তালার খরাইল বিলের দেড়শ বিঘা জমির জাল ডিড করে জোরপূর্বক মাছচাষের অভিযোগ

প্রকাশিত: ৭:৪৮ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ৮, ২০১৯ | আপডেট: ৭:৪৮:অপরাহ্ণ, এপ্রিল ৮, ২০১৯


তালা সংবাদদাতা:
সাতক্ষীরা তালায় গ্রামের সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকার একমাত্র সম্বল এক খন্ড করে ফসলি জমিতে জোরপূর্বক জাল-তঞ্চকতায় ডিড প্রস্তুত করে মৎস্য চাষের অভিযোগ উঠেছে। এঘটনায় ভূক্তভোগী ১ শ’রও বেশী মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক,পুলিশ সুপার,সংসদ সদস্যসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করলেও এক অজানা আশংকা তাড়া করে ফিরছে তাদের। ইতোমধ্যে জমির উপর গেলে হত্যা,খুন,গুমসহ বিভিন্ন মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে হয়রানির হুমকি দিচ্ছে জোরদার ঘের মালিক যশোরের কেশবপুর এলাকার জনৈক কামরুল ইসলাম মধু ও মোস্তাক আহম্মেদ গং। এতে একদিকে কপোতাক্ষ উপকূলীয় জনপদে কপোতাক্ষ খননে সফলতা আসলেও সুফল বঞ্চিত হচ্ছে অন্যদিকে ভেস্তে যাচ্ছে সরকারের মহতি উদ্যোগ।
বিভিন্ন দপ্তরে ভূক্তভোগীদের লিখিত অভিযোগে প্রকাশ,যশোরের কেশবপুর উপজেলার চুয়াডাঙ্গা গ্রামের খোরশেদ আলম সরদারের ছেলে কামরুল ইসলাম মধু ও একই এলাকার সামাদ সরদারের ছেলে মোস্তাক আহম্মেদ গত ১৪২০ সালের ১ বৈশাখ হতে ১৪২৫ সালের ৩০ চৈত্র পর্যন্ত ৬ বছর মেয়াদে তালার ৭ নং ইসলামকাটি ইউনিয়নের ১১৮ নং জেল এল ভূক্ত খরাইল বিলের ২৫০ বিঘা জমি ইজারা নিয়ে মাছ করে আসছে। আগামী ৩০ চৈত্র ঐ ইজারা চক্তির মেয়াম শেষ হওয়ার আগেই ঘের মালিকরা দ্বিতীয় মেয়াদে ফের সেখানে মৎস্য চাষ করতে নানা ফন্দি-ফিকির শুরু করেছে। ইতোমধ্যে তারা স্থানীয় কতিপয় প্রভাবশালী মহলকে হাত করে জমি মালিকদের একাংশের নিকট থেকে নতুন চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর আদায় শুরু করেছেন। যেখানে আবেদনকারী ১ শ’ জনেরও বেশী সংখ্যক জমির মালিকরা তাদের একমাত্র সম্বল জমি দিতে নারাজ কিংবা কোন প্রকার চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করেনি।
প্রসঙ্গত,কপোতাক্ষ নদের নাব্যতা হ্রাসে একসময় নদী উপকূলীয় বিস্তীর্ণ জনপদে বর্ষা মৌসুমে পানি নিষ্কাশিত হতে না পেরে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। কোন কোন বছর জলাবদ্ধতা স্থায়ী আকার ধারণ করে। বছরের অধিকাংশ সময় ফসলি জমিগুলো তলিয়ে থাকত পানির নীচে। এমন পরিস্থিতিতে জীবিকার মাধ্যম রুদ্ধ হয়ে পড়লে উক্ত ঘের মালিকরা ঐ এলাকায় মৎস্য চাষের আগ্রহ প্রকাশ করলে তারা ইজারা চুক্তিতে ঐ জমি প্রদান করেন। তবে বর্তমানে ঐ খন্ড করে জমিই যেন তাদের কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঘের মালিকরা মাছ চাষে সেখানে সফলতা পাওয়ায় ব্রিটিশ শাষনামলে নীলকরদের ন্যায় তারা চেপে বসেছে অসহায় দারিদ্রসীমার নীচে বসবাসকারী মানুষদের উপর। এক প্রকার জোরপূর্বক তাদের জমিতে ঘের করতে তারা ইতোমধ্যে তঞ্চকতামূলক চুক্তিপত্র প্রস্তুত করে তাতে জমি মালিকদের জাল স্বাক্ষর আদায় শুরু করেছেন।
এদিকে ঐ ভূয়া চুক্তিপত্রের খবরে ভূক্তভোগী জমি মালিকরা স্থানীয় সংসদ সদস্য,সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক,পুলিশ সুপার,উপজেলা চেয়ারম্যান,উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছেন। তাদের দাবি একমাত্র সম্বল ফসলি জমিতে এবার তারা আগের মত ধান চাষ করবেন। উল্লেখ্য বিলের ঐ অংশে মাছ চাষ হলেও অন্য অংশে দীঘূদিন যাবৎ ধানের আবাদ হচ্ছে।
সরকার উপকূলীয় জনপদের জলাবদ্ধতা দূরীকরণে ২৬২ কোটি টাকা ব্যয়ে নদী খনন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। ইতোমধ্যে জনপদের মানুষ এর সুফলও ভোগ করছেন। গত দু’বছর জনপদের কোথাও জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়নি। উপকূলীয় এলাকায় এখন ফলছে সোনার ধান। কিন্তু ভূক্তভোগী সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরন্ন মানুষেরা এক প্রকার জিম্মি হয়ে পড়েছেন মধূ-মোস্তাক গংদের কাছে।
বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেও নুন্যতম স্বস্থিতে নেই তারা। অভিযোগের খবরে উল্টো তারা অসহায় জমি মালিকদের অর্থনৈতিক দূর্বলতার সুযোগে নানাবিধ হুমকি-ধামকি অব্যাহত রেখেছে। এলাকার কতিপয় প্রভাবশালী মহলকে ম্যানেজ করে হুমকি দিচ্ছে জীবনে শেষ করে দেওয়াসহ বিভিন্ন মিথ্যা মামলায় হয়রাণির। সর্বশেষ এমন অবস্থায় তারা একমাত্র সম্বল ফিরে পেতে সরকারের সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা কেেছন।
এবিষয়ে কামরুল ইসলাম মধু ও মোস্তাক আহম্মেদ নিকট জানতে চাইলে তারা ঘের সংক্রান্ত কোন মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।

সোহাগ মাল্টিমিডিয়া এন্ড ট্র্যাভেলস

s.h/tala


আপনার মতামত লিখুন :

নিজস্ব প্রতিবেদক