তালায় ইরি বোরো চাষে বাম্পার ফলন: দাম নিয়ে হতাশ কৃষক

প্রকাশিত: ১০:৪৩ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২৮, ২০১৯ | আপডেট: ১০:৪৩:অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২৮, ২০১৯
VLUU L100, M100 / Samsung L100, M100

মো. মুজিবর রহমান:

সোহাগ মাল্টিমিডিয়া এন্ড ট্র্যাভেলস

সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলায় এবছর লক্ষ্যমাত্রার চাইতে বেশী পরিমান জমিতে ইরি বোরো চাষাবাদ হয়েছে। অনুকুল আবহাওয়ার কারনে এবার উপজেলায় ইরিবোরো চাষে বাম্পার ফলন হয়েছে। মাঠের পর মাঠ পাকা ধানের শীষে বাতাস দুলছে। সব এলাকায় ধান কাটার ধুমধাম চলছে। উপজেলায় সর্বত্র মাঠে চলছে ধান কাটার ধুম। বৈরী আবহাওয়ার কারনে পাকা ধান সংগ্রহে কৃষক ব্যস্ত সময় পার করছে। রাতের ঘুম হারাম করে কৃষক তার ক্ষেতের পাকা ধান তোলার কাজে সময় পার করছে। এ ক্ষেত্রে বাড়ির মহিলারাও বসে নেই। সর্বত্রই শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে। বিগত বছরের চেয়ে এ বছর অধিক জমিতে ইরি বোরো চাষাবাদ হয়েছে। এ বছর চাষাবদের শুরুতে বৃষ্টিপাত কম থাকার কারণে উপজেলার সকল এলাকায় ব্যাপকহারে ইরিবোরো চাষাবাদ হয়েছে। অনেক নিচু এলাকার জমিতে ও চাষাবাদ হয়েছে।
সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার বিভিন্ন বিলে পাকা ধানের মৌ মৌ গন্ধ বিরাজ করছে। উপজেলার শতকরা ৮০জন কৃষকই সরাসরি কৃষি কাজের সাথে জড়িত। কৃষি কাজ করেই তারা জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার প্রায় ১৯হাজার ২৫ হেক্টর জমিতে ইরি বোরো চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্র নির্ধারণ করা হলেও লক্ষ্য মাত্রার চাইতে প্রায় হেক্টর জমিতে ইরিবোরো চাষাবাদ হয়েছে। এ বছর উপজেলায় জলাবদ্ধতা না থাকায় উপজেলার ধানদিয়া, নগরঘাটা, সরুলিয়া, কুমিরা, খলিষখালী, তেঁতুলিয়া, তালা, জালালপুর, মাগুরা, খেশরা সহ উপজেলায় সর্বত্রই লক্ষ্যমাত্রার চাইতে বেশী জমিতে ইরি বোরো চাষাবাদ হয়েছে।
তালা উপজেলার আমতলাডাঙ্গা গ্রামের কৃষক রবিউল ইসলাম জানান আবহাওয়া ও প্রকৃতির কারনে এবছর আমাদের ব্লকে গতবারের চাইতে বর্তমানে ধান ভাল হয়েছে। এ বছর আমার ব্লকে ব্রি-ধান ২৮ বেশি ফলেছে ফলন বেশ ভাল। আবহাওয়া প্রতিকুলে থাকায় বেশ দুশ্চিন্তায় আছি। ধান ঘরে না উঠা পর্যন্ত চিন্তার শেষ নেই।
অপর দিকে কুমিরা ইউনিয়নের মৃর্জাপুর গ্রামের কৃষক সদানন্দ জানান গত বছরের তুলনায় ধান ফলেছে বেশি শ্রমিক সংকটের কারনে ধান কাটা কষ্টকর হচ্ছে। সব কাজ বাদ দিয়ে ধান সংগ্রহ কাজে এলাকার কৃষক সময় দিচ্ছে। একদিনে ৬শত টাকা মুজুরীতে দিয়ে শ্রমিক কাজ করছে। ধানদিয়া গ্রামের হামিজউদ্দীন জানান এবছর আমাদের এলাকায় ধানের ফলন খুব ভাল রোগ বালাই কম থাকায় ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে ধানের দাম কম থাকায় কৃষক হতাশ হয়েছে। সরকার যদি কৃষকদের কাছ থেকে ধান সংগ্রহ করত তাহলে কৃষক উপকৃত হত। শুনেছি সরকার ধান সংগ্রহ করবে শাকদহ গ্রামের আব্দুল করিম জানান এক বিঘা ধান তৈরী করতে কৃষকের প্রায় ১০ হাজার টাকারও বেশি খরচ হচ্ছে। সে তুলনায় কৃষক মোটা ধান ৬শ ও চিকন ৮শত টাকা ধান বিক্রি করে খরচের টাকা পোষানো সম্ভব হচ্ছে না। তিনি আরও জানান প্রতিদিন একজন শ্রমিকের ৬শত টাকা মুজুরীতে কাজ করান হচ্ছে। শ্রমিক সংকটের কারনে উপজেলার বাইরে চুকনগর, ডুমুরিয়া, খুলনা, কলারোয়া সহ বিভিন্ন এলাকা থেকে সপ্তাহ ৪২শ টাকায় শ্রমিক নিয়ে ধান সংগ্রহের কাজ করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে কৃষক হতাশায় দিন পার করছে।

তালা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আল-মামুন জানান, এবছর আবহাওয়া ভাল থাকার কারনে বাম্পার ফলন হয়েছে। বৃষ্টি ও ঝড়ে কিছু কিছু এলাকায় ধানের সামান্য ক্ষতি হয়েছে। উপজেলার সকল এলাকায় কৃষকদের পরামর্শ প্রদান করায় রোগ বালাই কিছুটা কম হয়েছে এখন ভালোয় ভালোয় ধান সংগ্রহ করতে পারলে কৃষক লাভ বান হবে।

পাটকেলঘাটা গুদাম কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম জানান, এ বছর সরকার ২৬টাকা ধান ও ৩৬ টাকা দরে কৃষকদের কাছ থেকে ধান সংগ্রহ করবেন বলে ঘোষনা দিয়েছেন। তবে কত পরিমান ধান সংগ্রহ করবেন তা সঠিক ভাবে বলা যাচ্ছে না। এবছর উপজেলায় ব্রি-ধান ২৮ বেশী পরিমান জমিতে চাষাবাদ হয়েছে তাছাড়া ৬৭, বিনা-১০ ও কিছু এলাকায় লবণ সহিষ্ণু ধান চাষাবাদ হয়েছে।

 

সুন্দরবনটাইমস.কম/মো: মুজিবর রহমান/পাটকেলঘাটা


আপনার মতামত লিখুন :

নিজস্ব প্রতিবেদক