ভালবাসার গল্প: “সম্পর্ক”

প্রকাশিত: ৩:১২ অপরাহ্ণ, মার্চ ১২, ২০২০ | আপডেট: ৩:১২:অপরাহ্ণ, মার্চ ১২, ২০২০
সম্পর্ক
……..রুদ্র অয়ন 
অবিন্যস্ত ভাবনাগুলো পড়ে থাকে মনের কোণে, বলা হয়ে ওঠেনা আর। অনেকবার বলতে গিয়েও বলতে পারেনা বিশাখা। শুভ্র’র পাশে মাথা নিচু করে বসে আছে সে।
শুভ্র’র ডাকে মাথা তুলে অবশেষে চোখে চোখ রাখে।  
শুভ্র ধমকে ওঠে, ‘গাধা কোথাকার। একটা কথা বলতে এত সংকোচ তোর?’
বিশাখা বলে, ‘এখন বাদ দাও।’   
বিশাখার হাত ধরে ওঠে দাঁড়ায় শুভ্র। বলে, ‘তবে চল ওঠা যাক।’
শুভ্র ভেবে পায়না এমন কি বলতে চায় বিশাখা। যার জন্য এত ভাব নিতে হচ্ছে! বিশাখা তো এমন ছ্যাবলা টাইপের মেয়ে নয়। আচ্ছা ব্যাপারখানা কি। প্রেম ট্রেমের বিষয় নয় তো? বিশাখা দেখতে শুনতে খারাপ নয় মোটেও। বরং সূচনার থেকে একটু ফর্সা। বিশাখাকে যে কারোরই ভালো লাগতে পারে। ভালোলাগার মতো যথেষ্ট গ্লামার রয়েছে ওর। শুভ্রও অবশ্য ব্যতিক্রম নয়। মাস্টার্স শেষ বর্ষে শুভ্র। আর বিশাখা মহিলা কলেজে অনার্স ২য় বর্ষ। দু’জনের বেশ ভাব ; কাছাকাছি বাড়ি দু’জনের। একই মহল্লার মেয়ের সাথে প্রেম। ধ্যাততেরি! এসব ব্যাপার নিয়ে মাথা ঘামানোর দরকার নেই । কি উল্টা পাল্টা ভাবছে ও। তারচেয়ে বরং সূচনা’র কথা ভাবা যাক। হাজার হোক সূচনা শুভ্রকে ভালবাসার কথা বলেছে। প্রত্যাখ্যান করার কোন কারণ নেই। শুভ্র সম্মতি ও দিয়েছে।
ভীষণ অস্থিরতায় রয়েছে বিশাখা। শুভ্রকে কথাটা কিভাবে যে বলা যায় ভেবেই পায় না সে। আর ও শালাও একটা গাধা। কিচ্ছু বোঝেনা। এত করে বোঝানোর চেষ্টা করেও বোঝানো গেল না যে বিশাখা ওকে ভালবাসে। পরক্ষণে মনে মনে সন্দেহ দেখা দিল বিশাখার। শুভ্র হয়তো ঠিকই বুঝতে পারে, কিন্তু কথাটা ওর মুখ থেকে শুনতে চায়। নয়তো একটা মেয়ে আর একটা ছেলে পার্কের নির্জন পরিবেশে শুধু শুধু হাওয়া খেতে যায় না। এজন্যে দুজনের মধ্যে একটা প্রেম প্রেম ভাব থাকতে হয়। এই সহজ কথাটা বোঝার মতো যথেষ্ট বয়স নিশ্চয়ই হয়েছে ওর।
কলেজের গেটে আসতেই বুকটা ধক করে ওঠে বিশাখার। সেই সাথে একটা আনন্দের ঢেউ খেলে গেল হৃদয়ের কোণে। খানিকটা অবাকও হল ফুল হাতে শুভ্রকে দেখে।    
শুভ্র এখানে কি করছে! বিশাখার জন্যে অপেক্ষা করছে? নাকি অন্য কারও জন্যে!  গোলক ধাঁধায় যেন পড়ে গেল বিশাখা। আচ্ছা দেখা যাক শুভ্র কি করে! বিশাখা সোজা হন হন করে হেটে যাচ্ছিল নিচের দিকে তাকিয়ে। শুভ্র ওকে ডাক দিয়ে বলল, ‘এই বিশাখা শোন।’
বিশাখা না শোনার ভান করে চলে যাচ্ছিল।
শুভ্র আবার ডাকল, ‘এই বিশাখা,শোন!’
এবার দাঁড়ায় বিশাখা। অবাক হওয়ার ভান করে বলল, ‘কি ব্যাপার তুমি এখানে?’
‘হ্যাঁ আমি। এই একটু কাজে এলাম আর কি?’ আমতা আমতা করে জবাব দেয় শুভ্র। 
‘গার্লস কলেজের গেটে তোমার আবার কি কাজ?’
‘না মানে এই এমনি আর কি। তুই আমার একটা উপকার করবি?’ বলল শুভ্র।
মনে মনে প্রমাদ গুনল বিশাখা। ‘আগে বলো তো দেখি।’ প্রতুত্তরে বলে বিশাখা।
‘আচ্ছা বলছি শোন। তোদের সেকশনে সূচনা আছে না? ওকে এই চিরকুটটা দিবি।’ বলে পকেট থেকে একটা ভাঁজ করা কাগজ বের করল শুভ্র। 
বুকটা ছ্যাঁত করে ওঠল বিশাখার। কাঁপাকাঁপা হাতে কাগজটা নিল সে। কেমন যেন কান্না পাচ্ছে তার। কান্না চেপে দ্রুত পদক্ষেপে গেটের ভেতর চলে গেল সে।
বিশাখা ভেবে পাচ্ছেনা কি করবে! চিরকুট কাগজটা কি সূচনাকে দেবে? নাকি ছিঁড়ে ফেলবে। উহ! কি অসহ্য! নিজের ওপর রাগ চরমে ওঠল বিশাখার। কি নির্বোধ মেয়ে! ভাললাগা ভালবাসা মুখ ফুটে বলতে পারলোনা!
ক্লাসে মন বসছে না সূচনার। কেমন একটা অস্থির অস্থির লাগছে। আনমনে উদাসী। স্যার কি পড়াচ্ছেন তার মাথামুণ্ডু কিছুই বুঝতে পারছে না সূচনা। বোঝার কথাও নয়। মনোযোগ না থাকলে কার সাধ্য বুঝাতে পারে। সূচনার সমস্ত মনোযোগ এখন গেটের দিকে। জানালার পাশে বসেছে সূচনা। এখান থোকে গেটটা পুরোপুরি দেখা যায়। কথা ছিল একটার আগে কলেজের সামনে শুভ্র আসবে। সূচনা ক্লাস শেষ করে বেড়িয়ে দু’জন রিক্সায় চাপবে। একটা প্রায় বাজতে চললো, সূচনার বিরক্তি ধরে গেছে। 
বিশাখা পাশের বেঞ্চে বসে আছে। কেমন একটা মলিন চেহারা। সূচনা দেখল বিশাখাকে। কি ব্যাপার! ওর আবার কি হলো ? মনে হচ্ছে ওর ওপর দিয়ে বড় কোন দুর্ঘটনা ঘটে গেছে! বিশাখার সাথে সূচনার সম্পর্কটা ভালই। খুব ঘনিষ্ঠ না হলেও বেশ মিল রয়েছে। ক্লাস শেষ হলে জিজ্ঞেস করে দেখবে সূচনা , কি হয়েছে তার ?
বিশাখা সূচনার দিকে তাকায়, জানালার পাশেই বসেছে। ইস্! আবার ঘন ঘন তাকাচ্ছে গেটের দিকে। ওই হাঁদারামটা আবার গেটের মধ্যে ঢুকবে নাকি। কাগজটা তো বিশাখা বাথরুমেই ছিঁড়ে ফেলে এসেছে। দুজনার দেখা না হলেই ভাল হয়। পরে শুভ্র জিজ্ঞেস করলে বলবে, সূচনা ক্লাসে আসেনি। কিন্তু সে তো ক্লাসে এসেছে। শুভ্র জানতে পারলে কি ভাববে! বড় স্বার্থপর ভাববে বিশাখাকে। যা ইচ্ছে ভাবুক। তাতে বিশাখার কিচ্ছু যায় আসে না। কিছুতেই সে মেনে নিতে পারবেনা সূচনার সাথে শুভ্র’র প্রেম হোক। কিন্তু বিশাখা বড় চিন্তিত! যদি ইতোমধ্যেই ওদের সম্পর্কটা পাকা হয়ে যায়। তখন কি হবে!
বড্ড দেরি হয়ে গেছে। নিজের ওপর বিরক্ত হয় শুভ্র। মেয়েটাও না কি বোকার হদ্দ, এখনও বের হচ্ছে না! নাকি কলেজেই আসেনি আজ! শালার মেয়েদের বিশ্বাস নেই। ওদের উড়ু উড়ু মন কখন কি ভাবে, কখন কি করে বোঝা মুশকিল। মেজাজই খারাপ হয়ে গেল শুভ্র’র, একটু দেরি হতেই পারে। শুভ্র’র হয়তো একটু দেরিই হয়েছে। তাই বলে কোনও খোঁজ থাকবে না! এটা কেমন কথা। এসব গবেট মেয়ের সাথে প্রেম চলে না। জরুরি সমস্যা থাকলে ফোন করে বলতেই পারে। শুভ্র যে ফোন করবে তার উপায় নেই। সূচনার ফোন বন্ধ। যা শালা। এবার বাসায় ফিরতে হবে। কলেজ কামাই গেল একদিন। সেদিনকার মতো বাসায় ফিরল শুভ্র ।
বিছানায় শুয়ে অনেকক্ষণ ঘুমানোর চেষ্টা করেও ঘুমাতে পারছেনা বিশাখা। এক অসহ্য মানসিক যন্ত্রণায় কাতর সে। অস্থির চিত্তে ভাবছে, শুভ্রর সামনে কথাটা কিভাবে তোলা যায়। ও যদি প্রত্যাখ্যান করে। শুভ্র তো সত্যি সত্যি সূচনাকে ভালবাসে। সেখানে বিশাখার উপস্থিতি কেমন দেখাবে! যেমন দেখায় দেখাক। তাতে বিশাখার কি। শুভ্রকে তার ভাল লাগতেই পারে। কি এমন রূপ আছে ওই মেয়েটার! ক্লাসেও বিশাখার থেকে ভাল নয়। 
সূচনা! সূচনা! সূচনা শুভ্র’র মাথাটাই নষ্ট করে দিয়েছে। কিন্তু বিশাখা কি করবে এখন। সূচনার কাছে হেরে যাবে! নাহ! কি সব আবোল তাবোল ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়ল তা নিজেও টের পেল না বিশাখা।
ইস! এমন ভাগ্য ক’জনার আছে! ভাগ্যিস সূচনা এমন ঘরে জন্মেছিল। নয়তো বস্তিতে জন্মালে আমেরিকা যাওয়া তো দুরের কথা এই বয়সে পুরো সংসারী হয়ে চুলায় লাকড়ি ঠেলতে হতো। শুভ্রর বাবা ডিভি অ্যাপ্লাই করেছিলেন। ভাগ্যের চাকা ঘুরতে সময় লাগেনি। স্ত্রী ও একমাত্র মেয়েকে নিয়ে আমেরিকা যাওয়ার ভিসাটা পেয়ে গেলেন তিনি। ব্যস আর যায় কোথায় ? স্বপ্নের আমেরিকা যাওয়ার সুযোগটা এখন সূচনার হাতের নাগালে। সূচনা বেশ খোশমেজাজেই আছে আজকাল কিন্তু মনটা একটু খারাপ হয়ে যায় সূচনার শুভ্রর কথা ভেবে। এতদিনের প্রেম আজ হঠাৎ থমকে দাঁড়াবে! হায়! শুভ্রকে নিয়ে সূচনার স্বপ্ন সাধনা সব ভেঙ্গে যাবে নিমেষে। কিন্তু সূচনা কি পারবে শুভ্রকে ভুলে যেতে! কিন্তু  উপায়ও নাই। আমেরিকার স্বপ্নে শুভ্রকে ভুলতেই হবে। জীবনের বাঁকে বাঁকে কত ঘটনাই তো ঘটে। কত মানুষের সাথে পরিচয় হয়। কারো সাথে সম্পর্কটা গভীরও হতে পারে। তাই বলে এটা মনে করে কষ্ট পাওয়া বুদ্ধিমানের কাজ নয়। কাউকে ভাল লাগতেই পারে। আর সব ভালোলাগার পরিণতি যে বিয়েতে গড়াবে এমন ধারনা করা সবার ক্ষেত্রে সব সময় হয়না। যেখানে সারাজীবনের নিশ্চয়তা, আমেরিকার উন্নত জীবন যাপনের হাতছানি, তার পথে সামান্য ভালোলাগা, ক্ষুদ্র ভালবাসা বাধা হতে পারে না। নাহ ! এটা ব্যাপার না সূচনার পক্ষে শুভ্রকে ভুলে যাওয়া। সূচনা পারবে তার ক্ষণিকের ভালবাসাকে ভুলে যেতে। এতটা বোকা সে নিশ্চয়ই নয় যে, শুভ্রর মত একটা ছেলে যার কোন ভবিষ্যৎ নাই তার জন্য নিজেকে উৎসর্গ করবে। সুখ আর আরাম আয়েশের হাতছানিকে উপেক্ষা করতে পারবেনা সূচনা। 
 
শুভ্রর মন বড়ই খারাপ আজ। সারাদিন বাসা থেকে বের হয়নি। সূচনাকে এত তাড়াতাড়ি হারাতে হবে ভাবেনি সে। কিন্তু বাস্তব বড় কঠিন। কঠিন বাস্তবতা সূচনাকে  কেড়ে শুভ্রকে করেছে একা। কিছু কিছু ছেলে মেয়ের কাছে প্রেম ভালবাসার চেয়ে অর্থ -বিত্ত-প্রতিপত্তি কোনও অংশে কম গুরুত্ব বহন করে না। বরং কোন কোন ক্ষেত্রে প্রেম ভালবাসাকে বিত্ত-বৈভবের সাথে এক পাল্লায় উঠাতেও তারা পিছপা হয় না। সান্ত্বনা খোজে শুভ্র। ব্যাপারটা সে বোঝার চেষ্টা করছে। সূচনা যদি ভাল থাকে তাতে বাঁধা দেয়ার কোনও কারণ  থাকতে পারেনা। সে ভাল থাক।  
সূচনার আমেরিকা যাওয়ার খবরটা শুনে খুশিই হল বিশাখা। যাক আপদটা বিদেয় হচ্ছে তাহলে। এবার শুভ্রকে পেতে আর কোন বাধাই থাকবেনা। তবুও একটু মন খারাপ হলো বটে। শুভ্র নিশ্চয়ই অনেক কষ্ট পেয়েছে। প্রেমিকা চলে যাচ্ছে ওকে ফাঁকি দিয়ে। কষ্ট তো পাওয়ারই কথা। কিন্তু তার জন্যে বিশাখার যে এত কষ্ট সহ্য করেছে তাতো সে বুঝতেও পারেনি!
শুভ্র এখন কি করছে দেখা যাক। একবার ফোন করলে কেমন হয়। ভাবল বিশাখা। ভাবতে ভাবতেই শুভ্রকে ফোন দেয় বিশাখা। ফোন রিসিভ করল শুভ্র। 
‘হ্যালো, বিশাখা কেমন আছিস?’ জিজ্ঞেস করে শুভ্র। 
‘ভালো, তোমার খবর বল। কেমন আছো?’ পাল্টা প্রশ্ন করে বিশাখা।
‘এই তো আছি। আমার আর থাকা।’ হতাশ কণ্ঠে বলল শুভ্র।
‘কেন? তোমার তো ভাল থাকার কথা। বেশ তো চলছে! মন্দ কি?’  বিশাখার কন্ঠে কৌতুক।
‘আহ! ফাজলামো করিস না। মন ভাল নেই আমার।’ বলল শুভ্র। 
‘কেন? পাখি উড়াল দিছে? তুমি বসে আছ কেন ? পাখির ডানা ধরছ না কেন?’ বলে বিশাখা। 
‘তুই থামবি বিশাখা! আমার ভাল লাগছে না।’ বিরক্তির কণ্ঠে বলল শুভ্র।  
‘না আমার কথা ভাল লাগবে কেন ? ভাল লাগবে তো সূচনার কথা!’ মেজাজ দেখিয়ে বলে বিশাখা। 
‘তুই তো আমার মনটাই খারাপ করে দিলি। প্লিজ এখন থাম আমার ভাল লাগছেনা। তোর সাথে পরে কথা বলবো।’ বলে শুভ্র।
‘না আমার কথা শেষ হয়নি। আমার কথা আজ তোমাকে শুনতেই হবে।’  বলল বিশাখা।
‘অসহ্য! বিশাখা, তুই কেন বুঝতে পারছিস না তোর এমন কথাবার্তা আমাকে কষ্ট দিচ্ছে। আমার মনটা এমনিতেই ভাল না।’ বলে শুভ্র।
‘ইস, খারাপ লাগছে! আমার বুঝি খারাপ লাগেনি। আমিতো পাথরের তৈরি। তাই না?’ অভিমানী শোনালো বিশাখার কণ্ঠ।
‘তোর কি এমন ক্ষতি করলাম! তোর খারাপ লাগবে কেন?’  জিজ্ঞেস করে শুভ্র।
‘খারাপ লাগবে কেন? তুমি যেন দুধের বাচ্চা! ফিডার খাও। কিছুই বুঝতে পারোনা!’ বিশাখার কন্ঠে ক্ষোভ।
চমকে ওঠে শুভ্র। অবাকও হয় কিছুটা!
‘আচ্ছা তুই কি বলতে চাস বলতো? ঠান্ডা মাথায় বল?’ বলে শুভ্র।
‘তুমি বুঝতে পারোনা?’
‘না বললে বুঝব কি করে?’ পাল্টা প্রশ্ন শুভ্র’র।
‘না বললেও বোঝা যায়। এমন অনেক কথা আছে যা মুখে না বললেও বুঝে নিতে হয়।’ বলে বিশাখা।
 শুভ্র কিছুক্ষণ নিরব থেকে জিজ্ঞেস করল, ‘আচ্ছা, বিশাখা। তুই কি আমাকে ভালবাসিস? ভনিতা না করে বলতো?’
‘এতোদিন লাগলো কথাটা বুঝতে?’ মুখটিপে রহস্য কণ্ঠে বলে বিশাখা। 
‘অমি এসব ব্যাপার একটু কম বুঝি। এতদিন বলিসনি কেন?’ সরল প্রশ্ন শুভ্র’র। 
‘বিকালে লেকের পাড়ে আসতে পারবে?’ প্রশ্ন করে বিশাখা।
একটু সময় নিয়ে জবাব দেয় শুভ্র, ‘হ্যাঁ, পারবো। বিকেল সাড়ে চারটার সময়।’
‘আচ্ছা ঠিক আছে এসো।’ বলে ফোন রেখে দেয় বিশাখা।
এ যুগের মেয়ে এতো চাপা স্বভাব হয় ! এতোটাই চাপা যে কিছুই বলেনি এতদিন! 
বিশাখা যদি শুভ্রকে একটু টাচ দিতো তবে আর সূচনার দিকে এগুতো না সে। সূচনা প্রসঙ্গে কোন কথা জিজ্ঞেস করলেই মুখটা অন্যরকম হয়ে যেত বিশাখার। কেন সূচনার কথায় সে অমন বিমর্ষ হয়ে যেত শুভ্রর কাছে এখন তা পরিষ্কার। ধ্যাত কি বোকা মেয়ে! একটু মুখ ফুটে বললেই তো হতো। তাহলে তো আজ আর এতো কষ্ট পেতে হতোনা শুভ্রকে।
শুভ্রর আম্মু আড়াল থেকে শুনছিলেন ফোনালাপ। শুভ্রকে আম্মু কাছে ডেকে বললেন, ‘কি হয়েছে বাবা? তুই কি বিশাখাকে…?’
শুভ্র মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়। শুভ্র ও তার মায়ের সম্পর্ক বন্ধু’র মতো। শুভ্র’র কাছে তার মা-ই তার পৃথিবী। মা-ও শুভ্রকে সেভাবেই গড়ে তুলেছেন। সূচনার ব্যাপারটাও মায়ের কাছে অজানা নয়।
মা শুভ্র’র মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন, ‘ মায়েরা সন্তান জন্ম দেন লালনপালন করেন। একটা সময় সেই সন্তানের সব দায়িত্ব এসে বর্তায় তার স্ত্রী’র ওপর। একটা মা যদি একজন সন্তানের স্ত্রীকে তার নিজের মেয়ের মতো দেখেন, ভালবাসেন। তবে তার সন্তানের বৌও তাকে মায়ের মতো দেখবে। এটা আমার বিশ্বাস। মা এবং স্ত্রী দু’জনই জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। কাউকে বাদ দিয়ে কেউ নয়। আর আমি তোকে বুঝি শুভ্র। বিশাখা মেয়েটা বড় ভাল। তুই যদি চাস তাকে মেনে নিতে কোনও আপত্তি নেই আমাদের।’
শুভ্র মুচকি হেঁসে বলে, ‘লাভ ইউ মা।’
মা আবারও বলেন, ‘আমি নিজে বিশাখার সাথে কথা বলতে চাই। তবে সবার আগে তোকে পড়াশোনা করে মানুষ হতে হবে। নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা খুব জরুরী। নিজের পায়ে দাঁড়ানোটা দরকার। 
শুভ্র মাথা নেড়ে সায় দেয় তার পৃথিবী নামক বটবৃক্ষ, তার মায়ের কথায়। 

 

সোহাগ মাল্টিমিডিয়া এন্ড ট্র্যাভেলস

সুন্দরবনটাইমস.কম/গল্প/লেখক: রুদ্র অয়ন/ঢাকা

 


আপনার মতামত লিখুন :

নিজস্ব প্রতিবেদক