দীর্ঘ ৪১ বছর পর পাকিস্তান থেকে বাড়ি ফিরেছেন তালার সেই একলিমা

প্রকাশিত: ৬:১৯ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১১, ২০২২ | আপডেট: ৬:১৯:অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১১, ২০২২

১৯৮১ সালে তিন সন্তান রেখে নিখোঁজ হন সাতক্ষীরার তালা উপজেলার একলিমা বেগম। পরিবারের সদস্যরা সে সময় অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তার কোনো সন্ধান পায়নি। অবশেষে ফেসবুকের মাধ্যমে সন্ধান পাওয়া গেলো সেই একলিমার। ৪১ বছর পর নিজ জন্মভূমি তালার গঙ্গারামপুর ফিরেছেন তিনি। একলিমাকে এসময় ফুল দিয়ে বরণ করে নেন তার পরিবারের সদস্যরা। সাথে এসেছেন পাকিস্তানে তার দ্বিতীয় সংসারের বড় সন্তান আশরাফও।

সোহাগ মাল্টিমিডিয়া এন্ড ট্র্যাভেলস

বৃহস্পতিবার বিকালের দিকে তালা উপজেলার গঙ্গারামপুর গ্রামের বাড়িতে পাকিস্তানি সন্তানকে নিয়েই ফিরে আসেন একলিমা বেগম।

শুক্রবার সকালে সেখানে সৃষ্টি হয় এক আবেগঘন পরিবেশ। একলিমার বাড়ি ফেরার খবর ছড়িয়ে পড়লে সেখানে হাজির হয় বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। রাস্তার দু’পাশে দাঁড়িয়ে একলিমাকে শুভেচ্ছা জানান তারা। একলিমাকে পেয়ে খুশি এলাকার মানুষ ও পরিবারের সদস্যরা।

একলিমা বেগম সাতক্ষীরার তালা উপজেলার গঙ্গারামপুর গ্রামের মৃত ইসমাইল শেখের মেয়ে। পরিবার বলছে, বাংলাদেশে থাকাকালীন স্বামীর মৃত্যুর পর মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন একলিমা। এরপর একদিন সে অবস্থাতেই হারিয়ে যান তিনি। পরে কোনোভাবে পাকিস্তানে পৌঁছে যান একলিমা। সেখানে গিয়ে আবারও বিয়ে হয় তার। বর্তমানে পাকিস্তানের শিয়ালকোটের দিলওয়ালিতে দুই ছেলে ও দুই মেয়ের সাথে থাকেন একলিমা। তবে কীভাবে তিনি পাকিস্তানে পৌঁছেছেন তা মনে করতে পারেন না তিনি।

জানা গেছে, ফেসবুকের মাধ্যমে একলিমার সন্ধান পায় তার পরিবার। মৃত্যুর আগে অন্তত একবার নিজ মাতৃভূমিতে আসার ইচ্ছা ছিল একলিমার। তাই পাকিস্তান থেকে তার পরিবারের সদস্যরা একটি ভিডিও বার্তা ধারণ করে ফেসবুকে যশোরের একটি গ্রুপে পোস্ট করেন। সেই ভিডিওটি চোখে পড়ে একলিমা বেগমের বড় ভাই মৃত মকবুল শেখের ছেলে মো. জাকির শেখের। ভিডিওতে একলিমার বলা নামগুলো নিজের দাদা-বাবা ও চাচাদের সাথে মিলে যাওয়ায় তিনি বিষয়টি নিয়ে বাড়িতে আলোচনা করেন। ভিডিও দেখিয়ে নিশ্চিত হন যে ভিডিওর একলিমা বেগমই তার হারিয়ে যাওয়া ফুফু। এরপর তারা পারিবারিকভাবেই ভিডিও কলে যোগাযোগ করেন একলিমার সঙ্গে।

জাকির বলেন, কিছুদিন আগে ফেসবুকের মাধ্যমে ফুফুর খোঁজ পাই। তারপর থেকে তার সঙ্গে বাড়ির সবার নিয়মিত কথা হচ্ছিল। অবশেষে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান অ্যাম্বাসির সহযোগিতায় তাকে বাড়িতে ফেরানো সম্ভব হয়েছে।

জানা গেছে, শুরুতে পাকিস্তানের একটি সেল্টার হোমে ছিলেন একলিমা। সেখানে মুহাম্মদ সিদ্দিক নামে একজনের সঙ্গে তার পরিচয় হয় এবং পরে তারা বিয়ে করেন। মুহাম্মদ সিদ্দিক কয়েকবছর আগে মারা গিয়েছেন। সেখানে তাদের পরিবারে দুই ছেলে এবং দুই মেয়ে রয়েছে। বাংলাদেশে একলিমা বেগমের প্রথম ঘরের এক ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে। ছেলে হেকমত আলী কাজ করেন ঢাকার একটি কারখানায়। দুই মেয়ে রমেছা বেগম ও নাছিমা বেগম। বড় মেয়ে রমেছা বেগম এখন পার্শ্ববর্তী হরিঢালী ইউনিয়নের শলুয়া গ্রামে শ্বশুরবাড়িতে বসবাস করছেন। ছোট মেয়ে নাছিমা বেগমের শ্বশুরবাড়িও একই গ্রামে।

 

এসজি/ডেক্স


আপনার মতামত লিখুন :

নিজস্ব প্রতিবেদক