ভিক্ষা নয়, কর্মের মাধ্যমে ঘুরে দাঁড়াতে সড়ক দুর্ঘটনায় পঙ্গু ফরহাদের আকুতি

প্রকাশিত: ৮:৩৪ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ৪, ২০২১ | আপডেট: ৮:৩৪:অপরাহ্ণ, এপ্রিল ৪, ২০২১
এস এম ফরহাদ

এখনও মানবতা ধুঁকছে নিরবে নিভৃতে। অসহায়ত্বের লুকানো কান্না কেউ দেখতে না পেলেও কপিলমুনিতে রবিবার দুপুরে এ প্রতিনিধির ক্যামেরায় ধরা পড়লো চোখের নোনাজলে ভেজা এক হতভাগা যুবকের ছবি।

সোহাগ মাল্টিমিডিয়া এন্ড ট্র্যাভেলস

হতাশা আর ক্ষুধার জ্বালায় বিবর্ণ মুখ থেকে অস্ফুট কথায় অনেকটা শরমে বললো তার বিষাদময় জীবনের বেদনার কথা। সুদর্শন ও সুঠাম দেহের অধিকারী এস এম ফরহাদ হোসেন (৩২) এখন পংগু। ২০১৪ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারী পড়ন্ত বিকালে মটর সাইকেল-নসিমনের সাথে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় মারাত্মক আহত হয় সে।

মাথায় প্রচন্ড আঘাত সহ ক্ষত বিক্ষত হয় দেহের বিভিন্ন অংশ। বাম পায়ের উপর পর্যন্ত হাড় চুর্ণ বিচূর্ণ হয়ে মুমূর্ষুবস্থায় খুলনা ২৫০ শয্যা হাসপাতালে নেয়া হয় তাকে। সেখান থেকে ঢাকার পংগু হাসপাতাল ঘুরে নেয়া হয় ভারতে। সেখানে ব্যায়বহুল চিকিৎসায় প্রাণে বাঁচলেও উরু থেকে বাম পা’টি বিচ্ছিন্ন করা হয়। আর সেখান থেকেই শুরু হয় তার অভিশপ্ত পংগু জীবন। ফরহাদের ব্যবসা কাঁকড়া, বাগদা ও গলদার। স্ত্রী ও ৮ বছরের পুত্র ফাহিমকে নিয়ে সুখেই ছিল ফরহাদ। ব্যবসার সমস্ত পুঁজি দিয়েও চিকিৎসা ব্যায় নির্বাহ না হওয়ায় জন্মস্থান পাইকগাছার খড়িয়ার সবটুকু জায়গাজমি বিক্রি করতে হয়েছে তার, পিতা মোশাররফ সরদার ও বেশ অসহায়।

বর্তমানে পিতার একচিলতে জায়গার উপর গোলপাতার ছাউনির একটি ভাঙা ছোট্ট ঘরে বসবাস করলেও মনে দুঃখ নেই ফরহাদের। তবে ক্ষুধার যন্ত্রণা থেকে বেঁচে থাকা আর তৃতীয় শ্রেনীতে পড়ুয়া মেধাবী প্রিয় সন্তান ফাহিমের অনাগত ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তার গহীন সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছে সে। স্ত্রী ও সন্তানের ক্ষুধার জ্বালা যখন চরমে ওঠে, কেবল তখনি ফরহাদ হাত পাততে নিজ এলাকা ছেড়ে চলে যায় দুরের জনপদে শুধু লজ্জার খাতিরে। সাহায্যের জন্য অন্যের কাছে হাত পাততে শেখেনি কখনও ফরহাদ। ভিক্ষা করাকে ঘৃণা করতো সে। কিন্তু জীবনের এই কঠিন বাস্তবতায় একটি ক্রেচকে সঙ্গী করে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হেটে মানুষের কাছে হাত পাততে হবে তা ভাবিনি কোনদিন। তবে প্রচন্ড আত্ম সম্মান আর লোকলজ্জার কারণে অচেনা পুরী হলো তার ভিক্ষার জায়গা। যেন এলাকার কেউ জানতে ও দেখতে না পারে। এভাবে ভিক্ষা করে সংসার চলছে তার। মনের খেদে ফরহাদ জানালো আজ পর্যন্ত বিন্দুমাত্র সরকারী সাহায্য পায়নি সে।

ফরহাদ জানান, ‘মানবতার জননী প্রধানমন্ত্রী অসহায় মানুষের ক্ষুধা নিবারণের জন্য তিনি নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, কিন্তু আমার মত দুর্ভাগার ভাগ্যে সরকারী সাহায্যের ছিটেফোঁটাও জোটেনি।’


আপনার মতামত লিখুন :

এইচ এম এ হাশেম। নিজস্ব প্রতিবেদক। কপিলমুনি, খুলনা