সর্বনাশা ঘূণিঝড় বুলবুলের ভয়াল থাবায় বিলকিসের স্বপ্ন চুরমার

প্রকাশিত: ৬:৪২ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১২, ২০১৯ | আপডেট: ৬:৪২:অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১২, ২০১৯

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা:
বিলকিস বেগমের মাথা গোজার শেষ সম্বল ছিল বসত ঘরটি। সে বসত ঘরটি সর্বনাশা ঘূণিঝড় বুলবুলের ভয়াল থাবায় চুরমার হয়ে গেছে। থাকবে কোথায় আর যাব কোথায় তিনি কিছুই জানেন না।
মাথা গোজার শেষ সম্বলটুকু হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে বিলকিস বেগম। নিজের কাছে কোন টাকা-পয়সাও নেই। এভাবেই আহাজারি করছেন আর ফুফিয়ে ফুফিয়ে কাঁদছেন। বিলকিস বেগমের বাড়ি সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার পদ্মপুকুর ইউনিয়নের পাতাখালি গ্রামের বিলকিস বেগম।

সোহাগ মাল্টিমিডিয়া এন্ড ট্র্যাভেলস

শ্যামনগর উপজেলার পদ্মপুকুর ইউনিয়নের ৮নং পাতাখালি গ্রামের বিলকিস বেগম কাঁদতে কাঁদতে বলেন,তার স্বামী মানুসিক প্রতিবন্ধি। সে ঘর থেকে বের হতে পারে না। তিন মেয়ে সন্তান। এই ঘরটুকু ছাড়া বাকি কিছুই নেই তার। সেলাই মেশিনের কাজ করে যে টাকা রোজগার হয় সেটুকু দিয়েই চলে সংসার। সর্বনাশা ঘূণিঝড় বুলবুলের ভয়াল থাবায়
শেষ আশ্রয়টুকুও আজ কেড়ে নিল। এখন কি করবো, কোথায় যাবো অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে কিছুই ভাবতে পারছিনা। তিনি আরও বলেন, ঘরে একটি কানা কড়িও নেই। নেই খাবার মত কিছুই। বেড়ার ঘরটি ছিন্ন ভিন্ন হয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত চেয়ারম্যান-মেম্বাররা কেউ খোজ নিতেও আসেনি।

স্থানীয় মো. ইদ্রিস আলী বলেন, সর্বনাশা ঘূণিঝড় বুলবুল ভোর রাতে শুরু হওয়ার পর ঝড়ের কবলে পড়ে এলাকার বহু ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে। মানুষের মাঝে হাহাকার পড়ে গেছে। বিলকিস বেগমের সম্পদ বলতে শুধু এই ঘরটুকুই ছিল। সেটুকুও তার অবশিষ্ট নেই। বিলকিস বেগমের মত হাজার মানুষ পথে বসেছে।

শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান জিএম মাসুদুল আলম বলেন, গাবুরা ইউনিয়নের অবস্থাও করুন। তার ইউনিয়নের মাটির ও টিনের তৈরী একটি ঘরবাড়িও অবশিষ্ট নেই। সবগুলোই বিধ্বস্ত হয়ে গেছে।
শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালীনি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান ভবতোষ মন্ডল বলেন, এক কথায় ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে গোটা এলাকা। রাস্তায় গাছ উপড়ে পড়ে যোগাযোগ ব্যবস্থাও বিচ্ছিন্ন হয়ে রয়েছে। মাটির ঘরবাড়ি সব বিধ্বস্ত।
সাতক্ষীরা জেলা কন্ট্রোল রমের দায়িত্বরত কর্মকর্তা প্রশান্ত কুমার রায় বলেন,ধীরে ধীরে আবহাওয়ার পরিবেশ শান্ত হচ্ছে। উপকূলবর্তী এলাকার মানুষদের পাশে দাঁড়াবে সরকার। রাস্তায় গাছ পড়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন থাকার কারণে এখনও উপকূলবর্তী মানুষদের কাছে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। তবে আমরা ইতোমধ্যে বিধ্বস্ত ঘরবাড়ির তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে। এসব মানুষদের সাহায্য সহযোগিতা করা হবে।

সাতক্ষীরা জেলা দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক এস.এম মোস্তফা কামাল রাইজিংবিডিকে জানান,ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতে উপকুলীয় সাতক্ষীরা জেলায় ৩৩ হাজার ৬৬০টি কাঁচা ঘরবাড়ি আংশিক এবং ১৬ হাজার ৫৮০টি কাঁচা ঘরবাড়ি সম্পূর্ন বিদ্ধস্ত হয়েছে। ২ লাখ ২৬ হাজার মানুষ কমবেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৫ হাজার ১৭ টি মৎস্য ঘের পানিতে তলিয়ে গেছে যার জমির পরিমান ৫ হাজার ৭১৯ হেক্টর। মাছের ক্ষতি হয়েছে ৪১৪ মেট্রিক টন। যার আনুমানিক মুল্য ১০ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের ১২ কিলোমিটার বেঁড়িবাধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জমির ফসল নষ্ট হয়েছে ২৫ হাজার হেক্টর জমির। এছাড়া আক্রান্ত হয়েছে ১ হাজার ২০০ হেক্টর জমির সবজি ক্ষেত, ৫০০ হেক্টর জমির শরিষা ক্ষেত, ২০০ হেক্টর জমির পানের বরজ। এছাড়া জেলা বন বিভাগ, পাউবো, জেলা পরিষদ, সড়ক জনপদ বিভাগের আওতাধিন কয়েক লাখ গাছ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

 

 

 

সুন্দরবনটাইমস.কম/শা:গো:/সাতক্ষীরা


আপনার মতামত লিখুন :

নিজস্ব প্রতিবেদক