অযত্ন-অবহেলায় চুকনগর বধ্যভূমি, ৫০বছরেও স্মৃতিসৌধ ও কমপ্লেক্স নির্মান হয়নি

প্রকাশিত: ৯:২৫ অপরাহ্ণ, জুন ৭, ২০২১ | আপডেট: ৯:৩৫:অপরাহ্ণ, জুন ৭, ২০২১
ডুমুরিয়ার চুকনগর বধ্যভূমির সামনের অংশ।

দিনটি ছিল ১৯৭১ সালের ২০শে মে রোজ বৃহস্পতিবার। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী হানা দেয় খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার মালতিয়া গ্রামে । সেদিন গুলি ও জবাই করে প্রায় ১০ হাজার নারী পুরুষ ও শিশুকে হত্যা করেছিল পাক বাহিনী। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর স্থানীয় প্রশাসন বধ্যভূমির স্থান চিহিৃত করে। দেশের মধ্যে যে কয়টি বধ্যভূমি রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম ‘চুকনগর বধ্যভূমি’।

সোহাগ মাল্টিমিডিয়া এন্ড ট্র্যাভেলস

কিন্তু প্রায় সারা বছর অযত্ন-অবহেলায় পড়ে থাকে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলার মালতীয়া গ্রামের মোঃ ইসমাইল শেখ (৬৫) বলেন, ‘পাকিস্তানী বাহিনী ও তার দোসররা চুকনগরে নিরীহ মানুষের রক্তে বধ্যভূমি লাল করেছিল। অসংখ্য মানুষের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আজ আমরা স্বাধীন দেশ পেয়েছি। অথচ গণহত্যার সাক্ষী এ স্থান বলতে গেলে সারা বছরই পড়ে থাকে অযত্ন আর অবহেলায়। স্বাধীনতার আজ প্রায় ৫০বছর অতিবাহিত হতে চলেছে। কিন্তু আজও এখানে একটি পূর্ণাঙ্গ স্মৃতিসৌধ ও পূর্ণাঙ্গ বধ্যভূমি কমপ্লেক্স নির্মাণ করা সম্ভননি।

খুলনা শহর থেকে প্রায় ৩২ কিলোমিটার পশ্চিমে ডুমুরিয়া উপজেলার আটলিয়া ইউনিয়নের চুকনগরে একটি বধ্যভূমির স্মৃতিস্তম্ভ নির্মান করা হয়েছিল ২০০৬সালে। কিন্তু নামফলক বা সাইনবোর্ড চোখে পড়ে না। স্মৃতিস্তম্ভের বেদীর পেছনের অংশে বড় একটি ফাটল রয়েছে। এক পাশের এক সারি ইট উঠে গেছে। সীমানা প্রচীরের দক্ষিণ-পশ্চিম কোনার একটি বড় অংশ সম্পূর্ণ ভাঙ্গা। প্রাচীরের এক কোনায় পড়ে আছে বেশ কিছু ময়লা-আর্বজানা।

উপজেলা প্রশাসন ও চুকনগর গণহত্যা ১৯৭১ স্মৃতিরক্ষা পরিষদের উদ্যোগে এখানে গণহত্যার দিন ২০মে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস, বিজয় দিবস ও স্বাধীনতা দিবসে ফুল দেওয়ার মতো ছোট খাটো অনুষ্ঠান হয়।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০০৫ সালে বধ্যভূমির জন্য এখানে ৭৮শতক জমি কেনেন সরকার। ২০০৬ সালে ৩২ শতকে তাদের পুণ্য স্মৃতিতে স্তম্ভ তৈরি করা হয়।

অযত্ন-অবহেলায় চুকনগর বধ্যভূমি

ডুমুরিয়ার চুকনগর বধ্যভূমির পিছনের অংশ।

এরপরে ২০২০ সালের ১৮ অক্টোবর নতুনভাবে বধ্যভূমির পূর্ণতা দেয়ার জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগে পত্র প্রদান করেন খুলনা গণপূর্ত বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী। ১৯৭১সালের ২০মে চুকনগরে হয়েছে ইতিহাসের সর্ববৃহৎ বর্বরতম হত্যাযজ্ঞ । পাকিস্তানীদের হাত থেকে জীবন ও সম্মান বাঁচাতে এবং যুদ্ধের ভয়াবহতা থেকে বাঁচতে খুলনার আশপাশ বিভিন্ন জেলা, উপজেলার অন্তত প্রায় ১লাখ মানুষ চুকনগর থেকে সাতক্ষীরা হয়ে ভারতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তারা খুলনা শহর, বাগেরহাট, বটিয়াঘাটা, দাকোপ, ডুমুরিয়া, ফুলতলাসহ বিভিন্ন উপজেলার মানুষ ছিল। সেদিন হাজার হাজার মানুষ ভারতে আশ্রয় নিতে ঘর-বাড়ি ছেড়েছিলেন। তাদেরই একাংশ ১৯ মে রাতে চুকনগরে থেমে ছিলেন। এমন সময় পাক বাহিনী ও রাজাকাররা নিরস্ত্র মানুষকে অবিচারে অন্যায়ভাবে হত্যা করেছিল সেদিন। চুকনগর বধ্যভূমি সংরক্ষণ করছেন মোঃ ফজলুর রহমান মোড়ল। তিনি বলেন, বধ্যভূমি পরিদর্শন করে শিগগিরই পূর্ণতা দেয়ার জন্য প্রকল্প প্রণয়ন করার কথা বলে গেছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব। আশা করা যায় তিনি একটা কিছু করবেন চুকনগর বধ্যভূমির জন্য। কিন্তু ওপরে ছাউনি না থাকায় নিচের দিকে বর্ষার পানি পড়ে স্যাঁতসেঁতে হয়ে পড়েছে।

চুকনগর গণহত্যা ১৯৭১ স্মৃতিরক্ষা পরিষদ এর সভাপতি অধ্যক্ষ এবিএম শফিকুল ইসলাম বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও বধ্যভূমিতে স্মৃতিসৌধ ও পূর্ণাঙ্গ কমপ্লেক্্র তৈরি করা হয়নি। তার দুঃখ, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিল পত্র’র ১৫ খন্ডের কোথাও চুকনগরের ইতিহাস নেই। প্রতি ২০মে নিজেরা যতটুকু পারি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানাই। সরকারি প্রতিশ্রুতি কখনোই পূরণ হয় না। কেবল স্মৃতিসৌধের মূল স্তম্ভটি হয়েছে।

ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ( ইউএনও) মোঃ আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, যতদ্রুত চুকনগর বধ্যভূমির পূর্ণতা দেওয়া যায়। সে জন্য জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্থানীয় সরকার বিভাগ ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছি ।

 


আপনার মতামত লিখুন :

গাজী আব্দুল কুদ্দুস। নিজস্ব প্রতিবেদক। চুকনগর, খুলনা