সুন্দরবনে আবারো মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে দস্যুবাহিনী

প্রকাশিত: ৩:১০ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ৮, ২০২০ | আপডেট: ৫:২৮:অপরাহ্ণ, অক্টোবর ৮, ২০২০
সুন্দরবনে দস্যুদের হামলায় আহত জেলেদের একাংশ

সুন্দরবনে আবারো সংঘবদ্ধ হচ্ছে নতুন গড়ে ওঠা দস্যুবাহিনী। এদের হামলা ও অমানুষিক নির্যাতনের ক্ষত নিয়ে ফিরে আসছে মোংলা রামপাল ও আসপাশের জেলেরা। শুধু মাত্র নির্যাতন করেই ক্ষান্ত নয়-এরা জেলেদের আহরিত কয়েক লাখ টাকার মাছ জাল এমন কি নগদ অর্থ লুটে নিয়েছে সশস্ত্র দস্যুরা। নির্যাতনের শিকার জেলেরা মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১২ টার দিকে ট্রলার যোগে মোংলার ফেরীঘাটে পৌছালে তাদের স্বজনদের কান্না আর আর্তনাতে সেখানকার আকাশ-বাতাস যেন ভারি হয়ে ওঠে। তবে বন বিভাগ অদৃশ্য কারনে এদের বনদস্যু বলতে নারাজ, তারা বলছে, যারা মারধর করেছে এরা বনদস্যু নয়, জেলেরা নিজেরাই নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে জড়িয়েছে। প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে জেলেদের ট্রলারে পৌছে দিয়েছে টহলরত কোষ্টগার্ড সদস্যরা।

সোহাগ মাল্টিমিডিয়া এন্ড ট্র্যাভেলস

 

সর্বশান্ত রক্তাক্ত আহত অবস্থায় ফিরে আসা জেলে ও তাদের স্বজনরা জানান, গত বুধবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সকালে মোংলার সোনাইলতলা এলাকার একদল জেলে দুবলা ফরেষ্ট অফিস থেকে বনবিভাগের বৈধ পাস পারমিট নিয়ে সাগরপাড়ের দুবলা চরাঞ্চল সংলগ্ন কোকিলমনির গহীন কালা মিয়ার চরে মাছ ধরতে যায়। মএ সময় নতুন গড়ে ওঠা দস্যু মাহাফুজ বাহিনীর পরিচয়ে জেলেদের কাছে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে এবং দু’দিন সময় বেঁধে দেয়। নির্ধারিত সময় জেলেদের চাঁদার টাকা পরিশোধ না করায় রোববার রাত সাড়ে ১১ টার দিকে কোকিলমনি এলাকার কালামিয়ার চরে মাছ ধরা রত জেলে বহরে হানা দেয় সশস্ত্র দস্যুরা। জেলেরা কোন কিছু বুঝে ওঠার আগেই ৪টি ট্রলার যোগে ২৫-৩০ জনের এ দস্যু গ্রুপের সদস্যরা এলোপাথাড়ি গুলি ছুড়ে আতংক সৃস্টি এবং নৌকায় উঠে নিরীহ জেলেদের বেধড়ক মারধর শুরু করে। এসময় তাদের দাবীকৃত চাঁদার টাকা কেন দেয়া হয়নি তা জিজ্ঞেস করে এবং জেলেদের মহাজনদের খুজতে থাকে। ওই জেলে বহরে থাকা নৌকায় প্রায় ৩৫ থেকে ৪০জন জেলেদের উপর দু’ঘন্টার বেশি তান্ডব এবং লুটপাট চালায় দস্যু বাহিনীর সদস্যরা। এ সময় দস্যুদের মারধর ও নির্যাতনে দিগবিদিগ হয়ে জেলেরা নদী ও চরাঞ্চলসহ বনের ভেতরে ঝাপিয়ে পড়ে প্রান রক্ষার চেষ্টা করে। আর যে সকল জেলে নৌকায় আটকা পড়ে তাদের ভাগ্যে জোটে অমানুষিক নির্যাতন। জেলেদের কারো শরীরে রয়েছে ধারালে অস্ত্রের আঘাত, আবার কারো লাঠিপেটার ক্ষত। এ ছাড়া জেলেদের হাত-পা থেতলে দেয়া হয়। লুটে নেয়া হয়-জেলেদের আহরিত প্রায় কয়েক লাখ টাকা মাছ, জাল ও নগদ অর্থসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় মালামাল।

 

এসময় জেলেদের আর্ত চিৎকারে অন্য পাশে থাকা জেলেরা তাদের  উদ্ধার করে সেখানকার বন বিভাগের টহল ফাড়ীঁ অফিসে খবর দেয়া হয়। কিন্ত কোকিল মনি ওই ফরেষ্ট অফিসে জনবল কম থাকায় ঘটনা স্থলে এসে জেলেদের উদ্ধার করতে ব্যার্থ হয় বন রক্ষিরা। তবে আগে থেকেই দস্যুদের চাদাঁদাবী করার কথা কোকিল মনি ফরেষ্ট অফিসারকে জানানো হয়েছিল বলে দাবী আহত জেলেদের। দস্যুদের জেলে বহরে হামলা ও লুটপাটের ঘটনার সাথে সাথে দুবলার চরে থাকা কোষ্টগার্ডের অফিসে আহত জেলেদের নেয়া হয় এবং সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয় কোষ্টগার্ড সদস্যরা।

 

রামপাল ও মোংলার জেলেরা জানায়, লুটতরাজ শেষে দস্যুরা ফিরে গেলে বনবিভাগের ককিলমনি টহলফাঁড়ির বনরক্ষীদের সহায়তায় আহত জেলেদের উদ্ধার করে। পরে জাল-মাছ হারিয়ে নির্যাতনের ক্ষত নিয়ে ফিরে আসা জেলেরা ঘটনার বর্ননা করেন। সোমবার রাতে মোংলায় পৌছানোর পর আহত জেলেদের দ্রুত চিকিৎসার জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। প্রাথমিক পর্যায় মোংলা থানাকে অবহিত করা হয়েছে, মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানায় এ জেলে মহাজনরা।

 

আহত জেলেরা হলেন মোংলার আমড়াতলা গ্রামের হাফিজুল ফকির (২৫), সবুজ রফিক (২০), সাইদুল শেখ (৩০), জব্বার ফকির (৬০), শুকুর ফকির (৩০), মুকুল ফকির (২৫) রফিকুল (৩০), হাফিজ (৩৫) ও কয়রা উপজেলার গিলাবাড়ি গ্রামের জামাল গাইন (৪২)। এদের মধ্যে বেশ কয়েক জনের অবস্থা আশংকাজনক বলে জানিয়েছেন জেলে মহাজন ও তাদের স্বনরা।

 

কোষ্টগার্ড সুত্রে জানা যায় রাতে একদল জেলে আহত অবস্থায় ষ্টেশনে আসে এবং তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা ও সকল সহায়তা শেষে তাদের মোংলায় পাঠানো হয়েছে। তবে বনদস্যুদের খোজ খবর নেয়া হচ্ছে এবং লুটপাট ও চাঁদা দাবীর ব্যাপারে কোন কিছু জানাতে পারেননি তিনি।

 

জীবন-জীবিকার তাগিদে সুন্দরবনের হিংশ্র বাঘ-কুমির সহ বন্যপ্রাণীর হিংস্রাত্বক আচরন থেকে রক্ষা পেলেও নতুন করে গড়ে ওঠা সশস্ত্র দস্যুদের হাত থেকে রক্ষা মেলেনি নিরীহ এসব জেলেদের।


আপনার মতামত লিখুন :

ম.ম, রবি ডাকুয়া। প্রতিবেদক। বাগেরহাট, খুলনা