কেশবপুরে ঘের দখলের ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে কৃষক সমাবেশ

প্রকাশিত: ২:২০ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১০, ২০২১ | আপডেট: ২:২০:অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১০, ২০২১

প্রতি বছর শীত মৌসুমে কেশবপুরে মৎস্য ঘের দখল করা নিয়ে একাধিক গ্রুপের মধ্যে সংঘাত হয়ে থাকে। এ নিয়ে থানায় মামলা পাল্টা মামলাও হয়। এবছরও শীত মৌসুমের শুরুতেই ঘের দখলকে কেন্দ্র করে কৃষক সমাবেশের ঘটনা ঘটেছে।

সোহাগ মাল্টিমিডিয়া এন্ড ট্র্যাভেলস

যশোরের কেশবপুরে বলধালী বিলের একটি মাছের ঘেরের দখল নিয়ে দুটি পক্ষ মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে। উভয় পক্ষই জমির মালিকদের চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করাতে বাড়ি বাড়ি ধরনা দিচ্ছে। এ ঘটনায় মঙ্গলবার বিকেলে ওই বিলের ঘের পাড়ে কৃষক সমাবেশ হয়েছে। কৃষকরা পুনরায় ঘেরটি ৫ বছরের জন্যে ঘের ব্যবসায়ী সেলিমুজ্জামান আসাদকে চুক্তিপত্র করে দেবার জন্য তারা ওই সমাবেশ করেন।

এলাকাবাসি জানায়, ২০০০ সাল থেকে কেশবপুর পৌরসভাসহ সদর ইউনিয়নের অধিকাংশ নিন্মাঞ্চল জলাবদ্ধ ছিল। কোন ফসল উৎপাদন হতো না। বছরে খাওয়ার ধান ঘরে না থাকায় কৃষক পরিবারে অভাব অনটন দেখা দেয়। ১৫ বছর আগে সেচ দিয়ে বোরো আবাদের শর্তে বলধালীর সাচির বিলের ৫০ বিঘা জমি এলাকার কৃষকরা কেশবপুরের ঘের ব্যবসায়ী সেলিমুুজ্জামান আসাদকে ৬ বছরের জন্যে চুক্তিপত্র করে দেন। যার ক্যানেল বেঁড়ি ৪৫ হাজার ও সাদা জমি বিঘা প্রতি ১৪ হাজার টাকা। আগামি ২০২২ সালের ১৩ মার্চ ওই ঘেরের চুক্তিপত্রের মেয়াদ শেষ হবে। গত ৬ বছর কৃষকরা তাদের জমির হারির টাকা সময় মত পাওয়ায় পুনরায় ঘেরটি সেলিমুজ্জামান আসাদকে দেয়ার জন্যে আগামি ৫ বছরের জন্যে চুক্তিপত্র করে দেয়। যাতে ওই ঘেরের ৭০ জন জমির মালিকের মধ্যে ৬২ জন সেলিমুজ্জামান আসাদের পক্ষে চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করেন।

কৃষক নুর আলী অভিযোগ করেন, বোরো মৌসুমে ওই ঘেরের ধান বর্ষার পানিতে তলিয়ে গেলে ঘের মালিক সেলিমুজ্জামান আসাদ অতিরিক্ত টাকা ব্যয়ে স্যালোমেশিন দিয়ে ঘেরের পানি নিষ্কাশন করে দেন। যে কারণে জমির মালিকরা পুনরায় ঘেরটি তাকে দেয়ার জন্যে চুক্তিপত্র করে দিয়েছেন। ওই ঘেরে ৪০ থেকে ৫০ লাখ টাকার মাছ রয়েছে। ওই মাছ আতœসাতের জন্যে মূলগ্রামের আব্দুর রাজ্জাক, লুৎফর রহমানসহ ৪/৫ জন ব্যক্তি ষড়যন্ত্র করে ঘেরটি দখলে নেবার চেষ্টা করছে। বর্তমান তারা কৃষকদের বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। শুধু তাই নয় তারা এলাকার হিন্দুপাড়ার লোকদের বিভিন্ন রকম ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে জোরপূর্বক চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করানোর চেষ্টা করছে। মিনতি বিশ্বাস বলেন , প্রতিনিয়ত রাজ্জাক গংরা হিন্দুপাড়ায় এসে ভয়ভীতি দেখিয়ে তাদের চুক্তিপত্র স্বাক্ষর চেষ্টা করে যাচ্ছে। অনেকে ভয়ে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে সাহস পাচ্ছে না। এ ঘটনার প্রতিবাদে গত মঙ্গলবার বিকেলে ঘের পাড়ে কৃষক আবুল কাশেমের সভাপতিত্বে জমির মালিক কৃষকদের এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ওয়াজেদ আলী, নুর আলী সরদার, মিনতি বিশ্বাস, মিনা বিশ্বাস প্রমুখ। এনিয়ে যে কোন মুহুর্তে সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন তারা।

এ ব্যাপারে আব্দুর রাজ্জাক ভয়ভীতি ও হুমকির কথা অস্বীকার করে বলেন, জমির মালিকরা আমাকে ঘের করার জন্য চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করে দিয়েছেন।

কেশবপুর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা সজিব সাহা বলেন, এ উপজেলায় ৪ হাজার ৬৫৮টি মৎস্য ঘের রয়েছে। গত বছর ৩৩ হাজার ৯৯৯ মেঃ টন মাছ উৎপাদন হয়েছে। যার স্থানীয় বাজার মূল্য প্রায় ৫’শ কোটি টাকা।

 


আপনার মতামত লিখুন :

মশিয়ার রহমান। নিজস্ব প্রতিবেদক। কেশবপুর, যশোর