কেশবপুরে ১৭টি ইটভাটার ১২টিই অবৈধ

প্রকাশিত: ৩:৪৬ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৯ | আপডেট: ৩:৪৬:অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৯

মশিয়ার রহমান:
যশোরের কেশবপুরে অবৈধ ইট ভাটায় বায়ুদূষণ হচ্ছে। কেশবপুর উপজেলায় মোট ১৭টি ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে পৌর সদরেই ২টি। এদিকে খান ব্রিকস, কেশবপুর ব্রিকস, রহমান ব্রিকস, গাজি ব্রিকস ও আলম ব্রিকস মোট ৫টি ইটভাটার বৈধ কাগজ পত্র থাকলেও অন্য ১২টি ভাটার পরিবেশের ছাড়পত্রসহ ভাটা নির্মানের সরকারি কোন অনুমতি নেই বলে জানা গেছে।


সোহাগ মাল্টিমিডিয়া এন্ড ট্র্যাভেলস

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, অবৈধ ভাটার মালিকরা স্থানীয় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে তারা বছরের পর বছর তাদের ভাটায় ইট পুড়িয়ে বায়ুদূষণ করে আসলেও দেখার কেউ নেই। এক দিকে সরকার যেমন রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তেমনি এলাকার বায়ুদূষণ দিন দিন বাড়াসহ ফসল উৎপাদনেও এর বিরুপ প্রভাব পড়ছে। সরকারি বিধি অনুযায়ী পৌরসভা সীমানার মধ্যে ইটভাটা নির্মাণে সরকারি ভাবে কোন অনুমতি না থাকলেও ২০১৮ সালে কেশবপুর পৌর সদরের ভোগতি নরেন্দ্রপুরে ঘণবসতিপুর্ণ এলাকায় নতুন করে অবৈধ ভাবে জামান ব্রিকস নামে আরেকটি ইটভাটা নির্মান করেন ওই গ্রামের মমতাজ বেগম। তার ভাটায় ছবি তুলতে গেলে তিনি ছবি তুলতে বাঁধা দেন। অবৈধ জামান ব্রিকস, রোমান ব্রিকস ও সুপার ব্রিকস গত বছর স্থানীয় প্রশাসন বন্ধ করে দিলেও চলতি বছর অনুমতি ছাড়াই আবার তা চালু করা হয়েছে। এদিকে বায়ুদূষন রোধে ভাটার চিপনি ১২০ ফুট উচু করে নির্মাণ করার কথা থকলেও কোন কোন ইট ভাটার মালিক তা ৪০ থেকে ৬০ ফুট উচু করে নির্মান করেছেন। এছাড়া ভাটার চিপনি ভাটার ক্লিনের একপাশে স্থাপনসহ তার ভিতরের অংশে পানি রাখার ব্যবস্থা রাখার নিয়ম থাকলেও তারা তা মানছেন না। পানির ব্যবস্থা রাখলে কার্বন ডাই অক্্রাইড তৈরি কম হয়। এতে পরিবেশ বান্ধব (সাদা) ধোয়া বের হয়। তবে আইনের প্রতি তোয়াক্কা না করে, ভাটার অসাধু ব্যবসায়ীরা তাদের ভাটার চিপনি মাঝখানে স্থাপন করেছেন। এতে বায়ুদূষণ দিন দিন বাড়ছে।


কেশবপুর পৌর শহরের ভোগতি নরেন্দ্রপুর মহল্লায় জামান ব্রিকস, বালিয়াডাঙ্গায় খান ব্রিকস, বায়সা-কালিবাড়ি গাজি ব্রিকস ও গোল্ড ব্রিকস, সন্ন্যাসগাছা বিউটি-১, বিউটি-২, বগা গ্রামে ডি এস বি ব্রিকস, বারুইহাটি গ্রামে রোমান ব্রিকস, মির্জানগরে রহমান ব্রিকস ও আলম ব্রিকস, সাতবাড়িয়ায় সুপার ব্রিকস, গৌরিঘোনায় এস এসবি ব্রিকস, বেগমপুরে রিপন ব্রিকস, জাহানপুরে কেশবপুর ব্রিকস, আগরহাটি গ্রামে হামজা ও প্রান ব্রিকসসহ মোট ১৭টি ইটভাটা রয়েছে। এরমধ্যে ১২টিই অবৈধ। এসব ভাটা গুলি বিদ্যালয়, তিন ফসলের জমি, সরকারি সড়কসহ ঘণবসতিপুর্ণ এলাকায় নির্মাণ করা হয়েছে। এতে ফসলের ক্ষতিসহ কোমলমতি শিশু এবং এলাকার মানুষরা স্বাসকষ্ঠসহ দুষণজণিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ।

ঘটনাস্থল পরিদর্শন কালে অবৈধ ভাটা নির্মাানের ব্যাপারে জানতে চাইলে অধিকাংশ ভাটার মালিক এ ব্যাপারে মুখ খুলতে চাননি। এলাকাবাসী অবৈধ এসব ইটভাটা বন্ধসহ ভাটার মালিকদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্হা নেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। কৃষক মনিরুল ইসলাম বলেন, ভাটার বায়ুদূষণের ফলে কৃষি উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। এসব অবৈধ ভাটা বন্ধ করার জন্য তিনি সরকারের প্রতি দাবী জানান।


কলেজ শিক্ষার্থী জয় বলেন, ভাটার বায়ুদূষণের ফলে স্বাসকষ্টসহ নানান রোগে আক্রান্ত হচ্ছে এলাকাবাসি।
পৌর সদরের মধ্যে অবৈধ ভাটা নির্মানের ব্যাপারে মমতাজ বেগমের নিকট জানতে চাইলে ভাটার ব্যাপারে তার ভাই বক্তব্য দিবেন বলে জানান। রোমান ব্রিকস‘র মালিক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, লাইন্সেস না থাকার কারণে গত বছর ¯হানীয় প্রশাসন আমার ভাটাটি বন্ধ করে দেন। সাগরদাঁড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী মোস্তাফিজুল ইসলাম মুক্ত ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানূর রহমানের অনুমতিপত্র রয়েছে। তাছাড়া ভাটা নির্মানের অনুমতির জন্য সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরে আবেদন করেছি।


কেশবপুর ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি, খান ব্রিকসের মালিক নজরুল ইসলাম খান বলেন, কেশবপুরে ১৭টি ইটভাটা রয়েছে। এরমধ্যে কয়েকটি ভাটার বৈধ কাগজ পত্র থাকলেও অন্য গুলির আবেদন প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মহাদেব চন্দ্র সানা বলেন, কেশবপুরে মোট ১৭টি ইটের ভাটা রয়েছে। এসব ভাটার কারনে পরিবেশ দূষন হওয়ার ফলে ফসল উৎপাদনে ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার নুসরাত জাহান বলেন, আমি এ উপজেলায় সদ্য যোগদান করেছি। তবে কেশবপুরে অবৈধ সকল ইটভাটার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

 

 

সুন্দরবনটাইমস.কম/নিজস্ব প্রতিবেদক/কেশবপুর(যশোর)


আপনার মতামত লিখুন :

নিজস্ব প্রতিবেদক