েছে। ভূমি কর্মকর্তাদের আর্থিক সুবিধা দিয়ে জলাবদ্ধ খালটি ভরাট দেখিয়ে চাষাবাদের জন্য ইজারা দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে বর্ষা মৌসুমে টিকারামপুর মৌজা ও খলিষখালী মৌজার টিকারামপুর খালটি ইজারা দেয়ায় খালের উপর নির্ভরশীল কয়েক হাজার বিঘা জমির পানি নিষ্কাষন বাধা গ্রস্থ হচ্ছে। শুক্তিয়া মৌজার শুক্তিয়া খালটি ইজারা দেয়ায় একই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
পারকৈখালীর হন্যেমারী খালটি এখও বুকসমান পানি। সেটিও ভরাট খাল দেখিয়ে জমির শ্রেণী পরিবর্তন করা হয়েছে। দেখানো হয়েছে ভরাট খাল। সেখানে গিয়ে দেখা গেছে এখনও বুকসমান পানি। সেখানে হচ্ছে মহস্য চাষ। আশপাশের পানি জমির পানি নিষ্কাষন হয় না। ধুকুড়িয়া খালটি বর্তমানে একই অবস্থা। প্রভাবশালীরা খালটি ইজারা নিয়ে সেখানে খন্ড খন্ড করে বেড়ীবাধ দিয়ে মাছ চাষ করছে। ফলে কৈখালী, পাকশিয়া, মঙ্গলানন্দকাটি, বারানগর, টিকারামপুর বিলের পানি নিষ্কাষন হচ্ছে না। বারানগরের ঘন্টার খালটি বর্তমান পানিনিষ্কাষন একেবারেই বন্ধ রয়েছে।
কৈখালী গ্রামের ইউপি সদস্য তপন কুমার বাছাড় জানান, কৈখালী, বারানগর, ধুকুড়িয়া যে খালটি ভরাট খাল দেখানো হয়েছে সেই খালটি এখন বুকসমান পানি। খালটিতে খন্ড খন্ড বাধদিয়ে সেখানে মাছ চাষ করা হচ্ছে। ফলে এলাকার চাষীরা বর্তমানে বোরো আবাদ করতে বাধা গ্রস্থ হচ্ছে আশে পাশের জমির পানি নিষ্কাষন করতে না পেরে। বোরো আবাদ ক্ষতির মুখে পড়া কয়েক হাজার চাষী বিক্ষুব্দ হয়ে উঠেছে।
বারানগর গ্রামের কালিপদ মন্ডল ওরপে ঘন্টা মন্ডল(৬৫) জানান, ছোট বেলা থেকে দেখে আসছি বারানগর খালটি বড় একটি খাল ছিল। ওই খাল দিয়ে আশে পাশের ১০টি গ্রামের পানি নিস্কাষন হত। ধান চাষ ও মাছ চাষ সবই হতো। কিন্ত দূর্নীতিবাজ ভুমি কর্মকর্তা জলাবদ্ধ এই খালটির শ্রেণী পরিবর্তন করে ভরাট খাল দেখিয়ে প্রভাবশালীদের কাছে স্থায়ী বন্ধোবস্ত দিয়েছে। এখন খালটিতে খন্ড খন্ড করে সেখানে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করা হচ্ছে।
শুক্তিয়া গ্রামের ইউপি সদস্য গনেশ চন্দ্র বর্মন জানান, তার এলাকার টিকারামপুর, শুক্তিয়া, দলুয়া, দুধলিয়া গ্রামের কয়েক হাজার বিঘা জমির পানি নিষ্কাষনের দুটি খাল একটি দুধলিয়া খাল ও টিকারামপুর-সুক্তিয়া খাল একসময় পানিতে টইটুম্বর ছিল। এলাকার বিলে এলাকার মানুষ সেখানে জাল দিয়ে মাছ ধরে জিবিকা নির্বাহ করত। কিন্ত এসব স্রোতধারা খালের শ্রেণী পরিবর্তন করে দুর্নীতিবাজ ভূমি কর্মকর্তারা ভরাট খাল দেখিয়ে বন্ধবস্ত দিয়েছে। পরে তা বিক্রি হয়ে প্রভাবশালীদের দখলে চলেগেছে। ইজারা কোন নীতিমালা মানা হয়নি। সম্পূর্ন নিয়োম নীতি উপেক্ষা করে খালগুলি স্থায়ী বন্দবস্ত দেয়া হয়েছে।
খলিষখালী ভূমি অফিসের কর্মকর্তা অরুন কুমার পাল জানান, তিনি কর্মস্থলে নতুন এসেছেন। ভূমির শ্রেণী পরিবর্তন করে খালগুলি ভরাট দেখিয়ে ইজারা দেয়া হলে তা অবশ্যই বাতিল করতে তিনি উর্দ্ধতন কর্তপক্ষের সাথে কথা বলবেন।
খলিষখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোজাফ্ফর রহমান জানান, তিনি জলাবদ্ধতা নিরসনে ইতিমধ্যে তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসনের সাথে কথা বলেছেন। ভূমির শ্রেনী পরিবর্তন করে পানি প্রবাহের খালগুলি ভরাট খাল দেখিয়ে স্থায়ী বন্দোবস্ত দেয়া হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। তিনি খালের ইজারা বাতিল সহ খালগুলি খনন করে পানি প্রবাহ নিশ্চিত করতে জেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
তালা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ঘোষ সনৎ কুমার জানান, কোনভাবেই জমির শ্রেনী পরিবর্তন করে জলাবদ্ধ খালকে কৃষি জমি হিসেবে দেখানো আইন সংগত হয়নি। এর ফলে জলাবদ্ধখালগুলিতে বাধ দিয়ে মাছ চাষ করে কোনভাবেই পানি প্রবাহ বন্ধ করা যাবে না। তিনি জনগনকে সাথে নিয়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টিকারী সব খালের বাধ অপসারনের জন্য সহযোগীতা করবেন বলে জানান।
এ বিষয়ে তালা উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভূমি) খন্দকার রবিউল ইসলাম জানান, জমির শ্রেণী পরবর্তন করে ইজারা দেয়া হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বিষয়টি তদন্ত করে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার কথা উল্লেখ করেন।

 

 

 

সুন্দরবনটাইমস.কম/মো: র/সাতক্ষীরা


আপনার মতামত লিখুন :

নিজস্ব প্রতিবেদক