প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা ২০ বছরেও বাস্তবায়ন হয়নি কেশবপুরের সাগরদাঁড়িতে ‘মধুপল্লী’

প্রকাশিত: ৭:২১ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ৯, ২০২০ | আপডেট: ৭:২৮:অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ৯, ২০২০

মশিয়ার রহমান:
যশোরের কেশবপুর উপজেলার সাগরদাঁড়ি গ্রামে মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্মস্থান। মধুসূদন দত্ত ১৮৪২ সালের ২৫ জানুয়ারি সাগরদাঁড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। কিন্তু সবারই জানা, জীবনের নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মুখোমুখি হতে হয়েছে তাকে। পিতা জমিদার রাজনারায়ণ দত্ত ও মা জাহুবীদেবীর অতি আদেরর সন্তান। তাঁর জীবন যতটা না বর্ণিল ও বর্ণাঢ্য ছিল, তার চেয়ে অনেক বেশি ছিল যাতনায় পূণা। সোনার চামচ মুখে নিয়েই জন্ম নিয়েছিলেন তিনি, কিন্তু সেই মধুকেই জীবনের নানা বাঁকে এসে পড়তে হয়েছে নিদারুণ অভাব ও অর্থকষ্টে। যে দেশ আর ভাষাকে তিনি ‘হেয়’ করে দেখেছেন ‘বৈশ্বিক’ হওয়ার তাড়না থেকে, শেষাবধি সেই তিনিই বলেছেন,‘হে বঙ্গ ভান্ডারে তব বিবিধ রতন; তা সবে, (অবোধ আমি!) অবহেলা করি, পর-ধন লোভে মত্ত, করিনু ভ্রমণ পরদেশে, ভিক্ষাবৃত্তি কুক্ষণে আচরি। কাটাইনু বহু দিন সুখ পুরিহরি।’ তিনি খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী হেররিয়েটাকে বিয়ে করে পিতার চক্ষুশূল হয়ে যান। হেনরিয়েটাকে কলকাতা থেকে বজরায় করে নিয়ে আসেন সাগরদাঁড়িতে। কিন্তু পিতা রাজনারায়ণ দত্ত পূত্র এবং পুত্রবধূকে বাড়িতে ওঠানো তো দূরের কথা পায়ে হাত দিয়ে আশীর্বাদ পর্যন্ত নিতে দেননি। বাংলা ভাষায় সনেট ও অমিত্রক্ষর ছন্দের প্রবর্তক মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত ১৮৭৩ সালের ২৯ জুন কলকাতায় মারা যান।

সোহাগ মাল্টিমিডিয়া এন্ড ট্র্যাভেলস

কেশবপুর উপজেলা সদর থেকে সাগরদাঁড়ির দূরত্ব ১৩ কিলোমিাটার। পিচের রাস্তা কিন্তু বন্ধুর পথ। যেহেতু কবির পিতা জমিদার ছিলেন। তাই তাঁর ছিল অগাধ সম্পত্তি। কালের আবর্তে এবং রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এই ভূ-সম্পত্তি এখন বেহাত হয়ে গেছে। যে যেভাবে পেরেছে দখল করেছে। তারপর এখনো অনেক সম্পত্তি রয়েছে। ১৮৬৫ সালে পাক-সরকার কবি ভক্তদের থাকার জন্য চারশয্যা বিশিষ্ট একটি রেস্টহাউজ বানিয়েছিল। এই রেস্ট হাউসেরই একটি রুমে পাঠাগার বানানো হয়। ’১৮৮৫ সালে কবির বাড়িটি প্রত্মতত্ত্ব বিভাগের কাছে সরকার ন্যস্ত করে। কবির জন্মস্থান-খ্যাত ঘরটি এখন আর নেই। একটি তুলসীগাছ লাগিয়ে কেবল চিহ্নিত করে রাখা হয়েিেছ। কবির মূলবাড়ি সংলগ্ন আম বাগানে অবস্থিত আবক্ষা মূর্তিটি কলকাতার সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ ব্যাংক স্থাপন করে দেয়। প্রতœতত্ত্ব বিভাগ জমিদারবাড়ির অসংখ্য ঘরের পলেস্তারা নতুন করে করেছে। একটি ঘরে কবির ব্যবহৃত অনেক কিছুই ঠাঁই পেয়েছে। ’১৮৮৫ সালে প্রত্মতত্ত্ব বিভাগ বাড়ির পুকুরসহ পুরো এলাকাটি পাঁচিল দিয়ে ঘিরে ফেলেছে। কথিত বাদামগাছ, যার নীচে বসে কবি কবিতা লিখতেন তাঁর বাঁধানো গোড়াটি এখন ফাটল ধরে নদীভাঙ্গনে ভেঙ্গে পড়েছে। যে বজরায় কপোতাক্ষ নদীতে কবি সস্ত্রীক অবস্থান করেছিলেন সাত দিন। সেখানে একটি পাথরের খোদাই করে লেখা আছে ‘সতত হে নদ তুমি পড় মোর মনে’। কবিতা সংবলিত এই জায়গাটি ‘বিদায় ঘাট’ নামে খ্যাত। কবির জন্ম এবং মৃত্যুবার্ষিকীতে দেশ-বিদেশ সমস্যা হলো থাকা এবং খাওয়া। কোনো আবাসিক হোটেল নেই থাকার জন্য, নেই কোনো মানসম্মত খাবার হোটেল। তাই কবি ভক্তদের বেলা থাকতেই ফিরে আসতে হয়। কবি মধুসূদনের জন্মস্থান সাগরদাঁড়ি ঘিরে রয়েছে অনেক স্মৃতি অনেক বেদনা কাহিনী। কিন্তু পর্যটকদের দেখার সুযোগ নেই। ’১৯৯৯ সালের ২৫ জানুয়ারি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী কবির জন্মদিনে মধুমেলা উদ্বোধন করেন এবং সাগরদাঁড়িকে ‘মধুপল্লী’ হিসেবে ঘোষণা করেন। কিন্তু দীর্ঘ দু-দশকেও এর কোন কার্যক্রম এখনো শুরুই হয়নি।

সাগরদাঁড়িতে মধুসূদন একাডেমি নামে একটি পাঠাগার রয়েছে। যেখানে মাইকেলের পিতা- পিতামহের আমলের অনেক দুর্লভ ছবি এবং অনেক চিঠিপত্র সংরক্ষিত আছে। এই পাঠাগারটি পর্যটকদের আকর্ষণ করে থাকে। স্বাধীনতার পর এখানে মাইকেল মধুসূদন একাডেমি এবং সাগরদাঁড়ি কারিগরি কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। অনুষ্ঠানের জন্য একটি সুসজ্জিত মঞ্চ এবং অডিটোরিয়াম নির্মিত হয়েছে। কবির বাড়ি সংলগ্ন আমবাগানটি এখনো কালের স্বাক্ষী হয়ে রয়েছে। প্রতিবছর দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে অসংখ্য লোক সাগরদাঁড়িতে পিকনিক করতে আসে। এ ছাড়া শিক্ষা সফরে আসে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে স্কুল কলেজের ছাত্রছাত্রীরা। কিন্তু এখানে কোন পিকনিক স্পট ও বিশ্রামাগার না থাকায় তাদের পোহাতে হয় ঝামেলা। দেশি-বিদেশী পর্যটকের আনাগোনা থাকে বারো মাসই। কিন্তু কেবল থাকা এবং খাবার সু-ব্যবস্থা না থাকায় ভক্তদের আকাক্সক্ষা পূরন হয় না। কবির অনেক আত্বীয়স্বজনও প্রতি বছর ভারত থেকে এসে থাকেন। কবির বাড়িকে ঘিরে সাগরদাঁড়িকে এখনো পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব। এর ফলে একদিকে সরকার যেমন লাভবান হবেন তেমনই বাংলা সাহিত্যে সনেটের প্রবর্তক কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত আরও বিশ্বখ্যাত হয়ে উঠবেন। আগামী ২০২০ সালের ২৫ জানুয়ারি ১৯৬তম জন্মবার্ষিকী পালিত হবে।

সুন্দরবনটাইমস.কম/নিজস্ব প্রতিবেদক/কেশবপুর(যশোর)


আপনার মতামত লিখুন :

নিজস্ব প্রতিবেদক