তালায় কৃষি কর্মকর্তাদের অনিয়মে প্রকৃত কৃষক বঞ্চিত

প্রকাশিত: ১০:২৮ অপরাহ্ণ, জুলাই ২৮, ২০১৯ | আপডেট: ১০:২৮:অপরাহ্ণ, জুলাই ২৮, ২০১৯

রিপন হোসাইন, পাটকেলঘাটা:
সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলায় চলতি মৌসুমে সরকার সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে বোরো ধান কেনার উদ্যোগ নিলেও কৃষি কর্মকর্তাদের স্বজনপ্রীতি, সেচ্ছাচারিতা ও চরম অনিয়মের কারণে প্রকৃত কৃষকরা বঞ্চিত হচ্ছেন। এতে করে কৃষিবান্ধব সরকারের মহতি উদ্যোগ ভেস্তে যেতে বসেছে।
সরকারী খাদ্য গুদামে ধান দিতে হলে কৃষক পরিচিতি হিসেবে প্রয়োজন হয় কৃষি উপকরণ সহায়তা কার্ড। কিন্তু সেই কার্ড তালিকাভুক্তিতে কুমিরা ইউনিয়নে দায়িত্বরত উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা(এসএএও) আদিত্য কুমার পাল ও তামান্না জাহানের স্বজনপ্রীতি, সেচ্ছাচারিতা সহ নানাবিধ অনিয়মের কারণে সরকারী খাদ্য গুদামে ধান বিক্রি থেকে প্রকৃত কৃষকদের নাম তালিকাভুক্ত না করে আদৌ ধান চাষের সাথে সম্পৃক্ত নয়, এমন সব ব্যক্তির নাম তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। উপজেলার কুমিরা ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে এসব অভিযোগ পাওয়া গেছে।
কৃষি অফিস সুত্রে জানা গেছে, বোরো মৌসুমে এ উপজেলায় ১৯ হাজার ৩০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ৮০হাজার মেঃটন বিভিন্ন প্রজাতির ধান উৎপন্ন হয়েছে। সরকার কৃষকের কাছ থেকে ধান সংগ্রহের জন্য এ উপজেলায় ১ম পর্যায়ে ৫শ ৭৯মেঃটন এবং ২য় পর্যায়ে ৯শ ৬৫ মেঃটন ধান সংগ্রহের বরাদ্দ প্রদান করে। বরাদ্দ পত্র আসার পর উপজেলা খাদ্যশষ্য সংগ্রহ কমিটির সভাপতি ও নির্বাহি কর্মকর্তার নির্দেশনায় কৃষি অফিস কৃষক পর্যায়ে ইউনিয়ন ভিত্তিক ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণে তলিকা প্রস্তুতে চরম অনিয়ম শুরু করেন।
সরজমিন গিয়ে কুমিরা ইউনিয়নের সেনপুর গ্রামের মৃত জালাল সরদারের পুত্র মুকুল সরদারের নাম ১ম তালিকায় ১ম পৃষ্টার ১১নং ক্রমিকে এবং ২য় পর্যায়ের ৫নং পৃষ্টার ১নং ক্রমিকে তালিকাভুক্ত করা হয়। একই গ্রামের আব্দুল বারি শেখের পুত্র আনিছুর রহমানের নাম ১ম তালিকার ১৩নং ক্রমিকে এবং ৩নং পৃষ্টায় ১৩নং ক্রমিকে ২য়বার তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এদিকে দাদপুর গ্রামের কোমর উদ্দীনের ২ ছেলে বিল্লাল ও আব্দুল লতিফ ধান চাষের সাথে সম্পৃক্ত না থাকলেও ধান সংগ্রহের তালিকায় নাম অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। তালিকা অনুযায়ী খাদ্য গুদামে ধান দিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে একই গ্রামের আবুল চাচা দিয়েছেন, বিনিময়ে কিছু টাকা পেয়েছেন বলে জানান। একই গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে ইউনুচ আলীর চাষাবাদের কোন জমি না থাকলেও ধান সংগ্রহের তালিকায় নাম অন্তর্ভূক্ত হওয়ায় বরাদ্দকৃত ধান খাদ্য গুদামে দিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনিও আবুল চাচা দিয়েছেন, বিনিময়ে ১৮শ’ টাকা পেয়েছেন বলে জানান। এদিকে ২য় পর্যায়ের তালিকা তথ্যানুসন্ধান করে জানা যায় দাদপুর গ্রামের মৃত সৈয়দ আলীর ছেলে নুরুল ইসলামের ৪কাঠা চাষাবাদের জমি রয়েছে। অথচ কৃষি কর্মকর্তাদের সেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে ধান সংগ্রহের তালিকায় ১মেঃটন অর্থাৎ ২৫মন ধান উৎপাদন ও বিক্রয়ের পরিমান উল্লেখ করা হয়।
অনুসন্ধ্যানকালে আরও জানা যায়, উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তাদের প্রস্তুতকৃত ধান সংগ্রহের তালিকায় কৃষকদের নামের পাশে যেসব মোবাইল ফোন নম্বর দেওয়া হয়েছে অধিকাংশ নম্বর ভূয়া। ঐ সব নম্বরে ফোন দিলে অপর প্রান্ত থেকে থেকে রিসিভ করে রং নম্বর বলে সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করে দেন। এবিষয়ে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আদিত্য কুমার পাল এর কাছে জানতে চাইলে সব অনিয়ম চেয়ারম্যান সাহেবের চাপে পড়ে করতে বাধ্য হয়েছি।
আরেক উপ-সহকারী কৃষিকর্মকর্তা তামান্না জাহান জানান, চেয়ারম্যান সাহেব তালিকা ধরিয়ে দিয়ে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করেছেন। তিনি ক্ষোভের সঙ্গে জানালেন প্রকৃত কৃষকের নাম দিতে না পেরে তিনি দুঃখিত। ধান সংগ্রহ তালিকায় সেনপুর গ্রামের আনিছুর রহমানের নাম দুইবার, একই গ্রামের মুকুল সরদারের নাম ১ম এবং ২য় তালিকায় অন্তভূক্ত করার বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল্লাহ আল-মামুন এর কাছে জানতে চাইলে তিনি ভুল হয়েছে বলে জানান। চাষাবাদের জমি না থাকা সত্ত্বেও ধান সংগ্রহের তালিকায় নাম অন্তর্ভূক্ত করার বিষয়ে জানতে চাইলে নীতিমালা বহির্ভূূত বলে স্বীকার করেন।

সোহাগ মাল্টিমিডিয়া এন্ড ট্র্যাভেলস

 

 

সুন্দরবনটাইমস.কম/মো: রিপন হোসেন/পাটকেলঘাটা


আপনার মতামত লিখুন :

নিজস্ব প্রতিবেদক