রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি বন্ধ : হাইকোর্ট

প্রকাশিত: ৯:০৭ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২৫, ২০১৯ | আপডেট: ৯:০৭:অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২৫, ২০১৯

ডেক্স রিপোর্ট:

সোহাগ মাল্টিমিডিয়া এন্ড ট্র্যাভেলস

রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ বিক্রি বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আদালতের এই নির্দেশ পাওয়ার দুই দিনের মধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে এ বিষয়ে সার্কুলার জারি করে দেশের সকল জেলা প্রশাসক ও সিভিল সার্জনকে পাঠাতে বলা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

এর আগে গতকাল সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ রিট দায়ের করেন।

এ বিষয়ে ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন বলেন, রোগের চাহিদা ছাড়া্ও ফার্মেসিগুলোতে রোগীকে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়। শরীরে অতিরিক্ত অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করায় একপর্যায়ে এসব রোগীর শরীরে আর অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করে না। সম্প্রতি অতিরিক্ত অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের কারণে ৪০০ জন লোক মারা গেছে। জাতীয় একটি দৈনিকে এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এ কারণে রিট করা হয়েছে।

তিনি বলেন, প্রেসক্রিপশন ছাড়া ফার্মেসিতে অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কিন্তু অনেকেই অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ সেবন করেন ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়াই।

তিনি বলেন, ২০১৬ সালে প্রকাশিত আরেক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সুপারবাগ দিন দিন এতটাই ভয়াবহ হয়ে উঠছে যে, ২০৫০ সালের মধ্যে প্রতিবছর ১ কোটি মানুষের মৃত্যুর কারণ হতে পারে এটি। গত বছর ক্যানসার, ডায়াবেটিস ও ডায়রিয়ায় মারা যাওয়া রোগীর সম্মিলিত সংখ্যার চেয়েও তা বেশি। অন্যদিকে, মানুষের রোগ নিরাময়ের জন্য যে অ্যান্টিবায়োটিক বানানো হয়েছিল, অতিরিক্ত লাভের আশায় সেগুলো এখন পশু-পাখিদের দ্রুত বর্ধনশীল করার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। চট্টগ্রামে করা এক গবেষণায় উঠে এসেছে, শহরের অর্ধেকেরও বেশি পোলট্রি মুরগির শরীরে এসব অ্যান্টিবায়োটিক ঢোকানো হচ্ছে। এই পোলট্রি মুরগি খেয়ে ঝুঁকিতে পড়ছে সাধারণ মানুষও।

শুধু বাংলাদেশ বা দক্ষিণ এশিয়ায় নয়, এই ভয়াবহতা থেকে মুক্ত নয় বিশ্বের অন্যান্য দেশও। ২০১৭ সালের এক গবেষণা জানাচ্ছে, কম্বোডিয়া, লাওস, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনামসহ আরো অনেক দেশ সুপারবাগের ঝুঁকিতে রয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র বা আইসিইউ আছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ)। এই আইসিইউতে মারা যাওয়া রোগীদের ৮০ শতাংশের মৃত্যুর কারণ হলো সুপারবাগ। বলা হচ্ছে, মাত্রাতিরিক্ত ও অনিয়ন্ত্রিত অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের ফলে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

সুপারবাগ হলো অ্যান্টিবায়োটিক সহনশীল ব্যাকটেরিয়া। এসব ব্যাকটেরিয়াকে প্রচলিত অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ দিয়ে ঠেকানো যায় না। বিএসএমএমইউর আইসিইউতে মৃত্যুর প্রধান কারণ হয়ে উঠেছে এই সুপারবাগ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিইউয়ের চিকিৎসক সায়েদুর রহমানের কথায় উঠে এসেছে এই মৃত্যুঝুঁকির কথা। তার মতে, ২০১৮ সালে বিএসএমএমইউর আইসিইউতে ভর্তি হওয়া আনুমানিক ৯০০ রোগীর মধ্যে ৪০০ জনই মারা গেছেন। আর এর পেছনে অন্যতম বড় কারণ হলো অ্যান্টিবায়োটিকের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার।

মানবদেহে উপস্থিত ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ধ্বংসের উদ্দেশ্যে আবিষ্কার করা হয়েছিল অ্যান্টিবায়োটিক। চিকিৎসাশাস্ত্রের ইতিহাসে যুগান্তকারী হিসেবেই ধরা হয়েছিল অ্যান্টিবায়োটিকের আবিষ্কারকে। কিন্তু প্রয়োজনের অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে সেই অ্যান্টিবায়োটিক এখন নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ছে।

 

সুন্দরবনটাইমস.কম/ঢাকা/25 এপ্রিল 2019


আপনার মতামত লিখুন :

নিজস্ব প্রতিবেদক