কেশবপুরে ভেসে গেছে ৪৭টি ঘেরের পাঁচ কোটি টাকার মাছ: প্লাবিত অর্ধশত বাড়ি

প্রকাশিত: ২:৪৭ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ৭, ২০২০ | আপডেট: ২:৪৭:অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ৭, ২০২০

নিজস্ব প্রতিবেদক, কেশবপুর(যশোর):
যশোরের কেশবপুরে বোরো আবাদের লক্ষ্যে জলাবদ্ধ বিলের পানি স্যালো মেশিন দিয়ে নিষ্কাশনের কারণে পশ্চিম বিলখুকশিয়ার ৪৭ টি মৎস্য ঘেরের বেঁড়িবাধ ভেঙে একাকার হয়ে প্রায় ৫ কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে। উপচে পড়া পানি উপজেলার বাগডাঙ্গা ও কালিচরণপুর গ্রামের অর্ধশত বাড়িতে ঢুকে পড়েছে। হরিহর ও আপারভদ্রা নদীতে পাউবোর বেঁড়িবাধের পাশাপাশি শ্রীহরি নদীর নাব্যতা না থাকায় পানি নিষ্কাশন পথ বন্ধ হয়ে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। পানি নিষ্কাশন সম্ভব না হলে চলতি বোরো মৌসুমে প্রায় ৪০ হাজার মেট্রিক টন ধান কম উৎপাদন হবে বলে কৃষকরা আশঙ্কা করছেন।

সোহাগ মাল্টিমিডিয়া এন্ড ট্র্যাভেলস

চলতি বছর পানি নিষ্কাশনের পথ না থাকায় যশোর সদরের সুতিঘাটা, মনিরামপুর ও কেশবপুরের পশ্চিমাংশের ২৭ বিলসহ কেশবপুর উপজেলার ৬ ইউনিয়নের প্রায় ৫০ টি বিল জলাবদ্ধ হয়ে পড়ে। এসব বিলের অতিরিক্ত পানি বিল খুকশিয়ার ডায়েরখালের ৮ ব্যান্ড স্লুইস গেট দিয়ে শ্রী হরিনদীতে নিষ্কাশন হয়ে থাকে। কিন্তু বিল ও খালের তলদেশ থেকে শ্রীহরি নদীর তলদেশ পলিতে উঁচু হওয়ার কারণে পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। এরপরও ওই অঞ্চলের কৃষকরা বোরো আবাদের লক্ষ্যে জলাবদ্ধ বিলের পানি স্যালো মেশিন দিয়ে নিষ্কাশন কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়াও কেশবপুর পৌর এলাকার বিল গলালিয়া, টেপুর বিল, বিল বলধালি, সদর ইউনিয়ন, মঙ্গলকোটের একাংশ, পাঁজিয়া, সুফলাকাটি ও গৌরিঘোনা ইউনিয়নের বুড়–লিয়া, সারুটিয়া, কায়েমখোলা, হাড়িয়াঘোপ, ভেরচি, দশকাহুনিয়াসহ প্রায় ৫০ টি বিল জলাবদ্ধ। এলাকার কৃষকরা বোরো আবাদের লক্ষ্যে বুড়–লিয়া ও পাথরা গেটে স্যালো মেশিন দিয়ে পানি নিষ্কাশন করে বোরো আবাদের চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এসব বিলের পানিও হরিহর ও আপারভদ্রা নদী দিয়ে শ্রীহরি নদীতে নিষ্কাশন হয়ে থাকে। কিন্তু হরিহর ও আপারভদ্রা নদী খননের জন্য পাউবো বাঁধ দিয়ে আটকে রেখেছে। যে কারণে পানি নিষ্কাশন বাধাগ্রস্থ হচ্ছে।

সুফলাকাটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাস্টার আবদুস সামাদ জানান, জলাবদ্ধ বিলের পানি স্যালো মেশিন দিয়ে নিষ্কাশন করার কারণে পানি ডায়েরখাল উপচে পশ্চিম বিলখুকশিয়ায় ঢুকছে। ইতোমধ্যে ৪৭ টি মৎস্য ঘেরের বেঁড়িবাধ ভেঙে একাকার হয়ে গেছে। উপচে পড়া পানিতে সুজিত হালদার, রবিন মন্ডল, বিশ্বনাথ মন্ডল, দীপক মন্ডল, সুকদেব মন্ডল, অমল মন্ডলসহ কমপক্ষে ৪৭ টি ঘের মালিকের ঘেরের বেঁড়িবাধ ভেঙে প্লাবিত হয়ে প্রায় ৫ কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে। পানির চাপে এখনও বাঁধ ভাঙা অব্যাহত আছে। উপজেলার বাগডাঙ্গা ও কালিচরণপুর গ্রামের অর্ধশত বাড়ির উঠানে এখন পানি। এভাবে পানি বাড়তে থাকলে মানুষ চরম ক্ষতির সন্মুখীন হবে। পানির কারণে এসব বিলে এবার বোরো আবাদ হবে না।

বিভিন্ন এলাকা ঘুরে কৃষকদের সাথে আলাপকালে জানা গেছে, শেষ পর্যন্ত পানি নিষ্কাশন সম্ভব না হলে চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেক জমিতেও বোরো আবাদ হবে না। সেক্ষেত্রে গত বছরের চেয়ে প্রায় ৪০ হাজার মেট্রিক টন ধান কম উৎপাদন হবে। বছরের একমাত্র ফসল বোরো আবাদ করতে না পারলে এ অঞ্চলের মানুষকে না খেয়ে দিন কাটাতে হবে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মহাদেব চন্দ্র সানা জানান, চলতি বছর বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ১৫ হাজার হেক্টর জমি। জলাবদ্ধতার কারণে এবার বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে না। শেষ পর্যন্ত পানি নিষ্কাশন সম্ভব না হলে কেশবপুরে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ধান কম উৎপাদন হবে বলে তিনি আশঙ্কা করছেন। উপজেলা সমন্বয় কমিটির সভায় গত ডিসেম্বরের মধ্যে নদীর বাঁধ অপসারন করে পানি নিষ্কাশন করে দেবার প্রতিশ্রুতি দিলেও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা সে প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পারেনি।

পানি সরাও কৃষক বাঁচাও আন্দোলন ও নাগরিক সমাজের নেতা অ্যাডভোকেট আবু বকর সিদ্দিকী বলেন, বিলের পানি নিষ্কাশনে ইতোমধ্যে স্থানীয় ও জেলা প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপি দেয়া হয়। তারা পানি নিষ্কাশনে ব্যর্থ হয়েছেন। যার কারণে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে না। কৃষকরা উদ্বৃত্ত ধান উৎপাদন থেকে বঞ্চিত হবেন। পানি নিষ্কাশন নিয়ে যে কোনো সময় কৃষক ফুঁসে উঠতে পারে।

সুফলাকিটি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মুনজুর রহমান বলেন, গত এক সপ্তাহ ধরে পাঁজিয়া ও সুফলাকাটি ইউনিয়নের ১০ থেকে ১২টি বিলের পানি নিষ্কাশন করা হচ্ছে ২৫টি স্যালো মেশিন দিয়ে। কিন্তু হরিহর নদীতে বাঁধ থাকায় পানি নিষ্কাশন বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। আপারভদ্রা দিয়ে পানি শ্রীহরি নদীতে নিষ্কাশন হচ্ছে না।
এ ব্যাপারে কেশবপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মুন্সি আছাদুল্লাহ বলেন, ২৭ বিলের পানি ডায়ের খাল হয়ে শ্রীহরি নদীতে নিষ্কাশন হয়ে থাকে। কিন্তু বিল ও খালের চেয়ে ওই নদীর তলদেশ উঁচু হওয়ায় পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। যে কারণে ডায়ের খালের পানি উপচে পড়ছে। খনন কাজ সম্পূর্ণ না হলে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়।

 

সুন্দরবনটাইমস.কম/মশিয়ার রহমান

 

 


আপনার মতামত লিখুন :

নিজস্ব প্রতিবেদক