ডুমুরিয়ায় সরকারি খাল দখলের মহোৎসব চলছে: চরম জলাবদ্ধতার আশংকা

প্রকাশিত: ৫:০৩ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১১, ২০১৯ | আপডেট: ৫:০৩:অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১১, ২০১৯

নিজস্ব প্রতিবেদক, চুকনগর(খুলনা):
খুলনার ডুমুরিয়ায় প্রভাব খাটিয়ে সরকারি খাল দখলের মহোৎসব শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে অতিগুরুত্বপূর্ন মতিয়ার খাল, গগনার খাল, বায়সরানির খাল, বিলপাবলার খাল ও ঝিনেইদহ খালের প্রায় ৫০০ বিঘা জলাশয় সরকারের বে-দখল হয়ে গেছে। খালে ২শতাধিক নেট-পাটা এবং কোথাও কোথাও আড়াআড়ি বাঁধ দিয়ে অবৈধভাবে মাছ চাষ, দোকানপাট ও বাসাবাড়ি নির্মান করে বসবাস করছে। অনেক জায়গায় পুকুর করার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। যার কারণে পানি নিষ্কাশনের চরমভাবে বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে।
স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, এক যুগ ধরে উপজেলার গুটুদিয়া ইউনিয়নাধীন মতিয়ার খাল, গগনার খাল, বায়সরানির খাল, বিলপাবলার খাল ও ঝিনেইদহ খালের জলাশয় স্থানীয় কিছু স্বার্থেন্বেষী ব্যক্তি নিনেজের ইচ্ছা ও খেয়াল-খুশি মত দখল করে স্থাপনা গড়ে তুলেছে। সংশ্লিষ্ট তহশীলদার ও জনপ্রতিনিধিরা বরাবরই নিরব ভুমিকায় রয়েছে। ফলে খালের প্রায় ৫০০ একর জলাশয় ক্রমন্বয় সরকারের বে-দখল হয়ে গেছে। ১৫ কিলোমিটারের মধ্যে ২ শতাধিক নেট পাটা দেয়া হয়েছে। এর কারণে পানি নিষ্কাশনে ব্যাপকভাবে বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছে। যার ফলে প্রতি বছর বর্ষা মৌসুম এলেই এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। ওই খালের পানি ব্যবহার করে কৃষকরা আমন চাষাবাদ ছাড়াও বোরোর আবাদ করে আসছেন। বর্তমান সরকার যেখানে খাল সচল রাখার নির্দেশ দিয়েছেন সেখানে কিভাবে খালের জায়গায় স্থাপনা গড়ে ওঠে এ নিয়ে জনগণের মধ্যে নানাবিধ প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
সম্প্রতি গত ৪/৫দিন ধরে বায়সরানির খালে কালভার্টের পাশে বিলপাবলা গ্রামের জনৈক দিপঙ্কর বাওয়ালী অবৈধভাবে বাঁশের পাইলিং দিয়ে দখলের চেষ্টা করছে। দিপংকর জানান, তিনি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের অনুমতি পেয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। পাশ্ববর্তী জমির মালিক পঙ্কজ রায়, বাদুরগাছা গ্রামের উত্তম মন্ডল, আলাইপুরের সুভাষ মন্ডলসহ একাধিক ব্যক্তি জানান, যে স্থানে দিপংকর অবৈধভাবে দখল করছে সেখানে অত্র এলাকার শতশত মানুষ ঘের ভেড়ি থেকে মাছ ও ফসলাদি নিয়ে নৌকা ভিড়ায়। সুতরাং জায়গাটি সরকারের বে-দখল হলে আমাদের মত কর্মজীবি মানুষের জন্য খুবই সমস্যা হবে। এদিকে মতিয়ার খালে পুটিমারি গ্রামের পঙ্কজ নামে এক ব্যাক্তি প্রায় ২ একর জলাশয় দীর্ঘদিন যাবত অবৈধ দখল করে মাছ চাষ করছেন। ঝিনেইদহ খালে আড়াআড়ি বেড়ি বাঁধ দিয়ে কতিপয় প্লট ব্যবসায়ী বালি ভরাটের কাজ করছেন। সব মিলে বর্তমানে গুটুদিয়ায় সরকারি খাল দখলের মহোৎসব শুরু হয়েছে।
স্থানীয় সমাজসেবী শেখ তুহিনুল ইসলাম বলেন, গুটুদিয়া ইউনিয়নের অধিকাংশ সরকারি খাল গুলো অবৈধভাবে দখল শুরু হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে অচিরেই অত্র এলাকা স্থায়ী জলবদ্ধতার কবলে পড়বে। খালের জায়গা উদ্ধারের জন্য প্রশাসনের হস্থক্ষেপ কামনা করছি।
এ প্রসঙ্গে গুটুদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আবুল হাসান বলেন, ‘আমি কাউকে খাল দখলের অনুমতি দেয়নি। সে হয়তো আমার নাম ভাঙ্গিয়েছে। এক্ষনি তাকে নোটিশ করে ব্যবস্থা নিচ্ছি। তিনি বলেন, যারা সরকারি খালের জায়গা দখল করে মাছ চাষ করছেন, তাদেরকে আগামী পৌষ মাসে নোটিশ করবো। পুনরায় যাতে তারা খাল দখল করে মাছ চাষ না করতে পারেন। অবৈধ দখলদারদের স্থাপনা সরিয়ে নিতে ১৫ দিনের আল্টিমেটাম দিব। তার মধ্যে অপসারণ না হলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছাঃ শাহনাজ বেগম বলেন, সরকারি খালের অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করা হবে। যারা খালের জায়গায় স্থাপনা গড়ে তুলেছে বা যারা অবৈধভাবে নেট পাটা বা আড়াআড়ি বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করছে তাদের বিরুদ্ধে অচিরেই আইনগতভাবে পদক্ষেপ নেয়া হবে।

সোহাগ মাল্টিমিডিয়া এন্ড ট্র্যাভেলস

 

 

 

সুন্দরবনটাইমস.কম/গাজী আব্দুল কুদ্দুস/চুকনগর


আপনার মতামত লিখুন :

নিজস্ব প্রতিবেদক