সময়ের বিবর্তনে বিলুপ্তির পথে ঐতিহ্যবাহী খেজুর পাটি

প্রকাশিত: ১১:২৮ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ২৭, ২০১৯ | আপডেট: ৮:৪০:অপরাহ্ণ, মে ১৬, ২০১৯

সোহাগ মাল্টিমিডিয়া এন্ড ট্র্যাভেলস

মো. আমিনুর রহমান সোহাগ:
বাংলার গ্রামাঞ্চলে সর্বত্র মানুষের কাছে এক সময় ঐতিহ্যবাহী খেজুর পাটির ব্যবহার ও কদর ছিল অত্যান্ত লক্ষণীয়। সময়ের বিবর্তনে আধুনিকতার ছোয়ায় শীতল পাটি, বিভিন্ন ধরণের চট ও কার্পেট এবং পলিথিনের তৈরি হরেক রকমের উপকরণ সহ আধুনিক সরঞ্জাম ব্যবহারের কারণে পাটকেলঘাটা থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে ঐতিহ্যবাহী খেজুর পাটি। তবে আজও শীতের সময় এখানে কিছু মানুষ ঐতিহ্যবাহী খেজুর পাটি তৈরি ও ব্যবহারকে নিজস্ব সাংস্কৃতি হিসেবে ধরে রেখেছে।


সরেজমিনে এবং বিভিন্ন তথ্য মাধ্যমে জানা যায়, ষড়ঋতু অর্থাৎ ঋতু বৈচিত্রের এক অপরুপ নিদর্শন বাংলাদেশ। এক এক ঋতুতে প্রকৃতি সাজে অপরূপ রুপে এবং মানুষও ব্যস্ত থাকে বিভিন্ন কর্মব্যস্ততায়। পৌষ ও মাঘ এই দু’মাস নিয়ে শীতকাল। অর্থাৎ এ সময় খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ এবং গাছের পাতা দিয়ে তৈরি খেজুর পাটির প্রচলন সেই সু-প্রাচীনকাল থেকে বাংলার গ্রামাঞ্চলের মানুষের কাছে ব্যবহার লক্ষণীয়। কিন্তু সময়ের বিবর্তনে আর আধুনিকতার ছোয়ায় শীতল পাটি, চট ও কার্পেট এবং পলিথিনের তৈরি জিনিসের ব্যবহার এতটায় বৃদ্ধি পেয়েছে যে শুধু পাটকেলঘাটা সহ তালা উপজেলা নয় সমগ্র গ্রাম বাংলার মানুষ দিন দিন এর ব্যবহার এবং কদর ভুলে যেতে বসেছে।

এখন পূর্বের মতো শীতের সময় খুব বেশি খেজুর পাটি তৈরি করতে দেখা যায় না বললেও ভুল হয় না। এক সময় শীতের সময় খেজুর পাটি তৈরি ও সাধারণ মানুষ ঘরে ঘরে নিত্য প্রয়োজনীয় কাজে খেজুর পাটি ব্যবহার করতো। বিশেষ করে কৃষাণ বধুরা এ সময় খেজুর পাতা সংগ্রহ করে বিশেষভাবে তৈরি করতো পাটি। তাতে কৃষকের উৎপাদিত ফসল ধান, সরিষা, গম সহ নানাবিধ ফসল রোদে শুকানোর কাজে, কখনো কেহ ছোট ছোট পাটি তৈরি করে বসা ও রাতে ঘুমানোর কাজে ব্যবহার সহ নিত্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন কাজে ব্যবহার হত এ পাটি। এছাড়াও গ্রামের হত দরিদ্র কিছু গৃহবধুরা খেজুর পাটি তৈরি ও বিক্রয় করে স্বামীর সংসারে বাড়তি আয়ের একটি উৎস সৃষ্টি করতো বলে জানা যায়।

পাটকেলঘাটা থানার কাশীপুর গ্রামের শেখ আব্দুল মাজেদ(৭৫), সদর ইউনিয়নের শহীদুল ইসলাম(৬০) সহ বিভিন্ন মহল আজ ধারণা করছেন, ঐতিহ্যবাহী খেজুর পাটি তৈরি ও কদর দিন দিন কমে যাচ্ছে। কারণ হিসেবে তারা জানায় শীতল পাটি, নল পাটি, চট ও কার্পেট, পলিথিনের তৈরি হরেক রকমের উপকরণ ব্যবহার এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছে যে এখন অনেকেই এর নাম ভুলতে বসেছে এবং এগুলো সহজে পাওয়া যায়। তাছাড়া প্রতিবছর এখানে বন্যার কারণে খেজুর গাছ অনেক মরে যায় ও ভাল খেজুর গাছ এবং এখানকার ভাটায় খেজুর গাছের চাহিদা থাকায় খেজুর গাছ কমতে বসেছে।

পাটকেলঘাটা থানা সদর ইউনিয়নের ছোট কাশীপুর গ্রামের মৃত হারাণ দাশের স্ত্রী নির্দু দাশী(৮৩) বলেন, দেশ স্বাধীন হবার পরে আমার স্বামী মারা যায়। পরবর্তীতে অপরের ক্ষেত-খামার ও বাড়িতে কাজ করার পাশাপাশি খেজুর পাটি তৈরি ও বিক্রয় করে বাড়তি আয় যা হতো, তা দিয়ে সংসার কোনভাবে চলে যেত। ভাল খেজুর পাতা এখন পাওয়া যায় না। একটি ছেলে ভ্যান চালিয়ে যা আয় করে তা দিয়ে তার সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়। দু’টি মেয়ের মধ্যে একটি বিয়ে দিলেও সে এখন বিধবা হয়ে সন্তান নিয়ে স্বামীর ভিটেই আছে। এখন অন্যের ক্ষেতে কাজ করতে পারি না তাই আজও মাঠে মাঠে ঘুরে কিছু খেজুর পাতা সংগ্রহ করে আবার কখনো কেহ খেজুর পাতা দিলে পাটি তৈরি করে অর্ধেক ভাগ দিয়ে বাকি পাটি গুলো ১শ থেকে ২শত টাকা বিক্রয় করে কখনো অন্যের কাছ থেকে কিছু চেয়ে নিয়ে পাগল মেয়েটি নিয়ে কষ্টে সংসার চালাতে হয়। এখন পূর্বের মত খেজুর পাটির কদর নেই। বসে না থেকে কিছু রোজগর করার চেষ্টা করে থাকেন বলে তিনি জানান।



আপনার মতামত লিখুন :

নিজস্ব প্রতিবেদক