মাকে পিটিয়ে গেটের বাইরে রেখে গেলেন দুই কুলাঙ্গার সন্তান: ফিরিয়ে দিলেন ডুমুরিয়া থানার ওসি বিপ্লব

প্রকাশিত: ৫:৩৭ অপরাহ্ণ, মার্চ ১৯, ২০২০ | আপডেট: ৫:৩৭:অপরাহ্ণ, মার্চ ১৯, ২০২০

গাজী আব্দুল ক্দ্দুুস, চুকনগর(খুলনা):
মা নাই গৃহে যার, সংসার অরণ্য তার। দেখিলে মায়ের মুখ, দূর হয় সকল দূখ। কবিতার এই পংক্তিটি বুধবার দিবাগত রাতে আবারও স্বরণ করিয়ে দিলেন ডুমুরিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আমিনুল ইসলাম বিপ্লব।
জানা যায়, বুধবার দিবাগত রাতে ডুমুরিয়া উপজেলার চুকনগর শহরের বাসিন্দা রমেশ নন্দী এবং তার দুই গুনধর পুত্র সমীর নন্দী ও পলাশ নন্দীর সাথে তার স্ত্রী মায়ারানী নন্দীর পারিবারিক বিষয় নিয়ে ঝগড়া বিবাদ হয়। একপর্যায়ে দুই পুত্র স্বামী মিলে তাকে বেদম প্রহার করে। এতে তার চোখ, হাত, পাসহ সমস্ত শরীরে একাধিক স্থানে রক্ত বা আঘাত ও ফোলা জখমের চিহৃ পাওয়া দেখা যায়।

সোহাগ মাল্টিমিডিয়া এন্ড ট্র্যাভেলস

কিন্তু অবিশ্বাস্য হলেও সত্য দুই কুপুত্র তার জন্মদাতা মাকে শুধু পিটিয়েই ক্ষান্ত হননি। পিতা, ২পুত্র ও পুত্রবধুরা মিলে মায়ের ১০মাস ১০দিন গর্ভে ধারণ করে অসহ্য যন্ত্রনা সহ্য করা ও মায়ের বুকের দুধের ঋণ শোধ করার জন্য বুধবার দিবাগত রাত আনুমানিক ২টার দিকে ঘর থেকে টেনে হিচড়ে বের করে এনে বাইরে রেখে গেটে ৩টি তালা লাগিয়ে নিরবিঘেœ ঘুমিয়ে পড়েন। কিন্তু রাখে আল্লাহ মারে কে এই কথাটি তো থেকেই যায়। ডুমুরিয়াবাসীর চৌকিদার বলেন বা পাহারাদার বলেন সে তো জেগেই আছে ? কোন এক মারফত তিনি বিষয়টি জানতে পারেন। সংবাদ শুনতে যেটুকু সময় লেগেছে মোবাইল ফোন কেটে দিয়েই সরকারী গাড়ি না নিয়ে গভীর রাতে প্রচন্ড শীত উপেক্ষা করে মোটর সাইকেল সহকারে চুকনগরে রমেশ নন্দীর বাড়িতে এসে হাজির হন। ঘটনাস্থলে এসেই তিনি সত্য ঘটনাটি দেখে বাকরুদ্ধ হয়ে যান। শীতে কাঁপতে কাঁপতে ধার হিসাবে একটি চাদর যেন কার কাছ থেকে নিয়ে গায়ে জড়িয়ে মা মা বলে মাকে ডাকতে শুরু করেন। তখন দেখা যায়, পঞ্চাশর্দ্ধো বৃদ্ধ মাতা মাটিতে বসে অঝোরে কাঁদছে। পুলিশ দেখে তিনি নিজেকে সামলাতে গিয়ে আরো জোরে কাঁদতে থাকেন। সবকিছু শুনে বুঝে এবার তিনি ২পুত্র ও ২পুত্রবধুদের ডাকা শুরু করেন। ততক্ষণে বৃদ্ধ মাতার স্বামী, পুত্র ও পুত্রবধুরা দোতলায় নাক ডাকিয়ে ঘুমাচ্ছেন। রাত আড়াইটার দিকে কোন সাড়া শব্দ না পেয়ে তিনি উত্তেজিত হয়ে গেট ভেঙ্গে তাদের বের করে আনার নির্দেশ দিলে নিরুপায় হয়ে তারা জেগে থাকা ঘুম ভেঙ্গে নিচে নেমে আসেন। এসময় পাহারাদার নিজেকে সামলে নিয়ে সকল বিষয় বিস্তারিত শুনে মাকে ও নারী নামের দুই পুত্রবধুকে ঘরে গিয়ে ঘুমিয়ে থাকার নির্দেশ দিলেন। আর স্বামী ও পুত্রদের শাস্তি স্বরুপ বাকী রাত গেটের বাইরে মেঝেতে ঘুমাতে বলেন। জন্মদাতা মাতাই যে নিঃস্বার্ত মা তার প্রমান আবারও মায়ারানী নন্দী রাখলেন। তিনি কোনক্রমেই স্বামী ও সন্তানদের রেখে ঘরে ঘুমাতে গেলেন না। আর পাহারাদার সাহেব মায়ের কথাও ফেলতে পারলেন না। অবশেষে রাত প্রায় ৩টার দিকে পরিবারের সকলে মিলে এক সঙ্গে ঘুমাতে গেলেন। এতক্ষন পাহারাদার ডাক নামে যে মহামানবের কথা বলছিলাম তিনি আর কেউ নন, তিনি হলেন ডুমুরিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আমিনুল ইসলাম বিপ্লব। এব্যাপারে তিনি বলেন,জন্মদাতা মায়ের প্রশংসা করার মত ভাষা আমি জানি না। কারণ আবেগের কাছে প্রশংসা তুচছ হয়ে যেতে পারে। তাই মায়ের প্রশংসা আমি করতে চাই না।

সুন্দরবনটাইমস.কম/নিজস্ব প্রতিবেদক

 


আপনার মতামত লিখুন :

নিজস্ব প্রতিবেদক