কেশবপুরে হিজলডাঙ্গা কলেজের অধ্যক্ষের সাময়িক বরখাস্তাদেশ প্রত্যাহার হয়নি

প্রকাশিত: ২:০৫ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২০ | আপডেট: ২:০৫:অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২০

মশিয়ার রহমান, কেশবপুর (যশোর):
হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করে যশোরের কেশবপুরে হিজলডাঙ্গা শহীদ ফ্লাইড লেঃ মাসুদ মেমোরিয়াল ডিগ্রি কলেজের নিয়মবহির্ভূতভাবে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে দায়িত্ব পাওয়া ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ওবায়দুর রহমান দীর্ঘদিন ধরে প্রশাসনিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। তার পিতা শামছুর রহমান সভাপতি হওয়ায় তিনি যোগসাজশে ওই কলেজের টিন ও ২টি বিলুপ্ত প্রজাতীর চম্বল গাছসহ ২০ থেকে ২৫ টি শিশুগাছ কোন প্রকার টেন্ডার ছাড়াই বিক্রি করে আতœসাত করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বর্তমান ওই কলেজে শিক্ষার্থীদের পাঠদানসহ শিক্ষাকার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এ ব্যাপারে ১১ ফেব্রুয়ারি কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ মশিয়ুর রহমানকে স্বপদে পূর্ণবহালের দাবিতে এলাকার শতাধিক লোকের স্বাক্ষরিত একটি স্মারকলিপি কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি বরাবরে পেশ করা হয়েছে।

সোহাগ মাল্টিমিডিয়া এন্ড ট্র্যাভেলস

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৭ সালে কেশবপুর উপজেলার হিজেলডাঙ্গা গ্রামে শহীদ ফ্লাইট লেঃ মাসুদ মেমোরিয়াল কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ওই কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ মশিয়ুর রহমানের চেষ্টায় কলেজটি তার অতীত গৌরব ফিরে পেয়ে ঘুরে দাঁড়ায়। ২০১৪ সালে আবার মাসুদ মেমোরিয়াল কলেজকে নিয়ে একটি ষড়যন্ত্রকারী চক্র সক্রিয় হয়ে ওঠেন। এই চক্রটি কৌশলে ২০১৪ সালে যুদ্ধাপরাধী মামলার মূত্যুদন্ড প্রাপ্ত আসামী মাওঃ সাখাওয়াত হোসেনের আপন খালাত ভাই বিএনপির নেতা মোঃ শামছুর রহমানকে ওই কজেলের সভাপতি হিসেবে মনোনীত করেন। সভাপতি হয়েই শামছুর রহমান তার পুত্র গণিত বিভাগের শিক্ষক ওবাইদুর রহমানকে কলেজের অধ্যক্ষ বানাতে নানারকম য়ড়যন্ত্রে লিপ্ত হন বলে অভিযোগ। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শামছুর রহমান প্রথম মেয়াদে সভাপতির দায়িত্ব পালনকালে কলেজের অর্থ আতœসাত ও নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ এনে প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ মশিয়ুর রহমানকে সাময়িক বরখাস্ত করে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেন কলেজের ভূগোল বিভাগের শিক্ষক আনোয়ারুল ইসলামকে।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভূক্ত বেসরকারি কলেজ শিক্ষকদের চাকুরীর শর্তাবলী রেগুলেশন (সংশোধিত) ২০১৫ এর ক্রমিক নং ৪(ক)৩. মোতাবেক কলেজের অধ্যক্ষের পদ শূন্য হলে তার অবর্তমানে জ্যেষ্ঠতম ৫ জন শিক্ষকের মধ্যে যে কোন একজনকে দায়িত্ব প্রদান করতে হবে। কিন্তু শামছুর রহমান দ্বিতীয় মেয়াদে পুনরায় সভাপতি মনোনীত হয়ে এ শর্তকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কোন প্রকার বিলম্ব না করেই তার নিজের প্রস্তাবে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আনোয়ারুল ইসলামকে হটিয়ে ২০১৬ সালের ২৬ নভেম্বর সম্পূর্ণ অবৈধভাবে ৮নং ক্রমিকের তার ছেলে গণিত বিভাগের শিক্ষক ওবাইদুর রহমানকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেন। এরপর থেকে তিনি অদ্যাবধি অবৈধভাবে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তিনি কলেজের একটি ভবনের টিন টেন্ডার ছাড়াই বিক্রি করে আতœসাত করেছেন। ফলে ৬ মাস আগে ওই ভবনের চাল পেতে রাখলেও আজ তাতে জোটেনি টিন। ফলে শ্রেণী কক্ষের অভাবে শিক্ষার্থীদের পাঠদান চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এ ঘটনায় কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ মশিয়ুর রহমান তার সাময়িক বরখাস্তাদেশ প্রত্যাহারসহ বকেয়া বেতন ভাতা প্রাপ্তির জন্যে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে দুটি আবেদন করেন। আবেদন দুটি নিষ্পত্তি না হওয়ায় তিনি হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দায়ের করেন। যার নং- ১৪০৯/১৭। এ সময় হাইকোর্ট বিভাগ কোন রুল জারী না করে ১ নং বিবাদী শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ও ২ নং বিবাদী মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে ২০১৭ সালের ১০ আগস্ট তারিখের মধ্যে আবেদন দুটি নিষ্পত্তি করার নির্দেশ প্রদান করেন। এরপরও ওই কলেজের গর্ভণিং বডি অধ্যক্ষ মশিয়ুর রহমানের বরখাস্তাদেশ প্রত্যাহার না করে ওবাইদুর রহমানকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে বহাল রাখেন। ২০১৯ সালের ২৩ অক্টোবর সরকারের শিক্ষা ও কল্যাণ শাখার সহকারী কমিশনার আয়শা সিদ্দিকা স্বাক্ষরিত এক পত্রে ওই কলেজের ১ হতে ৫ এরমধ্যে থেকে যে কোন একজন শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব প্রদানের নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে তা আজও রয়েছে উপেক্ষিত।

এদিকে, দীর্ঘ ৬/৭ মাস পর গত ১১ ফেব্রুয়ারী (মঙ্গলবার) দুপুরে কলেজের অধ্যক্ষ মশিয়ুর রহমানের সাময়িক বরখাস্তাদেশ প্রত্যাহারের বিষয়টি এজেন্ডায় এনে কলেজ গর্ভণিং বডির এক সভা শামছুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। সভার শুরুতেই কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ মশিয়ুর রহমানকে স্বপদে পূর্ণবহালের দাবিতে এলাকার শতাধিক লোকের স্বাক্ষরিত একটি স্মারকলিপি পরিচালনা পর্ষদের সভাপতির কাছে পেশ করা হয়। সভা শেষে সাময়িক বরখাস্তকৃত অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে মামলা চলমান থাকায় তাকে স্বপদে পূর্ণবহাল রাখার সিদ্ধন্তটি স্থগিত রেখে সভা শেষ করা হয় বলে গর্ভণিং বডির সদস্য আব্দুর রশিদ জানান।
ওই কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ওবায়দুর রহমান বলেন, সিনিয়র শিক্ষকরা লিখিতভাবে অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালনে অপরাগতা প্রকাশ করায় তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক অধ্যক্ষ মশিয়ুর রহমানের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ নিষ্পত্তি না হওয়ায় তাকে স্বপদে বহাল করা সম্ভব হয়নি। যে কারণে তিনি এখনও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্বে আছেন। তাছাড়া প্রতিষ্ঠানের গাছগুলি ম্যনেজিং কমিটির সিদ্ধান্তে মাত্র ১৬ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়েছে। আগামী ২/১ দিনের মধ্যে ওই ভবনে টিনের চালা লাগানো হবে।
এ ব্যাপারে গর্ভণিং বডির সভাপতি শামছুর রহমানের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে বারবার কল দিলেও তিনি রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

সুন্দরবনটাইমস.কম/নিজস্ব প্রতিবেদক


আপনার মতামত লিখুন :

নিজস্ব প্রতিবেদক