বাগেরহাটের পৌর ও উপজেলা গুলোতে বাড়ছে অবৈধ নসিমন টমটমের চলাচল

প্রকাশিত: ১২:৩৬ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১২, ২০২০ | আপডেট: ১২:৩৬:অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১২, ২০২০

বাগেরহাট জেলার উপজেলা ও পৌরসভা গুলোতে অবাধে তৈরী ও চলাচল বাড়ছে দেশী ইঞ্জিনে চালিত স্যলো মেশিনের অবৈধ নসিমন করিমন অহরহ ঘটছে দূর্ঘটনা।স্থানীয় প্রভাবশালীদের খামখেয়ালি ও অজ্ঞতার কারনে ঘটছে এসব ঘটনা।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে বাগেরহাটের দ্বিতীয় সমুদ্র বন্দর মোংলা পোর্ট পৌরসভা কর্তৃক একাধিক বার এই প্রাণঘাতি টমটম নসিমন পৌর এলাকায় প্রবেশ নিষেধাজ্ঞা জারি করলেও প্রভাবশালী মহলের তৎপরতায় তা বাস্তবায়িত হয়নি।।অধিকাংশ উপজেলা ও পৌরসভার চিত্র একই।পথচারীদের চলাচল অসুবিধা সহ অহরহ ঘটছে ‍দূর্ঘটনা।

সোহাগ মাল্টিমিডিয়া এন্ড ট্র্যাভেলস

 

হাই কোর্টের নিষেধাজ্ঞা, মন্ত্রীর কড়া নির্দেশ আর প্রশাসনের দৌড়ঝাঁপ সত্ত্বেও সড়ক-মহাসড়ক থেকে নসিমন, করিমন, আলমসাধু, ভটভটিসহ অনিয়ন্ত্রিত যান চলাচল বন্ধ হচ্ছে না। থামছে না সড়ক দুর্ঘটনার ভয়াবহতা। এসব অবৈধ যানবাহনের কারণে বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে সড়ক-মহাসড়ক। প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও দুর্ঘটনা ঘটছে, ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে জানমালের। চলতি বছরেই অটোরিকশা, ইজিবাইক, লেগুনা নসিমন, টেম্পো, ভটভটি, আলমসাধু ও মাহেন্দ্রসহ অবৈধ যানবাহনের কারণে সাড়ে চার শতাধিক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় ৬৭০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত এবং সহস্রাধিক লোক আহত হয়েছেন। দেশের সর্বত্রই অনিয়ন্ত্রিত যানবাহনগুলোর ‘বিপজ্জনক’ চলাচলে চরম ঝুঁকির মুখে পড়েছে যাত্রীরা।

 

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় ১০টি জেলাসহ  অন্য জেলাগুলোতেও প্রতিনিয়ত অবৈধ এ যান কেড়ে নিচ্ছে মানুষের প্রাণ। অল্পবয়স্ক, আনাড়ি চালকদের নিয়ন্ত্রণে অনিরাপদ এ যান সড়ক-মহাসড়কে দাবড়ে বেড়ালেও যেন দেখার কেউ নেই। নছিমন, করিমন, ভটভটি আর আলমসাধুর চলাচল বন্ধে হাই কোর্টের দেওয়া কঠোর নির্দেশও বাস্তবায়ন হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। ২০১৭ সালের ২৫ জানুয়ারি বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের বেঞ্চ থেকে এসব অনিয়ন্ত্রিত থ্রিহুইলার চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়। কিন্তু অবৈধ এ যানবাহনের খাত থেকে দৈনিক কোটি কোটি টাকার চাঁদাবাজি নিশ্চিত রাখতে পুলিশের সহায়তাতেই নছিমন-করিমন-ভটভটি নির্বিঘ্নে চলাচল করছে। স্থানীয় প্রভাবশালী মহল আর সংঘবদ্ধ চাঁদাবাজ চক্র মিলে মৃত্যুফাঁদ খ্যাত ভটভটি চলাচল জিইয়ে রেখেছে।

 

ভয়ঙ্কর এই গাড়ি কখন যে কার ওপর উঠিয়ে দেয়, কখন কোন পথচারীকে চাপা দেয়-তার ঠিক নেই। পথচারীরা নসিমন দেখলে ভয়ে রাস্তা ছেড়ে নিচে দাঁড়ায়। এমন কোনো দিন নেই কেউ না কেউ দুর্ঘটনার স্বীকার হচ্ছে না। তবুও এই বেপরোয়া গাড়ি রাস্তা দাবড়ে বেড়াচ্ছে। মানুষ মারছে, জরিমানা দিচ্ছে। তারপর সবই স্বাভাবিক, যেন কিছুই ঘটেনি। ভটভট শব্দে নসিমন চলছে, টেম্পো সাইজের ভটভটি। বেবিট্যাক্সি সাইজের ভটভটি। আবার মাইক্রোবাস সাইজের নসিমন। বিভিন্ন সাইজের ভটভটি দিয়ে মানুষ টানা হয়। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় অপর ১০টি জেলার সড়ক-মহাসড়ক একচেটিয়া দখলে নিয়েছে নছিমন, করিমন, আলমসাধু, ভটভটিসহ অন্যান্য যন্ত্রদানব।

 

আদালতের চার দফা নির্দেশনায় বলা হয়েছে, বাগেরহাট, নড়াইল, সাতক্ষীরা, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, মাগুরা, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, খুলনা ও যশোর জেলায় মহাসড়কে নছিমন, করিমন, ভটভটি ও আলমসাধু চলাচল বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। হাইওয়ে পুলিশের ডিআইজি এবং সংশ্লিষ্ট জেলার পুলিশ সুপারদের এই নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে হবে। দেশের অন্যান্য জেলার মহাসড়কেও এসব অনিবন্ধিত যানবাহন চলাচল বন্ধের ব্যবস্থা নিতে হবে সরকারকে। মহাসড়কে কম গতির ছোট যানবাহনগুলোকে দুর্ঘটনার জন্য দায়ী করে সেগুলোর চলাচল বন্ধের জন্য বাস মালিক-চালকরাও দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৫ সালের ২৭ জুলাই মহাসড়কে সব ধরনের সিএনজি-অটোরিকশা চলাচল নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের মহাসড়ক বিভাগ। জাতীয় মহাসড়কে থ্রি হুইলার অটোরিকশা, অটোটেম্পোসহ অনিয়ন্ত্রিত যানবাহন চলাচল না করতে পারে এবং হাইওয়েতে নসিমন, করিমন, মাহেন্দ্র, ভটভটি, ইজিবাইক, সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচল করতে না পারে সেজন্য জেলা প্রশাসকদের চিঠিও দেয় বিআরটিএ। এরপর আসে আদালতের কঠোর নির্দেশনা-কিন্তু কোনো কিছুতেই বন্ধ হচ্ছে না এসব যানবাহন। জানা গেছে, পুলিশ প্রশাসনকে নিয়মিত মাসোয়ারা দিয়ে এবং স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় এ অবৈধ যান চলাচল করছে। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে প্রতিদিনই মহাসড়কে নছিমন-করিমন চলতে দেখা যায়। বাগেরহাটের বিভির্র রুটে চলাচল করছে প্রায় ১০ হাজার নসিমন, করিমন, ভটভটি ও আলমসাধু। অবৈধ এ বাহনগুলো প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকায় ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটাচ্ছে। এসব দুর্ঘটনায় সাধারণ মানুষ আহত হওয়ার পাশাপাশি প্রাণহানিও ঘটছে। সংশ্লিষ্টরা জানায়, স্থানীয় প্রযুক্তিতে তৈরি এই গাড়িগুলোর কোনো ফিটনেস নেই। ফলে বেপরোয়া গতিতে এগুলো ছুটে চলে। আবার সর্বত্র ঘুরে বেড়ানো এ বাহনগুলো চলতে চলতেই মাঝ রাস্তায় বিকল হয়ে পড়ে।

 

উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা ও প্রশাসনের এত নজরদারি সত্ত্বেও শুধু চাঁদাবাজির জন্যই ‘অবৈধ যন্ত্রদানবগুলো’ বন্ধ হচ্ছে না। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান শেষ হতে না হতেই প্রভাবশালী মহল লাখ লাখ টাকার চাঁদাবাজির মাধ্যমে অবৈধ নসিমন-করিমনের নিরাপদ চলাচলের সুযোগ করে দেয় ফলে প্রতিনিয়ত ঘটছে সড়কে দুর্ঘটনা। এসব নসিমন-করিমন, ভটভটির অবাধ চলাচলে অহরহ যানজটও তৈরি হচ্ছে। ইঞ্জিনচালিত অবৈধ রিকশা, নসিমন, করিমন, ভটভটি স্থানীয়ভাবে তৈরি। ত্রুটিযুক্ত এসব যানবাহন দেশের বিভিন্ন জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়ক, পৌরসভা, সিটি করপোরেশন এলাকায় চলছে। এসব যানবাহনের কোনো লাইসেন্স, রুটপারমিট বা বৈধ কোনো কাগজপত্র নেই। এসব ইঞ্জিন বা ব্যাটারিচালিত যানবাহনে গতি নিয়ন্ত্রণের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় সড়কে বিপজ্জনক হারে দুর্ঘটনা বাড়ছে।এর থেকে পরিত্রান পেতে প্রশাসনের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেছে স্থানীয় বাসীন্দারা।


আপনার মতামত লিখুন :

ম.ম. রবি ডাকুয়া। প্রতিবেদক। বাগেরহাট, খুলনা