ভূয়া সনদে “মুক্তিযোদ্ধা কোটায়” সরকারি চাকরী

প্রকাশিত: ১:২১ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০১৯ | আপডেট: ১:২১:অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০১৯

পাটকেলঘাটায় ভুয়া সনদে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি করছেন একই পরিবারের ৩ জন
দু’জন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও একজন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা

সোহাগ মাল্টিমিডিয়া এন্ড ট্র্যাভেলস

ডেক্স রিপোর্ট:
সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটায় ভুয়া সনদে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি করছেন একই পরিবারের তিন সদস্য। দু’জন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক ও একজন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা পদে। দু’জন সহকারি শিক্ষক হলেন, থানার নগরঘাটা ইউনিয়নের কালীবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রতাপ কুমার সাহা ও সরুলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বীরেন্দ্র নাথ সাহা। আরেকজন সাতক্ষীরা সদর কৃষি অফিসে উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা পদে অত্র শিক্ষকদ্বয়ের বড় ভাইয়ের পুত্র সুমন সাহা দীর্ঘদিন চাকুরী করে আসছেন। একই পরিবারে তিন ব্যক্তি ভুয়া সনদ দেখিয়ে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকুরী করার স্থানীয় এলাকাবাসীসহ সুশীল সমাজ ও জনপ্রতিনিধিগণ জেলা প্রশাসক ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বরাবর পৃথক পৃথক অভিযোগ দাখিল করেছেন।
তথ্যানুসন্ধানে ও পৃথক পৃথক অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, পাটকেলঘাটা ধানদিয়া ইউনিয়নে কৃঞ্চনগর গ্রামের মৃত ললিত মোহন সাহার দু’পুত্র ২০০৯ ও ২০১০ সালে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিয়োগ পান। এই দু’শিক্ষক ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ দেখিয়ে চাকরিতে যোগাদান করে। শিক্ষা অফিসে সরকারি সিদ্ধান্ত সঠিক মুক্তিযোদ্ধার কোটায় প্রাপ্ত সংখ্যা ও তথ্য সংগ্রহে জন্য প্রত্যেক মুক্তিযোদ্ধা কোটাধারী তথ্য জমা দিলেও এই দূর্নীতিবাজ দু’শিক্ষক টাকা দিয়ে ম্যানেজ করে বিষয়টি ধামাচাপা দিয়ে আসছে দীর্ঘদিন যাবত।
তাদের বাবা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা না এবং তাদের নেই কোন গেজেট বা মুক্তিবার্তা, কোন সরকারী ভাতাও পায় না। শুধু একটা জাল সার্টিফিকেট আছে। এই নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে ।
স্থানীয় এলাকাবাসীদের অভিযোগ, মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও কিভাবে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ও কৃষি অফিসে আজও চাকরি করেন তা আমাদের ভাবার বিষয়। মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ট সন্তান। আর এ সনদ জাল করে দীর্ঘদিন যাবত চাকরি করলেও কর্তৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিচ্ছেন না কেন?
নিয়োগের সময় যাচাই-বাচাই না করে কিভাবে এই দু’জনকে চাকরিতে যোগদানের অনুমতি দেয় তা আবার পূনঃরায় তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য অনুরোধ করেন এলাকার সুশীল সমাজ।
এ দূনীতিবাজ দু’শিক্ষক জাল সনদে মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী ও সচিবের সাক্ষরও জাল করে সনদ তৈরি করে। যে মুক্তিযোদ্ধা সনদ(ক্রমিক নং- ১৪৮৬০) দেখিয়ে চাকরি করেছেন সেটা ঐ সনদ অনুযায়ী নাম: তারেক সৈয়দ আলি হাসান, পিতা ইয়াকুব আলী, গ্রাম: ২৩আজিজুর রহমান সড়ক, পো খুলনা, উপজেলা খুলনা সদর, জেলা-খুলনা। সম্পূর্ন অবৈধভাবে জাল মুক্তিযোদ্ধা সনদ তৈরি করে নাম পরিবর্তন করে চাকরি নিতে প্রতারণার আশ্রয় নেয়। ভুয়া সনদের ভিক্তিতে কোটা নিয়ে চাকরি নেওয়ায় প্রকৃত মেধাবীরা বঞ্চিত হয়েছে যা সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় ভারসাম্য নষ্ট করে।
অভিযুক্ত দূর্নীতিবাজ ভুয়া সনদ চাকরি বিষয়ে কথা হয় দু’শিক্ষক প্রতাপ কুমার সাহা ও বীরেন্দ নাথ সাহার সঙ্গে। তারা ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য দিয়েছেন। একজন বলেন, আমি কষ্ট করে চাকরিটা পেয়েছি, যদিও একটু দূর্নীতির আশ্রয়ে নিয়েছি। অপরজন বলেন, আমি ঐ সময় মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি নিয়েছিলাম কি-না আমার ঠিকমত স্মরণে নাই। তবে কিছুটা হলেও বলতে পারি সাধারণ কোটায় চাকরি পেয়েছি।
অপরদিকে সাতক্ষীরা কৃষি-উপকারী সুমন সাহা বলেন, আমাদের সার্টিফিকেট আসল, তবে একটু মিস্টেক হয়েছে। হাইকোর্টে রিট হয়েছে রায় আমরা পাবো। তবে আপনি সাংবাদিক কেন এ বিষয়ে এত মাথা ঘামাচ্ছেন। আমাদের রুটিরুজির উপর আঘাত করবেনা। আপনার সাথে পরে কথা বলে বিষয়টি নিষ্পত্তি করা হবে।
ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদে চাকুরি করার অভিযোগে মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয় মন্ত্রী/সচিব, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় মন্ত্রী/সচিব, মহা-পরিচালক প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক, সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার(এসবি শাখা) উপ-পরিচালক(সাতক্ষীরা কৃষি অফিস), খুলনা দূর্নীতি দমন কমিশনের কার্যালয়, তালা উপজেলা নির্বাহী অফিসার, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, তালা মুক্তিযোদ্ধা সংসদসহ ১৮টি বিভাগে সন্তোস কুমার বিশ্বাস, সমর ঘোষ, কুদ্দুস গাজী, রমেশ রায়, প্রদীপ মাস্টার, রাজ্জাক দফাদার বাদী হয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অপর দিকে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা সন্তান আবু সাইদ মোহাম্মাদ ইদ্রিস বাদী হয়ে গত ১৯/০৯/২০১৯ইং তারিখে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মহোদয়ের কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন।
তালা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার(সাবেক) মোঃ মফিজ উদ্দীন এর সাথে ভূয়া সনদের বিষয়ে কথা হলে তিনি জানান, আমার স্বাক্ষরিত যে প্রত্যয়নপত্রটি তারা ব্যবহার করেছে সেটিও জালভাবে তৈরি করেছে। এমনকি আমি কোন প্রত্যয়নপত্র প্রদান করি নাই।
ধানদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেনের সাথে কথা হলে তিনি জানান, আমার ইউনিয়নে আমার জানামতে দু’জন মুক্তিযোদ্ধা আছে। কিন্তু ললিত মোহন মুক্তিযোদ্ধা কিনা আমার জানা নেই। অভিযুক্তরা যে জন্ম-মৃত্যু সনদ ব্যবহার করেছেন সেটি আমার পরিষদের জন্ম-মৃত্যু সনদের স্মারকে উল্লেখ নাই। সেটিও জাল তঞ্চকির মাধ্যমে তারা ব্যবহার করেছে বলে আমার মনে হয়।
তালা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ভূয়া জাল সনদে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি বিষয়ে ১১ জনের লিখিত দরখাস্ত আবেদনের প্রেক্ষিতে সেটা তদন্ত ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। তদন্ত বিষয়ে আরো জানতে চাইলে তিনি বলেন, “শুধু কি আমরা তদন্ত নিয়ে পড়ে থাকবো, আমাদের আরো কাজ আছে। ”
এ বিষয়ে তালা উপজেলা নির্বাহী অফিসার জানান, যদি কেই ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদে আশ্রয় নেয়, তবে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত পূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
স্থানীয় এলাকাবাসীসহ সুশীল সমাজ ও জনপ্রতিনিধিগণ এই দূর্নীতিবাজদের তদন্ত পূর্বক চাকরি থেকে বরখাস্ত সহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানান।

 

 

 

সুন্দরবনটাইমস.কম/মো: আমিনুর রহমান সোহাগ/ডেক্স/


আপনার মতামত লিখুন :

নিজস্ব প্রতিবেদক