কেশবপুরে সহস্রাধিক নারী পানের খিলির সুপারী কাটার কাজ করে স্বাবলম্বী

প্রকাশিত: ২:৩০ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২০ | আপডেট: ২:৩০:অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২০

মশিয়ার রহমান, কেশবপুর(যশোর):
যশোরের কেশবপুরে দীর্ঘদিনের জলাবদ্ধতায় থাকা উপজেলার বিল গরালিয়া এলাকার মানুষ এখন সুপারী শিল্পকে ঘিরে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছেন। ওই এলাকার প্রায় সহস্রাধিক নারী পানের খিলির জন্য সুপারী টুকরা করার কাজ করে পরিবারে স্বচ্ছলতা এনেছেন। নারীদের আয়ের ওপর নির্ভর করেই ঘুরে দাঁড়িয়েছেন বিল গরালিয়া পাড়ের অভাবী মানুষরা।

সোহাগ মাল্টিমিডিয়া এন্ড ট্র্যাভেলস

জানা গেছে, ঐতিহ্যবাহি বিল গরালিয়া এক সময় পাঁজিয়া, মঙ্গলকোট ও কেশবপুর সদর ইউনিয়নের ১৫ গ্রামের মানুষের সোনালী স্বপ্ন ছিল। এ বিলসহ আশপাশের এলাকা প্রায় ৩০ বছর ধরে জলাবদ্ধ ছিল। এ সময় অসহায় পরিবারের মানুষেরা সংসার চালাতে গাছ-গাছালি, গরু-ছাগল ও জলাবদ্ধ জমি পানির দামে বিক্রি করতে বাধ্য হয়। কাজের সন্ধানে বাড়ি ছেড়ে অনেক পুরুষ চলে যান অন্যত্র। এমন সময় উপজেলার খতিয়াখালি গ্রামের লক্ষণ দাস ও তার ছেলে উত্তম দাস পানের খিলির জন্য সুপারী টুকরা করার কাজের সুযোগ করে দেন নারীদের। এ সুযোগ পেয়েই গ্রামীণ বধুরা হয়ে উঠেছেন নারীর ক্ষমতায়ন ও স্বাবলম্বীতার প্রতিক।

সুপারী ব্যবসায়ী উত্তম দাস বলেন, একজন মহিলা প্রতি কেজি সুপারী টুকরো করার জন্য পারিশ্রমিক পান ১০ টাকা। তারা প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ কেজি সুপারী টুকরো করে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা আয় করছেন। তাদের সাফল্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে এ কাজ শুরু করেছেন পার্শ্ববর্তী মাগুরাডাঙ্গা, বালিয়াডাঙ্গা, সুজাপুর, ব্রহ্মকাটি, রামচন্দ্রপুর, ব্যাসডাঙ্গা, বাকাবর্শী, কন্দর্পপুর ও বড়েঙ্গাসহ ১৫ গ্রামের প্রায় ৫ হাজার নারী। অভাবী পরিবারের স্কুল কলেজ পড়–য়া মেয়েরাও এখন লেখাপড়ার পাশাপাশি সুপারী টুকরো করার কাজও করছেন। তারা পড়াশুনার খরচ মিটিয়ে পারিশ্রমিকের অর্জিত অর্থ তুলে দিচ্ছে বাবা মায়ের হাতে।

অপর ব্যবসায়ী আনন্দ দাস জানান, আমি ও আমার বাবা লক্ষণ দাস দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সুপারী কিনে এনে পানের খিলির জন্য সুপারী টুকরো করাতে গ্রামের মহিলাদের কাছে সরবরাহ করি। সুপারী কেটে গ্রামের অসহায় মানুষ অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। তবে তিনি পুঁজি সংকট আর সরকারী সুযোগ সুবিধার অভাবে এ শিল্পকে ধরে রাখতে হিমশিম খাচ্ছেন তারমত ব্যবসায়িরা। সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণসহ, সরকারী সহায়তা পেলে সুপারী টুকরো করার এ হস্ত শিল্প হতে পারে লাখো মানুষের কর্মসংস্থানের উৎস্য বলে মনে করেন তিনি। তার সুপারীর ব্যবসা দেখে গ্রামের পার্বতী রানী দাস, আনন্দ দাস, রোকন দাস, মো: তুহিন, অমল দাস, অনুকুল দাস, অরুন দাস ও সুজয় দাস এ ব্যবসা শুরু করেছেন।

খতিয়াখালি গ্রামের ছায়া বিশ্বাস জানান, তিনি প্রতিদিন সুপারী টুকরো করে দুই শত টাকা আয় করেন। মাসে তার আয় হয় ছয় হাজার টাকা। যা থেকে তিনি ছেলে মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ মিটিয়ে অবশিষ্ট টাকা স্বামীর হাতে তুলে দেন। একই ভাবে রাখি দাস, রীনা দাস, শিখা দাস, মিতা দত্ত, পারভীনা খাতুনের মতে মহিলারাও সুপারী টুকরো করে প্রতিমাসে পাঁচ ছয় হাজার টাকা আয় করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন।
কেশবপুর সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আলাউদ্দিন জানান, দীর্ঘদিন জলাবদ্ধতার কবলে পড়ে এলাকার মানুষ অসহায় হয়ে পড়ে। সুপারী শিল্পে হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে হলে সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন।
কেশবপুর সোনালী ব্যাংক শাখার ব্যবস্থাপক মোঃ ফারুকুজ্জামান জানান, সুপারী হস্ত শিল্পের জন্য ঋণ দেয়ার কোন স্কীম তার শাখায় নেই। তবে এলাকায় গিয়ে দেখেছি শত শত নারী বাড়িতে বসে সুপারী কেটে অর্থনৈতিকভাবে স্বচ্ছল হচ্ছেন। এই হস্ত শিল্পে ঋণ দেয়া যায় কিনা তা কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নসরাত জাহান বলেন, গ্রামীণ নারীদের কর্মসংস্থান ও ক্ষমতায়নে এই সুপারী টুকরো করার এ শিল্পের কাজে সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণসহ সকল সুযোগ সুবিধা দেয়া হবে।

 

সুন্দরবনটাইমস.কম/নিজস্ব প্রতিবেদক

 


আপনার মতামত লিখুন :

নিজস্ব প্রতিবেদক