জাতীয় ফুল শাপলা হারিয়ে যাওয়ার উপক্রম

প্রকাশিত: ১১:০৮ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ২৭, ২০১৯ | আপডেট: ৮:৪২:অপরাহ্ণ, মে ১৬, ২০১৯

সোহাগ মাল্টিমিডিয়া এন্ড ট্র্যাভেলস

মোঃ আমিনুর রহমান সোহাগ :
বাংলাদেশের জাতীয় ফুল সাদা শাপলা। সাতক্ষীরা জেলার বিভিন্ন এলাকায় কিছু সাদা শাপলা দেখা গেলেও লাল শাপলা প্রায়ই দেখা যায়না বললেও ভুল হবে না। তবে অযত্নে, অবহেলা কৃষি জমিতে অধিক পরিমাণে কীটনাশক সার ব্যবহার করার কারণে দেশের জাতীয় ফুল শাপলা এখান থেকে হারিয়ে যাওয়ার প্রায় উপক্রম হয়েছে।


জানা যায়, বর্ষার মৌসুমে বিভিন্ন এলাকার খাল-বিলে, জলাশয় ও নিচু জমিতে পানি থাকে। আর ঠিক এ সময় প্রাকৃতিকভাবে সেখানে জন্ম নেয় শাপলা। কয়েকবছর পূর্বে থাকার বিভিন্ন এলাকায় প্রচুর পরিমাণে শাপলা ফুল জন্ম নিত। তখন চারিদিকে এক প্রাকৃতিক নয়নাভিরাম দৃশ্যে পরিণত হতো। বর্তমানে বিভিন্ন প্রজাতির শাপলার মধ্যে সাদা শাপলা দুই একটি দেখা গেলেও লাল শাপলা দেখাই যায় না। অভিযোগ উঠেছে, কপোতাক্ষের নাব্যতা হ্রাস, খাল-বিল, জলাশয় ভরাট করে কৃষি জমি তৈরী, জলবায়ুর পরিবর্তন, এলাকা কৃষি প্রধান হওয়ায় অসাদু কৃষি অফিসাররা অনভিজ্ঞ কৃষকদের তেমন কোন ভাল কৃষি পরামর্শ এবং ট্রেনিং না করানো, তাদের ফসলের জমিতে মাত্রারিক্ত কীটনাশক ব্যবহারের কারণে থানার বিভিন্ন এলাকা থেকে বাংলাদেশের জাতীয় ফুল শাপলা হারিয়ে যাচ্ছে।


বিভিন্ন এলাকায় খাল-বিলে অথবা নিচু জমির পানিতে যেদিকে তাকানো যেত চোখ পড়লে বিভিন্ন বাহারি রংঙের শাপলা ফুল দেখা যেতো। এর বাহারি রূপ দেখে সকলের নয়ন জুড়িয়ে যেত। সাদা শাপলা বাংলাদেশের জাতীয় ফুল। অনেকের মতে লাল ও সাদা রংঙের শাপলা হয়ে থাকে। শাপলা ধনী কি গরীব সবাই সবজি হিসেবে ব্যবহার করতো এবং লাল শাপলার আছে অনেক ভেষজ গুন। আবার শাপলার ফল(ঢ্যাপ) দিয়ে গ্রাম এলাকার লোকেরা এক ধরণের সু-স্বাদু খই তৈরী করতো। বর্ষা মৌসুমে গ্রাম এলাকার অনেকে বিভিন্ন জায়গা থেকে শাপলা তুলে বাজারে বিক্রি করতো। মাটির নিচে শাপলার মূল অংশ(মোতা) পানি কমে যাওয়ার পরে তুলে সু-স্বাদু খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করতো। তবে আমাশয়ের জন্য মোতা অনেক উপকারী বলে জানা যায়।


সাতক্ষীরা জেলা সদরের গোপীনাথপুর বিনেরপোতায় নূর আলী সরদারের স্ত্রী সাবিনা বেগম জানায়, আমার স্বামী দূরের একটি গ্রাম থেকে লাল শাপলা ফুলের মূল এনে দেড় বিঘা মাছের ঘেরে চাষ করে। বাড়ন্ত শাপলা গাছ গুলো মাছ খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। সব থেকে বড় কথা শাপলা গুলো দেখতে অনেকটা মনোমুগ্ধকর। যে কেহ এ পথ দিয়ে গেলে একটি বারের জন্য হলেও ফুটন্ত শাপলা ফুল দেখে নয়ন দুটি জুড়িয়ে নেয়। যাহা পথচারীদের জন্য দেয় সাবিনা বেগমের চাষকৃত শাপলা ফুল অপর এক তৃপ্তি।

কৃষি বিজ্ঞানী ড. আক্তারুজ্জামান বলেন, জাতীয় ফুল শাপলাকে অবশ্যই বাঁচিয়ে রাখতে হবে। কারণ একদিকে শাপলা আমাদের জাতীয় ফুল। অন্য দিকে শাপলাকে সবজি হিসেবে সবাই খাদ্য তালিকায় ব্যবহার করে এবং ইহার মূলটিও খাদ্য হিসেবে অনেক সু-স্বাদু। সকল প্রকার ফল, ফুল ও কৃষি চাষাবাদ সম্পর্কে কৃষি অফিস গুলো পরামর্শ দিয়ে থাকে। কিন্তু শাপলাফুল সম্পর্কে কোন পরামর্শ দেওয়া হয় না। সে কারণে এলাকায় ইহা কিভাবে সংরক্ষণ করে বাঁচিয়ে রাখা যায় তা কেহ জানে না। এজন্য কৃষি অফিসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের এগিয়ে আসতে হবে। আমাদের সকলের মনে রাখা উচিত সবজির পুষ্টিগুণ সহ শাপলা আমাদের জাতীয় ফুল।



আপনার মতামত লিখুন :

নিজস্ব প্রতিবেদক