কপোতাক্ষের নতুন ভাঙ্গনে ফের পাইকগাছার ৬ টি গ্রাম হুমকির মুখে

প্রকাশিত: ২:৪১ অপরাহ্ণ, জুলাই ৮, ২০১৯ | আপডেট: ২:৪১:অপরাহ্ণ, জুলাই ৮, ২০১৯

সোহাগ মাল্টিমিডিয়া এন্ড ট্র্যাভেলস

পাইকগাছা(খুলনা) সংবাদদাতা:
কপোতাক্ষের ভয়াবহ ভাঙ্গনে ফের হুমকিতে পড়েছে খুলনার পাইকগাছা উপজেলার মালত, দরগামহল, রামনাথপুর, আগড়ঘাটা বাজার, হাবিবনগর ও মামুদকাটী খেয়াঘাট সংলগ্ন ওয়াপদার বেড়িবাঁধসহ আশপাশের এলাকা। আকষ্মিক কপোতাক্ষের ক্লোজার অপসারণে জোয়ারের পানির তোড়ে গত ৩ দিনে নতুন করে আগ্রাসী কপোতাক্ষ গিলে খেয়েছে মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ সালামত উল্ল্যাহ,শেখ আরিফ,অধ্যক্ষ সাইফুল্ল্যাহসহ অনেকের বসত বাড়ি। স্থানীয়দের দাবি, নদের আগ্রাসন ঠেকাতে না পারলে ভয়াবহ ভাঙ্গনের মুখে যে কোনো মুহূর্তে পাউবোর বেড়িবাঁধ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হবে। নতুন করে প্রকৃতি উদ্বাস্তু হবে বহু সংখ্যক পরিবার।
উপজেলার দরগামহল এলাকার পোষ্ট মাস্টার সৈয়দ মিজানুর রহমান জানান, এর আগে ভয়াবহ ভাঙ্গনের মুখে দরগামহল, মালত, রামনাথপুর, আগড়ঘাটা বাজার ও হাবিবনগর এলাকার বসত-বাড়ি, ধর্মীয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কবরস্থানসহ বিস্তীর্ণ এলাকার বহু কৃষি জমি নদী গর্ভে বিলীণ হয়েছে। ভয়াবহ ভাঙ্গনের মুখে সরিয়ে নেয়া হয়েছে পাইকগাছা-খুলনা প্রধান সড়কটিও। এরপর নদের নাব্যতা হ্রাসে নদীর গতিপথ পাল্টে ভাঙ্গনে নতুন মাত্রা যোগ হওয়ার একপর্যায়ে সরকার ২৬২ কোটি টাকা ব্যায়ে কপোতাক্ষ খনন করলেও মানিচিত্রের মূল নক্সা পরিবর্তনে বিশেষ ভূমিকা বা প্রভাব ফেলেনি। শুধু এখানেই শেষ নয়, খনন পরবর্তী জোয়ারে বয়ে নিয়ে আসা নদীর পলি ঠেকাতে শুষ্ক মৌসুমে ক্লোজার বা বাঁধ স্থাপন এবং বর্ষা মৌসুমে তা অপসারণ করলেও চলতি বছর মৌসুমের শেষ সময়ে বাঁধ নির্মাণ ও বর্ষা মৌসুমের আগেই আকষ্মিক বাঁধ কেটে দেয়ায় গত ৩ দিনে জোয়ারের পানির তোড়ে নতুন করে ভাসিয়ে নিচ্ছে নতুন নতুন স্থাপনা।
হরিঢালীর ইউপি সদস্য কুমারেশ দে জানান, সাবেক ইউপি সদস্য নির্মলের বাড়ি থেকে মামুদকাটী খেঁয়াঘাট সংলগ্ন শ্মশান ঘাট পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ভয়াবহ ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। তিনি আরো বলেন, দীর্ঘ দিনের ভাঙ্গন প্রক্রিয়ায় ব্যাপক আন্দোলন সংগ্রামের মুখেও সরকারি প্রয়োজনীয় সহযোগিতা না পেয়ে গ্রামে গ্রামে মানুষের কাছ থেকে উপকরণ সংগ্রহ করে কর্মসূচির লোক দিয়ে তারা যে সামান্য কাজ করেছিলেন সর্বশেষ জোয়ারের তোড়ে তাও ভাসিয়ে নিয়ে গেছে আগ্রাসী কপোতাক্ষ। পার্শ্ববর্তী পাখিমারা বিলে টিআরএম’র মুখে অপরিকল্পিত ক্লোজার নির্মাণ ও তা অপসারণে প্রবল ¯্রােতের মুখে ভাঙ্গন ভয়াবহ রুপ নিয়েছে। মামুদকাটী গ্রামের সব্ব বিশ্বাস জানান, বাপ-দাদার আমল থেকে তারা এ গ্রামেই বসবাস করে আসছেন। ভাঙ্গনের মুখে প্রতিবেশীদের অনেকেই আগেই উদ্বাস্তু হয়েছেন। অবস্থাদৃষ্টে তার আশংকা এবার তারাও সে পথেই হাঁটতে চলেছেন।
পাইকগাছা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোড়ল রশিদুজ্জামান বলেন, ঐতিহ্যবাহী আগড়ঘাটা বাজারের উপর নির্ভর করে চলে এলাকার খেঁটে খাওয়া মানুষের রুটি-রুজি। কয়েক বছর যাবৎ ভাঙ্গনের মুখে বাজারটাকে বোধ হয় এবার আর শেষ রক্ষা হবেনা। আর এমনটি হলে রীতিমত রাস্তায় বসবে অসহায় মানুষগুলো। বিষয়টি নিয়ে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন তিনি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জুলিয়া সুকাইনা বলেন, তিনি পাইকগাছায় যোগদান করার পর থেকে দেখছেন, অধিকাংশ নদী ভাঙ্গনের মুখে গতিপথ বদলেছে। এতে ভাঙ্গনের এলাকা প্রসারিত হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) পাইকগাছা উপজেলা প্রকৌশলী ফরিদ আহম্মদ বলেন, বর্ষা মৌসুমে জোয়ারের প্রভাবে ওয়াপদা বাঁধে ফাটল ধরে বেশি। ভাঙ্গন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আশ্বস্থ করে তিনি আরো বলেন, বড় ধরনের ক্ষতির হাত থেকে বাঁচাতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
খুলনা-৬ (পাইকগাছা-কয়রা) আসনের সংসদ সদস্য আক্তারুজ্জামান বাবু বলেন, নদী ভাঙ্গনে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহন তার নির্বাচনী ওয়াদা ছিল। ইতোমধ্যে বিভিন্ন এলাকার বড় বড় ভাঙ্গন ঠেকাতে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সব ভাঙ্গন রোধে কার্যকরী পদক্ষেপ নিবেন তিনি।

 

সুন্দরবনটাইমস.কম/আমিনুল ইসলাম বজলু/পাইকগাছা


আপনার মতামত লিখুন :

নিজস্ব প্রতিবেদক