তালায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের চরম অব্যবস্থাপনার মধ্যে করোনার টিকা প্রদান

প্রকাশিত: ৭:৪৯ অপরাহ্ণ, আগস্ট ১৪, ২০২১ | আপডেট: ৭:৪৯:অপরাহ্ণ, আগস্ট ১৪, ২০২১
‘মনে হয় করোনার টিকা নয় ভোট দিতে আসছি। সকাল ৮টা থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষায় থাকি কখন আমার সিরিয়াল আসবো। কিন্তু বেলা ১টা বেজে গেলেও আমার সিরিয়াল আর আইলো না। একজন এসে বললো আজকে নয়, সোমবার-মঙ্গলবারের দিকে আসবেন। কি আর করুবো বয়স্ক মানুষ হয়েও রোদের মধ্যে প্রায় ৬ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে টিকা না নিয়েই বাড়ি ফিরতে হলো।’ এ কথাগুলো তালা উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকার প্রায় ৮০ বছরের এক বৃদ্ধের।
 
শনিবার (১৪ আগষ্ট) সকালে তালা হাসপাতালের করোনা টিকা কেন্দ্রে মানুষের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। গত ফেব্রুয়ারী-মার্চের অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকার প্রথম ডোজ দেওয়ার প্রায় ৫ মাস পর শনিবার থেকে শুরু হয়েছে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার প্রক্রিয়া। টিকা নিতে আসা কয়েক হাজার মানুষের ভিড় দেখা গেলেও স্বাস্থ্যবিধি বালাই ছিলনা হাসপাতালের টিকা কেন্দ্রে। অনেকের মুখে মাস্কও ছিল না। এখানে কোনও ভলান্টিয়ার ছিল না, কেন্দ্রে প্রবেশের মুখে জীবাণুনাশক স্প্রেও করা হয়নি। যদিও টিকাকেন্দ্রে দায়িত্বরত স্বাস্থ্যকর্মী এবং পুলিশ দাবি কেন্দ্রে স্বাস্থ্যবিধি মানতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়েছে। তবে ঐদিন সকালে তালা হাসপাতালের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সময় মতো অফিসে পৌঁছাতে না পারায় অনেকের মধ্যে উত্তেজনা দেখা যায়। পরে কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়।
তালায় করোনা টিকা প্রদানের দৃশ্য
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, করোনার টিকা নেওয়ার জন্য তালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সকাল থেকে উৎসুক মানুষজন লাইনে দাঁড়িয়ে টিকা নিচ্ছেন। শত শত নারী-পুরুষের বিশাল লম্বা লাইন হাসপাতাল চত্বরের এ প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে চলে গেছে। ঠেলা ধাক্কায় একে অপরের শরীরের সঙ্গে শরীর মিশে যাচ্ছে। অনেকের মুখেই নেই মাস্ক। তারপরও তারা লাইন ছাড়ছে না। এতে স্বাস্থ্যবিধি চরমভাবে উপেক্ষিত হওয়ায় করোনা সংক্রমণের আশঙ্কা আরও বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। লম্বা লাইনের এমন দৃশ্য দেখে মনে হচ্ছে কোনো নির্বাচনের ভোট গ্রহণ চলছে। ২৫ বছর থেকে শুরু করে শত বছরের বৃদ্ধকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। তবে টিকা নিতে এসে সবচেয়ে ভোগান্তির শিকার হয়েছেন বয়স্ক শ্রেণির পুরুষ ও নারীরা। সেখানে তাদের জন্য আলাদা বুথ কিংবা টিকা দেয়ার মতো কোনো সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করেনি কর্তৃপক্ষ।
 
তালা হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গত মার্চের অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকার প্রথম ডোজ দেওয়ার প্রায় ৫ মাস পর শুরু হয়েছে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার প্রক্রিয়া। শনিবারে ১ হাজার ২শ’ মানুষের টিকা দেওয়ার কথা ছিলো, কিন্তু প্রায় ৪ হাজার মানুষ হাজির উপস্থিত হয়েছেন টিকা নিতে। টিকা না পেয়ে অনেকেই ফিরে যেতে বাধ্য হন। এদিকে শনিবার সকাল থেকে ৯টা থেকে দুপুর পর্যন্ত তালা প্রেসক্লাব থেকে হাসপাতালের টিকা কেন্দ্র পর্যন্ত প্রচন্ড যানযট সৃষ্টি হয়। এসময় হাসপাতাল রোডে পায়ে হেটেও পার হওয়া দুস্কর হয়ে পড়ে।  
 
লাইনে দাঁড়ায়ে থাকা কলাগাছি গ্রামের কার্ত্তিক মন্ডল বলেন, টিকা নিতে এসে এখান থেকে আবার করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে যাব কি না, এমন আশংকা। কারণ, এখানে কেউ স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। অনেকের মুখেই মাস্ক নেই। এখানে কোনও ভলান্টিয়ার নাই। কেন্দ্রে প্রবেশের মুখে জীবাণুনাশক স্প্রেও করা হচ্ছে না। এতে করে সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে। গণেশ বাছাড়, হীরা বাছাড়, তাপসী মন্ডলসহ অনেকেই জানান, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় আমাদের দীর্ঘক্ষণ দাড়িয়ে থাকতে হচ্ছে, আলাদা আলাদা টিকা কেন্দ্র করলে এত ভোগান্তি হতো না মানুষের।
 
তালা হাসপাতালের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার রাজীব সরদার জানান, দ্বিতীয় ডোজের প্রথম দিনেই অতিরিক্ত মানুষ চলে এসেছে, সামাজিক দূরত্ব এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে টিকা নিতে বলা হচ্ছে সবাইকে।

আপনার মতামত লিখুন :

নিজস্ব প্রতিবেদক। তালা, সাতক্ষীরা