৯ ডিসেম্বর কপিলমুনি মুক্ত দিবস

প্রকাশিত: ৫:৩৩ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ৮, ২০১৯ | আপডেট: ৫:৩৩:অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ৮, ২০১৯

সোহাগ মাল্টিমিডিয়া এন্ড ট্র্যাভেলস

এইচ এম এ হাশেম, কপিলমুনি(খুলনা):
৯ ডিসেম্বর কপিলমুনি মুক্ত দিবস। কপিলমুনিবাসীর কাছে ঐতিহাসিক দিন এটি। অনেক আগে থেকে এলাকাটি হিন্দু অধ্যুষিত হওয়ায় বাংলাদেশের সব স্থানের চেয়ে এখানে নিরীহদের উপর নির্যাতনের মাত্রা ছিল অনেক বেশি। ১৯৭১ সালের এই দিনে কপিলমুনির মুক্তিকামী দামাল ছেলেরা দেশের অন্যতম এ রাজাকার ঘাঁটিতে আঘাত এনে এলাকাটি শত্রুমুক্ত করে।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, আধুনিক কপিলমুনির রুপকার স্বর্গীয় রায় সাহেব বিনোদ বিহারী সাধুর সুরম্য অট্টালিকা তুল্য ২তলা বাড়ীটি পাকবাহিনী আর তাদের দোসররা দখল করে দূর্ভেদ্য ঘাঁটি তৈরী করে। এই বাড়ীর একটি কক্ষে এলাকার সুন্দরী যুবতীদের ধর্ষণ করতো তারা, একটি কক্ষে গৃহপালিত পশু ধরে এনে রেখে রান্না করা হতো, অন্য একটি কক্ষে তারা রাত্রী যাপন করতো। ঐ ভবন থেকেই তারা অত্রালাকায় যুদ্ধ ও শোষণ করার নীল নকশা আঁকতো।


১৯৭১ সালের ২১ জুলাই এম এ গফুর ও শামছুল আরেফিন (লেঃ) এর নেতৃত্বে ১৮০ জনের মুক্তি বাহিনী কপিলমুনির রাজাকার ঘাঁটিতে হানা দেয়, যুদ্ধ চলে একটানা ২৪ ঘন্টা। এলাকাবাসীর অসহযোগীতার কারণে এ আক্রমণে সফলতা আসেনি, সম্ভব হয়নি সেদিন পাকীদের পরাস্থ করা। এরপর ২য় দফায় যুদ্ধের প্রস্তুতি নেয় মুক্তিযোদ্ধারা।
৬ ডিসেম্বর রাত ১২টা ১মিনিটে ১২টি ক্যাম্পের প্রায় ৪ হাজার মুক্তিযোদ্ধার অংশগ্রহনে যুদ্ধ শুরু হয়। চারিদিক নিস্তব্দতা, মৃত্যু ভয়ে আতংকিত মানুষ ঘর ছেড়ে বনজঙ্গলে ও নিরাপদ স্থানে আশ্রায় নিচ্ছে। কোলাহলমুক্ত ভূতুড়ে পরিবেশ গোটা কপিলমুনিতে। শুরু হয় রাজাকার ঘাটিতে মুক্তিযোদ্ধাদের শাড়াশি আক্রমণ। কপিলমুনির পার্শ¦বর্তী প্রতাপকাটি কাঠের পুলের উপর মুক্তিবাহিনীকে রাজাকাররা চ্যালেঞ্জ করতেই মুক্তিবাহিনীর মেশিন গর্জে ওঠে। সেখানে ৮জন রাজাকার গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু বরণ করে। এরপর মুক্তিবাহিনী কপিলমুনির নাথপাড়ায় ডিউটিরত পাকবাহিনীর অসংখ্য সদস্যকে গুলি করে মারতে সক্ষম হয়। কপোতাক্ষ নদীর ওপার অর্থাৎ সাতক্ষীরার কানাইদিয়া থেকে আরসিএলের আওয়াজ গোটা এলাকা প্রকম্পিত করে তোলে। চতুর্দিক থেকে শাড়াশি আক্রমণ শুরু করে মুক্তি বাহিনী। দীর্ঘ সময় যুদ্ধের পর আনোয়ার হোসেন মাথায় গুলি বিদ্ধ হয়ে শহীদ হন। এসময় তোরাব আলীর পেটে গুলি লেগে আহত হন। ৭ ও ৮ তারিখ বিরতীহীনভাবে যুদ্ধ চলে, ৯ ডিসেম্বর সকাল ১০টা ২০ মিনিট পর্যন্ত যুদ্ধ চলে। এরপর ১৫৫জন রাজাকার মুক্তি বাহিনীর কাছে আত্মসমার্পন করে। এ খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে হাজার হাজার নারী পুরুষ কপিলমুনিতে জড়ো হয়। এরপর কপিলমুনি সহচরী বিদ্যামন্দিরের মাঠে জনতার আদালতের রায়ে ৭জন দূর্ধর্ষ রাজাকারকে ভয়ংকর শাস্তি দিয়ে মরা হয় এবং বাকিদের প্রকাশ্যে গুলি করে মারা হয়।


এদিকে এলাকাবাসীর প্রশ্ন পাকবাহিনীর কবল থেকে গোটা কপিলমুনিবাসীকে মুক্ত করার এই দিনটি আসলেই কি ৯ডিসেম্বর? না কি ৭ ডিসেম্বর? তা নিয়ে প্রবীণদের কাছে থেকে গেছে মতভেদ, আর নবপ্রজন্মের কাছে রয়েছে জিজ্ঞাসা। এই মতভেদের অবসান ঘটাতে ২০১০সালে কপিলমুনিতে দক্ষিণাঞ্চলের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সমন্বয়ে একটি বিশেষ সভা অনুষ্ঠিত হলেও আজ পর্যন্ত সঠিক তারিখ নিয়ে জিজ্ঞাসা থেকেই গেছে।

এবিষয়ে পাইকগাছা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও যুদ্ধকালীণ সাবসেক্টর কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা স ম বাবর আলী বলেন, ‘অনেক ত্যাগের বিনিময়ে আমরা যুদ্ধ করে কপিলমুনিকে ৭ ডিসেম্বর মুক্ত করি’। তারিখ নিয়ে বিতর্কের প্রশ্নে তিনি আরো বলেন, ‘প্রকৃত তারিখই ৭ ডিসেম্বর’। এদিকে পাইকগাছা উপজেলার নোয়াকাটী গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা সরদার ফারুখ আহম্মেদ ভিন্নমত পোষণ করেন। তিনি বলেন, ‘কপিলমুনি মুক্ত দিবস ৯ ডিসেম্বর, এদিন আমরা এলাকাটি রাজাকার মুক্ত করেছিলাম’।


এদিকে এ দিনটি স্মরণীয় করে রাখতে কপিলমুনি আঞ্চলিক মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ সমিতি কর্মসূচী হাতে নিয়েছে। আয়োজন করেছে নানান অনুষ্ঠানের। আজ সূর্যোদয়ের সাথে সাথে সমিতি কার্যালয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল সাড়ে ৮ টায় বিজয় র‌্যালী, সাড়ে ৯ টায় পথসভা অনুষ্ঠিত হবে।

 

 

 

সুন্দরবনটাইমস.কম/এইচ এম এ হাশেম/কপিলমুনি



আপনার মতামত লিখুন :

নিজস্ব প্রতিবেদক