করোনারকালে কেশবপুরে ঝরে পড়েছে ১১২৪ শিক্ষার্থী, শ্বশুর বাড়িতে ৪৪২ কিশোরী

প্রকাশিত: ১:৪১ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১, ২০২১ | আপডেট: ১:৪১:অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১, ২০২১

যশোরের কেশবপুরে করোনাকালে মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ১ হাজার ১২৪ জন শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে। এর মধ্যে ৪৪২ জন শিক্ষার্থী বাল্য বিয়ের শিকার হয়ে তারা এখন শ্বশুর বাড়িতে অবস্থান করছে। এছাড়াও লেখাপড়া বন্ধ করে ২৪০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে শিশুশ্রমে। তবে অনিয়মিত ও ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে নিয়মিত ফেরানোসহ নতুন করে কোন ছাত্রী যেন বাল্য বিয়ের শিকার না হয় সে বিষয়ে কাজ করে যাচ্ছে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস।

সোহাগ মাল্টিমিডিয়া এন্ড ট্র্যাভেলস

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস জানায়, এ উপজেলায় শিক্ষা নীতিমালা অনুযায়ী ৩০ থেকে ৪০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থাকার কথা। সেখানে প্রয়োজনের তুলনায় অপরিকল্পিতভাবে ৭২টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৫২টি মাদরাাসা ও ১১টি কলেজ গড়ে উঠেছে। ফলে অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী সঙ্কট রয়েছে। এরমধ্যে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ১৮ হাজার ২৮৮ জন, মাদরাসায় ৭ হাজার ৫৮৭ জন ও কলেজে ৪ হাজার ৭৪৪ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত রয়েছে। মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদরাসার ছাত্রীরা সপ্তম থেকে অষ্টম শ্রেণি উত্তীর্ণ হবার পর অনেক গরীব পরিবারের মেয়েরা বাল্য বিয়ের শিকার হচ্ছে। আবার অভিভাবকদের সচেতনতার অভাবে সংসারের প্রয়োজনে অনেক শিক্ষার্থী শিশু শ্রমের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। এ অবস্থা নিরসনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার্থী সংগ্রহে নানা কৌশল অবলম্বন করে থাকে। শিক্ষকদের ইউনিফরম ও বেতন ফ্রির ঘোষণার পরও অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিশেষ করে মাদরাসাগুলোতে চরম শিক্ষার্থী সঙ্কট রয়েছে।

এদিকে করোনার কারণে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে সারাদেশের ন্যায় এ উপজেলার সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অদ্যাবধি বন্ধ রয়েছে। ফলে শ্রেণিকক্ষের পাঠদান না থাকায় শিক্ষার্থীরা শিশু শ্রম, তথ্য প্রযুক্তির অপব্যবহার, অসৎ সঙ্গসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডের দিকে ঝুঁকে পড়ছে। হতদরিদ্র, মধ্যবিত্ত পরিবারের অনেক মেধাবী ছাত্রীরা হচ্ছে বাল্য বিয়ের শিকার। বাল্য বিয়ের কারণে বিবাহ বিচ্ছেদ ও মামলার হার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার প্রভাব পরিবার থেকে সমাজে পড়ছে। এতে শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার পাশাপাশি অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীর অভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। শিক্ষকদেরও বিষয়ভিত্তিক অভিজ্ঞতার ঘাটতি দেখা দিচ্ছে।
উপজেলার মধ্যকুল গ্রামের মুনছুর রহমান জানান, তার ছেলে ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র। করোনার কারণে স্কুল বন্ধ থাকায় তার ছেলে বিপথগামী হয়ে যাচ্ছিলো। এখন তার ছেলে মৎস্য ঘেরে শ্রম দিচ্ছে। সে এখন প্রতিদিন ২০০ টাকা আয় করে থাকে। একাধিক শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ভাবে শ্রম দিয়ে চলেছে।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক ও কর্মচারী কল্যাণ সমিতির সভাপতি ও কানাইডাঙ্গা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুস সামাদ বলেন, ‘আমরা স্ব স্ব বিদ্যালয়ের শিক্ষক, ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ও এলাকার সচেতন মানুষদেরকে নিয়ে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে ফেরাতে চেষ্টা করছি।

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল জব্বার বলেন, গত ২৪ অক্টোবর থেকে নভেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যেসব শিক্ষার্থী অনিয়মিত ও হাজির হচ্ছে না তাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে শ্রেণি কক্ষে ফেরাতে উদ্ধুদ্ধকরণ কর্মসূচি চলছে। বছর শেষে প্রাথমিকে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের তালিকাটি প্রকাশ করা হবে।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সেভাবে যোগাযোগ রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। বর্তমান প্রতিষ্ঠান প্রধান ও অভিভাবকদের সঙ্গে মতবিনিময় করে শিক্ষার্থীদের ক্লোজ মনিটরিং করা হচ্ছে। যারা অনিয়মিতভাবে যাতায়াত করছে তাদেরকে নিয়মিত করতে শিক্ষকদেরও বাড়ি বাড়ি যাওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যাতে করে কোন শিক্ষার্থী ঝরে না পড়ে এবং বাল্য বিয়ের শিকার না হয়।


আপনার মতামত লিখুন :

মশিয়ার রহমান। নিজস্ব প্রতিবেদক। কেশবপুর, যশোর