দূর্নীতিমুক্ত ও ডোনেশনমুক্ত মেধাভিত্তিক চাকুরী হলে সোনার বাংলা গড়া সম্ভব

প্রকাশিত: ১১:৫৯ অপরাহ্ণ, আগস্ট ১১, ২০২০ | আপডেট: ১১:৫৯:অপরাহ্ণ, আগস্ট ১১, ২০২০
লেখক সরদার এমএ মজিদ

“মুজিব বর্ষের সৌজন্যে”

সোহাগ মাল্টিমিডিয়া এন্ড ট্র্যাভেলস

শতাব্দীর সর্বশ্রেষ্ট মহামানব, বাঙ্গালী জাতির মুক্তির কান্ডারী বঙ্গবন্ধু শেখ মুৃুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকীতে তার সুযোগ্য কন্যা উন্নয়নের রোলমডেল বিশ্ববরেণ্য রাজনীতিবিদ সফল রাষ্ট্রপ্রধান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী শেখ হাসিনা তাঁর পিতার জন্ম শত বৎসর পুর্তি অনুষ্ঠান করতে পেরেছেন। এটা বাঙ্গালী জাতির গৌরব। জানাই প্রাণ ঢালা শুভেচ্ছা, অজস্র সালাম ও ধন্যবাদ।

 

শতাব্দীর ক্ষণজন্মা, অকুতোভয় সিংহ পুরুষ, আজীবন দৃঢ় প্রতিজ্ঞ, সংগ্রামী মহান নেতা, যিনি শিশুকাল থেকে করেছিলেন পণ শ্রেষ্ঠ মানুষ হয়ে এই জন্মভূমিকে করিব বিজয়। শিশুকালের সেই স্বপ্ন জীবনে বাস্তবায়ন করতে যেয়ে বহু আন্দোলন, ঘাত-প্রতিঘাত সহ বহুবার কারাবরন করতে হয়েছে। তিনি যা করেছেন শুধু বাঙ্গালী জাতির মুক্তি ও কল্যাণের জন্য। তিনি জীবনে বহু আন্দোলন করেছেন। ছাত্রজীবনে শিক্ষা আন্দোলন, মাতৃভাষার জন্য ভাষা আন্দোলন, ছয় দফা আন্দোলন, সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলন, সত্তরের নির্বাচন বাঙ্গালী জাতির মুক্তির আন্দোলন, সর্বশেষ স্বাধীনতা যুদ্ধের আন্দোলন করে আজ তিনি অবিসংবাদিত নেতা হিসাবে বিশ্ব নন্দিত হয়েছেন।

 

বাঙ্গালী জাতির মুক্তির কান্ডারী, বঙ্গজননীর নয়নের মনি, বিশ্বের মানচিত্রের উজ্জ্বল নক্ষত্র, তার কন্ঠ যেন আমরবানী। নির্যাতিত জনতার প্রতীক, মুক্তি সংগ্রামের অপ্রতিরোধ্য মহামানব, এই বাংলার রূপকার, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সেই মহান নেতা বলেছিলেন, সাড়ে সাত কোটি বাঙ্গালী আর আমি এনেছি ৮ কোটি কম্বল। তাহলে আমার কম্বলটা গেল কোথায় ? পাশ্চাত্য দেশ পেয়েছে সোনার খনি, আর আমি কি পেয়েছি চোরের খনি। কথাটি সুদূর পঞ্চাশ বছর পুর্বে হলেও বর্তমানের সহিত সঙ্গতি পূর্ণ। দেশের বিভিন্ন সংবাদ মিডিয়া ও বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যাচ্ছে যে, প্রতিনিয়ত যে সমস্থ অনৈতিক কার্য্যকলাপ ঘুষ, দূর্নীতির কথা শুনতে বা দেখতে পারছি ইহাতে প্রতিয়মান হয় যে, শেখ সাহেবের দেওয়া দূর্নীতির বাণী আজও পরিবর্তন হয়নি। পরিলক্ষিত হচ্ছে সকল প্রকার দূর্নীতি যেন দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই প্রজাতন্ত্রের সকল পদের দায়িত্বরত কর্মকর্তা-কর্মচারী, জনপ্রতিনিধিদের কেন স্বদেশ প্রেমের অনুপ্রেরনা জাগ্রত হচ্ছে না, দেশপ্রেম থাকলে আজ এই দেশে এত অন্যায়, অত্যাচার, ঘুষ, দূর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি দিন দিন বৃদ্ধি পাইত না। এই সমস্ত জঘন্য কর্মকান্ড থেকে বিরত থেকে দেশ ও জাতির কল্যাণের জন্য, বৃহত্তর স্বার্থের জন্য, ক্ষুদ্র স্বার্থ ম্লান করে নিজেকে আত্মত্যাগ করতে পারলে, এখনও সময় আছে, দেশ ও জাতি সুসংগঠিত হইতে পারত।

 

এই প্রজাতন্ত্রের সকল শ্রেণী-পেশার কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ জনপ্রতিনিধি সহ সকল নেতা-কর্মীদের সৎ, যোগ্য ন্যায় পরায়ণতা ও নীতি নৈতিকতার আদর্শ ভুলুন্ঠিত হওয়ার কারনে দেশে যে পরিমান উন্নয়ন হচ্ছে কিন্তু সেই পরিমান সুনাম সুখ্যাতি অর্জন হচ্ছে না। যতদিন পর্যন্ত প্রজাতন্ত্রের সকল শ্রেণীর কর্মকর্তাদের জাতীয়তাবোধ, ভ্রাতৃত্ববোধ, স্বদেশ প্রেমের অনুপ্রেরণা না জাগবে বা নীতি নেতিকতার আদর্শের বিকাশ না ঘটবে, ততদিন সোনার বাংলা গড়া সম্ভব নহে। সোনার বাংলা গড়তে হলে সোনার মানুষ হতে হবে। এই দেশের জন্মলগ্ন থেকে শুরু করে অদ্যবধি পর্যন্ত বিভিন্ন বিমান বন্দর থেকে ও চোরাই পথে যে পরিমান সোনাজব্দ করা হয়েছে সেখানেই তো সোনার বাংলা হওয়ার কথা। সব গুলি সোনা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা আছে। সেখানে দূর্নীতি হয়েছে কিনা, সরকারই ভাল জানে। এই দেশে সকল ব্যাংকিং খাতেরও নাজুক অবস্থা। বাংকের কর্মকর্তাদের দুর্নিতীর কারনে প্রায় সব ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে গেছে। এর একমাত্র কারন অসাধু ও অদক্ষ কর্মকর্তাদের জন্য।

 

দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রে যদি অন্যায়-অত্যাচার, ঘুষ, দূর্নীতি পরিলক্ষিত হতে থাকে, তাহলে দেশ ও জাতির ভাগ্যের পরিবর্তন আশা করা যায় কিভাবে। দেশে যিনি রাষ্ট্র প্রধান হননা কেন তিনি কখনও দেশ ও জাতির অমঙ্গল কামনা করেন না। একার দ্বারা কখনও দেশ ও জাতির ভাগ্যের উন্নয়ন করা কি সম্ভব? এই জন্য সরকারের অধীনস্ত সকল শ্রেণী পেশার কর্মকর্তাদের সৎচরিত্রবান, নীতি নৈতিকতার আদর্শ প্রস্ফুটিত হইলে, দেশ ও জাতি উন্নয়নশীল দেশে পরিনত হতে পারে। দেশ উন্নয়নের মূল চাবিকাটি সৎ, ধর্মভীরু, দক্ষ, ন্যায়পরায়ন ও স্বজনপ্রীতিমুক্ত কর্মকর্তা কর্মচারী ও জনপ্রতিনিধি। নতুবা আদৌ দেশের ভাগ্যের উন্নয়ন সম্ভব নহে। এই প্রজাতন্ত্রের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী যতদিন জনগনের সেবা করার মনোবৃত্তি না জাগবে বা জনগন তাদের নায্য অধিকার ফিরে না পাবে ততদিন এই দেশের পরিবর্তন ও জাতি সুসংগঠিত হতে পারে না।

 

ডোনেশনমুক্ত মেধাভিত্তিক চুাকুরী হইলে দেশ ও জাতি এমন ভাবে এগিয়ে যাবে যাহা অল্প দিনের মধ্যে বিশ্বের দরবারে উন্নয়নশীল দেশ হিসাবে গর্বিত ভাবে আমরা মাথা উচু করে দাঁড়াইতে পারব ইন-শা-আল্লাহ।

 

আমরা প্রতিনিয়ত পত্র পত্রিকায় দেখতে পাচ্ছি দেশের সম্পদ কিভাবে লুন্ঠন করে খাচ্ছে। ইহা ছাড়া এদেশে অগনিত কান্ডকারখানা চলছে যেমন, রেলকান্ড, বালিশ কান্ড, পর্দাকান্ড, স্বাস্থ্য কান্ড, ব্যাংকিং কান্ড, সড়ক ও জনপথ কান্ড, ক্যাসিনো কান্ড, পাপিয়া কান্ড, আজম খান কান্ড, পাপুল কান্ড, মিঠুন কান্ড, সাহেদ কান্ড, ডা: সাবরিনা কান্ড ইহা ছাড়াও অগনিত কান্ডকারখানা চলছে।

 

এই ভাবে যদি একের পর এক কান্ডকারখানা চলতে থাকে তাহলে দেশের বারোটাতো এমনিই বেজে যাবে। বর্তমান প্রেক্ষাপট করোনা ভাইরাসকান্ড নিয়ে দেশে এতবড়ো মহামারী বিপদ তার মধ্য থেকে বহু ডাক্তার, বহু হাসপাতাল ক্লিনিকে ভুয়া সার্টিফিকেটের মাধ্যমে অবৈধ অর্থ লেনদেনের কারনে কোটি কোটি টাকা দূর্নীতি হচ্ছে।

 

বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে জানতে পারলাম যে, যেখানে পুরা দেশ লকডাউন। গোটা বিশ্ব নিস্তব্ধ। সেখানে এদেশের কর্মহীন ও গৃহহীন মানুষের মুখের আধার ত্রাণ সামগ্রি ও সরকার প্রদত্ত নগদ টাকা পয়সা কিভাবে লুন্ঠন করে খাচ্ছে। এদেশে মানুষ আছে কিনা আমার বোধদ্বয় হয় না। এত নিকৃষ্ট মনের মানুষ এরা। আমি মনে করি দেশ ও জাতির মুখের দিকে তাকিয়ে শেষবারের মতন মুজিব বর্ষের সম্মানার্থে শপথ করা উচিত।

 

এমন কোন দপ্তর নেই যে, সেখানে দূর্নীতি হচ্ছে না। সরকারের ছত্রছায়ায় থেকে বড় বড় গডফাদারদের দূর্নীতির কথা যা শুনতে পাচ্ছি তাতে আমরা বিস্ময়াভিভুত হচ্ছি। দেশের সুনাম যে কি পরিমান ক্ষুন্ন হচ্ছে তাদের সচেতন হওয়া উচিত বলে মনে করি। যে দেশে রডের পরিবর্তে বাঁশ দিয়ে ভবন নির্মাণ হয়, সেই দেশের উন্নয়ন স্বপ্ন ছাড়া আর কি হতে পারে। সন্ত্রাসবাদের কারনে দেশে খুন, ধর্ষন, রাহাজানী, টেন্ডারবাজী সহ সকল প্রকার অনৈতিক কার্যক্রম একের পর এক চলতেই আছে। এই দেশের অসাধু ব্যবসায়ীদের যাতাকলে জনগন আজ দিশেহারা। এই দেশের অদক্ষ ও অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী ও অসাধু ব্যবসায়ী আর অপকর্মের বড় বড় গডফাদারদের দূর্নীতির কারনে দেশের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে এটা উপলব্ধি করার ক্ষমতা কি তাদের নেই। কত রক্তের বিনিময়ে, কত মায়ের ইজ্জতের বিনিময়ে, কত কষ্টে অর্জিত স্বাধীনতা, এই বাঙ্গালী জাতি আর কবে বুঝবে তার মর্মব্যাথা।

 

আমরা এই দেশের সকল শ্রেণী পেশার কর্মকর্তা-কর্মচারী ও জনপ্রতিনিধিবৃন্দ সহ সকল নেতা কর্মীদের দৃঢ়ভাবে মুজিব বর্ষের শপথ গ্রহন করি। আমরা অতীতকে ভূলে বর্তমানকে কি ভাবে সুন্দর করা যায় ও সুশৃঙ্খলভাবে চলা আবশ্যক বলে মনে করি। আর নতুন প্রজন্মের সঠিক মেধা যাচাই বাছাই অন্তে সম্পূর্ণ ঘুষ ও দূর্নীতিমুক্ত অবস্থায় তাদের চাকুরীর ব্যবস্থা করতে পারলে তাদের দেশ প্রেম নীতি-নৈতিকতার আদর্শের পরিবর্তন আশা করা যায়। কারন সম্পূর্ন ঘুষ দূর্নীতিমুক্ত অবস্থায় যদি কাউকে চাকুরী দেওয়া হয়, তাদের অন্তরে দেশপ্রেমের অনুপ্রেরণা জাগবে আশা করা যায়। আমরা বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশের দিকে তাকাইলে তাদের অতীত কি ছিল আর বর্তমান কি অবস্থা, তাদের নীতি-নৈতিকতার আদর্শ ও সৎচরিত্রের কথা শুনেছি বা স্বচক্ষে আমরা অনেকে দেখেছি। আমাদের বিবেক কি দংশন করে না- সেই সমস্ত উন্নয়নশীল দেশের সরকারের স্বায়ত্তশাসিত যে সমস্ত মিল-কলকারখানা ইন্ডাষ্ট্রিজ আছে তার দ্বারা দেশ দ্রুত গতিতে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারছে। তাহলে আমরা কেন পারব না।

 

সকলেই ঐক্যবদ্ধ হইলেই সম্ভব। আমাদের দেশের সরকারের অধীন যে সমস্ত মিল-কলকারখানা ইন্ডাষ্ট্রিজ আছে সেখানে কোটি কোটি টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে। শুধুমাত্র অদক্ষ ও অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কারনে। কোন বিষয়ে বলব- বলতে গেলেও লজ্জাবোধ হচ্ছে। বিদ্যুৎখাত, রেলখাত, বিমানখাত, স্বাস্থ্য খাত, বস্ত্রখাত, জুট মিলসহ সকল প্রকার সরকারের স্বায়ত্তশাসিত যত প্রতিষ্ঠান আছে প্রতিটি ক্ষেত্রে শুধু লোকসান আর লোকসান করতে করতে প্রায় সব বন্ধের দারপ্রান্তে। এই সমস্ত প্রতিষ্ঠানের লক্ষ লক্ষ শ্রমিকের কর্মসংস্থান হতো তার থেকেও বঞ্চিত। আসুন আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে সুশৃঙ্খলভাবে, কলংকজনক মনোভাব পরিহার করে, এই দেশ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। প্রজাতন্ত্রের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ নীতি-নৈতিকতার আদর্শের বিকাশ ঘটুক ও দেশপ্রেম সকলের অন্তরে জাগ্রত হোক। মুজিব শতবর্ষের শুভ আগমনের যেন স্বার্থকতা হয়। কি হয়েছে আমাদের কেন দেশ ও জাতির জন্য কল্যাণমুলক সেবা করবার অনুপ্রেরনা কেন জাগবে না। প্রত্যেকে ব্যক্তি স্বার্থ ত্যাগ করে দেশের জন্য জাতির জন্য বৃহত্তর স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হতে পারলেই সোনার বাংলা গড়তে পারব। আর এই দেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে অচিরেই আমরা বিশ্বের দরবারে উন্নয়নশীল দেশ হিসাবে মাথা উচু করে দাড়াইতে পারব ইন-শা-আল্লাহ।

 

এই দেশের সকল শ্রেণী পেশার কর্মকর্তা-কর্মচারী, জনপ্রতিনিধি, নেতা-নেত্রীসহ সকলের শুভ বুদ্ধির উদয় হোক। আমি এই প্রত্যাশা করি। দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনা করে শেষ করছি।

লেখক ও গবেষক
সরদার এম এ মজিদ
পাটকেলঘাটা, সাতক্ষীরা।
মোব: ০১৭২৩৯১২৭৪১।


আপনার মতামত লিখুন :

লেখক| সরদার এম এ মজিদ| পাটকেলঘাটা, সাতক্ষীরা।