বঙ্গবন্ধুর আর্দশ ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ

প্রকাশিত: ২:১১ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ২৪, ২০১৯ | আপডেট: ২:১১:অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ২৪, ২০১৯

মো. রিপন হোসাইন:
বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী, বাঙ্গালীর রাখাল রাজা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনীতির সুদূরপ্রসারী রূপকল্প।

সোহাগ মাল্টিমিডিয়া এন্ড ট্র্যাভেলস

বহু প্রজন্মের হাত ধরে বহু ক্রোশ হেঁটে ৭২তম পর্দাপন করতে চলেছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি হতে সুদীর্ঘ এই পথচলায় ছাত্রলীগ রেখেছে সীমার মাঝে অসীম ত্যাগ তিথীক্ষার বহু শ্রমের স্বাক্ষর। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সাম্যের সঙ্কল্পে একটি আর্দশ সংগঠন। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ উজ্জ্বল সত্যের উন্মুক্ত আলোয় উদ্ভাসিত ঐতিহ্যবাহী ছাত্র সংগঠন। বাংলাদেশ ছাত্রলীগই অকুণ্ঠিত স্বরে সত্যের জয়গান গাইতে জানে সবসময়।


বাঙালীর অধিকার আদায়ে ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় সবচেয়ে কার্যকর তরুণ শক্তি হিসেবে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ জন্মলগ্ন থেকে সাফল্যের মালা গেথেছে। ছাত্রলীগ মায়ের ভাষায় কথা বলার অধিকার আদায় করেছে। ৫৪ নির্বাচনে ছাত্রলীগ কর্মীদের পরিশ্রমই ভোটের ব্যবধান বাড়িয়ে বিজয় নিশ্চিত করেছে। ১৯৬২ সালে শরিফ কমিশনের বিরুদ্ধে দুর্বার শিক্ষা আন্দোলন ও গণজোয়ার তৈরি করে ছাত্রলীগ। সেই আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার সক্রিয় অংশগ্রহণ আন্দোলনের মাত্রা ও শক্তিকে বহুগুণে বৃদ্ধি করেছে। সামরিক জান্তা আইয়ুব খানের কাছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ছিল রাজপথের এক টর্নেডো।


স্বাধীন বাংলাদেশের যে বীজ বপণ করা হয়েছিল ১৯৫২ই সালে সেই বীজ মাটি ফুঁড়ে দৃশ্যমান হয় ১৯৬৬ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরে তাঁর প্রণীত হয় ছয় দফা । সে সময় এই ছয় দফা হয়ে ওঠে ছাত্রলীগের অলিখিত ঘোষণাপত্র। ছয় দফা বাস্তবায়ন ও দেশবাসীকে ছয় দফা সম্পর্কে অবহিত করতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিল বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।

পাকিস্তানের আইয়ুবীয় নীল নকশা আগরতলা মামলায় গ্রেফতার বঙ্গবন্ধুর নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে ছাত্রলীগ রাজপথে থেকেই জাতির পিতার কারা মুক্তি নিশ্চিত করেছে। ১৯৬৯ গণঅভ্যুত্থান ছাত্রলীগের কপালে আরেকটি রাজটীকা। ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের পরিশ্রমের গণবিস্ফোরণের দিন ১৯৬৯ সালে ২৪ শে জানুয়ারী। তিলে তিলে একটি জাতিকে তার সঠিক গন্তব্য পৌঁছানোর অগ্নিঝরা গণঅভ্যুত্থানের দিন। ঢাকাসহ সারাদেশে সেদিন পরিণত হয় শুধুই মিছিলের নগরী।

১৯৬৯ উত্তাল গণআন্দোলনে যে গণবিস্ফোরণ ঘটে ২৫মার্চ আইয়ুব খান পদত্যাগ করে এবং জেনারেল ইয়াহিয়া খান ক্ষমতাসীন হয়। এরপর শুরু মার্শাল ল’, রাজনৈতিক তৎপরতার ওপরে বিধিনিষেধ সব কিছু উপেক্ষা করে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ছাত্রলীগ ঘরোয়াভাবে কার্যক্রম অব্যাহত রাখে এবং সুসংগঠিত হতে থাকে। ফলে ৭০’র নির্বাচনে আওয়ামী লীগের যেমন নিরঙ্কুশ বিজয় হয়েছিল ঠিক তেমনি বাংলাদেশের ছাত্রলীগের অনেক নেতা জাতীয় পরিষদের সদস্য হয়েছিলেন।


এরপর অধিকার আদায়ের চূড়ান্ত সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে সমগ্র বাঙালী জাতিকে। ৩০ লাখ শহীদ ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের রক্তের বিনিময়ে মুক্তির যে মহাকাব্য রচিত হয়েছে ৭১ সেখানে ছাত্রলীগের সতের হাজার নেতা-কর্মীর বুকের তাজা রক্ত ও প্রাণ আছে। সেই অমিত প্রাণচঞ্চল ছাত্রলীগ পঁচাত্তরের পনের আগস্ট জাতির পিতাকে স-পরিবারে হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যায়। গনবিদারী কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে সংগঠনের প্রতিটি কর্মী। বিছিন্নভাবে প্রতিবাদ করতে থাকে সারাদেশে আর প্রহর গুনতে থাকে বঙ্গবন্ধুর রক্তের উত্তরসূরি শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার দেশে ফেরার দিনটির জন্য। হায়েনাদের মুখে জাতির পিতার পবিত্র রক্তের দাগ তখনও আছে, হায়েনারা অপেক্ষা করছে বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যার জন্য। শ্বাপদসঙ্কুল বাংলাদেশে নেত্রী যখন ফিরলেন তখন প্রাণ ফিরে পেল ছাত্রলীগ।

শেখ হাসিনার ভ্যানগার্ড হিসেবে সার্বক্ষণিক কর্তব্যরত ছিল ছাত্রলীগ। শুরু হলো প্রিয় নেত্রীর নেতৃত্বে জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার সংগ্রাম, স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে লড়াই, ভোট ও ভাতের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম। এর মাঝেই বন্যার্ত মানুষের জন্য কাজ করা এবং সংগঠন শক্তিশালী করার কাজ করতে হয়েছে ছাত্রলীগকে। সব অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করে উনিশ শ’ ছিয়ানব্বই সালে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ সরকার গঠন করার মাধ্যমে মূলত একাত্তরের পর সাধারণ জনগণ আরেকটি বিজয়ের স্বাদ পায়। এই বিজয়ের গর্বিত অংশীদার বাংলাদেশের জনগণ, এই বিজয়ের গর্বিত অংশীদার বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। পাঁচ বছর পর এই ছাত্রলীগকেই চরম মূল্য দিতে হয়েছে বিএনপি-জামায়াত শাসনামলে। অত্যাচার আর নির্যাতনের খড়গ নেমে আসে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের ওপর। তবে জেল-জুলুম আর গুম করে বিএনপি-জামায়াত বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে দুর্বল করতে পারেনি। দেশরত্ন ও মানবতার নেত্রী শেখ হাসিনার জন্য বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রতিটি নেতা-কর্মী শরীরের শেষ রক্ত বিন্দু টুকুও যে দিতে পারে তার প্রমাণিত স্বাক্ষর ছাত্রলীগ রেখেছে ওয়ান ইলেভেনে। সকল চড়াই-উতরাই পার হয়ে আওয়ামী লীগ যখন দ্বিতীয়বারের মতো রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় বসে তখন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের দাবিতে সোচ্চার ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ মানবতাবিরোধী অপরাধী তথা যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ বিচারের দাবিতে রাজপথে থেকেছে শত শত দিন ও রাত। পাশাপাশি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ও পরে বিএনপি-জামায়াতের আগুন সন্ত্রাস ও দেশব্যাপী সন্ত্রাসী কর্মকান্ড নৈরজ্য মোকাবেলায় বাংলাদেশ ছাত্রলীগ রাজপথে থেকে মোকাবেলা করে এবং করছে।


সামনে আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচন আমাদের উন্নয়নের পথে যাত্রা অব্যাহত রাখার নির্বাচন। তরুণ শেখ মুজিব যে কোন কর্মকান্ডে ব্যাপক জনসমর্থন পেতেন। এর পেছনের কারণ হচ্ছে তাঁর আচরণ, তাঁর কাজ, তাঁর সততা। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রতিটি নেতা-কর্মীকেও তাই নিজ এলাকায় ও শীর্ষ নেতৃবৃন্দের কাছে আচরণ, কাজ এবং সততার মাধ্যমে প্রিয় হতে হবে। ছাত্রলীগের প্রতিটি তরুণকে বঙ্গবন্ধুকে জীবনের আদর্শ মেনে সঙ্কল্পবদ্ধ হতে হবে রাজনীতি করব মানুষের স্বার্থে, আদর্শের স্বার্থে। মনে মনে বঙ্গবন্ধুকে সামনে রেখে নিজ এলাকায় এমনভাবে কাজ করতে হবে যেন তাঁর কারণেই ছাত্রলীগ শুধু নয়, আওয়ামী লীগও তার এলাকায় মানুষের মন জয় করতে পারে। আজকের ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা সারাদেশে নিজ নিজ এলাকায় বঙ্গবন্ধু ছাত্রজীবনে তাঁর নিজ এলাকায় যেভাবে নিষ্ঠা ও সততার সঙ্গে রাজনীতি করেছিলেন সেইভাবে রাজনীতি করছে বলেই ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের রাজনীতি ভিন্ন মাত্রা পেয়েছে। আমি বিশ্বাস করি শতভাগ ছাত্রলীগ নেতা-কর্মী জাতির পিতার কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সারাদেশে কাজ করছে এবং করবে। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের বর্তমান প্রজন্ম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে দেখেনি। তবে বর্তমান প্রজন্ম পেয়েছে বঙ্গকন্যা মানবতার নেত্রী দেশরতœ শেখ হাসিনাকে। ছাত্রলীগকে তিনি বঙ্গবন্ধুর মতো করেই আদর করেন, স্নেহ করেন, প্রেরণা দেন, সাহস যোগান, দিকনির্দেশনা দেন। প্রিয় নেত্রীর মাঝেই বাংলাদেশ ছাত্রলীগ খুঁজে পায় জাতির পিতার সবটুকু গুণ।


বাংলাদেশ ছাত্রলীগ দেশরতœ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা, ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণকল্পে এবং বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে মরণপণ লড়তে সদা প্রস্তুত।

বাংলাদেশ ছাত্রলীগের শিক্ষাবান্ধব ভূমিকার কারণেই সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে ছাত্রলীগের জনপ্রিয়তা ঈর্ষণীয়। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ মানবতার ফেরিওয়ালা হিসেবে যুগ যুগ ধরে কাজ করে যাচ্ছে। বিগত কয়েক বছর যে কয়টি প্রাকৃতিক দূর্যোগ বাংলাদেশে আঘাত হেনেছে প্রতিটি বিপর্যয়ের বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নিবেদিত ভাবে মানুষের পাশে দাড়িয়েছে। জাতির পিতার নিজ হাতে গড়া সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ তাঁর সুযোগ্য কন্যা দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ও নির্দেশনায় এগিয়ে চলেছে।

জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু, জয় হোক জননেত্রী শেখ হাসিনার।

লেখক: মো. রিপন হোসাইন
সাবেক ছাত্রলীগ নেতা
তালা উপজেলা, সাতক্ষীরা।

 

 

সুন্দরবনটাইমস.কম/ডেক্স


আপনার মতামত লিখুন :

নিজস্ব প্রতিবেদক