করোনা ভাইরাস: আতঙ্ক নয়-সতর্ক থাকুন

প্রকাশিত: ২:৩৭ অপরাহ্ণ, মার্চ ২২, ২০২০ | আপডেট: ২:৩৭:অপরাহ্ণ, মার্চ ২২, ২০২০
আতঙ্ক নয় সতর্ক থাকুন
            ……রুদ্র অয়ন 
প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) বিশ্বের অন্তত ১০৪টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। নতুন করে এ তালিকায় যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশ। সাধারণত সতর্কতা অবলম্বন করে এই ভাইরাসটির সংক্রমণ ও বিস্তারের ঝুঁকি কমিয়ে আনা সম্ভব। 
করোনা ভাইরাসের লক্ষণ : 
জ্বর, কাশি, শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যাই মূলত করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের প্রধান লক্ষ্মণ।করোনা ভাইরাস মূলত ফুসফুসে আক্রমণ করে। সাধারণত জ্বরের সঙ্গে শুকনা কাশি দিয়ে শুরু হয়। জ্বর ও কাশির এক সপ্তাহের মাথায় শ্বাসকষ্ট অনুভূত হয়। এসব লক্ষণ দেখা দিলে রোগীকে সাথে সাথে হাসপাতালে নিতে হবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, এই ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির লক্ষণ প্রকাশ পেতে ১৪ দিন পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। এটাকে ইনকিউবেশন পিরিয়ড বলা হয়ে থাকে। অর্থাৎ রোগীর লক্ষণ প্রকাশের আগে এই ভাইরাস ব্যক্তির শরীরে এ সময় পর্যন্ত সুপ্ত অবস্থায় থাকতে পারে।
প্রতি ৪ জনের মধ্যে অন্তত একজনের অবস্থা মারাত্মক পর্যায়ে যায় বলে মনে করা হয়। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে হালকা ঠান্ডা লাগা থেকে শুরু করে মৃত্যুর সব উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
প্রতিকার :
এখন পর্যন্ত করোনা ভাইরাসের কোনো প্রতিষেধক আবিষ্কৃত হয়নি। তবে আশা করা হচ্ছে, চলতি বছরের শেষের দিকে এই টিকা মানুষের শরীরে পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগ করা যাবে। এই রোগ থেকে রক্ষার একমাত্র উপায় হলো অন্যদের মধ্যে ভাইরাসের সংক্রমণ হতে না দেয়া।
ভাইরাস থেকে বাঁচতে যা যা করতে হবে: ১. আক্রান্ত ব্যক্তি হতে কমপক্ষে ২ হাত দূরে থাকতে হবে। ২. বারবার প্রয়োজনমতো সাবান পানি দিয়ে হাত ধুয়ে নিতে হবে, বিশেষ করে আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এলে কিংবা সংক্রমণস্থলে ভ্রমণ করলে। ৩. জীবিত অথবা মৃত গৃহপালিত/বন্যপ্রাণী থেকে দূরে থাকা। ৪. ভ্রমণকারীগণ আক্রান্ত হলে কাশি শিষ্টাচার অনুশীলন করতে হবে (আক্রান্ত ব্যক্তি হতে দূরত্ব বজায় রাখা, হাঁচি-কাশির সময় মুখ ঢেকে রাখা, হাত ধোয়া, যেখানে-সেখানে কফ কাশি না ফেলা)। ৫. করমর্দন এবং কোলাকুলি না করার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
এছাড়াও করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে প্রতিদিন বাড়ি-ঘর ভালো মতো পরিষ্কার করাও জরুরি। পাশাপাশি কিছু স্বাস্থ্য উপকরণ ঘরে রাখা জরুরি।
১. জীবাণুনাশক হ্যান্ডওয়াশ
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে বাসায় জীবাণু নাশক হ্যান্ডওয়াশ রাখা জরুরি। প্রতিবার খাবার রান্না বা তৈরি করার আগে ও পরে, খাবার খাওয়ার আগে ও পরে, বাথরুম ব্যবহারের আগে ও পরে, বাইরে থেকে বাসায় আসার সঙ্গে সঙ্গেই জীবাণু নাশক হ্যান্ডওয়াশ দিয়ে হাত ধুতে হবে। 
২. জীবাণুনাশক ক্লিনিং স্প্রে
রান্নাঘরের পরিবেশ স্বাস্থ্যকর রাখতে জীবাণুনাশক ক্লিনিং স্প্রে ব্যবহার জরুরি। খাবার তৈরির আগে ও পরে জীবাণুনাশক ক্লিনিং স্প্রে ব্যবহার করে রান্নাঘর পরিষ্কার করুন। যাতে কোনো রোগজীবাণু খাবারে ঢুকতে না পারে। রান্নাঘর ছাড়াও বাথরুম, লিভিং রুম, ডাইনিং রুম এবং বেডরুমও পরিষ্কার করুন জীবাণুনাশক ক্লিনিং স্প্রে দিয়ে।
৩. রাবার গ্লাভস
হাড়ি-পাতিল ধোয়া, টয়লেট পরিষ্কার বা ধুলা-ময়লা পরিষ্কার করা মতো গৃহস্থালি কাজের জন্য রাবার গ্লাভস ব্যবহার করুন।
৪. বক্সড টিস্যু
বাড়ির প্রতিটি ঘরে টিস্যু রাখুন। যাতে কাশি বা হাঁচির সময় হাত বাড়ালেই টিস্যু পাওয়া যায়।
৫. ভেজা টিস্যু, হান্ড স্যানিটাইজার এবং পকেট টিস্যু
জীবাণুনাশক ভেজা টিস্যু এবং স্যানিটাইজার ঘরে বা বাইরেও ব্যবহার করা যায়। যখন সাবান বা পানি পাওয়া যাবে না তখন এসব ব্যবহার করে জীবাণুর আক্রমণ প্রতিরোধ করতে হবে।
শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে সহজে মানুষ করোনায় আক্রান্ত হতে পারে। তাই করোনা প্রতিরোধে খেতে হবে এমন কিছু খাবার যা শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
যেহেতু এই ভাইরাসের এখনও কোনো টিকা আবিষ্কার করা সম্ভব হয়নি, তাই প্রতিরোধই একমাত্র ব্যবস্থা।
১. অতিরিক্ত চিনি ও লবণ মেশানো খাবার খাবেন না। বাদ দিন প্যাকেটজাত ও প্রক্রিয়াজাত খাবার। জাঙ্ক ফুড ও তেলে ভাজা খাবার খাবেন না।
২. ঘি ও মধু খেলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।
৩. ডাল, দানা শস্যজাতীয় খাবার যেমন উপকার করবে, তেমনই পাতে থাক সুসিদ্ধ মাংস, মাছ ও ডিম।
৪. লেবু খেতে পারেন। রসুনও রোগ প্রতিরোধে সক্ষম, খেতে পারেন রসুনও প্রতিদিন নিয়ম করে কয়েক কোঁয়া। 
৫. লবণ ছাড়া বাদাম, ছোলা খান, খেতে পারেন কালোজিরাও। এটি রোগ প্রতিরোধে খুব কার্যকর। 
৬. সজনে ডাঁটা ও সজনে ফুল ভাইরাস ঠেকাতে সক্ষম। খেতে পারেন এসব খাবার।
৭. টকদই, সবুজ শাকসবজি ও ফলে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। এসব খাবার খেতে পারেন।
৮. লাল বাদামি ও কালো চালের ভাত খেতে পারেন।
৯. প্রতি দিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন।
করোনা ভাইরাস সম্পর্কে অনেক ভুল পরামর্শ অনলাইনের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে। এরমধ্যে কতগুলি ধর্মীয় ও কতগুলি চিকিৎসা বিজ্ঞান সম্পর্কিত।
তবে সবচেয়ে ভয়ঙ্করভাবে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে ধর্মীয় অপব্যাখ্যাগুলো। ধর্মীয় অপব্যাখ্যা দিয়ে কেউ কেউ বলছেন, স্বপ্নে করোনা ভাইরাসের প্রতিষেধক পেয়েছেন এবং শুধু মুসলমানদেরকে তারা এটি দিবেন। আর ঐ ঔষধ দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে সেবন করলে রোগমুক্তি হয়ে যাবে।
কেউ কেউ বলছেন, তাকদীরে বা ভাগ্যে থাকলে একশ হাত মাটির নীচে গেলেও আক্রান্ত হতে হবে। ভাগ্যে না থাকলে কিছুই হবে না। এমনকি যারা বলছেন, ‘এই নিন করোনা ভাইরাসের দোয়া’- তারাও কৌশলগত মিথ্যাচার করছেন।
কারণ, করোনা ভাইরাসের জন্য আলাদা কোন দোয়া নেই। আছে কেবল যে কোন ধরনের মহামারি থেকে আল্লাহর কাছে মুক্তি চাওয়ার দোয়া; কিন্তু ওই দোয়া পড়লেই মহামারি থেকে বেঁচে যাওয়া যাবে, আর দোয়া পড়তে পড়তে মহামারি আক্রান্ত এলাকায় ঢুকে গেলে বা আক্রান্ত ব্যাক্তির কাছে গেলেও কিছু হবে না এমনটি কোথাও বলা হয়নি।
এ ধরনের মেডিক্যাল ও ধর্মীয় বক্তব্যসমূহ মানুষকে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। যার ফলে সমূদ্র সৈকত ও অন্যান্য বিনোদন কেন্দ্রসহ বাজারে, মসজিদে, দোকানে কোথাও জনসেচেতনতার আশানুরূপ লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
অনেকে দোয়া পড়ে বাইরে বেড়িয়ে পড়ছেন। যে কারণে, সারা বিশ্ব যখন সতর্কতামূলকভাবে সমস্ত পাবলিক ফাংশন বন্ধ করে দিচ্ছে, এমনকি সৌদি সরকার মক্কা ও মদিনার দুটি মসজিদ ব্যতীত সকল মসজিদে নামাজ বন্ধ ঘোষণা করেছে, তখনও বেশিরভাগ মানুষ এটাকে কোন সিরিয়াস বিষয় হিসেবে দেখছে না।
এমনকি, সরকার যখন ভাইরাস ঠেকাতে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছে, মানুষ তখনও ঘরে না থেকে বাইরে গিয়ে ছুটি উপভোগ করতে শুরু করেছে। গ্রামাঞ্চলে অবস্থা আরও খারাপ, অনেকে এসব ভুল ওয়াজ ও ব্যাখ্যা শুনে এতটাই আত্মবিশ্বাসী যে, তারা মনে করে এ ভাইরাস মুসলমানদের কোনো ক্ষতি করবে না। এটা অমুসলিমদের শায়েস্তা করার জন্য আল্লাহর দেয়া গজব।
দুর্যোগের সময় ডাক্তারদের পরামর্শকে উপেক্ষা করা এবং ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে মানুষকে মহামারির বিষয়ে উদাসীন করা দুটোই ইসলামিক ধারা বা নির্দেশনার পরিপন্থী। এটা বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর দেখানো পথ বা ইসলামিক ধারা নয়। জীবন চলার পথে আমাদের আদর্শ বা মডেল হচ্ছেন বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব, শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)। তাঁর জীবনধারাই হচ্ছে আমাদের জন্য প্রকৃত মুক্তির পথ।
অনেক সময় ভুল পথগুলো এত আকর্ষণীয় করে উপস্থাপন করা হয় যে, সেগুলোকেই সঠিক মনে হয়। বর্তমান পরিস্থিতিতে আমাদের জানা জরুরি মহামারি বিষয়ে ইসলামিক ধারা বা রাসুল (সাঃ) এর আদর্শ কী?
সহীহ মুসলিমে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘মহামারি হচ্ছে আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে শাস্তি অথবা ধমকস্বরূপ। আল্লাহ তা’আলা বনী ইসরাইলের একটি দলের ওপর অথবা তোমাদের পূর্ববর্তী কিছু লোকের উপর এমন শাস্তি নিপতিত করেছিলেন। তাই যখন কোনো স্থানে মহামারির কথা শুনতে পাবে, সেখানে যাবে না। আর যদি তা তোমাদের কাছে চলে আসে তবে তা থেকে পালিয়ে যাবে না।’
এই হাদীস থেকে স্পষ্ট হয় যে, যারা মহামারি আক্রান্ত এলাকা থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আসছেন এবং যারা মহামারি ছড়িয়ে পড়ার আশংকা আছে জেনেও সতর্ক হচ্ছেন না, বরং অরক্ষিত অবস্থায় বাইরে বেড়িয়ে পড়ছেন, তারা উভয়ে ইসলামের এই নির্দেশনাকে অমান্য করছেন।
এসব ক্ষেত্রে অনেকে তাকদীরকে (ভাগ্য) ঢাল হিসেবেও ব্যবহার করতে আগ্রহী। অথচ তাকদীরের জ্ঞান আমাদেরকে রাসুলই (সাঃ) দিয়েছেন এবং তিনি মহামারির ক্ষেত্রে তাকদীরকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেননি। বরং তিনি মহামারি এলাকা থেকে আগমন এবং মহামারি এলাকায় গমন দুটোকেই নিষেধ করে দিয়েছেন।
বর্তমান সময়ে চিকিৎসকরাও করোনা মহামারি ছড়ানো বন্ধ করতে মানুষের চলাচলকে সীমিত বা বন্ধ রাখতে বলছেন। যেহেতু এটা চিকিৎসকদের কথা, তাই এটাকে ধর্মপ্রাণ মানুষের অবহেলার দৃষ্টিতে দেখা ঠিক নয়। অথচ রাসুলও (সাঃ) একই ধরনের কথা বলে গিয়েছিলেন। তিনি মহামারির এলাকা থেকে চলে আসা এবং মহামারির দিকে যাওয়া- উভয়কেই কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন।
ডাক্তারদের থেকে চিকিৎসা ও পরামর্শ নেয়াও রাসুল (সঃ) এর সুন্নাত। ফাতিহার অপর নাম সুরাতুশ শেফা বা রোগমুক্তির সুরা। কেউ কেউ এটাকে অযুহাত হিসেবে কাজে লাগিয়ে ডাক্তারি চিকিৎসা না নিতে জনগনকে আগ্রহী করে তুলছেন।
অথচ এটাও রাসুলের (সঃ) নির্দেশনা নয়। রোগ-ব্যাধির ক্ষেত্রে রাসুলের (সঃ) আদর্শ হচ্ছে- ডাক্তারের পরামর্শ ও চিকিৎসা নিতে হবে এবং সাথে সাথে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। এ জন্য সুরা ফাতিহা ও একটি দোয়ার কথাও রাসুল (সাঃ) বলেছেন। দোয়াটির অর্থ হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই শ্বেত রোগ, পাগলামি, কুষ্ঠ রোগ এবং জানা-অজানা সকল প্রকার দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে।
করোনা ভাইরাস থেকে বাঁচতে হলে আমাদের এখন থেকেই রাসুলের (সঃ) ঐতিহ্য মেনে চলতে শুরু করা উচিৎ। আর এ ক্ষেত্রে রাসুলের ঐতিহ্য হচ্ছে তিনটি।
এক, যখন কোনো স্থানে মহামারির কথা শুনতে পাবে তখন সেখানে যাবে না। রাসুলের এ বাণীর বাস্তবায়ন করা খুবই জরুরি। বর্তমান পরিস্থিতিতে যেহেতু জনসমাগম মহামারি ছড়াতে সাহায্য করে তাই যতদূর সম্ভব ঘরে অবস্থান করা। পরিবারের বাইরে কারো সাথেই যথাযথ সাবধানতা ছাড়া মেশা যাবে না।
দুই, যদি মহামারি তোমাদের কাছে চলে আসে তবে তা থেকে পালিয়ে যাবে না। রাসুলের (সঃ) এই নির্দেশ-এর বাস্তবায়ন। অর্থাৎ আক্রান্ত এলাকার মানুষ ভাল এলাকায় চলে যাবে না এবং যে বা যাদের ভাইরাস আছে তারা সুস্থ মানুষের কাছে যাবে না। আক্রান্ত নিজে সুস্থ মানুষদের রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করবেন।
তিন, রাসুলের নিজে করে দেখানো আমল। তা হচ্ছে, অসুস্থ হলে পেশাদার চিকিসকের চিকিৎসা গ্রহণ করা এবং সুরা ফাতেহা ও অন্য দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর ক্ষমা ও সাহায্য চাওয়া। অর্থাৎ কেউ আক্রান্ত হলে কোন অযুহাতেই তা গোপন না করা যাবে না, আল্লাহর অভিশাপ ভেবে হতাশ না হয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে।
আশা করা যায়, আমরা যদি রাসুলের (সঃ) এ তিনটি নির্দেশনাকে মেনে চলি, তাহলে যে কোনো মহামারির হাত থেকে বেঁচে যেতে পারবো।
এই তিনটি নির্দেশনাকে সহজ ও সংক্ষেপ করলে যা দাঁড়ায় তা হচ্ছে, সুস্থ থাকার জন্য সবসময়ই চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলতে হবে। সে সাথে রোগ-বালাই থেকে বেঁচে থাকার জন্য আল্লাহর রাসুলেল (সঃ) এর শেখানো দোয়াটিও পড়তে হবে। তবে শুধুমাত্র দোয়ার ওপর নির্ভর না করে, আক্রান্ত হয়ে গেলে চিকিৎসাও গ্রহণ করতে হবে এবং তার সাথে সুরা ফাতিহাকে সংযুক্ত রাখতে হবে।
দৈনন্দিন জীবনে রাসুলুল্লাহ (সঃ) এর আদর্শ কতটা জরুরি, তা যেন করোনা ভাইরাস আমাদেরকে আরেকবার স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। যেমন, সর্বদা পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা, হাঁচি-কাশি, হাই দেয়ার সময় মুখের সামনে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা, খাওয়ার আগে ভাল করে হাত-মুখ ধুয়ে নেয়া, কোনো খাবারপাত্রে নিঃশ্বাস না ফেলা এবং তাতে ফুঁক না দেয়া, যেখানে সেখানে থুথু, কম ও মল-মূত্র ত্যাগ না করা, অলসতা না করা, পরিশ্রমী হওয়া, কাউকে ধোঁকা না দেয়া, কারো সাথে প্রতারণা না করা, কাউকে উপহাস না করা, মিথ্যা না বলা, ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চাওয়া, সবার সাথে সুন্দর আচরণ করা এ সবই রাসুলের (সঃ) আদর্শ। পৃথিবীবাসী রাসুলের (সঃ) এ সকল আদর্শ ও পরামর্শ থেকে যত বেশি দুরে যাবে তারা তত বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে পড়বে।
সবশেষে বলতে হয়, কেবল রাসুলের (সঃ) দেখানো পথ অনুসরণ করেই আমরা করোনা ভাইরাসসহ সকল মহামারি থেকে মুক্তি পেতে পারি। সবাই ভাল থাকুন, নিরাপদে থাকুন এবং অন্যকে নিরাপদে থাকতে দিন। যারা মেনে চলে এবং যারা চলে না কেউ কাউকে উপহাস-তিরস্কার না করে শান্তিপূর্ণভাবে বোঝানোর চেষ্টা করুন। এটাই হচ্ছে রাসুল (সঃ) এর দেখানো সঠিক পথ।
আতঙ্ক নয় সতর্ক থাকুন। 
আল্লাহ আমাদের সবাইকে, সকল ধর্মের সকল মানুষকে নিরাপদ রাখুন, সুস্থ রাখুন, ভাল রাখুন। সকল মহামারী থেকে বালা-মুসিবত থেকে আমাদের সবাইকে হেফাজত করুন। 

 

সোহাগ মাল্টিমিডিয়া এন্ড ট্র্যাভেলস

সুন্দরবনটাইমস.কম/লেখক:রুদ্র অয়ন/ঢাকা

 


আপনার মতামত লিখুন :

নিজস্ব প্রতিবেদক