পাটকেলঘাটায় অনুমোদনহীন বেসরকারি সংস্থা “সান” এর ৩০ লাখ টাকা আত্মসাত

প্রকাশিত: ৮:০৭ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১১, ২০২০ | আপডেট: ৮:০৭:অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১১, ২০২০

নিজস্ব প্রতিবেদক:
ক্ষুদ্রঋণ নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি(এমআরএ) এর লাইসেন্স ছাড়াই ক্ষুদ্র সঞ্চয় ও ঋণের ব্যবসা করছে সাতক্ষীরার তালা উপজেলার পাটকেলঘাটা থানার মির্জাপুর বাজারের বেসরকারি সংস্থা ‘সান’। প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ৩০০ গ্রাহকের কাছ থেকে ৩০ লাখ টাকার আমানত নিয়ে অর্থ ফেরতে তালবাহানা করছে। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটির সব ধরণের কার্যক্রম ও অফিস বন্ধ রেখেছে।
এমআরএ আইন-২০০৬-এর ১৫ ধারা অনুযায়ী এ নির্দেশ দেয়া হয়, দেশে কোনো এনজিও ক্ষুদ্রঋণ বিতরণ করতে চাইলে তাদের আলাদা করে এমআরএ’র অনুমোদন নিতে হয়। কিন্তু এ প্রতিষ্ঠান কোন অনুমোদন ছাড়াই কার্যক্রম করছে।

সোহাগ মাল্টিমিডিয়া এন্ড ট্র্যাভেলস

অনুসন্ধান সূত্রে জানা গেছে, সমাজ সেবা অধিদপ্তরের অনুমোদন নিয়ে নব্বই দশকে ক্ষুদ্র ঋণের ব্যবসা শুরু করে এ সংস্থাটি। ২০০১ এর দিকে প্রতিষ্ঠানটির তৎকালীন পরিচালক আজিজুল ইসলাম গ্রাহকের অর্থ ফেরতে ব্যর্থ হওয়ায় প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ রাখে। কয়েক বছর বন্ধের পর সান সংস্থাটি আজিজুলের সাথে সমঝোতার মাধ্যমে তালার জগদানন্দকাটি গ্রামের গোবিন্দ দাশের পুত্র সাগর দাশ পরিচালক হিসেবে কার্যক্রম শুরু করে। কয়েকটি সমাজ সেবার কার্যক্রম যেমন পোল্ট্রি প্রশিক্ষণ ও সেলাই প্রশিক্ষণ কর্মশালা দিয়ে শুরু করে। এরপর প্রতিষ্ঠানটির পার্শবর্তী গ্রাম মির্জাপুর, জগদানন্দকাটি, বারাত, কেশা, বকশিয়া, নোয়াকাটিতে ক্ষুদ্র সঞ্চয়ের মাধ্যমে আমানত সংগ্রহ করে। এর কার্যক্রম বিস্তার লাভ করতে থাকে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে। প্রতিষ্ঠানটি থেকে প্রায় ৮-১০ কিলোমিটার দূরত্বের ধানদিয়া ইউনিয়নের ফুলবাড়ি, সেনেরগাঁতিসহ বেশকিছু গ্রামেও শুরু করে। প্রথম দিকে সঞ্চয়ের পাশাপাশি ঋণ বিতরণ করলেও পরবর্তীতে তা বন্ধ করে দেয়। কয়েক বছর পর ধানদিয়া-ফুলবাড়ি এলাকার প্রায় ১০০ থেকে ১৫০ গ্রাহকের কাছ থেকে আমানত নিয়ে সেখানে যাতায়াত বন্ধ করে দেয়। সব গ্রাহকের পক্ষে মির্জাপুর এসে এনজিও পরিচালককে খুঁজে বের করে অর্থ আদায় করা কষ্টস্বাধ্য ব্যাপার হয়ে দাড়ায়। তাই অনেকেই তাদের আমানত ফেরত পেতে ব্যর্থ হয়। কিছু গ্রাহক অনেকবার মির্জাপুরে এসে অর্থের তাগিদা করেও সব অর্থ ফেরতে ব্যর্থ হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফুলবাড়ি গ্রামের এক গ্রাহক এ প্রতিবেদককে জানান, আমার বিয়ের প্রথম দিকে কিছু টাকা সঞ্চয়ের ইচ্ছা ছিল। সেসময় দেখি সান সংস্থায় টাকা জমিয়ে তা ফেরত চাইলে তারাই বাড়িতে দিয়ে যেতে। কখনো অফিসে যেতে হতো না। তাই আমিও প্রতি সপ্তাহে অর্থ জমা রাখতে শুরু করি। যখন লাগতো তুলে ফেলতাম। কিন্তু ২/৩ বছর পর হঠাৎ এই প্রতিষ্ঠান আর সঞ্চয় সংগ্রহে আসে না। এমনকি অর্থ ফেরতও দেয় না।

তিনি বলেন, আমার মামা শশুড়বাড়ি মির্জাপুর এলাকায় হওয়ায় তাদের সহযোগিতায় ২ হাজার ২০০ টাকার মধ্যে ১ হাজার টাকা পেয়েছি। এরপর প্রায় ৫/৬ বছর হয়ে গেলো সান সংস্থা আমার বাকি টাকা ফেরত দেয়নি।
এমন অভিযোগ ধানদিয়া ইউনিয়নের অনেক গ্রাহক এ প্রতিবেদকের কাছে করেছেন।
এদিকে, মির্জাপুর, কেশা, বারাতসহ সংস্থাটির প্রধান কার্যালয়ের পাশ্ববর্তী গ্রামের বিভিন্ন কেন্দ্রে ২০১৮ সালের অক্টোবর মাস পর্যন্ত সঞ্চয় সংগ্রহ করেছে। এরপর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত কোন কার্যক্রম তারা পরিচালনা করছে না। এমনকি তাদের কোন অফিসও নেই মির্জাপুরে।
পরিচালক সাগর দাশের বাড়িতে গ্রাহকরা মাসের পর মাস হাটাহাটি করেও তাদের আমানত ফেরত পারনি।

মির্জাপুরের কয়েকজন গ্রাহক জানান, সে আমাদের টাকা ফেরত দিবে এমন আশায় প্রায় দেড় দুই বছর ধরে ঘুরছি। কিন্তু কোন টাকা আমরা পায়নি।
কয়েকজন জানিয়েছে, আমরা তার বাড়ি যেতে যেতে আমাদের জুতা ক্ষয় হয়ে গেছে। এখন সে (সাগর) আমাদের কাউকে বলেছে টাকা ফেরত দিতে দেরি হবে। আবার কাউকে বলেছে তিন ভাগের একভাগ দেবো। আবার কাউকে বলছে অর্ধেক দেবো। বাকি টাকা আর পাবো না মর্মে সব পরিশোধ হিসেবে স্ট্যামে লিখে দিতে হবে।

সান সংস্থার অর্থ আত্মসাত প্রসঙ্গে পাটকেলঘাটা থানা অফিসার ইনচার্জ(ওসি) কাজী ওয়াহিদ মুর্শেদ এ প্রতিবেদককে জানান, এ প্রতিষ্ঠান সর্ম্পকে আমার কিছু জানা নেই। কোন অভিযোগও পায়নি। পেলে খোঁজ খবর নেয়া শুরু করবো।

জানতে চাইলে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সান এর পরিচালক সাগর দাশ এ প্রতিবেদকে জানান, প্রায় ১৫০ জন গ্রাহক আমার কাছে সাড়ে ১২ লাখ টাকা পাবে। আমি তাদেরকে দিয়ে দেবো।
আমানত পরিশোধে কতদিন লাগবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেটা বলা যাবে না। তবে আমি দিবো।
এতদিন কেন পরিশোধ করেননি জানতে চাইলে সাগর দাশ বলেন, সংস্থার মাঠকর্মীর সাথে আমার মামলা চলছে। সেটি শেষের অপেক্ষায় আছি।

সুন্দরবনটাইমস.কম/ডেক্স

 


আপনার মতামত লিখুন :

নিজস্ব প্রতিবেদক