সাতক্ষীরার পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৭১১ কি.মি. বেড়িবাঁধের মধ্যে ৪৮৩ কি.মি. বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ ॥ আতংকে উপকুলীয় এলাকার লক্ষাধিক মানুষ

প্রকাশিত: ৬:১৭ অপরাহ্ণ, জুন ২৪, ২০১৯ | আপডেট: ৬:২৬:অপরাহ্ণ, জুন ২৪, ২০১৯
  • টেকসই ভেড়িরাধ নির্মানের মহা পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে
  • সম্ভব্য ব্যায় ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৭শ কোটি টাকা
  • হাইওয়ে হিসাবে ব্যবহার করা যাবে

সাতক্ষীরা সংবাদদাতা:
ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে সাতক্ষীরার পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন ৭১১ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে ৪৮৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ। গেলো কয়েক বছরেও সিডর-আইলায় ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ সংস্কার না হওয়ায় চরম আতংকে জেলার শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলার উপকুলীয় এলাকার লক্ষাধিক মানুষ। এদিকে বাধভাঁঙ্গনের ফলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও ঠিকাদারের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটলেও-প্রতিবছর ওই সকল ইউনিয়নের ভৌগলিক মানচিত্রের পরিবর্তন হচ্ছে। টেকসই ভেড়িরাধ নির্মানের মহা পরিকল্পনার কথা জানালেন-সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী।
সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাওবো) অফিস সুত্রে জানাযায় গেছে, ৬০ দশকে নির্মিত সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে ডিভিশন-এক ও ডিভিশন-দুইয়ের অধিনে ৭১১ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে প্রায় ৭০টি পয়েন্টে ৪৮৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। ফলে আতংকে দিন কাটাচ্ছে নদীর তীরবর্তী অঞ্চলের লক্ষাধিক মানুষ।
এরই মধ্যে শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা,পদ্মপুকুর,বুড়িগোয়ালিনী,মুন্সিগঞ্জ,রমজাননগর ও আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর,আনুলিয়া,শ্রীউলা,আশাশুনি সদর ইউনিয়নে কপোতাক্ষ ও খোলপেটুয়া নদীর ভেড়ীবাধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে বিস্তির্ণ এলাকা।
এছাড়া দেবহাটা উপজেলার আন্তঃ সীমাস্ত নদী ইছামতির বাংলাদেশ পাড়ে বেশ কয়েকটি পয়েন্টে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। দ্রুত এসব এলাকার ক্ষতিগ্রস্থ বেড়িবাঁধ সংস্কার করা না হলে কপোতাক্ষ নদ, খোলপেটুয়া, ইছামতি নদীর বেড়ি বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। এতে প্লাবিত হতে পারে আশাশুনি, শ্যামনগর, দেবহাটা উপজেলার বিস্তির্ণ এলাকা।

সোহাগ মাল্টিমিডিয়া এন্ড ট্র্যাভেলস

আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের শ্রীপুর গ্রামের ইয়াছিন আলী লস্কর,হাফিজুল ইসলাম,হাসান ঢালী বাক্কার ঢালী ও মনিরুল ইসলাম জানান, ২০০৯ সালের ২৫ মে প্রলয়ংকারী ঘুনিঝড় আইলা ও জলোচ্ছ্বাসে লন্ডভন্ড হয়ে যায় কপোতাক্ষ ও খোলপেটুয়া নদীবেষ্টিত দ্বীপ ইউনিয়ন গুলো। এরপর থেকে এপর্যন্ত বেড়িবাঁধ নির্মান না হওয়ায় বছরে কমপক্ষে তিন থেকে চার বার বাঁধ ভেঙ্গে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে হাজার হাজার বিঘা ফসলি জমি, মৎস্য ঘের গাছপালা এবং বসত বাড়ি তলিয়ে যায়। প্রতিটি মুহুর্ত্ব আতংকে থাকতে হয় কখন জানি বাঁধ ভেঙ্গে বাড়ি-ঘর ভাসিয়ে নিয়ে যায়। “আমরা ত্রান চাই না, ভাত কাপড় নয়, বেঁচে থাকার জন্য টেকসই বেড়িবাঁধ চাই”।
সাতক্ষীরা জলবায়ু পরিষদের সদস্য সচীব অধ্যক্ষ আশেক-ই-এলাহী বলেন,জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুকিতে রয়েছে এই অঞ্চলে মানুষ,তাই মজবুত ভেড়িবাধের বিকল্প নেই।
আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শেখ জাকির হোসেন বলেন,তার ইউনিয়নের হিজলিয়া, কোলা, শুভদ্রকাটি, কুড়িকাউনিয়া, চাকলা, দয়ারঘাট, মনিপুর, শ্রীপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় বেড়িবাঁধ ভাঙতে ভাঙতে আর এক-দুই হাত অবশিষ্ট আছে। এ বছর বেড়িবাঁধ ভেঙে তার ইউনিয়ন অন্তত ৬ থেকে ৭ বার প্লাবিত হয়েছে। আইলা বিধ্বস্ত উপকুলীয় এলাকায় টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা না করায় ৪০ থেকে ৪৫ বছর পিছিয়ে যাচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত ইউনিয়নের স্থানীয়রা।
সাতক্ষীরার পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফউজ্জামান খান বলেন,ষাটের দশকে নির্মিত বেড়িবাঁধ গুলো বড় ধরনের কোন মেরামত করা হয়নি,তবে দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত বাধ নির্মাণে মহাপরিকল্পনার কথা জানালেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের এই নির্বাহী প্রকৌশলী। তিনি আরও বলেন, আগামী নভেম্বর ডিসেম্বর নাগাদ ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ দ্রুত সংস্কারের মহা পরিকল্পনা হাতে নিওয়া হয়েছে। যেটি হাইওয়ে হিসাবে ব্যবহার করা যাবে। যার সম্ভব্য ব্যায় ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৭শ কোটি টাকা। তবে আশ্বাস নয়,দ্রুত বাস্তাবয়ন দেখতে চাই সাতক্ষীরাবাসী।

 

সুন্দরবনটাইমস.কম/শা:/সাতক্ষীরা

 

 


আপনার মতামত লিখুন :

নিজস্ব প্রতিবেদক