পাইকগাছায় বিউটিফিকেশন এর ট্রেনিং এর নামে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ

প্রকাশিত: ৯:০২ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১৪, ২০২০ | আপডেট: ৯:০২:অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১৪, ২০২০

নিজস্ব প্রতিবেদক, কপিলমুনি(খুলনা):
খুলনার পাইকগাছা উপজেলায় সরকার পরিচালিত নারী উন্নয়ন ও কর্মসৃষ্টির লক্ষে প্রশিক্ষণে ব্যায়ীত মোটাংকের টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে। উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার অধিনে বিউটিফিকেশন এর ট্রেনিং এর নামে প্রশিক্ষনার্থীদের নামে বরাদ্দকৃত অর্থ হাতিয়ে নেয়া হয়। ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে প্রশিক্ষণের নামে টাকা গুলো কে নিয়েছে তার উত্তর নেই কারও কাছে। অনেকের নাম তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হলেও মুলত এসব নারীরা নিজেরাই জানেন না যে তারা কখন এবং কোথায় প্রশিক্ষণ করেছেন! আবার কেউ আদৌ প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করেননি বলে জানাগেছে। যার সুষ্ঠতদন্ত হলে বেরিয়ে আসবে জানা অজানা সব তথ্য।

সোহাগ মাল্টিমিডিয়া এন্ড ট্র্যাভেলস

সংশ্লিষ্ট অফিস সুত্রে জানাগেছে, পাইকগাছা উপজেলার মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার অধিনে ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরের জুলাই/১৯ হতে সেপ্টেম্বর/১৯ পর্যন্ত ৩ মাসের জন্য মহিলাদের আয়বর্ধক (আইজএ) প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে বিউটিফিকেশন কোর্সে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। এ প্রশিক্ষণে সরাসরি অংশগ্রহণ করেন ২৫ জন প্রশিক্ষনার্থী। ৩মাস প্রশিক্ষণে সরকারীভাবে প্রত্যেক মহিলার জন্য ৬ হাজার টাকা ভাতা প্রদান করা হয়। অথচ সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় এমন প্রশিক্ষণের বিষয় তালিকাভুক্ত অনেকেই তাদের নাম দেখে রীতিমতো চমকে ওঠেন। কারণ তারা এমন প্রশিক্ষণে কোন অংশগ্রহণ করেননি। তাহলে তাদের নামে বরাদ্দকৃত টাকা গেল কোথায়? এমন প্রশ্ন ভুক্তভোগীদের। এদিকে একইভাবে অনেক প্রশিক্ষনার্থীকে তাদের উপযুক্ত টাকা না দিয়ে কাটাছেড়া করা হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তালিকাভুক্ত অনেকে জানান, ৬ হাজার টাকা বরাদ্দ হলেও কেউ ২ হাজার, কেউ বা ৩ হাজার, আবার কেউ বা ৪ হাজার টাকা পেয়েছেন। ভুক্তভোগীরা জানান, বিউটিফিকেশন এর কাজে নিয়োজিত মাঠকর্মীর দ্বায়িত্বে থাকা ফারহানা আক্তার লাবনী তাদের টাকা সম্পুর্ণ না দিয়ে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের দোহায় দিয়ে কাটাছেড়া করে তার অর্ধেক আবার কাউকে দিয়েছেন যতসামান্য। এখানে আমরা যা পেয়েছি তাতে আমাদের কি বা করার আছে বলে জানান তারা।

গদাইপুর গ্রামের তাছলিমা বেগম জানান, ‘তিনি পেয়েছেন সাড়ে ৪ হাজার টাকা, একই গ্রামের তুহিনা আখতার জানান, তিনি পেয়েছেন ৩ হাজার টাকা ও প্রতাপকাটি গ্রামের এক স্কুল ছাত্রী ৩ হাজার টাকা পেয়েছেন।
এদিকে ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে ৭ ম ব্যাচে অক্টোবর ১৯ হতে ডিসেম্বর ১৯ পর্যন্ত ৩ মাসের কোর্সে ২৫ জন প্রশিক্ষণার্থীদের মধ্যে চামেলি আক্তার কখনও প্রশিক্ষণে যাননি বলে জানাগেছে। একই তালিকায় অনেক ভুয়া নাম প্রকাশিত হয়ে সংশ্লিষ্ট প্রশিক্ষনার্থী মহিলাদের নামে বরাদ্দকৃত অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে।
উক্ত ৩ মাসের জন্য প্রশিক্ষনার্থীদের নামের চুড়ান্ত তালিকা প্রস্তুত করে স্বাক্ষর প্রদান করেন উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা নাজমুল হক, উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা সরদার আলী আহসান, যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মোঃ রেজাউল করিম ও উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান লিপিকা ঢালী।

এ বিষয়ে উপজেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের মাঠকর্মী ফারহানা আক্তার লাবনী জানান, প্রশিক্ষনার্থীদের হাজিরার উপর টাকা বরাদ্দ হয়। যার প্রাপ্য যা সেটা তাকে চেকের মাধ্যমে দেয়া হয়েছে। তাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত কোন টাকা নেয়া হয়নি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি অনেকেরই বিষয়ে সুপারিশ করেছি, যারা বয়সের কারনে বাদ পড়ছিল। এটা কি আমার অন্যায় হয়েছে? গরীব মানুষ তাই স্যারদের কাছে সুপারিশ করে তাদেরকে তালিকাভুক্ত করেছি।’ অন্য এক প্রশ্নের জবাবে লাবনী আরোও বলেন, অনেকে প্রশিক্ষণে যেতে পারেননি। তাদের স্থলাভিষিক্ত করে অন্য কাউকে দেখিয়ে হাজিরা উঠিয়ে দিয়েছি। এটা কি আমার অপরাধ। তিনি সব দপ্তরগুলোয় এ রকম হয়ে থাকে বলে জানান তিনি।
উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মোঃ নাজমুল হক জানান, বিউটিফিকেশনের ট্রেনিং এ কোন অনিয়ম হওয়ার সুযোগ নেই। প্রতিদিনের হাজিরার জন্য বরাদ্দ ১শত টাকা। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যারা অভিযোগ করেছেন তাদেরকে আসতে বলেন। হাজির না থেকেও অনেকের হাজিরা উঠানোর বিষয়ে তিনি বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। অনেকে প্রশিক্ষণে উপস্থিত না হয়েও নিয়মিত হাজিরা ওঠানো ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের ভুমিকা বিষয়ে তিনি বলেন আমি বিষয়টি দেখছি।

উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মোঃ রেজাউল করিম বলেন আমরা শুধুমাত্র কমিটির মেম্বর হিসাবে তালিকার নামগুলো যাচাই বাছাই করে থাকি। বাকি কাজ মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের। তারা সার্বিক ব্যবস্থার দ্বায়িত্ব পালন করবে বলে জানান তিনি।
উপজেলা মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান লিপীকা ঢালী বলেন, আমি যাচাই-বাছাই কমিটির মেম্বর হিসাবে তালিকায় স্বাক্ষর করেছি। বাকী দ্বায়িত্ব সংশ্লিষ্ট দপ্তরের। তিনি বলেন, হাজিরা অনুযায়ী প্রত্যেকের ভাতা দেয়া হয়। যার হাজিরা কম থাকে তাকে কম ভাতা প্রদান করা হয় বলে জানান তিনি।

পাইকগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জুলিয়া সুকায়না বলেন, বিষয়টির খোঁজখবর নিতে হবে। সংশ্লিষ্ট দফতর কি করেছে তার উপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

সুন্দরবনটাইমস.কম/আমিনুল ইসলাম বজলু

 


আপনার মতামত লিখুন :

নিজস্ব প্রতিবেদক