কেশবপুরে অবৈধভাবে সুপার ব্রিকসে রাতের আধারে পোড়ানো হচ্ছে ইট

প্রকাশিত: ১০:০৭ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১, ২০২০ | আপডেট: ১০:০৭:অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১, ২০২০

নিজস্ব প্রতিবেদক, কেশবপুর (যশোর):
হাইকোর্টের নির্দেশে যশোরের কেশবপুর উপজেলার সাতবাড়িয়া বাজারের ১০০ গজের ভেতরে উচ্চ ফলনশীল কৃষি জমিতে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা সুপার ব্রিকস ইট ভাটার সকল প্রকার কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়। কিন্তু ওই ভাটা মালিক প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে রাতের আধারে ভাটায় ইট পোড়ানো অব্যাহত রেখেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়া হাইকোর্ট ইট ভাটাটি বর্তমান স্থান থেকে সরিয়ে দিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়ে যশোর জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ প্রশাসনের একাধিক দপ্তরে গত ৭ জানুয়ারী পত্র দিলেও তা আজও উপেক্ষিত রয়েছে।
ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৩ বলছে, আবাসিক এলাকা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাট-বাজার ও ফসলি জমির এক কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না। এছাড়া কোন সড়ক ও মহাসড়ক থেকে অর্ধকিলোমিটার দূরাত্বে ইটভাটা স্থাপন করতে হবে। কিন্তু সাতবাড়িয়া বাজারের পাশে কেশবপুর সরসকাটি সড়কের মাত্র ৫০ গজ দূরে কৃষি জমিতে স্থাপিত সুপার ব্রিকস নামের ইটভাটাটির পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ও জেলা প্রশাসনের কোন লাইসেন্স নেই। যে কারণে গত বছর কেশবপুরের তৎকালিন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানূর রহমানের নেতৃত্বে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ, র‌্যাব ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা অভিযান চালিয়ে সুপার ব্রিকসসহ পৌর এলাকার ভোগতী মোড়ের জামান ব্রিকস ও কাস্তা চৌরাস্তা মোড়ে রোমান বিকসের সকল কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়।

সোহাগ মাল্টিমিডিয়া এন্ড ট্র্যাভেলস

এদিকে, চলতি বছর ওই ৩ ভাটার মত কেশবপুরে স্থাপিত ১৬ ভাটার কোন ইট উৎপাদনের অনুমোদন নেই। এরপরও প্রশাসনকে ম্যানেজ করে সকল ভাটা মালিক ইট উৎপাদন অব্যাহত রেখেছেন। এসব ভাটার চারিপাশে উচ্চ ফলনশীল কৃষি জমি। ভাটার কারণে নষ্ট হচ্ছে রাস্তাঘাট। ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া, শস্যহানিসহ পরিবেশ রয়েছে হুমকির মুখে। এ কারণে ভাটা স্থাপনের বিরুদ্ধে এলাকাবাসি বিভিন্ন স্থানে অভিয্গো দেয়াসহ আন্দোলন সংগ্রাম করে আসছিলেন। এরমধ্যে সাতবাড়িয়া এলাকার কৃষকরা প্রশাসনের সহযোগিতা না পেয়ে ২০১৮ সালের জানুয়ারী মাসে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) দারস্থ হয়। বেলা কর্তৃপক্ষ ভাটার সকল কার্যক্রম বন্ধের জন্যে ভাটার মালিক ফারুকুল ইসলামকে লেগাল নোটিস প্রদান করেন। কিন্তু ভাটা মালিক এ লেগাল নোটিসের কোন তোয়াক্কা না করে জোরপূর্বক ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে ২০১৮ সালের ৪ ফেব্রুয়ারী গভীর রাতে ভাড়াটে সন্ত্রাসী এনে ভাটার চারিপাশে কাঁটা তারের বেড়ায় বিদ্যুতায়িত করে ভাটায় আগুন দিয়ে ইট উৎপাদন শুরু করেন। এক পর্যায়ে বেলা এলাকাবাসির পক্ষে ওই ভাটার বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট পিটিশন দাখিল করে। যার নং- ৪৭৯৩/১৮।

২০১৮ সালের ৯ এপ্রিল শুনানী শেষে হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চ সুপার ব্রিকস ইটভাটাটি বর্তমান স্থান থেকে সরিয়ে দিতে নির্দেশ দিয়ে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ প্রশাসনের একাধিক দপ্তরে পত্র দেয়। আদালতের এমন স্পষ্ট নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও ভাটা মালিক ফারুকুল ইসলাম চলতি বছর তার অবৈধ ইট ভাটায় ইট উৎপাদন শুরু করে। এ সময় এলাকাবাসি আবারও বেলার দারস্থ হয়। এ কারণে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ চলতি বছরের ৬ নভেম্বর ওই ইট ভাটার কার্যক্রম বন্ধ রাখা সংক্রান্ত নির্দেশনা পরবর্তী ৬ মাস অর্থাৎ ২০২০ সালের মে পর্যন্ত বর্ধিত করে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের নির্দেশে প্রশাসন ১৫ দিন আগে ওই ভাটার সকল কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়।

এলাকাবাসির অভিযোগ, ভাটা মালিক ফারুকুল ইসলাম প্রতিদিন রাত ৯টায় তার ভাটায় আগুন দিচ্ছে এবং ভোরে আগুন বন্ধ করা হচ্ছে। প্রশাসন বিষয়টি দেখেও না দেখার ভান করছে। এ ব্যাপারে সুপার ব্রিকসের মালিক ফারুকুল ইসলাম বলেন, প্রশাসন বন্ধ করে দেয়ার পর থেকে ভাটার সকল কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। আমি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছি। তাই যে ইটগুলি কাটা আছে তা পোড়ানোর জন্যে সকলের সহযেগিতা কামনা করছি।
এ ব্যাপারে উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) এনামুল হক বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশনা পেয়ে ওই ভাটার সকল কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। নতুন করে চালানো হচ্ছে এমন অভিযোগ পেয়ে ত্রিমোহিনী ইউনিয়ন তহশীলদারকে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছিল।

সুন্দরবনটাইমস.কম/মশিয়ার রহমান


আপনার মতামত লিখুন :

নিজস্ব প্রতিবেদক