৭১’র গণহত্যায় ৩ স্বজন হারানো কেশবপুরের অতুলের দিনকাটে অর্ধহারে-অনাহারে

প্রকাশিত: ২:৩৯ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২৭, ২০২০ | আপডেট: ২:৩৯:অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২৭, ২০২০

মশিয়ার রহমান, কেশবপুর (যশোর):
১৯৭১ সালের গণহত্যায় স্বজন হারানো যশোরের কেশবপুরের মধ্যকুল রাজবংশী পাড়ার অতুল সরকারের দিনকাটে অর্ধহারে অনাহারে। বাবার রেখে যাওয়া মাটির ঘরই তার শেষ সম্বল। নিজের যৎসামান্য আয়ে ৩ ছেলে মেয়ের লেখাপড়া করানোর পাশাপাশি সংসার চালাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয় তাকে। ৭১’ এর ক্ষতিগ্রস্থ অতুল সরকার পিতার স্বীকৃতি পেতে মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন।

সোহাগ মাল্টিমিডিয়া এন্ড ট্র্যাভেলস

অভিযোগে বলা হয়, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালিন সময়ে পাক সেনারা নির্বিচারে এদেশের নিরীহ জনগণকে হত্যা করে। প্রাণ বাঁচাতে সে সময় বহুলোক বিশেষ করে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা এ দেশ ছেড়ে ভারতে পাড়ি জমাতে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় কেশবপুর সদর ইউনিয়নের মধ্যকুল রাজবংশী পাড়ার অশ্বিনী সরকার মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নাম লেখাতে তার স্ত্রী পারুল সরকার, ২ ছেলে অতুল সরকার, কার্তিক সরকার ও মেয়ে নির্মলা সরকারকে নিয়ে ভারতের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। পথিমধ্যে ঝিকরগাছা থানার হলদিপোতা গ্রামে পৌঁছলে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে পাকসেনাদের সন্মুখ যুদ্ধ শুরু হয়। এ সময় অশ্বিনী সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ নিয়ে পাকসেনাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। ওই যুদ্ধে অনেক মুক্তিযোদ্ধার মত অশ্বিনী সরকারও পাক বাহিনীর গণহত্যার শিকার হয়। মুক্তিযুদ্ধে বাবা, মা, বোন হারানো অতুল সরকারের পরিবারের খবর কেউ রাখে না। মাটিরঘর, স্যাঁতস্যেঁতে মেঝে, অভাব অনটনে অর্ধহারে অনাহারে দিন কাটে তার।

অশ্বিনী সরকারের ছেলে অতুল সরকার অভিযোগ করে বলেন, হলদিপোতা গ্রামে পাকসেনাদের সাথে সন্মুখ যুদ্ধে তিনি শুধু বাবাকে হারাননি। মা পারুল সরকার, বোন নির্মলা সরকারকেও অদ্যাবধি খুঁজে পাওয়া যায়নি। তার ধারণা ওই যুদ্ধে মা, বোনও মারা গেছে। দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর দেশ স্বাধীন হয়। এ সময় তিনি ভাই কার্তিক সরকারকে নিয়ে দেশে ফিরে দেখেন পাক সেনারা তার বাবার মাটির বসত ঘরটিও ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দিয়েছে। সেই ঘরেই তিনি স্ত্রী ও ৩ সন্তানকে নিয়ে অতিকষ্টে জীবন যাপন করছেন। তিনি মুজিববর্ষে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।
অতুল সরকারের ছেলে ও খুলনা সুন্দরবন কলেজের ৩ বর্ষের ছাত্র অভিজিৎ সরকার জানান, আমার পরিবারটি ৭১’র ক্ষতিগ্রস্থ। তার বাবা মাছ ধরেই জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। অভাব অনটনের সংসার তাদের। খেয়ে না খেয়েই কোন ভাবে দিন চলে। এরপরও পিতার যৎসামান্য আয়ে ৩ ভাই বোনের লেখাপড়া করানো অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

এ ব্যাপারে কেশবপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোহাম্মদ আলী বলেন, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালিন সময়ে গণহত্যায় এ দেশের ৯ লাখ লোক শহীদ হয়। অশ্বিনী সরকারও তাদের মত গণহত্যার শিকার হলেও তার কোন প্রমাণপত্র নেই। ঝিকরগাছা থানার হলদিপোতা এলাকার চেয়ারম্যান যদি এ সংক্রান্ত প্রত্যয়ন দেয় তবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করা যাবে।

সুন্দরবনটাইমস.কম/নিজস্ব প্রতিবেদক

 


আপনার মতামত লিখুন :

নিজস্ব প্রতিবেদক