কেশবপুরে ছয় মাসে অর্ধ শতাধিক বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার চুরি

প্রকাশিত: ৯:১৪ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১৩, ২০২১ | আপডেট: ৯:১৫:অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১৩, ২০২১
যশোরের কেশবপুরে সাগরদাঁড়ি সড়ক সংলগ্ন সাবদিয়া এলাকায় বৈদ্যুতিক খুঁটিতে ঝুলছে ট্রান্সফরমার। অথচ ভিতরের কোর ও কয়েল চুরি করে নিয়ে গেছে চোরেরা।

যশোরের কেশবপুর উপজেলায় চলতি বছরের ছয় মাসে অর্ধ শতাধিক বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে। তার মধ্যে একটি মসজিদ, একটি মন্দির, দুইটি মোবাইল টাওয়ার ও আবাসিক গ্রাহক ছাড়াও অধিকাংশ কৃষকের সেচের ট্রান্সফরমার রয়েছে। ট্রান্সফরমারগুলোর আনুমানিক মূল্য ২২ লাখ টাকা। পুলিশের কোন তৎপরতা না থাকায় একের পর এক ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনা ঘটছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

সোহাগ মাল্টিমিডিয়া এন্ড ট্র্যাভেলস

জানা গেছে, চলতি বছর এপ্রিল মাসে ইরি-বোরো মওসুম শেষ হলে কৃষকরা ধান কেটে মাঠ ছেড়ে চলে আসেন। এরপর আগতি পাটে পানি দেওয়া ও সেকেন্ড ব্লক (আউশ ধানের আবাদ) করার জন্য অধিকাংশ কৃষক বৈদ্যুতিক সেচযন্ত্র সচল রাখেন। পরবর্তীতে বর্ষার মওসুম শুরু হলে টানা বৃষ্টির মধ্যে চোরেরা ট্রান্সফরমার ও কিছু কিছু বৈদ্যুতিক সেচমটর চুরি করে নিয়ে গেছে।

জানা গেছে, যশোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর অধীন শতভাগ বিদ্যুতায়নের এ উপজেলায় কেশবপুর জোনাল অফিস ও সাগরদাঁড়ী সাবজোনাল অফিসের আওতায় ৮০ হাজার ১৭৬ জন বিদ্যুৎ গ্রাহক রয়েছেন। তার মধ্যে ১ হাজার ৯৯২ জন সেচ গ্রাহক। ওই সব গ্রাহকের বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য বিভিন্ন ক্ষমতা সম্পন্ন প্রায় ৪ হাজার ট্রান্সফরমার স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু চোরের দল গণহারে ফসলি মাঠের সেচযন্ত্রের ও গ্রাম এলাকার খুঁটি থেকে ট্রান্সফরমার চুরি করে নিয়ে গেছে। প্রতিটি ট্রান্সফরমার চুরির ব্যাপারে পল্লী বিদ্যুৎ অফিস থেকে থানায় লিখিত ভাবে জানানো হলেও পুলিশ আজও পর্যন্ত কোন চোর আটক বা সনাক্ত করতে পারেনি। এ ব্যাপারে পুলিশ পল্লী বিদ্যুতের প্রশিক্ষিত ব্যক্তিদের জড়িত থাকার কথা বলে দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, গত মে থেকে চলতি অক্টোবর মাস পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে অর্ধ শতাধিক বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনা ঘটেছে। গত ৩ অক্টোবর রাতে যশোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর সাবেক সভাপতি বাগদা গ্রামের আকিমুদ্দিন আহমেদের সেচের একটি ৫ কেভিএ ট্রান্সফরমার ও ৫ অক্টোবর রাতে পৌর সভার সাবদিয়া ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর জামাল উদ্দিন সরদারের একটি ১০ কেভিএ ট্রান্সফরমার ও বৈদ্যুতিক সেচমটরটি চুরি করে নিয়ে গেছে। গত ২৯ জুন রাতে শ্রীরামপুর বাইতুন নুর জামে মসজিদ ও বায়সা শ্রীরামপুর মহাশশ্মান কালী মন্দিরের ট্রান্সফরমার, ২৮ আগষ্ট রাতে শ্রীরামপুরে গ্রামীন ফোন টাওয়ার ও ১৮ জুন রাতে কুশলদিয়া গ্রামীন ফোন টাওয়ারের ২০ জেভিএ ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে। ২৭ সেপ্টেম্বর রাতে বাগদা গ্রামের কৃষক মিজানুর রহমানের ও ৭ আগষ্ট রাতে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বর্তমান পরিচালক মজিদপুর গ্রামের মোতাহার হোসেনের সেচের ট্রান্সফরমারের কোর ও কয়েল চুরি করে নিয়ে গেছে চোরেরা। এ ছাড়াও গত ৬ মে রাতে উপজেলার সাতবাড়িয়া থেকে ৩টি, ৮ মে রাতে চাঁদড়া থেকে ২টি, ১১ মে রাতে লক্ষèীনাথকাটি থেকে ২টি ও কড়িয়াখালি থেকে ৩টি, ১৮ মে রাতে শিকারপুর হিজলতলা থেকে ৩টি, ১৩ জুন রাতে আটন্ডা থেকে ৩টি, ১৮ জুন রাতে দেউলী এলাকা থেকে ৩টি, ১৬ জুলাই রাতে নেপাকাটি থেকে ১টি, ২৯ জুলাই রাতে পৌর এলাকার ভোগতি থেকে ১টিসহ বিভিন্ন এলাকার অর্ধশতাধিক ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে।

উপজেলার প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র কৃষক সেচ মালিক বাগদা গ্রামের মিজানুর রহমান, লক্ষèীনাথকাটি গ্রামের আব্দুল আহাদ, বায়সা গ্রামের রমজান আলী ও আটন্ডা গ্রামের সোনাই মোড়ল জানান, ট্রান্সফরমার চুরি হওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তারা। কেননা মাঠে সেচযন্ত্র সচল রাখতে এখন নিজের টাকায় ট্রান্সফরমার কিনতে হবে। এতে তারা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন।

এ প্রসঙ্গে যশোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ কেশবপুর জোনাল অফিসের ডেপুটী জেনারেল ম্যানেজার মহম্মদ আবদুল লতীফ বলেন, ট্রান্সফরমার চুরি রোধে উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন ও পৌরসভা এলাকায় লিফলেট বিতরণ ও সচেনতামূলক মাইকিং করা হচ্ছে। পাশাপাশি ট্রান্সফরমার চোরদের ব্যাপারে কোনো তথ্য জানলে থানা অথবা পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে জানাতে অনুরোধ করা হয়েছে।

কেশবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বোরহান উদ্দীন বলেন, গণহারে চলমান ট্রান্সফরমার চুরি ব্যাপক হারে বেড়ে গেছে। এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার চোরদের আটক করতে পুলিশি তৎপরতা অব্যহত রয়েছে।


আপনার মতামত লিখুন :

মশিয়ার রহমান। নিজস্ব প্রতিবেদক। কেশবপুর, যশোর