অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে সাগরদাঁড়িতে মধু কবির প্রাচীন নিদর্শন দত্তবাড়ি: ফেরৎ গেছে কোটি টাকা !

প্রকাশিত: ৮:৩২ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ৬, ২০২০ | আপডেট: ৮:৩২:অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ৬, ২০২০

মশিয়ার রহমান:
অমিত্রাক্ষর ছন্দ্রের প্রবর্তক মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের স্মৃতি বিজড়িত কপোতাক্ষ তীরের যশোরের কেশবপুরের সাগরদাঁড়ির দত্তবাড়ির প্রাচীন নিদর্শনগুলো দীর্ঘ ২০ বছরেও পুণসংস্কার না হওয়ায় জানালা, দরজা, সংরক্ষিত আসবাবপত্রগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এ মুহূর্তে ছোট-বড় ৫টি স্থাপনা, মন্দির ও পুকুর ঘাট সংস্কার করা জরুরী হয়ে পড়েছে।

সোহাগ মাল্টিমিডিয়া এন্ড ট্র্যাভেলস

অপর দিকে, অতিথিদের বিশ্রামের জন্যে নির্মিত ডাক বাংলোটি এক যুগ আগে ভেঙে ফেলা হলেও তা দীর্ঘদিনেও নির্মাণ করা হয়নি।এরপরও কর্তৃপক্ষের অবহেলায় কবির জন্মস্থান সাগরদাঁড়িতে পর্যটন আকর্ষণীয় স্থান সমূহের জন্যে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড কর্তৃক বরাদ্দকৃত ১ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ সম্পাদন না হওয়ায় সমুদয় অর্থ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ফেরৎ গেছে। ফলে মধু পল্লী উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হওয়ায় ভক্তদের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। মহাকবি মাইকেল মধু সূদন দত্ত ১৮২৪ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ জানুয়ারী যশোরের কেশবপুর উপজেলার সাগরদাঁড়ি গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। বাংলা ভাষায় সনেট রচয়ীতা এ কবি ১৮৭৩ সালের ২৯ জুন কলকাতায় মারা যান।

কেশবপুর উপজেলা সদর থেকে সাগরদাঁড়ির দূরত্ব ১৩ কিলোমিটার। পিচের রাস্তা হলেও রাস্তাটি প্রায় ১ যুগ সংস্কার না হওয়ায় খানা-খন্দের কারণে যাতায়াত করতে গিয়ে মধু ভক্তদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়। মধুকবির জমিদার বাড়িটি ৪ একর ৩৩ শতক জমির ওপর অবস্থিত। সালে পাকিস্থান সরকার কবি ভক্তদের থাকার জন্যে চার শয্যা বিশিষ্ট একটি রেস্ট হাউজ বানিয়েছিল। এই রেস্ট হাউজের একটি রুমেই পাঠাগার বানানো হয়। ১৯৬৬ সালে কবির বাড়িটি প্রতœতত্ত্ব বিভাগের কাছে সরকার ন্যাস্ত করে। কবির জন্মস্থানখ্যাত ঘরটি এখন আর নেই। কবির বাড়ি সংলগ্ন আবক্ষমূর্তিটি কলকাতার সেন্ট্রল কো-অপারেটিভ ব্যাংক স্থাপন করে দেয়। প্রতœতত্ত্ব বিভাগ জমিদার বাড়ি, পুকুর পুণ সংস্কারসহ পুরো এলাকাটি পাঁচিল দিয়ে ঘিরে ফেলে। যে বজরায় কপোতাক্ষ নদীর কুলে কবি স্বস্ত্রীক সাতদিন অবস্থান করেছিলেন। সেখানে একটি পাথরে খোদাই করে লেখা আছে ‘শতত হে নদ তুমি পড় মোর মনে’। এই জায়গাটি বিদায় ঘাট নামে খ্যাত। ১৯৯৮ সালে এর পুণসংস্কার কাজ শুরু হয়। ২০০১ সালে কাজ শেষ হয়। এরপর আর সংস্কার হয়নি। দীর্ঘ দিনেও দত্তবাড়ি, মন্দিরসহ প্রাচীন নিদর্শন গুলো পুণ সংস্কার না হওয়ায় এর জানালা, দরজা ভেঙ্গে যাচ্ছে। ছাদেও ফাটল ধরেছে। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে সংরক্ষিত আসবাবপত্র গুলো। ছোট-বড় ৫টি স্থাপনা, মন্দির ও পুকুর ঘাট এ মুহূর্তে সংস্কার করা জরুরী হয়ে পড়েছে। মধু পল্লীর জায়গা স্বল্পতার কারণে গাড়ি পার্কিং এর ব্যবস্থাসহ পিকনিক কর্ণার নেই। স্যুভিনির সপ, ক্যাফেটোরিয়া, পিকনিক পার্টির জন্য ভালো মানের টয়লেট, ফ্যাসেলিটি, দর্শনার্থীদের বসার জন্যে চেয়ার, পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা ও বিশ্রামাগার নেই। এদিকে মধু মেলায় আগত ভিআইপিদের বিশ্রামের জন্যে নির্মিত ডাক বাংলোটি ২০০৬ সালে ভেঙ্গে ফেলা হলেও আজও তা নির্মাণ করা হয়নি। ফলে দূর-দূরান্ত থেকে আগত অতিথিদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। সাগরদাঁড়িতে প্রচুর দর্শনার্থীদের আগম ঘটে থাকে। গত ২০১৮ সালের ১০ জুন বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিখিল রঞ্জন রায় স্বাক্ষরিত বিটিবি( যশোর-পর্যটন/২০১৮(৬৪২)/১৯৮০ নং স্মারকে সাগরদাঁড়ির পর্যটন আকর্ষণীয় স্থান উন্নয়ন কাজের জন্যে ১ কোটি টাকা অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়। এ টাকায় মহাকবির আধুনিক ভাস্কর্য, সমাধি লিপি প্রতি স্থাপণ, অনশন স্থলে কাঠ বাদাম গাছের শ্রীবৃদ্ধি, বিখ্যাত কবিতা অবলম্বনে টেরা কোটা দিয়ে কাহিনী চিত্রওয়াল ও ওয়াস ব্লক নির্মাণের জন্যে ওই বরাদ্দ দেয়া হয়। কিন্তু সমুদয় অর্থই ফেরৎ যায়। মধু পল্লী উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হয়। দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করতে এই মুহূর্তে কবির বাস গৃহসহ ৫টি ভবন সংস্কার, স্যাঁত সে্যঁতেভাব দূরীকরণে রঙ করা জরুরী হয়ে পড়েছে।

সাগরদাঁড়িতে মধুসূদন সংস্কৃতি বিশ্ববিদ্যালয় চাই আন্দোলনের নেতা অ্যাডভোকেট আবু বকর সিদ্দিকী বলেন, মধুকবির জন্ম সাগরদাঁড়িতে হলেও জীবনের বেশীর ভাগ সময় কেটেছে ফ্রান্স ও ভারতে। তাই তিনি শুধু বাংলাদেশের কবি নয়। আন্তর্জাতিক ভাবে তাকে তুলে ধরার জন্যে সাগরদাঁড়িতে মধুসূদন সংস্কৃতি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই। প্রতি বছর শীতের আগমনের শুরুতে কবির প্রতি জাগে ভক্তদের ভালোবাসা। তাই কবির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সাগরদাঁড়িতে পর্যটকদের আগমন ঘটে থাকে। আগামী ২২ জানুয়ারী থেকে সাংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে সাগরদাঁড়িতে বসছে ৭ দিনব্যাপী মধুমেলা। প্রতিদিন স্কুল, কলেজের শিক্ষার্থীরা সাগরদাঁড়িতে আসছে বনভোজনে। ফলে মুখোরিত হয়ে উঠতে শুরু করেছে মধুকবির জন্মভূমি সাগরদাঁড়ি। প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত মধুপল্লীর দত্তবাড়ির দায়িত্বে থাকা কাস্টডিয়ান ফজলুল করিম জানান, মধুমেলায় প্রতি বছর ৮০ থেকে ৯০ হাজার পর্যটকের আগমন ঘটে থাকে। এতে বছরে ১২ থেকে ১৪ লাখ টাকার রাজস্ব আয় হয়। নানা কারণে পর্যটকরা এখানে আসতে আগ্রহী হয় না। এখানে যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ নানাবিধ সুযোগ সুবিধার অভাব রয়েছে। তবে মধু পল্লীতে ইতোমধ্যে ছাদ বাগান ও পাখির বাসা স্থাপণ করা হয়েছে। দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করতে মাইকেলের কবিতা পাথর গুলোর পাশে স্থাপণসহ‘সময় রেখা’শিরোনামে বঙ্গবন্ধুর জীবনী সংম্বলিত প্লাকার্ড বসানো হয়েছে।

 

সুন্দরবনটাইমস.কম/নিজস্ব প্রতিবেদক/কেশবপুর(যশোর)

 


আপনার মতামত লিখুন :

নিজস্ব প্রতিবেদক