রম্য রচনা: “যদি এমন হতো”

প্রকাশিত: ১১:৪৮ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ৩১, ২০২০ | আপডেট: ১১:৪৮:পূর্বাহ্ণ, মার্চ ৩১, ২০২০
যদি এমন হতো
 ….রুদ্র অয়ন
কিশোর বয়সে নানীর কাছে শোনা একটি গল্প মনে পড়ছে।
তখন ধানের গোলায় ইঁদুরের ব্যাপক উৎপাত। বড় বড় ধেড়ে ইঁদুর ধানের গোলায় সারা দিন রাত দাঁতের চূড়ান্ত ব্যবহার করতো। ক্ষতির পরিমাণ নেহায়েত কম নয়! এই ভাবে চলতে থাকলে গোলার অর্ধেক ধান ইঁদুরেই খাবে, ছেলে পুলের পাতে জুটবে ধানের তুষ।
এই ইঁদুরের হাত থেকে রেহাই পাওয়া যায় কিভাবে ? ইঁদুরের অতি উৎপাত থেকে মুক্তির উপায় কি?
অনেক ভেবে ভেবে আমার প্রচণ্ড বুদ্ধিমতী নানী একটি উপায় বের করলেন। বহু কসরত করে একটা ধেড়ে ইঁদুর ধরে ফেললেন। উনি কিন্তু ইঁদুরটাকে মারলেন না। ইঁদুরটাকে ধরে তার পাছা শেলাই করে আবার ধানের গোলার মধ্যই ছেড়ে দিলেন। ইঁদুরটিও আবার মহা উৎসবে গলা পর্যন্ত ধান খেয়ে ফেললো । খাওয়ার সময়তো ঠিকই পেট ভরে খেয়েছে কিন্তু মল ত্যাগ আর করতে পারছে না! কারণ বাছাধনের গুহদ্বার শেলাই করা। এইবার শুরু হল আসল খেলা। চরম উত্তেজনাময় খেলা। ধেড়ে ইঁদুরটি মলত্যাগ করতে না পারার যন্ত্রণায় প্রায় পাগলের মত আচরণ শুরু করলো। আশে পাশের এই ইঁদুরকে কামড়ায়, ওই ইঁদুরকে কামড়ায়, নিজের শরীর ঘুরে ঘুরে নিজেকে কামড়ায়! সে এক যা-তা অবস্থা, একেবারে রক্তাক্ত কুরুক্ষেত্র। পাগলা ইঁদুরটি গর্তের ভেতরে লুকানো ইঁদুরগুলোকেও ছাড়লোনা! এক দিনের মধ্যে সব ইঁদুর উধাও। কিছু মৃত আর কিছু পলাতক। তার পর বহুদিন ধানের গোলায় ইঁদুরের উৎপাত আর দেখা যায় নাই।
ইদানীং আমার যে কি হয়েছে! যেই গল্পই বলি তা রূপক অর্থে বাংলাদেশের বর্তমান দশাকেই ইঙ্গিত করে। সরকারি প্রায় সব ক্ষেত্রেই অনিয়ম, দুর্ণীতিই আজ নিয়মে পরিনত হয়েছে! রাজনীতিবীদদের ডিজিটাল গলাবাজির শেষ নেই। আর উন্নয়ন! তৈল গ্যাস বিদ্যুতের দাম দফায় দফায় বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু গ্যাস জল বিদ্যুতের বিড়ম্বনারও অন্ত নেই! আন্দোলনের পরেও সড়ক দূর্ঘটনারোধে কোনও উল্লেখ্যযোগ্য পদক্ষেপ চোখে পড়েনি! সড়ক দূর্ঘটনাও হ্রাস পায়নি! ট্যাক্স কর বাড়ানো হয়েছে! অথচ জনসাধারণের জীবনযাপনের উন্নয়নে জোরালো কোনও পদক্ষেপ চোখে পড়ার মতো নয় ! মোবাইল ফোন কলের ভ্যাট ট্যাক্স ১৫% থেকে ২২% করা হয়েছে! জনগণের পকেট কাটতে সকল সুবিধায় জলঢেলে ফোন কল রেট বাড়ানো হয়েছে! সরকারের প্রতিটি কাজেই জনতার স্বার্থর চেয়ে নিজেদের স্বার্থ, নিজেদের পকেট ভারী করতেই দেখাগেছে ! এসব কি চরম অনিয়ম, স্বৈরাচারী নয়? ইচ্ছে হয় যে করেই হোক বাংলাদেশের চলমান লুটপাট, চুরি জোচ্চুরি আর ডিজিটাল দুর্নীতি বন্ধ করি। কিন্তু কোনও উপায় খুঁজে পাচ্ছি না।
আচ্ছা, আমার নানীর আবিষ্কার করা সূত্রটি ব্যবহার করলে কেমন হয়? একটা ধাড়ি দুর্নীতিবাজ নেতা, দুর্নীতিপরায়ন রাজনীতিবীদ ধরে পাছা সেলাই করে আবার মাঠে ছেড়ে দেয়া যায় যদি। দেখাই যাক না কি হয়।

 

সোহাগ মাল্টিমিডিয়া এন্ড ট্র্যাভেলস

সুন্দরবনটাইমস.কম/রম্য রচমা/লেখক:রুদ্র অয়ন/ঢাকা

 


আপনার মতামত লিখুন :

নিজস্ব প্রতিবেদক