তালায় যানবাহনে এলইডি লাইটের প্রভাবে জনজীবনে দূর্ভোগ, বাড়ছে দুর্ঘটনা!

প্রকাশিত: ২:৫৭ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১৯, ২০২২ | আপডেট: ২:৫৭:অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১৯, ২০২২
তালায় যানবাহনে এলইডি লাইটের প্রভাবে জনজীবনে দূর্ভোগ বেড়েছে। ছবিটি তালা-পাইকগাছা সড়ক থেকে তোলা।

তালা উপজেলার বিভিন্ন সড়ক ও মহা-সড়কগুলোতে অবৈধ যানবাহনের হেড লাইটে এলইডি লাইটের ব্যবহার বেড়ে গেছে। যে কারণে সন্ধ্যা লাগলেই সড়কদিয়ে চলাচল করা দূরুহ হয়ে পড়েছে। এছাড়া এলাকায় অবৈধ যানবাহনের চলাচল বেড়েই চলেছে। শত চেষ্টা করেও এসব যানবাহন বন্ধ করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট প্রশাসন। সাধারণ মানুষ অনেকটা বাধ্য হয়ে এসব অবৈধ যানবাহনে চলাচল করছে। লাগামহীন গতিতে চলাচল করা এসব অবৈধ যানবাহনের কারণে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা।

সোহাগ মাল্টিমিডিয়া এন্ড ট্র্যাভেলস

বর্তমানে এসব দুর্ঘটনা দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে ব্যাটারি চালিত ভ্যান, ইজিবাইক, ইঞ্জিনচালিত নছিমন, করিমন, আলমসাধু গাড়ির সাদা লাইটের আলো। অবৈধযান হিসেবে খ্যাত এসব যানবাহনের হেডলাইটের সাদা আলোয় রাস্তায় ফুটপাতে চলাচল করতে সমস্যা হচ্ছে পথচারীদের। সচেতন মহলের দাবি, সবকিছু দেখেও না দেখার ভান করছে সংশ্লিষ্টরা। তারা ক্ষতিকারক অবৈধ যানে সাদা এলইডি লাইট ব্যবহার বন্ধ করার দাবি জানিয়েছেন তালা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের কাছে ।

সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার প্রধান সড়কসহ আশপাশের সড়কে তীব্র গতিতে অবৈধযান নছিমন-করিমনসহ বহু ইজিবাইক চলাচল করছে। দিনের বেলা দুর্ঘটনা কম হলেও রাতেই বেশি হয় বলে জানিয়েছে ভুক্তভোগীরা। আর এর কারণ হিসেবে দেখা গেছে, একটু সন্ধ্যা হলেই অবৈধযানের এসব চালকরা তাদের সুবিধার্থে এলইডি সাদা লাইট জ্বালিয়ে সড়কে চলাচল করছে। এলইডি এসব বাতির আলোর রশ্মি এতোই বেশি যে তা বিপরীত দিক থেকে আসা যানবাহনের চালক বা পথচারীর চোখে সরাসরি পড়ে। এতে চোখে দেখতে পায় না তারা। আর এ কারণেই ঘটে দুর্ঘটনা।

বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আলাউদ্দীন জোয়ার্দ্দার, শফিকুল ইসলাম, মীর জিল্লুর রহমানসহ একাধিক ব্যক্তি বলেন, অবৈধ এসব যানবাহনের আলোর গতি সাধারণ আলোর চেয়ে অনেক বেশি। এ জাতীয় লাইটের আলো সামনে পড়লে ২-৩ মিনিট চোখে কিছুই দেখা যায় না। তাছাড়া বেশিরভাগ সময় লাইটগুলো হাইতে দেয়া থাকে। এতে চালক এবং সাধারণ মানুষের পথ চলতে চরম অসুবিধায় পড়তে হয়। এ কারণে রাস্তা পারাপারের সময় ঘটছে বড় দুর্ঘটনা। বিষয়টি জরুরীভাবে প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন।

ট্রাক্টর চালক মোঃ রনি বিশ্বাস জানান, বিভিন্ন অবৈধ যানের সাদা আলোর গতি আমাদের ট্রাক্টারের চেয়ে বেশি। ট্রাক্টারের সামনে দিয়ে রাতে কোন ভ্যান আসলে আমরা সামনের দিকে কিছুই দেখতে পাইনা। এসময় দুর্ঘটনা এড়াতে আমাদেরকেই গাড়ির গতি কমিয়ে ঐসবভ্যান পার হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়।

ইজিবাইক চালক মোঃ আল-আমিন সরদার বলেন, ইজিবাইক কেনার সময় গাড়ির সাথে যে লাইটটা ছিল সেটা ভাল। কিন্তু সেটি নষ্ট হবার পর স্থানীয় দোকানদাররা তাদের কাছে এলইডি লাইট বিক্রি করে থাকে।

তালা হাসপাতালের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ রাজীব সরদার জানান, ব্যাটারিচালিত অবৈধ নছিমন-করিমন, আলমসাধুসহ ইজিবাইকগুলোতে যে এলইডি সাদা লাইট লাগানো হচ্ছে তা মানুষের চোখের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এই লাইটের প্রভাবে সরাসরি চোখের রেটিনার কর্মক্ষমতা কমায়। যার ফলে চোখের দৃষ্টিশক্তি কমে যেতে শুরু করে।

তালা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবু জিহাদ ফকরুল আলম খান বলেন, আলমসাধু, নসিমন, করিমনসহ যা আছে এগুলো মহাসড়কে চলাচলের কোন আইন নেই। এসব যানবাহন তো অবৈধ আর অন্যান্য যে যানবাহনে এলইডি লাইট লাগানো আছে সেটি বন্ধ করার ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়া হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ট্রাফিক অফিসার জানান, এলইডি লাইটের বিষয়ে সরাসরি কোন আইন নেই। তবে বিধিতে আছে যে প্রতিটি গাড়ির হেডলাইটের তিন ভাগের এক ভাগ কালো রং করা থাকতে হবে। তবে এ অপরাধে জন্য প্রশাসন নিরাপত্তা আইনে নিয়ে ১৪৯ ধারায় মামলা হয়ে থাকে। আগে ট্রাফিক সপ্তাহ করে এ সকল গাড়ির হেডলাইটে কালো রং করে দেয়া হতো।

তালা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট প্রশান্ত কুমার বিশ^াস বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখে উক্ত যানবাহনে জনস্বার্থে এলইডি লাইট ব্যবহার বন্ধ করার জন্য আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

 

গাজী জাহিদুর রহমান/তালা


আপনার মতামত লিখুন :

নিজস্ব প্রতিবেদক। তালা, সাতক্ষীরা