কেশবপুর থানা প্রাঙ্গণ যেন বক-পানকৌড়ির নিরাপদ অভয়ারণ্য

প্রকাশিত: ২:০৪ অপরাহ্ণ, জুন ১৬, ২০২০ | আপডেট: ২:০৪:অপরাহ্ণ, জুন ১৬, ২০২০

যশোরের কেশবপুর থানা প্রাঙ্গণের মেহগনি ও নারকেল গাছে দীর্ঘদিন ধরে বাস করে আসছে কয়েক ঝাঁক বক ও বিরল প্রকৃতির পানকৌড়ি। থানা প্রাঙ্গণের পাশে মধু সড়ক দিয়ে প্রতিনিয়ত চলাচলকারী মানুষেরাসহ থানার স্টাফরাও এগুলো দেখে অভ্যস্ত। কালের বিবর্তনে প্রকৃতির নিষ্ঠুর ও বিরূপ আচার-আচরণে, মানুষের অত্যাচার-অনাচারে হারিয়ে যেতে বসা বক ও পানকৌড়ি পাখিদের কিছুই বলে না তারা। তাইতো থানা প্রাঙ্গণের ওই সকল গাছগুলো পাখিদের নিরাপদ অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে।

সোহাগ মাল্টিমিডিয়া এন্ড ট্র্যাভেলস

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কেশবপুর থানা প্রাঙ্গণের মধ্যে বড় আকৃতির ৮ থেকে ১০টি মেহগনি গাছের মগডালে ও নারকেল গাছে বাসা বেঁধে অবস্থান করছে পানকৌড়ি এবং বক। এখানে বাসা বেঁধে ডিম পেড়ে বাচ্চাও ফুটাচ্ছে এসব পাখিরা। থানা প্রাঙ্গণের পুকুর, একটু অদূরে বয়ে চলা হরিহর নদ ও জলাশয় থাকায় সেখানকার মাছ খেয়েই ফিরে আসে নীড়ে। লম্বায় পানকৌড়ি সাধারণত ৫১ সেন্টিমিটার হয়ে থাকে। গা, বুক উজ্জ্বল কালো। গলায় সাদা একটি দাগ আছে, পাখার নিচের পালক ধূসর রঙ। লেজ কুলার মতো। ঠোঁট সরু আর প্রান্তভাগ বাঁকানো। পা দুটি খাটো। তবে হাঁসের পায়ের মতো পানকৌড়ির পা। চোখ সবুজাভ বাদামি। মাথায় ঝুঁটির মতো পালকও আছে।

থানার পূর্ব পাশের ৪ তলা ভবনের এক গৃহবধূ জানান, দীর্ঘদিন ধরে এখানে বক ও পানকৌড়ি পাখির থানা প্রাঙ্গণের গাছে কয়েক বছর বসবাস করতে দেখে আসছি। প্রতিদিন সকালে তারা চলে যায় ঝাঁক ধরে খাদ্যের সন্ধানে, ফিরে সন্ধ্যায়। এসকল দৃশ্য ছাদে বসেই উপভোগ করি।
 মুদি ব্যবসায়ী গোবিন্দ কুমার পাল বলেন, এখানে কেউ পাখিদের উপর অত্যাচার করে না। নিরাপদে থাকতে পেরে শুধু বক ও পানকৌড়ি নয় বিভিন্ন প্রজাতির পাখি এখানে বাসা তৈরি করেছে। সকাল সন্ধ্যায় তাদের ডাক শুনে ব্যবসায়ীদেরও মন ভরে যায়। বেশ কদিন পাখির সংখ্যা কমে যাওয়ায় তাদের কোলাহলও কমে গিয়েছিল। আবারও পাখি আসতে শুরু করেছে। এলাকায় বসবাসকারী স্কুল ছাত্র লিটন পাল জানায়, পাখির কোলাহল না শুনলে তাদের ভালো লাগে না। বিশেষ করে যাতায়াতের সময় নানা ধরনের পাখি দেখে তার মতো অন্য শিক্ষার্থীরাও মুগ্ধ হয়ে ওঠে। এসব পাখির কিচিরমিচির ডাক শহরে আসা ব্যক্তিদের মুগ্ধ করে তোলে।

পশুপাখি প্রেমী কেশবপুর থানার এস আই ফজলে রাব্বি জানান, দীর্ঘ বছর ধরে এই থানা প্রাঙ্গণে বিভিন্ন প্রজাতির অসংখ্য পাখির পাশাপাশি অনেক অতিথি পাখির আনাগোনা দেখা যায়। প্রতি বছর মৌসুমে শত শত বক ও পানকৌড়ি আসে। থানার পুকুর পাড়ের গাছগুলোতে অস্থায়ী বাসা বানিয়ে বংশবিস্তার করে থাকে। সন্ধ্যা হলেই পাখিদের কিচিরমিচিরে থানা প্রাঙ্গণ মুখরিত হয়ে ওঠে। সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় আম্পানে পুকুর পাড়ের কয়েকটি গাছ ভেঙে পড়ায় বক ও পানকৌড়িগুলোর কিছুটা অসুবিধার সৃষ্টি হয়েছিল। আমরা থানা ক্যাম্পাসের গাছে গাছে মাটির কলসি বেঁধে দিয়েছি। পাখিগুলোর নির্বিঘ্ন বসবাসে থানা পুলিশের সার্বিক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
উপজেলা বন কর্মকর্তা আব্দুল মোনায়েম বলেন, থানা প্রাঙ্গণের গাছে নিরাপদে থাকার কারণে পাখির অভয়ারণ্য গড়ে উঠেছে। এটিই এখন উপজেলার ভেতর সবচেয়ে পাখির নিরাপদ আশ্রয়স্থলে পরিণত হয়েছে।

বন অধিদপ্তরের শেখ কামাল ওয়াইল্ড লাইফ সেন্টার গাজীপুরে কর্মরত বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ সিবলী সাদিক বলেন, পানকৌড়ি ও বক পাশাপাশি বাসা তৈরি করতে পছন্দ করে। তাদের ভেতর রয়েছে মধুর মিতালী সম্পর্ক। পানকৌড়ি একসঙ্গে ২ থেকে ৬টি ডিম দিয়ে থাকে। এ পাখির ডিমের বর্ণ নিলচে। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে চকচকে সাদা বর্ণ ধারণ করে। পুরুষ ও স্ত্রী পানকৌড়ি যৌথভাবে ডিম ফুটাতে সহায়তা করে। অধিকাংশ ডিম থেকেই বাচ্ছা জন্ম নেয়। তিন থেকে পাঁচ সপ্তাহে ডিম থেকে ছানা বের হয়। তিন বছর বয়সে এরা বয়োঃপ্রাপ্ত হয়।

এ ব্যাপারে কেশবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জসীম উদ্দিন বলেন, থানা প্রাঙ্গণের ভেতর পাখির নিরাপদে থাকা ও তাদের খাদ্যের জন্য নানা ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাখির বাসা থেকে ছানা মাটিতে পড়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে আবারও গাছে বাসায় উঠিয়ে দেওয়া হয়। তাছাড়া পাখির খাদ্যের জন্য থানা প্রাঙ্গণের ভেতর পুকুরে চার মণ পোনা মাছ ছাড়া হয়েছে। পানকৌড়ি ও বক এ পুকুর থেকে মাছ শিকার করে খায়। পাখির নিরাপদে থাকার জন্য এবার বিভিন্ন প্রজাতির প্রচুর গাছ রোপণ করা হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

মশিয়ার রহমান। নিজস্ব প্রতিবেদক। কেশবপুর, যশোর