কপোতাক্ষের ভাঙ্গনকুল রক্ষা বাঁধে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে নেমেছে দুদক  

প্রকাশিত: ৮:২৬ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২২, ২০২০ | আপডেট: ৮:২৬:অপরাহ্ণ, আগস্ট ২২, ২০২০
সাতক্ষীরা তালার কপোতাক্ষ পাড়ে বালিয়া ভাঙ্গনকুলে অপরিকল্পিত নির্মানাধীন বাঁধ
প্রায় ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে কপোতাক্ষ পাড়ের তালা উপজেলার বালিয়ায় ভাঙ্গনকুল রক্ষা বাঁধে ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়মের  অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্তে নেমেছে দুদক। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) খুলনা কার্যলয় স্বাঃ নং ০০,০১,৮৭০০,৭৩২,০১,০৬১,১৯  মোতাবেক গত ১৮ আগষ্ট থেকে ২০ আগষ্ট ৩ দিন সরেজমিনে পরিমাপ সহ তদন্ত করেছেন কর্মকর্তারা । 
 
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানাযায়,  তালা উপজেলার বালিয়া ভাঙ্গনকূল টেকসই ক্ষুদ্রাকার পানি সম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের প্রায় ৪ কোটি ৮২ লাখ ২৩ হাজার ১৯১ টাকার কাজে ব্যাপক দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগে ওঠে। প্রকল্পে কোন রকম দায়সারা ভাবে কাজ করে প্রকল্প সম্পন্ন করতে যাচ্ছে সেখানকার কথিত বালিয়া ভাঙ্গনকূল পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিমিটেড। 
 
জানাযায়, ২০১৮ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি পানি সম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের ৪ কোটি ৮২ লাখ ২৩ হাজার ১৯১ টাকা ব্যয়ে উপজেলার বালিয়া, ডুমুরিয়া, শাহাজাতপুর ও খেশরা এলাকার বেড়িবাঁধের ভাঙ্গনরোধ ও জলাবদ্ধতা দূরীকরণে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ও ৫২ টি এলসিএস দলের অধিনে ১১০০ শ্রমিকের ৪ মাসের মধ্যে টেকসই প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়। যার মধ্যে ১২ কিঃমিঃ ভেড়িবাঁধ এবং ৭.৫ কিঃমিঃ খাল খননের কাজ ছিলো। এছাড়া ঠিকাদারের মাধ্যমে ৩টি রেগুলেটর, ৪টি পাইপ স্লুইস এবং সমিতির অফিস ঘর নির্মাণ কাজ উল্লেখ করা হয়।
 
যেটি বাস্তবায়নে বালিয়া ভাঙ্গনকূল (এসপি নং-৬১০০১) সাব প্রজেক্ট হাতে নেন। তবে যেটুকু বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে তা অপরিকল্পিত এবং টেকসই না হওয়ায় সন্তুষ্ট নন সংশ্লিষ্ট দপ্তর সহ স্থানীয় এলাকাবাসী। ওয়ার্ক ওয়ার্ডার অনুযায়ী স্থানীয় শ্রমিক দ্বারা সিড়ি আকারে খালের মাটি দুরে ফেলার কথা থাকলেও স্বল্প খরচে স্কেভেটর মেসিন দিয়ে যেন তেন ভাবে কেটে খালপাড়ে রাখা হয়েছে। আবার কাজ সম্পন্ন না হলেও কাজের বিপরীতে ৯০ শতাংশ টাকা উত্তোলিত করেছেন সমিতির সভাপতি আমিনুল ইসলাম। কিন্তু  কাজে নিয়োজিত শ্রমিকসহ সমিতির এলসিএস দলের বিল পরিশোধ না করে নিজেই আত্নস্বাতের পায়তারা করছেন সভাপতি আমিনুল ইসলাম,এমন অভিযোগ করেন এলসিএস দলের সদস্যরা।   
 
অভিযোগে প্রকাশ, প্রকল্প বাস্তবায়নে নথি নং-৪৬.০২.০০০০.১৪.০০৩.১৭.৩২০ এর অধিকাংশ শর্ত পূরণ করেনি প্রকল্প বাস্তবায়ন বালিয়া ভাঙ্গনকূল পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিমিটেড। বিশেষ করে পাবসস কতৃক গঠিত মান নিয়ন্ত্রণ উপ-কমিটি উপ-প্রকল্পের গুণগতমান গাইড লাইন অনুযায়ী তদারকি ও অবকাঠামো গত বাস্তবায়নে যথাযথভাবে গুণগতমান নিয়ন্ত্রনে  নজরদারি ছিলনা প্রকল্পে।
 
এছাড়া নথি নং-৪৬.০২.০০০০.১৪.০০৩.১৭.৩২১ এর শর্তানুযায়ী এলসিএস দ্বারা মাটির কাজ বাস্তবায়ন, অর্থ প্রাপ্তি সাপেক্ষে পূর্ত কাজের বিল পরিশোধ, ডিজাইন ও স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী বাঁধ ও খালের মাটি কাজের টপ,বটম,হাইট, এবং স্লোপ,রেফারেন্স লাইন এর কাজ বাস্তবায়ন, ডিজাইনের বাইরে কাজ না করাসহ বিভিন্ন শর্ত থাকে।
 
এদিকে বালিয়া ভাঙ্গনকুল কাগুজে উপ-প্রকল্প বাস্তবায়নের পরও আশংকামুক্ত নয় ঐ এলাকা। তবে সমিতির (এলসিএস) আমিনুল ইসলঅমহ একাংশের দাবি, ১২ কিঃমিঃ ভেড়িবাঁধ নির্মাণ হওয়ায় তারা সুফল ভোগ করতে শুরু করেছেন। অন্যদিকে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে এলসিএস গ্রুপের একটি অংশ খুশী হলেও অপর বড় অংশটির পাশাপাশি খুশী হতে পারেনি সাধারণ এলাকাবাসী।
 
 জোনা খাল ২ নং এলসিএস দলের মফিজুল মোড়ল জানান, তাদের দলের ২২ জন শ্রমিক ১ বছর আগে সাড়ে তিন লক্ষ টাকার কাজ শেষ করেছে। অথচ টাকা পেয়েছে মাত্র দেড় লক্ষ। 
 
বাঁধ নির্মাণ ৪ নং এলিএস এর সভাপতি বাবলুর রহমান শেখ জানান, তার দল এক বছর আগে ৪.৫ লক্ষ টাকার কাজ শেষ করলেও এ পর্যন্ত মাত্র দেড় লক্ষ টাকা পেয়েছে। আরও কয়েকজন এলসিএস দলের সভাপতি ও সম্পাদক একই অভিযোগ করেন। এনিয়ে এলাকাবাসীর একাংশের দাবি,প্রকল্পে এলসিএস দলগুলোর মাধ্যমে ঝুঁড়ি-কোদাল দিয়ে মাটি কর্তনের কথা থাকলেও মাটি কর্তন ও বাঁধ নির্মাণে ব্যবহৃত হয়েছে স্কেভেটর।
 
এ প্রকল্পের মূল উদ্যোক্তা বালিয়া ভাঙ্গনকুল পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিমিটেড এর সভাপতি আমিনুল ইসলাম জানান, ৫২ টি এলসিএস দলের মধ্যে ৪৪ টি দল জুন ২০১৮ এরমধ্যে তাদের কাজ শতভাগ সম্পন্ন করেছে। 
 
তালা উপজেলা এলজিইডি’র সাবেক প্রকৌশলী কাজী আবু সাঈদ মোঃ জসিম জানান, সরেজমিন গিয়ে কাজের অনেক ত্রুটি পাওয়া যায়। যে কাজ গুলো সিডউল’এ থাকার পরেও করা হয়নি, তার বিল আমি দেয়নি।
 
তালা উপজেলা এলজিইডি’র বর্তমান প্রকৌশলী আব্দুল মজিদ মোল্লা জানান, অনিয়মের অভিযোগ তদন্তকারী কর্মকর্তাদের সাথেই সরেজমিন এসেছি, প্রকল্প বাস্তবায়ন কালীন সময়ে আমার কর্মস্থল এখানে ছিলো না বিধায় বেশী কিছু বলতে পারবো না। 
 
এ বিষয়ে সাতক্ষীরা এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী নারায়ণ মজুমদার ওয়ার্ক ওয়ার্ডার অনুযায়ী কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে দাবী করলেও এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কিছু ত্রুটি তো হয়েছে।
 
এ ব্যাপারে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) খুলনা অঞ্চলের উপ-সহকারী পরিচালক  মোঃ ফয়সাল কাদের জানান, অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ থাকায় সরেজমিন পরিমাপ করা হয়েছে, তদন্ত চলছে। তদন্ত রিপোর্ট দেয়ার পরে সব জানতে পারবেন।

আপনার মতামত লিখুন :

নিজস্ব প্রতিবেদক। তালা, সাতক্ষীরা