কেশবপুরে নদীর বাঁধে ৬০টি বিলে স্থায়ী জলাবদ্ধতা: শঙ্কিত বোরো আবাদ

প্রকাশিত: ৫:৩৮ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ৩০, ২০১৯ | আপডেট: ৭:২২:অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ৩০, ২০১৯

মশিয়ার রহমান :
যশোরের কেশবপুরে খননের নামে নদীতে বাঁধ দেয়ায় ৮ ইউনিয়নের ৬০ টি বিলে জলাবদ্ধতা স্থায়ী আকার ধারণ করেছে। ফলে বীজতলা তৈরীর উপযুক্ত সময় হলেও এখনও বিল সংলগ্ন এলাকার কৃষকরা বোরো বীজ তলা তৈরী করতে পারেনি। ফলে বোরো আবাদ নিয়ে কৃষকরা শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। এনিয়ে কৃষকদের মাঝে তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে। এ অবস্থায় পানি নিষ্কাশনের দাবিতে কৃষকরা সভা, সমাবেশ অব্যাহত রেখেছে।


সোহাগ মাল্টিমিডিয়া এন্ড ট্র্যাভেলস

কেশবপুর উপজেলার উত্তর-দক্ষিণ ও পশ্চিম এলাকার ৮ ইউনিয়নে কমপক্ষে ছোট বড় ৬০টি বিল রয়েছে। এরমধ্যে বিল গরালিয়া, টেপুর বিল, বলধালী, বাকাবরশি বিল, হাবাসপোল বিল, খতিয়াখালি বিল উল্লেখযোগ্য। এসব বিলের পানি হরিহর ও বুড়িভদ্রা নদী দিয়ে আপারভদ্রায় নিষ্কাশন হয়ে থাকে। এ ৩টি নদী পলীতে ভরাট হওয়ার কারণে গত ২০১৬ ও ১৭ সালে পর পর ২ বার ভয়াবহ বন্যা হয়। বন্যায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দীসহ কোটি কোটি টাকার ফসলহানি ঘটে। এ সমস্যা নিরসনে চলতি বছর ওই ৩ নদীসহ সংযোগ খাল খননে সাড়ে ৪৯ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ পানি উন্নয়ন বোর্ড বাস্তবায়ন করছে। এ সময় খননের নামে নদীতে বাধ দেয়ায় পানি নিষ্কাশন পথ বন্ধ হয়ে বিলগুলিতে স্থায়ী জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। কোথাও বীজতলা তৈরীর জায়গা নাই। যে কারণে কৃষকরা পানি নিষ্কাশনের জোর দাবি জানিয়ে আসছে।


কন্দর্পপুর গ্রামের কৃষক আল হেলাল জানান, নদীর তলদেশ থেকে বিলের তলদেশ আরও নিচু। যে কারণে প্রায় ১ যুগ ধরে পৌরসভা, সদর, বিদ্যানন্দকাটি, মঙ্গলকোট ও পাঁজিয়া ইউনিয়নের অধিকাংশ বিল এলাকার কৃষকদের স্যালো মেশিন দিয়ে ২০ থেকে ২৫ দিন ধরে পানি নিষ্কাশন করে বিলে বোরো আবাদ করতে হয়। নভেম্বরের শেষ সপ্তাহ বোরো বীজতলা তৈরীর উপযুক্ত সময়। অথচ এখনও বিলে অগভীর পানি রয়েছে। এ অবস্থায় চলতি বছর বোরো আবাদ হবে কিনা তা নিয়ে কৃষকরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।


মজিদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবীর পলাশ বলেন, নুরানিয়া ব্রিজের পাশে তরুর খালের মুখে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাধ দেয়ার কারণে বাগদহা, দেউলী, আটন্ডা, তেঘরী, শ্রীফলা, প্রতাপপুর, কাবিলপুর, হাড়িয়াঘোপ, ও পরচক্রা বিলে স্থায়ী জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। যে কারণে গত বছর বোরো আবাদ হয়নি। চলতি বছরও বিলগুলিতে অগভীর পানি রয়েছে। পানি না সরালে এ বছরও বোরো আবাদ সম্ভব হবে না।


বিল গরালিয়া পানি নিষ্কাশন কমিটির সভাপতি মজিবার রহমান চাঁন বলেন, হরিহর, বুড়িভদ্রা ও আপারভদ্রা নদীতে ৫টি বাধ দেয়ার কারণে বিলের পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। যে কারণে ২৮ নভেম্বর (বৃহস্পতিবার) সন্ধ্যায় পানি সরানোর দাবিতে কন্দর্পপুর ঈদগাহ মাঠে ১০ গ্রামের শত শত কৃষকের উপস্থিতিতে ঘের মালিকদের নিয়ে কৃষক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আলাউদ্দীন, পানি নিষ্কাশন কমিটির সাধারণ সম্পাদক নওশের আলী, ঘের মালিক আবু সাইদ লাভলু, সাবেক মেম্বার মুনছুর আলী, জয়দেব দাস, প্রভাষক তুহিন আলম, জমির মালিক হারুনর রশিদ প্রমুখ। সমাবেশ থেকে জরুরীভাবে পানি সরানোর দাবি জানিয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসক ও ইউএনও বরাবর স্মারক লিপি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এর আগে হাবাসপোল ঈদগাহ মাঠে মধ্যকুল, হাবাসপোল, হাসাডাঙ্গা গ্রাম সংলগ্ন বলধালী বিলের পানি সরানোর দাবিতে কৃষকরা সমাবেশ করেছে।


উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মহাদেব চন্দ্র সানা বলেন, চলতি বছর ১৬ হাজার ২’শ হেক্টর জমি বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এখন বীজতলা তৈরীর উপযুক্ত সময়। গত মাসিক সমন্বয় কমিটির সভায় বোরো আবাদের লক্ষ্যে বিলের পানি সরানোর দাবি জানানো হয়েছে। পানি না সরলে কৃষকরা বীজতলা তৈরী করতে পারবে না।

এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মুন্সি আছাদুল্লাহ বলেন, কৃষকদের ধান লাগানো যেমন জরুরী, তেমনি নদী খননও জরুরী হয়ে পড়েছে। নদীতে কোন বাধ নেই। আপারভদ্রা উচু হওয়ার কারণে পানি সরছে না। তবে মৌসুমের শেষ সময়ে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ায় একটিু সমস্যা হয়েছে। খুব দ্রুত পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা করা হবে।

 

 

 

সুন্দরবনটাইমস.কম/নিজস্ব প্রতিবেদক/কেশবপুর(যশোর)


আপনার মতামত লিখুন :

নিজস্ব প্রতিবেদক