শীতের হাওয়ায় খেজুরের রস সংগ্রহে ব্যস্ত কেশবপুরের গাছিরা

প্রকাশিত: ৬:৫৭ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১১, ২০২২ | আপডেট: ৬:৫৭:অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১১, ২০২২
“যশোরের যশ, খেজুরের রস।” কেশবপুরে রস সংগ্রহের জন্য শীতের মৌসুম চলে এসেছে। এ অঞ্চলের গাছিরা ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন খেজুরের রস সংগ্রহের কাজে। তাই শীতের মৌসুম শুরু হতেই গাছ থেকে রস সংগ্রহের পূর্ব প্রস্তুতি শুরু হয়েছে কেশবপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়। রস সংগ্রহের জন্য খেজুর গাছের আগায় বিশেষ পদ্ধতিতে কাটাকুটি দেওয়ার কাজ চলছে। ধারালো গাছি দা দিয়ে খেজুর গাছের মাথার সোনালি অংশ বের করা হয় যাকে বলে ‘চাঁচ দেওয়া।’
 
আর সপ্তাহ খানেক পরেই শুরু সুস্বাদু খেজুর রস সংগ্রহের মূল কাজ। এর পরে গাছে লাগানো হবে মাটির পাতিল। সংগ্রহ করা হবে মিষ্টি স্বাদের খেজুরের রস। তা দিয়ে তৈরি হবে চাচের গুড় ও পাটালি। শুধু কেশবপুর নয়, যশোর জেলার মনিরামপুর, ঝিকরগাছা, শার্শা, চৌগাছা, অভয়নগর, বাঘারপাড়া উপজেলার বেশির ভাগ গ্রামে মাঠে ঘাটে মেঠোপথে চোখে পড়ে খেজুর গাছের সারি। জমির আইলে ও পতিত জায়গায় অসংখ্য খেজুর গাছ লাগিয়েছেন এলাকার কৃষকরা। উপজেলায় অনেক সড়কে সরকারি ভাবে লাগানো হয়েছে খেজুর গাছ। কেশবপুর উপজেলার বাগদহা, ঈমাননগর, পাঁজিয়া, গড়ভাংগা, বেলকাটি, সাগদত্তকাটি, সাতবাড়িয়া, সাগরদাঁড়ি, মজিদপুর, মূলগ্রাম, মনিরামপুর উপজেলার বাটবিলা, মুজগুনী, কাচারি বাড়ি, মনোহরপুরসহ বিভিন্ন এলাকার গ্রামজুড়ে রয়েছে বিপুলসংখ্যক খেজুর গাছ। খেজুরের রস সংগ্রহের প্রস্তুতির মধ্য দিয়েই এ গ্রামীণ জনপদে শুরু হয় শীতের আমেজ।
 
শীত যত বাড়বে খেজুর রসের মিষ্টি ও মৌ মৌ ঘ্রাণ ততোই বাড়বে। শীতের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ সকালে খেজুরের রস, সন্ধ্যা রস ও সুস্বাদু গুড়-পাটালি। শীত মৌসুমে এ অঞ্চলের বাড়িতে বাড়িতে খেজুুরের রস জ্বালিয়ে পিঠা-পায়েশসহ নাম না জানা হরেক রকমের মুখরোচক সুস্বাদু খাবার তৈরির ধুম পড়ে যায়। সুস্বাদু পিঠা ও পায়েশ তৈরিতে আবহমান কাল ধরেই গ্রামবাংলার প্রধান উপকরণ খেজুরের গুড়। খেজুরের রস বিক্রি ও গুড় তৈরির কাজও এ এলাকার অনেক কৃষকের একমাত্র প্রধান শীতকালীন পেশা। 
 
কেশবপুর উপজেলার গড়ভাংগা গ্রামের গাছি আকবর আলি জানান, খেজুর গাছ এখন বিলুপ্ত হতে চলেছে। আগের মতো এখন আর এলাকায় খেজুর গাছ নেই। যা আছে তাই নিয়ে প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। 
 
বেলকাটি গ্রামের গাছি কুদ্দুস বলেন, রস সংগ্রহের পুরো ৫ মাস জুড়ে বাড়িতে খেজুরের গুড় ও পাটালি তৈরি করা হয়। এই সময় আমাদের প্রতিদিন আয় হয় এক থেকে প্রায় দুই হাজার টাকা। অনেকের আবার খেজুর গাছ কেটেও সংসার চলে।
 
কেশবপুর পৌরসভার বিশিষ্ট গুড় ব্যবসায়ী ওলিয়ুর রহমান জানান, এখানকার কারিগরদের পাটালি তৈরিতে সুনাম থাকায় খেজুরের গুড়-পাটালির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে দেশের অন্যান্য জেলায় এমনকি দেশের বাইরেও। ঢাকা, রাজশাহী, নোয়াখালিসহ দেশের বিভিন্ন শহরের অনেক ব্যবসায়ী আগাম যোগাযোগ করছে। অনেক ব্যবসায়ী সরাসরি গাছিদের কাছে অর্ডার দিয়ে পাইকারি মূল্যে কিনে দেশের বাইরেও সরবরাহ করে থাকেন সুস্বাদু এই গুড়-পাটালি বলে জানা গেছে। এখন থেকে ৫ মাস আমাদের এই ব্যবসায় চলবে খুব জোরে শোরে চলবে।

আপনার মতামত লিখুন :

মশিয়ার রহমান। নিজস্ব প্রতিবেদক। কেশবপুর, যশোর