ভেজাল দুধ ও জেলিসহ গ্রেপ্তার তালা উপজেলা দুগ্ধ উৎপাদনকারি সমিতির সভাপতি

প্রকাশিত: ৪:৩৯ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ৭, ২০২২ | আপডেট: ৪:৩৯:অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ৭, ২০২২

সাতক্ষীরার তালা উপজেলার জেয়ালা নলতার কালিপদ ঘোষের ছেলে তালা দুগ্ধ উৎপাদনকারি সমবায় সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি প্রশান্ত কুমার ঘোষকে এক হাজার ১২০ কেজি ভেজাল দুধ ও ২৫০ কেজি জেলিসহ আটক করা হয়েছে।

সোহাগ মাল্টিমিডিয়া এন্ড ট্র্যাভেলস

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ বিভাগ দুপুর একটার দিকে তাকে তার বাড়ি থেকে আটক করে। বিকেলে তাকে পাটকেলঘাটা সহকারি ভূমি কমিশনারের সামনে উপস্থিত করলে তিনি তার দোষ স্বীকার করায় তাকে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড, ৫ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো ছয় মাসের কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়।

তালা উপজেলার জেয়ালা-নলতা গ্রামের সমীর ঘোষ, খগেন ঘোষ, সামছুর রহমানসহ কয়েকজন জানান, ২০০০ সালে তালা উপজেলার জেয়ালা-নলতাকে দুগ্ধ পল­ী হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়। ওই সময় স্থানীয় দুগ্ধ সমবায় সমিতির সভাপতি ছিলেন দিবস চন্দ্র ঘোষ। তিনি তিন বার রাষ্ট্রপতি পুরষ্কারসহ বিভিন্ন পুরষ্কার পান। ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রশান্ত কুমার ঘোষ ও তার সহযোগীরা ভেলিণ্ডার মেশিনে সোয়াবিন তেল দিয়ে কৃত্রিম ননী তৈরি করে নকল দুধ তৈরি করে আসছিল। একইভাবে তারা ভারতীয় নিম্নমানের গুড়ো দুধে গ্লুকোজ মিশিয়ে ল্যাক্টোমিটারে ননীর মাত্রা ২৫ থেকে ২৮ দেখিয়ে বাজারজাত করতেন। এ কাজে তারা জেলি ব্যবহার করতেন। অপদ্রব্য মিশ্রিত এ দুধ তারা খুলনা ও সাতক্ষীরার বিভিন্ন মিষ্টি তৈরির কারখানায়, প্রাণ, ব্রাক ও মিল্কভিটায় বিক্রি করতেন। ওইসব প্রতিষ্ঠানের কতিপয় দূর্ণীতিবাজ কর্মকর্তা ও কর্মচারি প্রশান্ত কুমার ঘোষ ও তার সহযোগীদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে এ কাজের বৈধতা দিয়ে আসছিল। এ নিয়ে প্রতিবাদ করায় জেয়ালা গ্রামের সুকুমার ঘোষের ছেলে সুকান্ত ঘোষকে সমিতি থেকে ২০১৫ সালের ৩০ জুন বহিষ্কার করা হয়।

২০১৬ সালের ১৩ জানুযারি মিল্কভিটা দুগ্ধ শীতলীকরণ কেন্দ্রের অসাধু কর্মকর্তা টেকনিশিয়ান মুত্তায়িন বিল­াহ, সহকারি রাসেল ও কর্মচারি হামিদুলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় প্রশান্ত ঘোষ থেকে কর্মচ্যুত করে জীবননাশের হুমকি দেন। এ ঘটনায় তিনি ওই সালের ১৯ জানুয়ারি তালা থানায় ৫৬০ নং সাধারণ ডায়েরী করেন। যদিও সেই সুকান্ত ঘোষ এখন প্রশান্ত ঘোষের সঙ্গে একই ধরণের অসাধু ব্যবসায় লিপ্ত। অবৈধ এ ব্যবসাকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে ধুলিহরের দুগ্ধ ব্যবসায়ি তরুন কুমার সাহার সহযোগিতায় গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর সাতক্ষীরা জেলা সমবায় অফিসে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ৪০ লাখ টাকা খরচ করে তালা দুগ্ধ উৎপাদনকারি সমবায় সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি হন প্রশান্ত ঘোষ।

এরপরও সম্প্রতি মহান্দি ঘোষপাড়া থেকে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ বিভাগের কর্মকর্তারা ভেজাল দুধ, জেলিসহ প্রণব ঘোষ, বাবু ঘোষ ও শঙ্কর ঘোষকে আটক করে। পরে তাদেরকে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে কারাদণ্ড ও জরিমানা দিয়ে জেলহাজতে পাঠানো হয়।

স্থানীয়রা আরো জানান, দুপুর একটার দিকে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ সাতক্ষীরার পরিচালক নাজমুল হাসান ও তালা উপজেলার স্যানিটারী ইনসপেক্টর ও নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শক শরিফ মোঃ আব্দুল মতিনের নেতৃত্বে জেলা স্যানিটারী ইনসপেক্টর রথীন্দ্রনাথ সরকার, জেলা নিরাপদ খাদ্য কর্মকর্তা মোখলেছুর রহমান, তালা থানার উপপরিদর্শক মনিরের নেতৃত্বে পুলিশতালা দুগ্ধ উৎপাদনকারি সমবায় সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটি ও মিল্ক ভিটা সমবায় সমিতির তালা উপজেলা শাখার সভাপতি প্রশান্ত কুমার ঘোষের বাড়িতে অভিযান চালায়। এ সময় তার বাড়ি থেকে ২৫০ কেজি জেলি ও প্রতি ক্যানে ৪০ কেজি করে ভেজাল দুধভর্তি ২৮টি ক্যানসহ প্রশান্ত ঘোষকে আটক করে। পরে তাকে পাটকেলঘাটা সহকারি ভূমি কমিশনার মোঃ রুহুল কুদ্দুসের সামনে হাজির করা হলে প্রশান্ত ঘোষ তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ স্বীকার করায় তাকে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড, ৫ লাখ টাকা জরিমানা , অনাদায়ে আরো ছয় মাসের কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়।

একইভাবে ১০০ কেজি জেলিসহ তালা উপজেলার খলিলনগরের মহান্দি গ্রামের চিত্তরঞ্জন ঘোষের ছেলে গৌরশঙ্কর ঘোষকে সোমবার সন্ধ্যায় খলিলনগর ইউনিয়নের হাজরাকাটি ঈদগাহ সংলগ্ন মসজিদের সামনে থেকে তালা উপজেলার স্যানিটারী ইনসপেক্টর ও নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শক শরিফ মোঃ আব্দুল মতিনের নেতৃত্বে আটক করা হয়। পরে তাকে তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রশান্ত কুমার বিশ্বাসের সামনে উপস্থিত করা হলে তাকে দুই মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

তালা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু জিহাদ ফকরুল আলম খান জানান, গ্রেপ্তারকৃত প্রশান্ত ঘোষ জরিমানার টাকা ভ্রাম্যমান আদালতে জমা দিতে না পারায় তাকে এক বছর জেল খাটতে হবে। মঙ্গলবার প্রশান্ত ঘোষ ও গৌরশঙ্কর ঘোষকে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।

তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) প্রশান্ত কুমার ঘোষ বলেন, ভেজাল দুধ প্রস্তুতকারিরা আর্থিকভাবে অনেক স্বচ্ছল। তাই তাদেরকে কেবলমাত্র জরিমানা নয়, কারাদণ্ডাদেশ দিয়ে জেলে পাঠানো হবে।

 

এসজি/ডেক্স


আপনার মতামত লিখুন :

নিজস্ব প্রতিবেদক। ডেক্স