দেশের সর্ববৃহত ইফতার মাহফিল সাতক্ষীরার নলতা শরীফে

প্রকাশিত: ৩:৪৩ অপরাহ্ণ, মে ১২, ২০১৯ | আপডেট: ৩:৪৩:অপরাহ্ণ, মে ১২, ২০১৯

সাতক্ষীরা সংবাদদাতা:
দেশের সর্ববৃহত্তম ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয় সাতক্ষীরা জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার নলতা শরীফে। মঙ্গলবার (৭ এপ্রিল) পহেলা রমজান থেকে শুরু হয়ে চলবে ৩০ রমজান পর্যন্ত। মাসব্যাপী এই ইফতার মাহফিলের পরিধি আরো বাড়ছে। প্রতিদিন গড়ে ১০ হাজার রোজাদারদের জন্য এখানে ইফতার প্রস্তুত করা হয়। নলতা রওজা শরীফ প্রাঙ্গনে ৫ থেকে ৬ হাজার এবং জেলার বিভিন্ন মসজিদ, মিশন ও মহাল্লায় ৪ হাজার ইফতারির প্লেট সরবরাহ করা হয়ে থাকে। তবে এত বড় আয়োজনে কারো কোনো সমস্যা হয়েছে বলে এখনও পর্যন্ত কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি। এখানে প্রতিদিন ইফতারের পূর্বে ধর্মপ্রান মুসল্লিরা দেশ ও জাতীর কল্যানে বিশেষ মোনাজাতে অংশ নেয়। হজরত শাহ্ ছুফী আলহাজ্জ খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা(রহ.) এঁর মৃত্যুর পরও মিশন কর্তৃপক্ষ এ মাহফিলকে অব্যাহত রেখেছে।

সোহাগ মাল্টিমিডিয়া এন্ড ট্র্যাভেলস

নলতা কেন্দ্রীয় আহছানিয়া মিশনের ব্যবস্থাপনায় ও নলতা শরীফের খাদেম আলহাজ্ব আনছার উদ্দিন আহমেদের বিশেষ তত্বাবধানে এই ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। এখানে ৩০ জন শ্রমিক মাসব্যাপী দিন রাত পরিশ্রম করে বাঁশ-খুটি আর টিন দিয়ে তৈরি করা হয় বিশাল ছাউনি যেখানে একসাথে ৬ হাজার রোজাদার মুসল্লী ইফতার করতে পারবে। এছাড়া এখানে ইফতারি বিলি-বন্টন ও তদারকির জন্য রয়েছে দুইশত স্বেচ্ছাসেবক। এখানে ফকির, মিসকিন, গরীব, ধনী ও বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ সকল ভেদাভেদ ভূলে প্রতিদিনই অংশ গ্রহণ করেন এই ইফতার মাহফিলে। সওয়াব হাসিলের জন্য দুর দুরন্ত থেকেও ইফতারের উদ্দেশ্যে রোজাদাররা ছুটে আসেন নলতা রওজা শরীফ প্রাঙ্গনে।
অবিভক্ত বাংলার শিক্ষা বিভাগের সহকারী পরিচালক, পীর-এ কামেল বিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ মোজাদ্দেদ, অবিভক্ত বাংলা ও আসামের শিক্ষা বিভাগের সহকারী পরিচালক, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও শিক্ষা সংস্কারক, প্রখ্যত সাহিত্যিক, সমাজ সেবক, আত্মাধিক সাধক, সমাজ সংস্কারক, জ্ঞান তাপস, মুসলিম রেনেঁসার অগ্রদুত, মুক্তবুদ্ধি ও অসাম্প্রদায়িক চিন্তা-চেতনার অধিকারী, মনোচিকিৎসক, ঐতিহাসিক, দার্শনিক, ‘‘স্রষ্টার এবাদত ও সৃষ্টের সেবা” ব্রত নিয়ে চলা নলতা কেন্দ্রীয় আহ্ছানিয়া মিশনের প্রতিষ্ঠাতা সুলতানুল আউলিয়া, কুতুবুল আকতাব, গওছে জামান, আরেফ বিলাহ, হজরত শাহ্ ছুফী আলহাজ্জ খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (রহ.) এঁর নলতা পাক রওজা শরীফে। ছোট্ট পরিসর থেকে বেড়ে বর্তমানে এই ইফতার মাহফিল এর পরিধি বেড়ে এখন দশ হাজারে পৌঁছেছে। বর্তমানে শাহ সুফি হজরত খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লাহর (রহ.) রওজা প্রাঙ্গনেই এ ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়।


দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ধর্মপ্রাণ মুসল্লীরা ইফতারের জন্য ছুটে যান সেখানে। বৃষ্টি থেকে রক্ষার জন্য অস্থায়ীভাবে টিনের ছাউনি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ইফতারি বিলি-বন্টন ও তদারকির জন্য রয়েছে দুই শতাধিক স্বেচ্ছাসেবক।
ইফতারি সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে খেজুর, ছোলা, সিংগড়া, ফিন্নি, চিড়া, কলা ও ডিম। এত মানুষের ইফতারির আয়োজনের পরও জেলার বিভিন্ন মসজিদে এক বার করে ইফতারি পৌঁছে দেওয়া হয়।
ছোলা, ডিম ও ফিন্নি।
বাবুর্চি মহব্বত আলী জানান, প্রতিদিন ৬০০শত কেজি দুধ দিয়ে ফিন্নি রান্না করা হয়। সিদ্ধ করা হয় ১০ হাজার ডিম। প্রতি বছরই আমি এখানে রান্নার কাজ করে থাকি। এ মাসটি আমরা রোজাদারদের খেদমত করি।
সিঙ্গাড়া বাবুর্চি মুক্তার হোসেন বলেন, আমি এখানে ৩৪ বছর ধরে সিঙ্গাড়া বানাই। ১৫-থেকে ২০ জন একত্রে কাজ করি। আসরের নামাজের আগেই সিঙ্গাড়া প্রস্তুত শেষ করে ফেলি।
স্বেচ্ছা সেবকরা বলেন, আমরা প্রতিদিন ৪টি গ্রুপে দুইশত জন স্বেচ্ছা সেবক রয়েছি এখানে। সকলেই নিজ উদ্যোগে এখানে এসেছি। বিকাল ৪টার পর থেকে বণ্টন কাজ শুরু করি। চেষ্টা করি যেন আগত কোনো রোজাদারের কোনোরূপ অসুবিধা না হয়।
৫০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ইফতারিতে অংশ নিতে আসা সাতক্ষীরার তালা উপজেলার মো.মতিয়ার রহমান বলেন, শুনেছি এখানে ১০ হাজার মানুষ একসঙ্গে ইফতারি করে। তাই আজ প্রথম আমি অংশ গ্রহণ করতে আসলাম। অনেক জ্ঞানী-গুনী মানুষ এখানে আসেন। শুধু তাই নয়, মহান সৃষ্টিকর্তার অনুগ্রহ লাভে নলতা দরবারের শাহী জামে মসজিদে ইতেকাফে বসেন ৫৫০ থেকে ৬০০ জন ধর্মপ্রাণ মুসল্লী। যাদের খাওয়া দাওয়া ও ইফতারের ব্যবস্থাও এখানে করা হয়। দরবার এলাকায় অবস্থিত নলতা শরীফ শাহী জামে মসজিদে প্রতিদিন তারাবীতে অংশ নেন দুই হাজারেরও বেশি ধর্মপ্রাণ মুসল্লী।
নলতা কেন্দ্রীয় আহছানিয়া মিশনের হিসাব রক্ষক এবাদুল হক বলেন, প্রতিবছর রমজানে ইফতার, তারাবী ও ইতেকাফ উপলক্ষ্যে নলতা রওজা শরীফে সাড়ে ৬ লক্ষাধীক টাকা ব্যায়ে বাঁশ-খুটি দিয়ে টিনের ছাউনি তৈরি করা হয়। আর প্রতিদিন ইফতারিতে খরচ গড়ে ২ লক্ষ ৫৫ হাজার টাকা। দিনে দিনে এর ব্যাপ্তি আরও বাড়ছে।
নলতা কেন্দ্রীয় আহছানিয়া মিশনের সদস্য মো.মালেকুজ্জামান জানান, ক্রমান্বয়ে এর পরিধি বেড়েই চলেছে। নতুন মসজিদটা নির্মান হয়ে গেলে এখানে প্রায় ২৫ হাজার মানুষের বসার স্থান হবে। বর্তমান অস্থায়ীভাবে টিন ও বাঁশ দিয়ে ছাউনি তৈরি করা হয়েছে। এখানকার সকল কর্মকর্তাদের ইচ্ছা কেউ যেন এখান থেকে খালি মুখে ফিরে না যায়। কেউ যেন কস্ট না পায়। এটিই আমার দাদু মুর্শিদ মাওলা হযরত খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (রহ.) এর চাওয়া।

 

সুন্দরবনটাইমস.কম/শা:/সাতক্ষীরা




আপনার মতামত লিখুন :

নিজস্ব প্রতিবেদক