কেশবপুরে সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে ধানের বাজার: কৃষক হারাচ্ছে ৬০কোটি টাকা ! 

প্রকাশিত: ৭:৩৫ অপরাহ্ণ, মে ১৪, ২০২০ | আপডেট: ৭:৩৫:অপরাহ্ণ, মে ১৪, ২০২০

যশোরের কেশবপুরে ধানের ফলন বেশি হওয়ায় ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে ধানের দাম কমিয়ে দিয়েছে। ১৫ দিন আগে যে ধান বিক্রি হচ্ছিল মন প্রতি ১ হাজার ৬০ টাকায়, বর্তমান তা বিক্রি হচ্ছে ৭’শ থেকে সাড়ে ৭’শ টাকায়! সরকার প্রতি মণ ধানের মূল্য ১ হাজার ৪০ টাকা নির্ধারণ করেছে। সরকারি খাদ্য গুদাম এখনও ধান ক্রয় শুরু করেনি। এ সুযোগে ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করার কারণে কৃষক সরকার নির্ধারিত মূল্য পাচ্ছেন না। তাদের উৎপাদিত ধানের ৬০ কোটি টাকা চলে যাচ্ছে সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের পকেটে।

সোহাগ মাল্টিমিডিয়া এন্ড ট্র্যাভেলস

উপজেলা কৃষি বিভাগ জানায়, চলতি বোরো মৌসুমে এ উপজেলায় ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু কেশবপুরের জলাবদ্ধতা নিরসনে গত বছর থেকে নদী, খাল খনন কাজ চলমান রয়েছে। এ ছাড়া অপরিকল্পিত মাছের ঘেরের কারণে বিল গরালিয়া, বলধালিসহ পূর্ব এলাকার ২৭ বিল জলাবদ্ধ থাকায় বোরো আবাদ হয়নি। যার কারণে অর্জিত হয় ১৩ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমি। যা গত বছরের চেয়ে ১ হাজার ৮৫০ হেক্টর কম। এ বছর ধানের ফলন ভালো হওয়ায় ৮০ হাজার ১’শ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হয়। যার সরকারি মূল্য ২০৮ কোটি ২৬ লাখ টাকা। যা থেকে এ উপজেলার চাহিদা মিটিয়ে অতিরিক্ত ৩০ হাজার মেট্রিক টন ধান রফতানি করা যাবে। এ উপজেলায় ২০ হাজার কৃষক থাকলেও সরকারি ক্রয় কেন্দ্রে ধান বিক্রি করতে পারবেন মাত্র ১ হাজার ৯১৫ জন কৃষক। অবশিষ্ট উৎপাদিত ধান তাদের বাজারেই বিক্রি করতে হবে।

কৃষকদের অভিযোগ, ধান কাটা ও মাড়াইয়ের শুরুতেই জেঁকে বসে ঝড়-বৃষ্টি। এ অবস্থায় সমস্ত উপজেলার ধান এক সঙ্গে পেকে যাওয়াসহ করোনার প্রাদুর্ভাবে দেখা দেয় তীব্র শ্রমিক সংকট। ৭’শ থেকে ৮’শ টাকায়ও মিলছে না শ্রমিক। এ সময় কৃষকের হাতে গচ্ছিত টাকা না থাকায় ধানই তাদের ভরসা। এ সুযোগে ব্যবসায়ীরা অধিক মুনাফা লাভের আশায় সিন্ডিকেট করে ধানের দরপতন ঘটিয়েছে। ফলে ১৫ দিন আগে যে ধান মন প্রতি বিক্রি হচ্ছিল ১ হাজার ৬০ থেকে ৭০ টাকা দরে। বর্তমান তা বিক্রি হচ্ছে প্রতি মন গড়ে ৭’শ টাকায়। তাই ধান ঘরে তুলতেই পানির দরে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। খাদ্য গুদাম ধান ক্রয় শুরু না করায় সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের পকেটে চলে যাচ্ছে ৬০ কোটি টাকা। 

ধান ব্যবসায়ী লুৎফর রহমান জানান, বর্তমান বাজারে ব্রি-ধান-২৮ ও ব্রি-ধান- ৬৩ চিকন জাতের ধান বিক্রি হচ্ছে ৮’শ ৭০ টাকা থেকে ৮’শ ৮০ টাকা মন দরে। মোটা ও হাইব্রিড জাতের ধান বিক্রি হচ্ছে ৭’শ টাকা থেকে সাড়ে ৭’শ টাকায়। গত বছর মোটা ও হাইব্রিড জাতের ধান সরকারি খাদ্য গুদামে বিক্রি করেছিল কৃষক। হঠাৎ বাজারে ধান বেশি ওঠায় দরপতন ঘটেছে। সরকার যে ধান কিনছে তাতে বাজারে কোন প্রভাব পড়ছে না।

কেশবপুর উপজেলা কৃষি অফিসার মহাদেব চন্দ্র সানা বলেন, ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে থাকলে আমাদের করার কিছুই নেই। ধান উৎপাদনের ওপর ভিত্তি করে লটারির মাধ্যমে কৃষক নির্বাচন করা হয়েছে। উপজেলার ৩৪টি ব্লকে ৩৪টি লটারি করা হয়েছে। এ উপজেলায় ২০ হাজার কৃষক থাকলেও ধান নেয়া হবে মাত্র ১ হাজার ৯১৫ জন কৃষকের কাছ থেকে। লটারি বিজয়ীদের কাছ থেকে ১ হাজার ৯১৫ মেট্রিক টন ধান সরকারিভাবে ক্রয় করা হবে। এখনও ধান ক্রয় শুরু না হলেও আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত কৃষকরা খাদ্য গুদামে ধান বিক্রি করতে পারবেন।


আপনার মতামত লিখুন :

মশিয়ার রহমান। নিজস্ব প্রতিবেদক। কেশবপুর, যশোর